২৪ ঘণ্টা ডট নিউজ। নিজস্ব প্রতিনিধি : চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত শিশুদের সুস্থ করে তুলতে, তাদের সেবায় একাত্ব হয়ে এমনভাবে নিজেকে উৎসর্গ করেছে, এখন সে নিজেই এ রোগের শিকার।
সাজাজিক যোগাযোগাগ মাধ্যম ফেসবুকে এমনভাবেই মত প্রকাশ করেন চট্টগ্রামের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক নাসিরুদ্দিন চৌধুরী। তিনি স্ট্যাটাসে তার ২৯ বছর বয়সী চিকিৎসক কণ্যা ডাঃ সামিয়া নাজনীন করোনা আক্রান্তের তথ্যটি নিশ্চিত করেন।
তিনি ২৪ ঘণ্টা ডট নিউজকে জানান, গত কয়েকদিন ধরে তার মেয়ের শরীরে জ্বরসহ করোনা উপসর্গ দেখা দিলে করোনা পরীক্ষার জন্য গত ১০ মে বিআইটিআইডিতে নমুনা দিয়ে আসেন। গতকাল সোমবার (১১ মে) রাতে বিআইটিআইডি ল্যাবের রিপোর্টে তার করোনা পজিটিভ আসে।
সাংবাদিক পিতা তার ফেসবুকে হৃদয়স্পর্শী স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেন, করোনা পজেটিভ রিপোর্ট আসার পর থেকে আমার কোমলমতি মেয়েটি খুব কাঁদছে, তার মাও কাঁদছে অবিরত। চোখেও ঘুম নেই মেয়ের কথা চিন্তা করতে করতে। অন্যদিকে আমার ভিতরে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। অস্রু জমাট বেধে আছে কিন্তু চোখ ফেটে বের হতে পারছে না।
এদিকে করোনার উপসর্গ দেখা দেওয়ার পর থেকেই করোনা আক্রান্ত এ নারী চিকিৎসক তার শ্বশুরবাড়িতে হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন সামিয়া নাজনীনের স্বামী সানিউল ইসলাম।
তিনি বলেন, করোনা মহামারিতেও সে ঘরে বসে ছিলেন না। সপ্তাহে অন্তত তিনদিন তিনি চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে উপস্থিত থেকে শিশুদের সেবা করেছেন।
তবে কিভাবে সামিয়া করোনা আক্রান্ত হয়েছেন তার কোন নির্দ্দিষ্ট কারণ তিনি জানে না উল্লেখ করে বর্তমানে সে বাসায় আইসোলেশনে আছেন এবং শরীরও মোটামুটি ভাল বলে জানায়।
এদিকে মেয়ে করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে বুক ফাঁটা, মনে কষ্ট ও চাপা ক্ষোভ মিশ্রিত এক মন্তব্য প্রকাশ করেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক নাসিরুদ্দিন চৌধুরী। তার মেয়ের জন্য তিনি সকলের কাছে দোয়া কামনা করেন।
তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন, আমার মেয়ে তার বাপের স্বভাবই পেয়েছে। আমি সারাজীবন জনসেবা করার চেষ্টা করেছি। অন্যের সেবায় জীবন উৎসর্গ করেছি। রাজনীতি, সাংবাদিকতা যখন যা করেছি সমস্ত মন প্রান দিয়ে করেছি। পরের কাজে জীবনটা বিলিয়ে দিয়েছি, কোন ফাঁকি রাখিনি।
নিজের স্বার্থ নিয়ে কোনদিন মাথা ঘামাইনি। যখন যে কাজ করেছি তাতে ষোলআনা উজাড় করে দিয়েছি। নিজেকে এমনভাবে কাজের মধ্যে ডুবিয়ে দিয়ে কখন জীবনের শেষপ্রান্তে এসে পৌঁছেছি টেরই পাইনি।
শেষ বেলায় হিসেব করে দেখছি আমার হিসেবের ঘরে ফাঁকি। আমি একজন ব্যর্থ মানুষ। আমার প্লট নেই, ফ্ল্যাট নেই, গাড়ি নেই, বাড়ি নেই, ব্যাংক ব্যালান্স নেই। আমার ছেলেমেয়েদের ইউরোপ আমেরিকায় পড়াতে পারিনি।
আমার মেয়েও আমার মত আত্মবিস্মৃত হয়ে করোনা রোগিদের সেবা করতে যেয়ে নিজের শরীরে করোনা ভাইরাস ঢুকিয়েছে।
আমার সকল মুরব্বী, মুক্তিযুদ্ধের সহযোদ্ধা, রাজনৈতিক জীবনের নেতা, রাজনৈতিক সহকর্মী, সিনিয়র, জুনিয়র, বন্ধু, ছোট ভাইয়ের মত আমি যাদেরকে পরিচর্যা করে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে সাহায্য করেছি, তারা এবং আমার সহযোগি সাংবাদিক-সকলের প্রতি আমার সকরুন মিনতি, আমার মেয়েটাকে সুস্থ করে তুলতে কারো কোন করনীয় থাকলে, সাহায্যের উদার হস্ত নিয়ে এগিয়ে আসুন, আমি চিরকৃতজ্ঞ থাকবো।
আমার মেয়ে এখন শ্বশুরবাড়িতে কোয়ারান্টাইনে বাস করছে। আমি মুক্তিযুদ্ধে জিতেছি,আশা করি আমার মেয়েও করোনা যুদ্ধে জিতবে।
২৪ ঘণ্টা/রাজীব সেন প্রিন্স