আগ্রাবাদ এক্সেস রোডে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের অর্থায়ন ও ব্যবস্থাপনায় করোনা আক্রান্তদের জন্য প্রতিষ্ঠিত ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সিটি হল কোভিড আইসোলেশন সেন্টারে রোগী ভর্তির মাধ্যমে আগামীকাল রোববার থেকে এর কার্যক্রম শুরু হচ্ছে।
এই সেন্টারে ডা. সুশান্ত বড়ুয়াকে পরিচালকের দায়িত্ব দিয়ে চসিক স্বাস্থ্য বিভাগের ১৬ জন চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ড বয়, ল্যাব টেকনোলজিস্ট, ফার্মাসিস্ট ও আয়াসহ ৬০জন লোকবল নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
এর আগে তাদেরকে করোনা স্বাস্থ্য সেবা প্রদান সম্পর্কিত তিন দিন ব্যাপী এক কর্মশালায় বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
এ হাসপাতালটিতে বর্তমানে প্রাথমিকভাবে ৫০ টি অক্সিজেন সিলিন্ডার ও এর উপকরণ সংযুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়াও হাইফ্লো ন্যাসাল ক্যানুলা সংগ্রহ করার পরিকল্পনাও রয়েছে।
চট্টগ্রামে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৬ হাজার অতিক্রম করেছে। এর বিপরীতে চট্টগ্রাম মহানগরীতে করোনা চিকিৎসা দেয়া হয় এমন ৮টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আইসোলেশন শয্যা আছে ৬৬৮টি। সংগত কারণেই আক্রান্তের তুলনায় চিকিৎসার সেবার পরিধি খুবই অপ্রতুল। এই প্রেক্ষিত বিবেচনায় সময় উপযোগী পদক্ষেপ হিসেবে কোভিড রোগীদের সেবা প্রাপ্তি সহজলভ্য করতে ও আইসোলেশন সংকট দুরীকরণে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন আগ্রাবাদ এক্সেস রোডে সিটি কনভেনশন হল কমিউনিটি সেন্টারকে কোভিড আইসোলেশন সেন্টারে রূপান্তর করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
গত ১ জুন চসিকের স্বাস্থ্য বিভাগের সভায় আইসোলেশন সেন্টারটি গড়ে তোলার জন্য তিনি চূড়ান্ত অনুমোদন দেন। গত ৪ জুন কনভেনশন হলটির মালিক কর্তৃপক্ষ এ হলটিকে চসিকের কাছে হস্তান্তর করেন।
দ্রুতগতিতে অবকাঠামোগত নির্মাণ, ঔষুধপত্র ও চিকিৎসার সরঞ্জাম সংযোজন, চিকিৎসকসহ জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়া দ্রুতগতিতে সমাপ্তির পর গত ১৩ জুন বিকেলে এ কোভিড আইসোলেশন সেন্টারটি উদ্বোধন করেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ চৌধুরী এমপি।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন এ কোভিড আইসোলেশন সেন্টারটির গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে বলেন, করোনাকালে অবনতিশীল পরিস্থিতির মোকাবেলায় সিটি হল কোভিড আইসোলেশন সেন্টারটি চট্টগ্রাম নগরবাসীর জন্য একটি আশাজাগানিয়া উদ্যোগ এবং তারা স্বস্থি ও সাহস সঞ্চয় করে বেঁচে থাকতে প্রাণিত হবে। তিনি আরো বলেন, সদ্যপ্রতিষ্ঠিত এই আইসোলেশন সেন্টারে প্রায় ৭০ লক্ষ জনঅধ্যুষিত নগরীর করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থাই নিশ্চিত করা হয়েছে। এ সেন্টারটিতে নগরীর বাইরেরও করোনা আক্রান্ত রোগী ভর্তি হতে পারবে এবং নন-কোভিড রোগীরাও তাৎক্ষণিক সেবা নেয়ার পর তাদের রোগ অনুযায়ী বিশেষায়িত হাসপাতালে স্থান্তরিত করা হবে।
তিনি আরো জানান যে, এ সেন্টারে প্রথমত কোভিড-১৯ আক্রান্ত মৃদু ও মাঝারি পর্যায়ে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেয়ার পর কোন রোগীর অবস্থা গুরুতর হলে তাকে নিজস্ব এ্যাম্বুলেন্স করে বিশেষায়িত হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হবে।
মেয়র আরো উল্লেখ করেন যে, এছাড়াও এ সেন্টারটিতে ভর্তি হওয়া রোগীদের প্রয়োজনীয় ঔষুধপত্র প্রদান করা হবে।
তিনি বলেন, এ সেন্টার থেকে কোন রোগীই যাতে বিনা চিকিৎসায় ফিরে না যায়। এই কোভিড আইসোলেশন সেন্টারে আগত রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার জন্য ডাক্তার ও নার্সদের দায়িত্বের প্রতি সচেতন থাকার আহ্বান জানান মেয়র।
লকডাউনের ৪র্থ দিনে উত্তর কাট্টলী পরিদর্শনকালে সিটি মেয়র
আরোপিত নিষেধাজ্ঞা, স্বাস্থ্যবিধি, সরকারি ও চসিকের নির্দেশনা মেনে চলুন
নগরীর ১০ নং উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডে লকডাউনের চতুর্থ দিনে আজ শনিবার সকালে সরেজমিনে এলাকা পরিদর্শন করেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীন।
তিনি সকলকে লকডাউন চলকালীন সময়ে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা এবং পরবর্তী স্বাভাবিক জীবন যাপনে স্বাস্থ্যবিধি ও নির্দেশনা মেনে চলার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
মেয়র বলেন, লকডাউন চলাকালীন সময়ে কিছু কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠান চালু রেখে শ্রমিকদের বিভিন্ন ভয়-ভীতি দেখিয়ে কর্মস্থলে উপস্থিত থাকার জন্য বাধ্য করা হচ্ছে । এতে করে শ্রমিকরা কাজে যোগদান করতে বাধ্য হচ্ছে । তবে খেটে খাওয়া মানুষের জীবিকার বিষয়টিও আমরা ভাবছি এবং জীবন এবং জীবিকার সমন্বয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছে ও আখাংকার প্রতিফলন ঘটিয়ে প্রত্যেকের স্বাভাবিক জীবন নিশ্চিত করার জন্যই বাস্তব পরিস্থিতিকে অবশ্যই মোকাবেলা করতে হবে।
সিটি মেয়র শিল্প মালিকদের লকডাউনের সময় শিল্প বন্ধ রাখার আহ্বান জানান।
মেয়র বলেন, উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ড এলাকার ছয় হাজার পরিবারকে খাদ্য সহায়তা প্রদানের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। লকডাউনের প্রথম দিনই দুই হাজার পরিবারের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার সামগ্রী পাঠানো হয়েছে। স্থানীয় কাউন্সিলর প্যানেল মেয়র ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু গত দুই দিনে প্রায় সাড়ে চারশ পরিবারকে এই সহায়তা বিতরণ করেন। এলাকায় করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ
প্রসঙ্গে বলেন, গত ১৮ জুন আইইডিসিআরের পক্ষ থেকে দুই জন চিকিৎসককে পাঠানো হয়েছে লকডাউন এলাকার স্বেচ্ছাসেবকদেরকে প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য। আগামীকাল রবিবার থেকে স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণ শুরু হবে। এক ওয়ার্ডের ২০ জন করে তিন ওয়ার্ডের মোট ৬০ জন স্বেচ্ছাসেবককে এই প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের কনটাক্ট ট্রেসিং করা, নমুনা সংগ্রহকারীদেরকে সহায়তা করা, লকডাউন শতভাগ বাস্তবায়নে জনগণকে উদ্বুদ্ধকরণসহ নানামুখী কাজ করবে এই স্বেচ্ছাসেবক দল। তবে সংগৃহীত নমুনার যাতে নিয়মিত পরীক্ষা কার্যক্রম গতিশীল হয় সে ব্যাপারে স্বাস্থ্য দপ্তরকে আরো দায়িত্বশীল হতে হবে। দিনের পরীক্ষার ফলাফল দিনে প্রকাশে সংশ্লিষ্টদেরকে সক্রিয় হতে হবে। এই লকডাউন এলাকার জন্য ২৫০ জন স্বেচ্ছাসেবক রাখা হয়েছে। তারা লকডাউন চলাকালীন সময়ে এলাকাবাসীর চাহিদা অনুযায়ী কাচাঁবাজার, ঔষুধপত্র ও প্রয়োজনীয় দৈনন্দিন উপকরণ ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছেন।
এ ছাড়াও কোন বাসায় অসুস্থ রোগী থাকলে তাদের চিকিৎসা সহায়তার জন্য খোজখবর নিচ্ছেন। গুরুতর রোগীদের হাসপাতালে পৌঁছে দেয়ার জন্য সার্বক্ষণিকভাবে এ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
সিটি মেয়র স্বস্থি প্রকাশ করে বলেন যে, জোন ভিত্তিক লকডাউন ঘোষণা হওয়ার আগ পর্যন্ত এ ওয়ার্ডে করোনা আক্রান্ত সংখ্যা ছিল ১৪৫ জন এবং মৃত্যু হয়েছিল ৭ জনের। লকডাউন কার্যকর হওয়ার অদ্যাবধি নতুন করে কেউ আক্রান্ত হয়নি এবং মৃত্যুবরণও করেনি।
এসময় কাউন্সিলর নিছার উদ্দিন আহমদ মঞ্জু,সংরক্ষিত কাউন্সিলর আবিদা আজাদ, মেয়রের একান্ত সহকারী রায়হান ইউসুফ, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. ইকবাল চৌধুরী, পাহাড়তলী থানার এসি আরিফুল ইসলাম সহ এলাকায় দায়িত্বপালনকারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর উপহার সামগ্রী বিতরণ করলেন মেয়র
করোনা ভাইরাস সাম্যবাদী বিধায় কাউকে ছাড় দেয় না-মেয়র
চট্টগ্রাম -২০ জুন-২০২০ খ্রি.
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেছেন, লকডাউন সময়ে আরোপিত সকল নিষেধাজ্ঞা বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ও সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি যাতে কোন ভাবেই লঙ্ঘিত না হয় তা নিশ্চিত করতে সরকারের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ, প্রশাসন,আইনশৃংখলা বাহিনী ও চসিক সর্বাত্মক সতর্কতা ও প্রস্তুতি নিয়ে সার্বক্ষণিকভাবে মাঠে থাকবে। দেশব্যাপী লকডাউন চলাকালীন সময়ে সাধারণ মানুষের মাঝে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা ও স্বাস্থ্যবিধি না মানার বেপরোয়া মানসিকতা পরিস্থিতিকে দ্রুত অবনতিশীল করে তোলে। তিনি বলেন, আমাদের দৈনিন্দন জীবন যাপন ও আচার আচরণের উপর নির্ভর করে করোনা ঝুঁকি কতটা নিরাময় করা যায়। এ ঝুঁকি মোকাবেলায় যে সমস্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে তা আমাদের অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে। তিনি বলেন, করোনা ভাইরাস সাম্যবাদী। এই ভাইরাস ধনী-গরীব, ছোট-বড় ভেদাভেদ করে না। প্রধানমন্ত্রীর উপহার সামগ্রী বিতরণকালে মেয়র এসব কথা বলেন।
রিয়াজউদ্দিন বাজার কর্মচারী সমিতি ও চট্টগ্রাম দোকান কর্মচারী ফেডারেশন: রিয়াজউদ্দিন বাজার কর্মচারী সমিতি ও চট্টগ্রাম দোকান কর্মচারী ফেডারেশনের ২শ পরিবারের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর উপহার সামগ্রী বিতরণ করা হয়। এ সময় চসিক সিটি মেয়রের একান্ত সচিব মো. আবুল হাশেম, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন, মো. জাহাঙ্গীর, বাচ্চু মিয়া, জসিম উদ্দিন, জহির উদ্দিন রাজু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ভিআইপি টাওয়ার শপিংমল মালিক ও কর্মচারী পরিষদ: নগরীর ভিআইপি টাওয়ারে দোকান মালিক ও কর্মচারীর ৫শ পরিবারের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর উপহার সামগ্রী বিতরণ করা হয়। এ সময় চসিক কাউন্সিলর মো. গিয়াস উদ্দিন, সিটি মেয়রের একান্ত সচিব মো. আবুল হাশেম, পরিষদের সহ সভাপতি মো. কামাল উদ্দিন, প্রবীর কুমার চৌধুরী, মো. জালাল হোসেন, টিপু সুলতান, মিটু মল্লিক, মো. সিরাজ, মো. কুতুব উদ্দিন চৌধুরী, আবদুল মালেক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিক কামাল লোহানীর মৃত্যুতে সিটি মেয়রের শোক: বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানীর মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীন। এক শোকবার্তায় মেয়র বলেন, সাংবাদিকতার পাশাপাশি আমাদের মহান ভাষা আন্দোলন, মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে কামাল লোহানী বিপুল অবদান রেখেছেন। তিনি ছিলেন স্বাধীন বাংলার বিপ্লবী বেতার কেন্দ্রের শব্দ সৈনিক।সাংস্কৃতিক আন্দোলনসহ বাঙালি সংস্কৃতি ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশে তিনি ছিলেন একজন পুরোধা ব্যক্তি। তাঁর মৃত্যুতে দেশ একজন বরেণ্য সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বকে হারালো। তার মৃত্যু দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এক অপূরণীয় ক্ষতি । মেয়র মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
২৪ ঘণ্টা/এম আর