২৪ ঘণ্টা ডট নিউজ। বিশেষ প্রতিবেদন : চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা থানা এলাকায় অটোরিকশার সাথে ধাক্কা লেগে গুরুতর আহত হয়েছে চার বছরের শিশু শাওন। তার নাক দিয়ে ব্লিডিং শুরু হলে স্বজনরা তাকে নিয়ে প্রথমে ছুটে যান নিকটস্থ বেপজা হাসপাতালে।
অবস্থা গুরুতর হওয়ায় সেখান থেকে শিশুটিকে নিয়ে আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে ছুটে গেলেন স্বজনরা। সেখানেও চিকিৎসা জুটেনি। এরপর আহত শিশুটিকে নিয়ে স্বজনরা ছুটে গেলেন সাউথ পয়েন্ট হাসপাতালে। সেখানেও জুটেনি তার চিকিৎসা!
অবশেষে তাকে নিয়ে শেষ ভরসাস্থল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হলেও ততক্ষনে শিশু শাওনের দেহ নিস্তেজ হয়ে পড়ে। শিশুর স্বজনদের কঠিন কথাটি শুনালেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। বললেন শিশু শাওন আর বেঁচে নেই।![হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরেও চিকিৎসা পায়নি শাওন](https://www.24ghonta.news/wp-content/uploads/2020/06/হাসপাতালে-হাসপাতালে-ঘুরেও-চিকিৎসা-পায়নি-শাওন-2.png)
মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে সড়ক দুর্ঘটনাটি ঘটলেও আহত শিশুটিকে নিয়ে তার একটু সুচিকিৎসা ব্যবস্থার করার জন্য স্বজনরা বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত সময় নষ্ট করেছেন শুধুমাত্র এ হাসপাতাল টু ওই হাসপাতালে ঘুরতে ঘুরতে। এমন শংকটাপণ্ন অবস্থার পরও কোন হাসপাতালের মন গলাতে পারেনি শিশু শাওনের পরিবার।
সড়ক দুর্ঘটনায় আহত চার বছরের শিশু বাচ্চার চিকিৎসা সেবা না পাওয়ার এমন অভিযোগ করে শাওনের বাবা জাহিদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, আমার ছেলে শাওন আজ মঙ্গলবার দুপুরে পতেঙ্গা এলাকায় অটোরিকশার সাথে ধাক্কা খেলে গুরুতর আহত হয়। তার নাক দিয়ে ব্লিডিং শুরু হলে তাকে প্রথমে নিকটস্থ বেপজা হাসপাতালে নেয়া হয়।
এরপর তাকে নিয়ে নগরীর আরো দুটি হাসপাতালে ঘুরেছি। কোনো হাসপাতাল ভর্তি নিতে রাজি হয়নি। অবশেষে মঙ্গলবার পৌনে ৩টার দিকে যখন তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হলো তখন কর্তব্যরত চিকিৎসক জানালেন শিশু শাওন আর নেই! এক ঘণ্টার মধ্যে যদি তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা হতো তাহলে শাওন সুস্থ হয়ে যেতো বলে দাবী তার।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, শিশু শাওনের স্বজনদের আহাজারীতে ভারী হয়ে উঠে হাসপাতালের পরিবেশ। শিশুটির বাবা জাহিদ হোসেন কান্না করতে করতে গণমাধ্যমকে বলেন, এত আকুতি মিনতি করেও আমার বাচ্চাকে বাঁচাতে পারলাম না। আমার শিশু পুত্রটির এমন কি অপরাধ ছিলো যে চিকিৎসা না পেয়ে মরতে হলো। এর চেয়ে ব্যর্থতা কি হতে পারে।
এদিকে হাসপাতালের স্ট্রেচারে রাখা শাওনের মরদেহ নিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছেন স্বজনরা। নানা তার নাতি হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে গড়াড়ড়ি খাচ্ছেন। এ এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য।
জানা যায়, গ্রামের বাড়ি রংপুর হলেও চট্টগ্রামের পতেঙ্গা এলাকায় থাকেন শিশু শাওনের পরিবার। শাওনের মরদেহ রংপুর নিয়ে যাবে এবং সেখানেই দাফন কাজ সম্পন্ন করবে বলে জানালেন নিহত শাওনের পরিবার।
প্রসঙ্গত, করোনা পরিস্থিতির পর থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসার অভাবে রোগী মৃত্যুর অভিযোগ দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। চট্টগ্রামে বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরেও একটি আইসিইউ বেডের অভাবে মৃত্যু হয়েছে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর।
হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল ঘুরেও চিকিৎসা না পেয়ে স্বজন হারানোর অভিযোগ করেছেন বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার পরিবারও। হাইকোর্টের আদেশ, সরকারি নির্দেশ, মেয়রের হুমকি জনগণের প্রবল প্রতিবাদেও এই করোনাকালে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর যেন মন গলছে না!
২৪ ঘণ্টা/রাজীব প্রিন্স