সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি ::: চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড অংশে মহাসড়কে দায়িত্বরত হাইওয়ে পুলিশ দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। মহাসড়কে চলাচলকারী নিরীহ মানুষকে মারধর, গাড়ী ধরে জোর পূর্বক স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর ও অসহায়দের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়া এদের নিত্যদিনের কাজ।
গত সোমবার রাত ১টার সময় বার আউলিয়া হাইওয়ে থানার ওসি আব্দুল আওয়াল ও এসআই সাইফুল এক নিরীহ রিক্সা চালক থেকে ১০ হাজার টাকা নেয় এবং পরে জোর পূর্বক ৭শত টাকার স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে নেন। ঐ স্ট্যাম্পও নিরীহ রিক্সা চালকের টাকায় কেনা।
জানা যায়,বাংলাদেশসহ সারা বিশ্ব যেখানে মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে আতংকিত, সেখানে বার আউলিয়া হাইওয়ে থানা পুলিশ প্রতিনিয়ত বেপরোয়া আচরণ করছেন সাধারণ জনগনের উপর। গত রবিবার দুপুরের দিকে ভাটিয়ারী মুক্তিযোদ্ধা মেমোরিয়াল হাসপাতালে এক রোগী নিয়ে যাচ্ছিল রিক্সা চালক জয়নাল আবেদিন। এ সময় তার সামনে আচমকা এসে বসে হাইওয়ে পুলিশের এসআই সাইফুল। এরপর রোগী নামিয়ে গাড়ীটি হাইওয়ে থানায় নিয়ে যায় এবং অকথ্য ভাষায় চালককে গালমন্দ করেন।
সোমবার সোর্সের মাধ্যমে ওসি ও এসআই সাইফুল রিক্সা চালককে থানায় ডেকে নেন এবং ১০ হাজার টাকা দিলে গাড়ী ছেড়ে দিবে বলেন। সেই মোতাবেক রাতে টাকা নিয়ে থানায় আসেন গরীব রিক্সা চালক জয়নাল। প্রথমে টাকা নেন,এরপর বলেন এই স্ট্যাম্পগুলোতে স্বাক্ষর কর, যাতে জীবনে আর রিক্সা না চালাস। সবশেষ রাত ১টার সময় রিক্সা ছেড়ে দেয়া হয়।
এরূপ গত ১৭ মার্চ অপর এক রিক্সা চালকের গাড়ী গ্রাম থেকে ধরেন এসআই সাইফুল। এরপর সোর্সের মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা দাবি করেন। পরে নিরীহ রিক্সা চালক অনেকের কাছে গিয়ে টাকা যোগাড় করতে না পেরে তিনদিন পর অনাহারে পরিবারকে ভরণ- পোষন দিতে না পারায় নিজেই আত্মহত্যা করে।
একইভাবে গত ২২ মার্চ হাইওয়ে পুলিশের এক এসআই মহাসড়কের নড়ালিয়া পিএইচপি ফ্লোট গ্লাস ফ্যাক্টরীর ইউটার্ন এলাকায় এক দলিল লেখককে বিনা কারণে মারধর করলে স্থানীয়দের তোপের মুখে তারা দ্রুত পালিয়ে যায়। পরে দলিল লেখক হেলাল সুস্থ্য হয়ে ২৪ মার্চ সীতাকুণ্ড প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করেন।
আবু তাহের নামে এক রিক্সা চালক বলেন,‘আমি ভাটিয়ারী গ্রামের একটি সড়কে রিক্সা চালানো অবস্থায় সাদা পোশাকে পুলিশ এসে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে আমাকে মারধর শুরু করে আমার গাড়িটি থানায় নিয়ে যায়। পরে আমি অভাবের মধ্যে ৩ হাজার ৭শত টাকা দিয়ে গাড়ী নিয়ে আসি।
এভাবে বার আউলিয়া হাইওয়ে পুলিশ গত কয়েকদিনে রিক্সা জব্দ করে জসিম থেকে ১৩ হাজার,মিজান থেকে ১৩ হাজার ও খলিল থেকে ১৩ হাজার টাকা নেয়। টাকা না দিলে মারধর করার অসংখ্য নজির আছে বার আউলিয়া হাইওয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে।
জানতে চাইলে রিক্সা চালক জয়নাল কান্নাজনিত কন্ঠে জানান,‘আমরা এমনিতে মহাসড়কে রিক্সা নিয়ে উঠি না, দেশে করোনা রোগের কারণে মহাসড়কে দূর পাল্লার গাড়ি কম থাকায় রোগী নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার পথে গাড়িটি আটক করে এসআই সাইফুল থানায় নিয়ে যায়। পরে সোর্সের মাধ্যমে খবর দিয়ে প্রথমে ওসির সাথে থাকা এক পুলিশ ১০হাজার টাকা নেয় এবং পরে ৭শত টাকা স্ট্যাম্পের টাকা নিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়ে রাত আনুমানিক ১টার দিকে ছেড়ে দেয়।’
এসব বিষয়ে জানতে বার আউলিয়া হাইওয়ে থানার ওসি আব্দুল আউয়াল কে (০১৭৩৩২৩১৯১২) ফোন করলে উনি ফোন রিসিভ না করায় মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
তবে অভিযুক্ত এসআই সাইফুল মারধর, টাকা নেওয়া ও ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়া সকল বিষয় অস্বীকার করে বলেন, আপনি ওসি স্যারের সাথে কথা বলেন বলে লাইন কেটে দেন।’
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে হাইওয়ে পুলিশের পুলিশ সুপার কুমিল্লা রিজিয়ন নজরুল ইসলাম বলেন,‘ আমি (সাংবাদিক)আপনার কাছ থেকে সকল অভিযোগগুলো শুনেছি,আপনি পারলে ভূক্তভোগী কয়েকজনকে আমার কাছে
মোখিক ও লিখিত অভিযোগ নিয়ে আসতে বলেন।’ আমি আইনগত ব্যবস্থা নেবো।