২৪ ঘন্টা ডেস্ক : মহানবীর (দ.) দুনিয়ায় শুভাগমন দিবস ১২ রবিউল আউয়াল রাজধানী ঢাকার মিরপুরে আন্জুমানে রহমানিয়া মইনীয়া মাইজভাণ্ডারীয়ার উদ্যোগে ও মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফের ইমাম হযরত শাহ্সূফী মাওলানা সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল্-হাসানী (মা.জি.আ.) এর নেতৃতে লাখো লাখো নবী প্রেমী জনতার উচ্ছ্বাস মুখর অংশগ্রহণে জশনে জুলুস বের করা হয়েছে।
কালেমা খচিত বিভিন্ন ফেষ্টুন, ব্যানার, প্লেকার্ড, জাতীয় ও সংগঠনের পতাকা হাতে ধর্মীয় মানব শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীরা স্লোগানে স্লোগানে রাজধানীর রাজপথ প্রকম্পিত করে তুলে।
১০ নভেম্বর রবিবার সকালে মিরপুর-১ দারুস সালাম রোড থেকে জশ্নে জুলুস শুরু করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক শান্তি মহাসমাবেশ।
এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল্-হাসানী বলেন, মানবজাতিসহ সমগ্র সৃষ্টি জগতের মাঝে আজ অফুরান আনন্দের হিল্লোল বয়ে যাচ্ছে। কেননা, ১২ রবিউল আউয়ালের এই দিনে পুরো জগৎকে আলোকিত করে তশরিফ এনেছেন মানবজাতির মুক্তির দিশারী হযরত মুহাম্মদ (দ.)।
তিনি যখন দুনিয়ায় আগমন করেন তখন ছিল তমাসাচ্ছন্ন তথা আইয়্যামে জাহেলিয়াতের যুগ। আরবের গোত্রে গোত্রে যুদ্ধ বিগ্রহ লেগেই থাকতো। ঐ সময়ে কন্যা সন্তানকে অভিশাপ মনে করে জীবন্ত কবর দেয়া হতো। নারী জাতির কোন মর্যাদাই ছিল না। নারীরা ছিল ভোগ-বিলাসিতার পণ্য। মহানবীর (দ.) এসবের অবসান ঘটিয়ে নারী জাতিকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন।
শুধু তাই নয়, রাষ্ট্র ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় তিনি মদিনার সনদ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করেন। শান্তি সম্প্রীতি ও মানবকল্যাণই ছিল মহানবীর (দ.) অনুপম আদর্শ। তাঁর জীবনাদর্শ অনুসরণ এবং যথাযথ স্মরণের মাধ্যমে আমরা জাগতিক জীবনে শান্তি এবং পরকালীন অনন্ত জীবনেও মুক্তির দিশা পেতে পারি।
সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল্-হাসানী আরো বলেন, বিশ্বজুড়ে আজ মানবতার আর্তনাদ ও গভীর হাহাকার শোনা যায়। নিপীড়ন, বঞ্চনা ও দলনে বিশ্বের লাখো লাখো জনগোষ্ঠীর জীবনে দুর্দশা ও মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে। ইসলামসহ প্রতিটি ধর্মই শান্তির কথা বলে।
শান্তি, সম্প্রীতি ও সব ধর্মের মানুষের সহাবস্থানই এই মুহূর্তে বিশ্ববাসীর আকাঙ্খা। তাই, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অক্ষুন্ন রাখা এবং সব ধর্মের মানুষ মিলে সহাবস্থানের হাজার বছরের ঐতিহ্য আমাদের ধরে রাখতে হবে। তিনি ফিলিস্তিন, সিরিয়া, ইয়েমেন, কাশ্মীর ও মিয়ানমারের নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে বিশ্বে শান্তি জননিরাপত্তা ফিরিয়ে আনতে বিশ্ব নেতৃত্বের প্রতি আহ্বান জানান।
দুর্নীতি, মাদক, জুয়া, পর্নোগ্রাফি দেশকে রসাতলে নিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব সামাজিক অনাচার রুখতে রাষ্ট্রকেই সর্বাগ্রে এগিয়ে আসতে হবে।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধক গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি॥ তিনি বলেন, দেশকে জঙ্গিবাদের মাধ্যমে সংকটের মধ্যে ফেলার প্রচেষ্টা ছিলো। কিন্তু হক্কানী আলেমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। আলেমরা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করেছেন। আমি শুকরিয়া আদায় করছি ঘূীর্ণঝড় থেকে আমরা রক্ষা পেয়েছি আমি এই শান্তি সমাবেশে আসতে পেরে আনন্দিত।
বিশেষ অতিথি শাহজাদা সৈয়দ মাশুক-এ-মইনুদ্দীন, শাহজাদা সৈয়দ হাসনাইন-এ-মইনুদ্দীন, পার্লামেন্ট অব ওয়ার্ল্ড সূফীজের সাংগঠনিক সম্পাদক ড. আহমদ তিজানী বিন ওমর।
মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী বলেন, মহানবীর (দ.) শুভাগমনের এই দিনে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আমাদেরকে শপথ নিতে হবে। সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে যেকোনো মূল্যে আমাদের প্রতিহত করতে হবে। না হয় দেশ ও জাতি কঠিন প্রশ্নের সম্মুখিন ও ক্ষতিগ্রস্থ হবে। তিনি ধর্মীয় সহিংসতায় জড়িতদের ব্যাপারে কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
পরিশেষে মিলাদ কিয়াম পরিবেশন শেষে সকল প্রকার প্রকৃতিক দুর্যোগ ও বিশ্ব মানবতার কল্যাণ শান্তি সমৃদ্ধি কামনায় বিশেষ মুনাজাত পরিচালনা করেন হযরত শাহ্সূফী সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল্-হাসানী (মা.জি.আ.)।