Tag: জাতির উদ্দেশে ভাষণ

  • সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা

    সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা

    অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আজ রোববার (১৭ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাতটায় তিনি এ ভাষণ দিবেন।

    ভাষণটি বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) এবং বিটিভি ওয়ার্ল্ডে সম্প্রচারিত হবে।

    প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

    এর আগে ১১ সেপ্টেম্বর ও ২৫ আগস্ট সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধান উপদেষ্টা।

    উল্লেখ্য, শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেশত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। এরপর ৬ আগস্ট বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধান ও ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের বৈঠকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে দেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

    গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন ড. ইউনূস।

  • সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী

    সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী

    কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে সৃষ্ট উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আজ বুধবার (১৭ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার ভাষণটি সম্প্রচার করবে।

    প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব কে এম শাখাওয়াত মুন এ তথ্য জানিয়েছেন।

    প্রেস উইং থেকে জানানো হয়, দেশের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভাষণটি বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও রেডিও স্টেশনগুলো একযোগে সম্প্রচার করবে।

    সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের আন্দোলনের মধ্যে গত তিন দিন ধরে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও এলাকায় সহিংসতা চলছে। যার জেরে মঙ্গলবার মারা গেছেন ছয় জন।

    ২০১৮ সালে সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র হাইকোর্ট অবৈধ ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষার্থীরা দুই সপ্তাহ ধরে টানা আন্দোলন চালিয়ে আসছে।

    এর মধ্যে রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাফ জানিয়ে দেন, সরকারি চাকরিতে কোটার বিষয়টি আদালতেই ফয়সালা করতে হবে।

    বক্তব্যের এক পর্যায়ে সরকারপ্রধান বলেন, কোটা আন্দোলন করার আগে তো তাদের রেজাল্টগুলো দেখা উচিত ছিলো যে- কোথায় তারা দাঁড়িয়েছে! দ্বিতীয়টি হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি তাদের এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি পুতিরা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতি পুতিরা (চাকরি) পাবে?

    ধারাবাহিক আন্দোলনের মধ্যে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওই বক্তব্য নিয়ে রোববার রাতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখান, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে গভীর রাতে বিক্ষোভে নামেন।

    তারই জের ধরে সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় কোটা আন্দোলনকারীদের।

  • নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন বলা যাবে না: সিইসি

    নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন বলা যাবে না: সিইসি

    নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন ও অংশগ্রহণমূলক নয় মর্মে আখ্যায়িত করা যাবে না বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।

    শনিবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এ কথা করেন।

    সিইসি বলেন, নির্বাচনের প্রাতিষ্ঠানিক পদ্ধতিগত প্রশ্নে মত-বিরোধের কারণে এবারের নির্বাচনে কাঙ্খিত সেরকম রাজনৈতিক অংশগ্রহণ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে না। নির্বাচনী সার্বজনীনতা প্রত্যাশিত মাত্রায় হয়নি। তারপরও ২৮টি দল নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করছে। সর্বমোট এক হাজার ৯৭১ জন প্রার্থী ২৯৯ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ফলে নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন ও অংশগ্রহণমূলক নয় মর্মে আখ্যায়িত করা যাবে না।

    তিনি বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে উৎসাহ ও উদ্দিপনার মধ্য দিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা শেষ হয়েছে। এখন কেবল ভোট গ্রহণ শুরুর অপেক্ষা।

    প্রার্থী ও ভোটারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, অংশগ্রহণকারী সকল প্রার্থী ও ভোটার সাধারণকে নির্বাচন বিষয়ক বিধি-বিধান অনুসরণ করতে হবে। নির্বাচনি দায়িত্বে নিয়োজিত সকল কর্মকর্তাকেও আইন ও বিধি-বিধান যথাযথভাবে অনুধাবন, প্রতিপালন ও প্রয়োগ করে সততা ও নিষ্ঠার সাথে নির্বাচন পরিচালনার সার্বিক বিষয়ে আরোপিত দায়িত্বপালন করতে হবে। দায়িত্ব পালনে অবহেলা, শৈথিল্য, অসততা ও ব্যত্যয় সহ্য করা হবে না। নির্বাচন বিষয়ক আইন ও বিধি-বিধান বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।

    কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যগণ ভোটকেন্দ্রসমূহের পারিপার্শ্বিক শৃঙ্খলাসহ প্রার্থী, ভোটার, নির্বাচনি কর্মকর্তাসহ সর্বসাধারণের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন। কোনো প্রার্থী বা প্রার্থীর পক্ষে জাল ভোট, ভোট কারচুপি, ব্যালট ছিনতাই, অর্থের লেনদেন ও পেশিশক্তির সম্ভাব্য ব্যবহার কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে। তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেলে প্রার্থিতা তাৎক্ষণিক বাতিল করা হবে।

    প্রয়োজনে কেন্দ্র বা নির্বাচনী এলাকার ভোট গ্রহণ সামগ্রিকভাবে বন্ধ করে দেয়া হবে বলেও জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার।

    এ সময় তিনি জনগণকেও ঐক্যবদ্ধ হয়ে সকল প্রকারের নির্বাচনি অনিয়ম-অনাচার প্রতিহত করার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানান।

  • সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন সিইসি

    সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন সিইসি

    দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে আজ শনিবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।

    শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা এ তথ্য জানান। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে সিইসির ভাষণ সম্প্রচার করা হবে।

    নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কর্মকর্তারা জানান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ আগামী রোববার (৭ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে নির্বাচন কমিশন। সিইসি ভাষণে জাতিকে সংসদ নির্বাচনে ভোটারদের ভোট দেওয়াসহ সুষ্ঠু নির্বাচনে সহায়তা করতে প্রার্থীদের আহ্বান জানাবেন।

    এর আগে, গত ১৫ নভেম্বর জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। ওই ভাষণে তিনি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। ওইদিন আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন থেকে তার ভাষণ বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

    এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ১১ কোটি ৯৬ লাখ। এর মধ্যে নতুন ভোটার এক কোটি ৫৪ লাখ ৫২ হাজার। মোট ভোটারের মধ্যে পুরুষ ৬ কোটি ৭৬ লাখ ও নারী ৫ কোটি ৮৯ লাখ। আর ট্রান্সজেন্ডার ভোটার ৮৪৯ জন। আগামীকাল ৭ জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ব্যালট পেপারের মাধ্যমে চলবে ভোটগ্রহণ।

  • শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন আজ

    শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন আজ

    দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আজ বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

    বুধবার (৩ জানুয়ারি) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। দলের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে নিয়মিত এই সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি।

    তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের শেষ জনসভা হতে যাচ্ছে। এদিন শেষার্ধে জাতির উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাষণ দেবেন।

    দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের সবশেষ জনসভা আজ। এদিন দীর্ঘ ১৫ বছর পর নারায়ণগঞ্জ শহরে জনসভা করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুপুর আড়াইটায় শহরের মাসদাইর এলাকায় শামসুজ্জোহা ক্রীড়া কমপ্লেক্স মাঠে উপস্থিত থাকবেন তিনি।

  • গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করে এমন কোনো অপপ্রচারে প্রশ্রয় দিবেন না: প্রধানমন্ত্রী

    গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করে এমন কোনো অপপ্রচারে প্রশ্রয় দিবেন না: প্রধানমন্ত্রী

    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সাংবিধানিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার লক্ষ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত কোন অপপ্রচারকে প্রশ্রয় বা উস্কানি না দেয়ার জন্য গণতন্ত্র ও আইনের শাসনে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, মানুষের অধিকার কেউ যাতে কেড়ে নিতে না পারে সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

    তিনি বলেন, “গণতন্ত্র ও আইনের শাসনে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলসমূহ এবং প্রতিষ্ঠানের প্রতি অনুরোধ সাংবিধানিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হয় এমন কোন উদ্ভট ধারনাকে প্রশ্রয় দিবেন না এবং ইন্ধন যোগাবেন না।”

    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সন্ধ্যায় বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের চতুর্থ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে একথা বলেন।

    বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং বেসরকারি চ্যানেলে প্রচারিত এই ভাষণে আগামী নির্বাচন এই বছরের শেষে বা পরের বছরের শুরুর দিকে অনুষ্ঠিত হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কিন্তু এখন লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, স্বাধীনতা বিরোধী, ক্ষমতালোভী, জনগণের সম্পদ লুণ্ঠনকারী আর পরগাছা গোষ্ঠির সরব তৎপরতা শুরু হয়েছে। এদের লক্ষ্য ঘোলাটে পরিস্থিতি সৃষ্টি করে পিছনের দরজা দিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করা। গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করা। কাজেই সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।

    তিনি বলেন, “এরা লুণ্ঠন করা অর্থ দিয়ে দেশে-বিদেশে ভাড়াটে বুদ্ধিজীবী ও বিবৃতিজীবী নিয়োগ করেছে। তারা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কুৎসা রটিয়ে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যে ও ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। এদের মিথ্যাচারে বিভ্রান্ত হবেন না।”

    তিনি বলেন, একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং তার সরকার এ লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা দেবে।

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রত্যাশা করছি। নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য বাংলাদেশে এই প্রথম একটি আইন পাশ করা হয়েছে। সেই আইনের আওতায় সার্চ কমিটি করে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে আর্থিক স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করছে এবং ভবিষ্যতেও করবে। সরকার সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনকে সব ধরনের সহায়তা দিয়ে যাবে।

    তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের দল, জনগণের শান্তিতে বিশ্বাসী, জনগণের শক্তিতে বিশ্বাসী। জনগণ ভোট দিয়ে বিজয়ী করলে আওয়ামী লীগ দেশ গড়ার জাতীয় দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখবে। যদি বিজয়ী না করে, তাহলে আমরা জনগণের কাতারে চলে যাব। তবে, যেখানেই থাকি, আমরা জনগণের সেবা করে যাব।
    কিন্তু ষড়যন্ত্র করে কেউ যাতে জনগণের অধিকার কেড়ে নিতে না পারে, সেদিকে সকলের সজাগ দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানিয়ে

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, একইসঙ্গে, কেউ যাতে আন্দোলনের নামে অরাজকতা সৃষ্টি করে মানুষের জানমালের এবং জীবিকার ক্ষতিসাধন করতে না পারে, সেদিকে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

    শেখ হাসিনা বলেন, গত ১৪ বছরে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়েছে। বাংলাদেশকে আজ আর কেউ বন্যা, খরা, দুর্যোগের দেশ হিসেবে দেখে না। বাংলাদেশ এখন উদীয়মান অর্থনীতির দেশ। উন্নয়নের রোল মডেল।

    বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে, উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাতিসংঘসহ দুই ডজনেরও বেশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং সংগঠনে বাংলাদেশ সক্রিয় সদস্য। গত অক্টোবরে ৫ম বারের মত বিপুল ভোটে বাংলাদেশ জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছে এবং প্রতিবেশীদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থানের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

    তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে স্থলসীমানা চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে সিটমহলবাসীর ৬৮ বছরের বন্দী জীবনের অবসান হয়েছে। ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমানার শান্তিপূর্ণ মীমাংসার মাধ্যমে বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরের ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার সামুদ্রিক এলাকার উপর সার্বভৌম অধিকার অর্জন করেছে। তাঁর সরকার ১১ লাখের মত রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বিশ্বে মানবিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

    প্রধানমন্ত্রী আবারো আগামীতে সুখী ও সমৃদ্ধশালী স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলে জাতির পিতার কাঙ্খিত সাধারণ মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর দৃঢ় প্রত্যয় ও পুনর্ব্যক্ত ব্যক্ত করেন।

    তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পর আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য হলো স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের নানা অনুসঙ্গ ধারণ করে আমরা তরুণদের প্রশিক্ষিত করে তোলার উদ্যোগ নিয়েছি। স্মার্ট বাংলাদেশে, স্মার্ট গভর্মেন্ট, স্মার্ট জনগোষ্ঠী, স্মার্ট শিল্প কলকারখানা ও ব্যবসা-বাণিজ্য, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাণিজ্য, কৃষিসহ সকল ক্ষেত্রে রোবোটিকস, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ন্যানো টেকনোলজি, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, জৈব প্রযুক্তি অর্থাৎ ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। সকল ক্ষেত্রে গবেষণার উপর জোর দেওয়া হয়েছে।

    শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শোষণ-বঞ্চনামুক্ত একটি সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। আসুন, স্মার্ট দেশ গড়ার মাধ্যমে একটি সুখী-সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলে আমরা তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করি। এদেশের সাধারণ মানুষের মুখে হাসি ফোটাই।

    প্রধানমন্ত্রী বিএনপি-জামাত জোট সরকারের শেষ অর্থবছরে আমরা কোথায় ছিলাম আর এখন আমাদের অবস্থান কোথায় সে বিষয়ে কয়েকটি আর্থ-সামাজিক সূচকের মাধ্যমে তাঁর ভাষণে দেশের অবস্থান তুলে ধরেন।

    তিনি বলেন, জোট সরকারের শেষ অর্থবছর ২০০৫-০৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ছিল ৫৪৩ মার্কিন ডলার। বর্তমানে তা ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

    ২০০৫-০৬ অর্থবছরে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ। বর্তমানে দারিদ্রের হার ২০ শতাংশ। জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। করোনা মহামারির আগে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে তা ৮ দশমিক এক-পাঁচ শতাংশে দাঁড়িয়েছিল।

    ২০০৫-০৬ মেয়াদে জিডিপির আকার ছিল মাত্র ৬০ বিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরে জিডিপি’র আকার হয়েছে ৪৬০ দশমিক সাত-পাঁচ বিলিয়ন ডলার।

    তিনি বলেন, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে জাতীয় বাজেটের আকার ছিল ৬১ হাজার ৫৭ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা।

    বিএনপি-জামাতের শেষ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি খাতে আয় হয়েছিল ১০ দশমিক পাঁচ-দুই বিলিয়ন ডলার। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫২ দশমিক শূন্য-আট বিলিয়ন ডলারে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল ৪ দশমিক আট-শূন্য বিলিয়ন ডলার।

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৫-০৬ সময়ে শিশুমৃত্যুর হার ছিল প্রতি হাজারে ৪৫ জন। বর্তমানে তা নেমে এসেছে ২২ জনে। গড় আয়ু সাড়ে ৬৪ বছর থেকে ৭৩ বছরে উন্নীত হয়েছে। সাক্ষরতার হার ৪৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭৫ দশমিক ২ শতাংশ হয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির হার ছিল ৭১ শতাংশ, তা হয়েছে ৯৯ শতাংশ।

    সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে ২০০৫-০৬ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৩৭৩ কোটি টাকা। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা।

    তিনি বলেন, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে কৃষি খাতে ভতুর্কি দেওয়া হয়েছিল ৫৯২ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে কৃষি খাতে মোট ভর্তুকির পরিমাণ ৪০ হাজার কোটি টাকা। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে দেশে চাল উৎপাদন হয়েছিল ১ কোটি ৭৯ লাখ মেট্রিক টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে চাল, গম, ভুট্টা উৎপাদন হয়েছে ৪ কোটি ৭২ লাখ ৮৮ হাজার মেট্রিক টন।

    প্রবাসী আয় এবং দেশের রিজার্ভের খতিয়ানও তুলে ধরেন তিনি।

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, রেমিট্যান্সে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে বিদেশ থেকে প্রবাসী বাংলাদেশীরা পাঠিয়েছেন ২২ দশমিক শূন্য-সাত বিলিয়ন ডলার। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে তা ৪৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা ও মূল্যস্ফীতির কারণে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৪ বিলিয়ন ডলারে। বর্তমানে ৫ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো রিজার্ভ রয়েছে।

    দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার চিত্র তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, বিএনপি-জামাত জোটের শেষ বছর বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছিল মাত্র ৩ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট। বর্তমানে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ২৫ হাজার ৮২৬ মেগাওয়াট। সে সময় বিদ্যুৎ সুবিধাপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠির হার ছিল মাত্র ৪৫ শতাংশ। ২০২২ সালে শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধা দিয়েছি। সব ঘর আলোকিত করেছি।

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ দেশের শতভাগ মানুষ বিদ্যুতের আওতায়। নিজস্ব গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি বর্ধিত চাহিদা মেটানোর জন্য আমরা এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করে এলএনজি আমদানির ব্যবস্থা নিয়েছি। প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত আজ মধ্যবিত্ত-নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে গ্যাসের চুলায় রান্না হয়।

    তিনি বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের ৪১তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে সামিল হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে। জেন্ডার সমতা এবং নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষে।

    শেখ হাসিনা বলেন, বিগত ১৪ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার পদ্মা সেতু, বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু, তিস্তা সেতু, পায়রা সেতু, ২য় কাঁচপুর সেতু, ২য় মেঘনা, ২য় গোমতী সেতুসহ শত শত সেতু, সড়ক, মহাসড়ক নির্মাণ ও পুনঃনির্মাণ করেছে।

    এছাড়া, ঢাকায় হানিফ ফ্লাইওভার, তেজগাঁও-মগবাজার-মালিবাগ ফ্লাইওয়ার, কমলাপুর-শাহজাহানপুর ফ্লাইওভার, বনানী ফ্লাইওভার, টঙ্গীতে আহসানউল্লাহ মাস্টার ফ্লাইওভার, চট্টগামে আক্তারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভার ও বদ্দারহাট ফ্লাইওভারসহ বহুসংখ্যক ছোটবড় ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে।

    তিনি বলেন, আমরাই প্রথম ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ, নবীনগর-ডিইপিজেড-চন্দ্রা, ঢাকা-এলেঙ্গা মহাসড়ক চার বা তদুর্ধ্ব লেনে উন্নীত করি। ঢাকা-মাওয়া-জাজিরা এক্সপ্রেসওয়ে দেশের প্রথম এ ধরনের মহাসড়ক। এলেঙ্গা-রংপুর মহাসড়ক, আরিচা মহাসড়ক এবং ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। এয়ারপোর্ট থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে আগামি বছর যানবাহনের জন্য খুলে দেওয়া হবে। ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে খুলনা পর্যন্ত এবং চট্টগ্রাম হতে কক্সবাজার পর্যন্ত রেল যোগাযোগ স্থাপনের কাজ চলছে। যমুনা নদীর উপর রেলসেতু নির্মাণ কাজও এগিয়ে যাচ্ছে। গত নভেম্বরে একদিন ১০০ সেতু এবং ডিসেম্বরে ১০০ সড়ক উদ্বোধন করা হয়ে। দেশের উন্নয়নের ইতিহাসে এ এক অনন্য অর্জন।

    ২০০৯ থেকে ২০২২ পর্যন্ত প্রায় ৭১৮ কিলোমিটার মহাসড়ক ৪ বা তদূর্ধ্ব লেনে উন্নীত করা হয়েছে। ১ লাখ ১৩ হাজার ৩০৩ মিটার সেতু নির্মাণ বা পুনঃনির্মাণ, ২১ হাজার ২৬৭ মিটার কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে।

    সরকার প্রধান বলেন, ২০০৯ সাল থেকে একটানা ১৪ বছর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে। এই ১৪ বছরে আমরা দেশ ও দেশের জনগণকে কি দিতে পেরেছি- তার বিচার-বিশ্লেষণ আপনারা করবেন। বর্ষপূর্তিতে আমি শুধু কয়েকটি বিষয়ে আলোকপাত করে আপনাদের স্মৃতিকে নাড়া দিতে চাই।

    তিনি বলেন, স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাসহ এ দেশের মহৎ ও বৃহৎ অর্জনসমূহ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগ সরকারের হাত ধরেই অর্জিত হয়েছে।

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা নানা প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ সম্পন্ন করেছি। এই সেতু দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলাকে সড়ক পথে ঢাকা ও অন্যান্য জেলার সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত করেছে। গত ২৮-এ ডিসেম্বর মেট্রোরেল উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে আমরা যোগাযোগের ক্ষেত্রে আরেকটি মাইলফলক স্পর্শ করেছি। কিছুদিনের মধ্যেই শুধু বাংলাদেশেই নয়, চট্টগ্রামে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম পাতাল সড়কপথ- বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধনের মাধ্যমে আরেকটি মাইলফলক স্থাপিত হবে। পাবনার ঈশ^রদীর রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। আমরা ২০১৮ সালের মে মাসে মহাকাশে নিজস্ব স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপন করেছি।

    তিনি উল্লেখ করেন, ২০০৯ সালে আমরা যখন সরকার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করি, তখনও বিশ^ব্যাপী মন্দাবস্থা চলছিল। চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম ছিল আকাশচুম্বী। অন্যদিকে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ছিল নি¤œমুখী। বিদ্যুতের অভাবে দিনের পর দিন লোডশেডিং চলতো। গ্যাসের অভাবে শিল্পকারখানার মালিকেরা যেমন হাহাকার করতো, তেমনি চুলা জ¦লতো না মানুষের বাড়িতে। সারসহ কৃষি উপকরণের উচ্চমূল্য এবং জ¦ালানি তেলের অভাবে কৃষকের নাভিশ^াস উঠেছিল।

    তিনি বলেন, এমনি এক অর্থনৈতিক দূরবস্থার মধ্যে আমরা সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নেই। নির্বাচনী ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে আমরা রূপকল্প-২০২১ প্রণয়ন করি এবং জনগণের সামনে তুলে ধরি।

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের বিপুল ম্যান্ডেট নিয়ে সরকার গঠনের পর সেই ইশতেহারের আলোকে আমরা আশু করণীয়, স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ন করে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে এগিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করি। পাশাপাশি স্থবির অর্থনীতিকে সচল করতে শুরুতেই কৃষি, জ¦ালানি, বিদ্যুৎসহ কয়েকটি খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা কাজ শুরু করি। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের লক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে বেশ কয়েকটি ছোট বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করি।

    তিনি বলেন, খাদ্যশস্য উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য আমরা মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকেই রাসায়নিক সারের দাম কমিয়ে দেই। এরপর আরও দু-দফায় সারের দাম হ্রাস করে কৃষকের ক্রয় ক্ষমতার আওতায় আনা হয়। এমনিভাবে প্রতিটি খাতে আমরা পরিকল্পিত উন্নয়ন নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেই।

    রূপকল্প ২০২১-এর পর আমরা রূপকল্প ২০৪১ এবং বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ প্রণয়ন করেছি। রূপকল্প ২০২১-এ আমরা অন্যান্য লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পাশাপাশি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিলাম। আজকে সন্তুষ্টচিত্তে বলতে পারি, আমরা সে প্রতিশ্রুতি পূরণে সক্ষম হয়েছি।

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২০ সালের শুরুতে বিশ^ব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারি ছড়িয়ে পড়ার পর অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশও এক গভীর অর্থনৈতিক সঙ্কটে পড়েছিল। কিন্তু আপনাদের সহায়তায় এবং আমাদের সরকারের সময়মত উদ্যোগ গ্রহণের ফলে আমরা খুব ভালোভাবেই সেই মহামারি মোকাবিলা করতে পেরেছি। টিকা পাওয়ার যোগ্য শতভাগ মানুষকে বিনামূল্যে টিকা প্রদান করা হয়েছে।

    তিনি বলেন, তাঁর সরকার অর্থনীতিতে মহামারির প্রভাব মোকাবিলায় ২৮টি প্যাকেজের আওতায় ২ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা দিয়েছে এবং গার্মেন্টসসহ অন্যান্য শিল্পকারখানার শ্রমিকদের বেতনভাতা নিশ্চিত করেছে। পাশাপাশি ৫০ লাখ প্রান্তিক মানুষকে দুই দফায় আড়াই হাজার টাকা করে নগদ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। করোনাভাইরাস মহামারির সময় প্রায় ৭ কোটি ৫৮ লাখ ৩৬ হাজার মানুষ নানাভাবে উপকৃত হয়েছেন এবং প্রতিষ্ঠান উপকৃত হয়েছে প্রায় ২ লাখ ১৩ হাজার ৪৬৭টি।

    তবে করোনাভাইরাস মহামারির ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে না উঠতেই শুরু হয়েছে রাশিয়া-উইক্রেন যুদ্ধ। পশ্চিমা দেশগুলোর এবং রাশিয়ার পাল্টাপাল্টি অবরোধের ফলে খাদ্য, জ¦ালানিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং পরিবহন খরচও বৃদ্ধি পেয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফলে আমাদের দেশেও জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। আমরা কয়েকটি পণ্য বেশি দামে কিনে স্বল্পদামে সীমিত আয়ের মানুষের মধ্যে বিতরণ করছি। ১ কোটি পরিবার টিসিবি’র ফেয়ার প্রাইজ কার্ডের মাধ্যমে ৩০ টাকা কেজি দরে চাল ও সাশ্রয়ী মূল্যে ভোজ্য তেল, ডাল ও চিনি ক্রয় করতে পারছেন। ৫০ লাখ পরিবার ১৫ টাকা কেজি দরে মাসে ৩০ কেজি চাল কিনতে পারছেন। অসহায় মানুষদের ভিজিডি ও ভিজিএফ-এর মাধ্যমে ৩০ কেজি করে চাল প্রতিমাসে বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে।

    তাঁর সরকার একইসঙ্গে হিজড়া, বেদে, মান্তা, দলিত, হরিজন, কুষ্ঠরোগীসহ সকল ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী মানুষের জন্য পুর্নবাসন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

    তিনি বলেন, বাংলাদেশ মাছ, মাংস ও ডিম উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। ইলিশ উৎপাদনে বিশ্বে প্রথম। বর্তমানে বিশে^ বাংলাদেশ ধান উৎপাদনে ৩য়, পাট উৎপাদনে ২য়, স্বাদু পানির মাছ উৎপাদনে ২য়। প্রায় ২ কোটি ১০ লাখ কৃষককে কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড প্রদান করা হয়েছে। ১ কোটি কৃষক ১০ টাকা দিয়ে ব্যাংক একাউন্ট খুলেছেন। ভর্তুকির টাকা সরাসরি ব্যাংকে জমা হয়। সেচের জন্য সুলভমূল্যে বিদ্যুৎ এবং কৃষিযন্ত্র ক্রয়ে ৭০ শতাংশ ভর্তুকি পাচ্ছেন।

    ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই অনেকগুলি অঞ্চলে দেশী-বিদেশী কোম্পানি বিনিয়োগ শুরু করেছে। কৃষি পণ্য ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, কৃষি উৎপাদন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আনা হচ্ছে। স্থানীয় পর্যায়ে কোল্ডস্টোরেজ স্থাপন ও ফসল প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

    ‘আমার গ্রাম-আমার শহর’ কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে গ্রামের জনগণকে শহরের সকল নাগরিক সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার কাজ চলছে। গ্রামেও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে গেছে। এ পর্যন্ত ৩৫ লাখেরও বেশি মানুষকে বিনামূল্যে জমিসহ ঘর প্রদান করা হয়েছে। ২ কোটি ৫৩ লাখ শিক্ষার্র্থীকে বৃত্তি-উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে।

    তিনি বলেন, ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ দেশ পরিচালনার সুযোগ পায়। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ – এই ৫ বছরে দেশের প্রতিটি খাতে অভাবনীয় উন্নয়ন সাধিত হয়। বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়। দীর্ঘদিনের সংঘাতের অবসান ঘটিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে পাহাড়ে শান্তি স্থাপন করে। ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানি বন্টন চুক্তির স্বাক্ষরিত হয়। ২১-এ ফেব্রুয়ারি ইউনেসকো কর্তৃক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা পায়। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চারনেতা হত্যার বিচার শুরু করে।

    বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ২৩ বছরের রাজনৈতিক সংগ্রাম এবং ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মধ্য দিয়ে আমরা অর্জন করি মহান স্বাধীনতা। স্বাধীনতার পর জাতির পিতা যখন যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের মাধ্যমে অর্থনীতিকে মজবুত ভিত্তির উপর দ্বার করানোর দ্বারপ্রান্তে, তখনই ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি তাঁকে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ হত্যা করে। স্তব্ধ হয় বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা।

    সরকার প্রধান বিএনপি-জামাতের দু;সাশনের উল্লেখ করে বলেন, ২০০১ সালের প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে জামায়াত-বিএনপি জোট আবার ক্ষমতায় আসে। বিএনপি-জামাতে সরকারের ঐ ৫ বছর ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায়।

    তিনি বলেন, হত্যা-গুম, ধর্ষণ, লুটপাট, সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়ানো এবং জঙ্গিবাদের লালন-পালনসহ অপশাসন-কুশাসনে জোট সরকার যে মাইলফলক স্থাপন করেছিল, এদেশের মানুষ আগে কখনও তা দেখেনি। শুধু আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয় ওই সময়। অর্থনীতির চাকা স্থবির হয়ে পড়ে। মূল্যস্ফীতি, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, বিদ্যুৎ উৎপাদন হ্রাস, সাক্ষরতা হ্রাস জনজীবন দুর্বিসহ করে তোলে।

    তিনি বলেন, মেয়াদ শেষে নানা কুটকৌশলের আশ্রয় নিয়ে স্বাভাবিক ক্ষমতা হস্তান্তরে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। ভোটার তালিকায় ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার অন্তর্ভুক্ত করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার ষড়যন্ত্র করে। দলীয় রাষ্ট্রপতিকেই প্রধান উপদেষ্টার পদ দিয়ে সরকার গঠন করে ৬ জানুয়ারি নির্বাচনের নামে প্রহসনের উদ্যোগ নেয়। জনগণ তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
    এমনি এক অরাজক পরিস্থিতির মুখে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেয়। তারাও জনগণের প্রত্যাশা পূরণে শুধু ব্যর্থই হয়নি, নানা বিতর্কিত কর্মকা-ে জড়িয়ে সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে কালিমালিপ্ত করে। তবে, শেষ পর্যন্ত সেই সরকার ছবিসহ একটি সুষ্ঠু ভোটার তালিকা তৈরি এবং স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সসহ নির্বাচনী সংস্কার সম্পন্ন করে। ২০০৮ সালের ২৯-এ ডিসেম্বর একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্পন্ন হয়। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি আসনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে।

    তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা সহ ’৭৫ এর ১৫ আগস্টের শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন এবং কারা অভ্যন্তরে হত্যাকান্ডের শিকার জাতীয় চার নেতা এবং মুক্তিযুদ্ধের ৩০-লাখ শহীদ এবং ২-লাখ নির্যাতিত মা বোনের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

    ২০০৪ সালের ২১-এ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় নিহত আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভী রহমানসহ ২২ নেতা-কর্মীকে এবং ২০০১ সালের পর নির্মম হত্যাকা-ের শিকার সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ.এম.এস কিবরিয়া, আওয়ামী লীগ নেতা আহসানউল্লাহ মাস্টার, মঞ্জুরুল ইমাম, মমতাজ উদ্দিনসহ ২১ হাজার নেতাকর্মীকেও স্মরণ করেন।

    তিনি ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামাত জোটের অগ্নি সন্ত্রাস এবং পেট্রোল বোমা হামলায় যাঁরা নিহত হয়েছেন তাঁদের স্মরণ করে আহত ও স্বজনহারা পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান।

    তিনি বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠনের চার বছরপূর্তি উপলক্ষে আমি দেশবাসী এবং দেশের বাইরে অবস্থানরত প্রবাসী ভাইবোনদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। একইসঙ্গে আপনাদের খ্রিষ্টীয় নতুন বছর ২০২৩-এর শুভেচ্ছা জানাই।

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, রূপকল্প-২০৪১ লক্ষ্য হচ্ছে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বিশে^র মানচিত্রে প্রতিষ্ঠিত করা। বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০-এর লক্ষ্য হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলা করে বাংলাদেশকে একটি টেকসই উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে হিসেবে টিকিয়ে রাখা।

    তিনি বলেন, আমাদের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার সুফল জনগণ আজ পেতে শুরু করেছে।

    “যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ/প্রাণপণে সরাব জঞ্জাল,/এ বিশ^কে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি/
    নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।/”- কবি সুকান্তের ‘ছাড়পত্র’ কবিতার চারটি চরন তুলে ধরে তাঁর বক্তব্য শেষ করেন প্রধানমন্ত্রী।

  • শুক্রবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী

    শুক্রবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী

    আওয়ামী লীগ সরকারের বর্তমান মেয়াদের চার বছর পূর্তি উপলক্ষে শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে এই ভাষণ সম্প্রচারিত হবে।

    প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব এম এম ইমরুল কায়েস গণমাধ্যমকে এই তথ্য জানান। প্রধানমন্ত্রীর এই ভাষণ বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার, বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ও রেডিও স্টেশনে সম্প্রচার করা হবে বলেও জানান তিনি।

    বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করার পর ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি শেখ হাসিনা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।

  • টাকা ঘরে রেখে নিজের বিপদ ডেকে আনবেন না: প্রধানমন্ত্রী

    টাকা ঘরে রেখে নিজের বিপদ ডেকে আনবেন না: প্রধানমন্ত্রী

    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনাভাইরাস এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে উদ্ভূত বৈশ্বিক সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে তার সরকারকে সাহায্য করার জন্য দেশবাসীকে আহ্বান জানিয়ে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীদের ঘৃণ্য রাষ্ট্রবিরোধী চক্রান্ত সম্পর্কে জনগণকে সতর্ক করেছেন।

    তিনি বলেন, ‘সঙ্কট আসবে। সঙ্কটে ভয় পেলে চলবে না। জনগণের সহায়তায় আমরা করোনাভাইরাস মহামারি সফলভাবে মোকাবিলা করেছি। বর্তমান বৈশ্বিক মন্দাও আমরা মোকাবিলা করবো, ইনশাআল্লাহ। এজন্য আপনাদের সহযোগিতা চাই।’

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের কৃষি উৎপাদন বাড়াতে হবে। আমাদের মাটি ঊর্বর। মাটিতে বীজ ফেললেই যেখানে গাছ জন্মে, ফল হয়, সেখানে বাইরে থেকে কৃষিপণ্য আমদানি করতে হবে কেন? আমি আপনাদের অনুরোধ করছি, এক ইঞ্চি জমিও পতিত রাখবেন না।’

    মহান বিজয় দিবস-২০২২ উপলক্ষে আজ জাতির উদ্দেশে টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি-জামায়াত চক্র সম্পর্কে দেশবাসীকে সতর্ক থাকতে বলেন।

    তিনি বলেন, ‘ জনগণ বয়কট করার পর অগণতান্ত্রিক পন্থায় তারা এখন ক্ষমতায় আসার ষড়যন্ত্র করছে।’

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখনও এদেশে একাত্তরের ‘শকুনি’ এবং পঁচাত্তরের হায়নাদের বংশধরেরা সক্রিয় আছে। সুযোগ পেলেই তারা দন্ত-নখর বসিয়ে দেশটাকে ক্ষতবিক্ষত করে ফেলে। সাধারণ মানুষ ভালো আছে দেখলে এদের গায়ে জ্বালা ধরে। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা সক্রিয় হয়ে উঠে। কিন্তু, বাংলাদেশের মানুষ এদের চিনে ফেলেছে। ষড়যন্ত্র করে আর তাঁদের বিভ্রান্ত করা যাবে না।

    সরকার প্রধান বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে। জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত রয়েছে। সে কারণেই আজ বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকলে কোনদিনই বাংলাদেশ এত উন্নতি করতে পারত না। এখন দেশবাসী আপনাদেরই বেছে নিতে হবে আপনারা কী চান – উন্নত মর্যাদাশীল জীবনের ধারাবাহিকতা না বিএনপি-জামায়াত জোটের দুর্বৃত্তায়নের দুর্বিসহ জীবন?

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি’র শীর্ষ নেত্রী এতিমখানার অর্থ আত্মসাৎ মামলায় দ-প্রাপ্ত। আরেক শীর্ষ পলাতক নেতা অর্থপাচার, দশ-ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান ও একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। সাধারণ জনগণ কেন তাদের ভোট দিতে যাবেন?

    তিনি বলেন, দেশের মানুষের উপর আস্থা হারিয়ে বিএনপি-জামাত এখন বিদেশিদের কাছে দেশের বদনাম করার জন্য কিছু ভাড়াটিয়া লোক নিয়োগ করেছে। পাচারকৃত অর্থ ব্যবহার করছে আর দেশের বদনাম করে বেড়াচ্ছে।

    সরকার প্রধান বলেন, বিএনপি ২০০৬ সালে এক কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটারসহ ভোটার তালিকা করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রচেষ্টা চালায়। বিএনপি’র দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও দুঃশাসনের কারণে দেশে ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারি হয় এবং নির্বাচন বাতিল হয়ে যায়। এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছিল। ৩০০ আসনের মধ্যে তারা মাত্র ৩০টি আসন পেয়েছিল। একইভাবে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনেও জনগণ বিএনপি-জামাত জোটকে ভোট দেয়নি। জনগণের দ্বারা প্রত্যাখাত হয়ে তারা এখন অগণতান্ত্রিক পথে ক্ষমতায় যাওয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ যখন নানা প্রতিকূলতা অতিক্রম করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, সে সময় স্বাধীনতা এবং উন্নয়ন বিরোধী একটি গোষ্ঠী অরাজকতা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এদের অতীত ইতিহাস দেখুন। এদের একটা অংশ (জামাত) শুধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেই ক্ষান্ত হয়নি, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর হয়ে তারা মানুষ হত্যা করেছে। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিলেন এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু, ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে জিয়াউর রহমান এদের রাজনীতিতে পুনর্বাসন করে। পুনর্বাসিত হয়ে এরা আবার হত্যা ও সন্ত্রাসের রাজনীতি শুরু করে।

    তিনি বলেন, আরেকটি দল (বিএনপি) যার জন্ম ও লালন-পালন সেনানিবাস থেকে কোন এক জেনারেলের পকেটে, সেই দলটির হাতে শুধুই রক্তের দাগ। এর প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান জাতির পিতার হত্যা-ষড়যন্ত্রের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। উর্দি গায়ে ক্ষমতা দখল করে সেই ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে সশস্ত্র বাহিনীর হাজার হাজার দেশপ্রেমিক সৈনিক এবং অফিসারকে হত্যা করেছে।

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, এদের প্রত্যক্ষ মদদে হরকাতুল জিহাদ, বাংলাভাই, জমায়িতুল মোজাহিদিন ইত্যাদি জঙ্গি সংগঠন গড়ে উঠে। ২০০৪ সালের ২১-এ আগস্ট শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে গ্রেনেড হামলা করে আমাকে এবং আমার দলের শীর্ষ নেতাদের হত্যা করতে চেয়েছিল। আমি বেঁচে গেলেও সেদিন ২২ জন নেতাকর্মী মারা যায়। তারা ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারা দেশের ৬৩ জেলায় একযোগে ৫০০-এর বেশি স্থানে বোমা হামলা চালায়।

    বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাসের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৩ সালে সারা দেশে বিএনপি-জামাত অগ্নি এবং পেট্রোল বোমা সন্ত্রাসের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে, যা ২০১৫ সাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। এ সময় তাদের পেট্রোল বোমা হামলায় ৫০০ জন নিরীহ মানুষ নিহত হয় এবং ৩ হাজার ১৮০ জন দগ্ধ হয়। দগ্ধ শরীরের যন্ত্রণা আজও অনেকেই বয়ে বেড়াচ্ছেন। এ সময় বিএনপি-জামায়াত জোট সন্ত্রাসীরা হাজার হাজার কোটি টাকার সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তি ধবংস করে। এদের হামলায় সাড়ে তিন হাজার বাস-ট্রাক, ১৯টি ট্রেন, ৯টা লঞ্চ পুড়ে ধ্বংস হয়। ৭০টি সরকারি অফিস ও স্থাপনা ভাংচুর করে এবং ৬টি ভূমি অফিস সম্পূর্ণ পুড়িয়ে দেয়।

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের সরকার। মানুষের কল্যাণের জন্যই কাজ করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। মানুষের ভোগান্তি হোক, কষ্ট হোক- তা আমরা কখনই চাই না। বৈশি^ক কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পেয়েছিল। তা এখন অনেকটা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। মূল্যস্ফীতিও হ্রাস পাচ্ছে। আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই, বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলসহ কোন জিনিসের দাম কমার সঙ্গে সঙ্গে আমরা তা সমন্বয় করবো। তাঁর সরকারের বিগত ১৪ বছরে দেশ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, চলতি বছর ৪ কোটি ৪ লাখ মেট্রিক টন চালসহ ৪ কোটি ৭২ লাখ মেট্রিক টন দানাদার শস্য উৎপাদিত হয়েছে। মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, সবজি, ফলসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য উৎপাদন ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, দেশে দারিদ্র্যের হার ৪০ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে নেমে এসেছে। মাথাপিছু আয় ৫৪৩ ডলার থেকে ২,৮২৪ ডলারে উন্নীত হয়েছে। সাক্ষরতার হার ৪৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৭৫ ভাগে। মাতৃমৃত্যু এবং শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস পেয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার ধারাবাহিকভাবে সরকার পরিচালনায় আছে বলেই এসব অর্জন সম্ভব হয়েছে।

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকারের সময়ে যোগাযোগ অবকাঠামো খাতে এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। অনেক বাধাবিপত্তি পেরিয়ে গত জুন মাসে আমরা পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেছি। এই সেতু দক্ষিণাঞ্চলের ১৯ জেলাকে রাজধানী ঢাকা এবং দেশের অন্য অংশের সঙ্গে সড়কপথে সরাসরি যুক্ত করেছে। তিনি বলেন, অক্টোবর মাসে উদ্বোধন করা হয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ পায়রা সেতু। গত নভেম্বরে দেশের ২৫টি জেলায় ১০০টি সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। দেশের অনেকগুলো মহাসড়ক ৪ বা তদুর্ধ্ব লেনে উন্নীত করা হয়েছে। অন্যগুলোর কাজ চলছে। চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল, ঢাকায় মেট্রোরেল এবং বিমানবন্দর-কুতুবখালী এক্সপ্রেসওয়ের একাংশ খুব শীঘ্রই যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। আমরা পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করছি এবং স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপন করেছি। তিনি বলেন, আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত-স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলবো। এজন্য প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০৪১ প্রণয়ন করে বাস্তবায়ন শুরু করেছি। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত থেকে আমাদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন রক্ষা পায় এবং উন্নত ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারে, সেজন্য আমরা আমরা ডেল্টা প্লান-২১০০ প্রণয়ন করেছি।

    প্রধানমন্ত্রী অযথা গুজবে কান দিয়ে বিভ্রান্ত না হতে দেশবাসীকে পুনর্বার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে অনেকেই নানা মনগড়া মন্তব্য করছেন। তিন মাসের আমদানি খরচ মেটানোর মত রিজার্ভ থাকলেই চলে। বর্তমানে আমাদের পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মত বৈদেশিক মুদ্রা মজুদ আছে। করোনা ভাইরাসের মহামারির সময় সব ধরনের ভারী যন্ত্রপাতি আমদানি, বিদেশ ভ্রমণ এবং অন্যান্য পণ্য আমদানি অনেকটা বন্ধ ছিল। সে সময় আমাদের রিজার্ভ বৃদ্ধি পেয়ে ৪৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ অলস অবস্থায় না রেখে, সেখান থেকে কিছু পরিমাণ অর্থ দিয়ে আমরা একটা বিশেষ তহবিল গঠন করেছি। সেই তহবিলের অর্থ দ্বারা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

    তিনি বলেন, সোনালি ব্যাংকের মাধ্যমে এই ঋণ দেওয়া হচ্ছে ২ শতাংশ হার সুদে। ঘরের টাকা সুদসহ ঘরেই ফেরত আসছে। এ অর্থ যদি বিদেশি ব্যাংক থেকে ঋণ হিসেবে নেওয়া হতো তাহলে ৪/৫ শতাংশ হারে সুদসহ ফেরত দিতে হতো। আর তা পরিশোধ করতে হতো রিজার্ভ থেকেই। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস পাওয়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আমরা বেশি দামে জ্বালানি তেল, ভোজ্য তেল, গম, ডাল, ভুট্টাসহ অন্যান্য পণ্য ক্রয় করে স্বল্পমূল্যে সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি করছি।

    শেখ হাসিনা বলেন, বাংকে টাকার কোন ঘাটতি নেই। উপার্জিত টাকা ঘরে রেখে নিজের বিপদ ডেকে আনবেন না। আমাদের বিনিয়োগ, রেমিটেন্স প্রবাহ এবং আমদানি-রফতানি পরিস্থিতি সবকিছু স্বাভাবিক রয়েছে।

    সরকার প্রধান বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ এবং পশ্চিমাদের অর্থনৈতিক অবরোধ এবং পাল্টা অবরোধের কারণে আমাদের মত উন্নয়নশীল ও আমদানি-নির্ভর দেশগুলো সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল, ভোজ্য তেল, গম, চিনি, ভুট্টা, ডাল, রাসায়নিক সারসহ প্রায় সকল ভোগ্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। পরিবহন খরচ বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। যে জাহাজ ভাড়া ছিল ৮০০ ডলার তার ভাড়া এখন ৩ হাজার ৮০০ ডলার; যে গম টন প্রতি ২০০ ডলারে পাওয়া যেতো, তা ৬০০ ডলারে কিনতে হচ্ছে। আবার নিজস্ব চাহিদা মেটানোর জন্য কোন কোন দেশ বিনা নোটিশে পণ্য রপ্তানি বন্ধ করে দিচ্ছে। সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে আমরা পৃথিবীর যেখানেই আমাদের চাহিদার পণ্য পাওয়া যাচ্ছে এবং যত দামই হোক, সেখান থেকেই তা সংগ্রহ করছি এবং যোগান দিচ্ছি।

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ১ কোটি পরিবারকে টিসিবি’র ফেয়ার প্রাইজ কার্ড দিয়েছি। এই কার্ডের মাধ্যমে পরিবারগুলো ৩০ টাকা কেজি দরে চাল ও সাশ্রয়ীমূল্যে ভোজ্য তেল, ডাল ও চিনি সংগ্রহ করতে পারছেন। ৫০ লাখ পরিবার ১৫ টাকা কেজি দরে মাসে ৩০ কেজি চাল কিনতে পারছেন। অসহায় মানুষদের ভিজিডি ও ভিজিএফ-এর মাধ্যমে ৩০ কেজি করে চাল প্রতিমাসে বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে।

    তিনি বলেন, সময়োচিত পদক্ষেপ গ্রহণ করে আমরা করোনা ভাইরাসের কারণে মানুষের প্রাণহানি যেমন কমাতে পেরেছি, তেমনি অর্থনীতিকে সচল রাখতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের লক্ষ্য ছিল মানুষের জীবন বাঁচানোর পাশাপাশি তাঁদের জীবিকা সচল রাখা। করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে আমরা জরুরিভিত্তিতে বিভিন্ন হাসপাতালে ১৫ হাজার শয্যা বৃদ্ধি করেছিলাম।

    স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা জন্য পিপিই, রোগীর জন্য অক্সিজেন, ভেন্টিলেটর, জরুরি ওষুধসহ সকল উপকরণ সরবরাহ করা হয়। টিকা পাওয়ার উপযোগী সবাইকে বিনামূল্যে প্রায় ৩৪ কোটি টিকা দেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত ১৪ কোটি ৯০ লাখ মানুষ প্রথম ডোজ, ১২ কোটি ৬৫ লাখ ২৫ হাজার দ্বিতীয় ডোজ এবং ৬ কোটি ৪৫ লাখ মানুষ বুস্টার ডোজ পেয়েছেন। ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ২২ হাজার ডাক্তার এবং ৪০ হাজার নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

    আওয়ামী লীগ সরকার সব সময়ই সাধারণ মানুষের কল্যাণে জন্য কাজ করে উল্লেখ করে দলটির প্রধান বলেন, আমরাই ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে বয়স্ক, বিধবা, স্বামী পরিত্যাক্তা, প্রতিবন্ধী এবং মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ প্রান্তিক মানুষের জন্য বিভিন্ন ভাতা চালু করেছিলাম। এসব ভাতাভোগীর সংখ্যা এবং টাকার পরিমাণ উভয়ই বৃদ্ধি করা হয়েছে। সমাজের সকল অনগ্রসর শ্রেণির মানুষ যেমন, হিজড়া, বেদে, হরিজন, সুইপার, চা শ্রমিক – এদের জন্য বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষাভাতা ও অন্যান্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির বিভিন্ন কর্মসূচির আওতায় প্রায় সাড়ে চার কোটি মানুষ উপকৃত হচ্ছেন।

    তিনি বলেন, মুজিববর্ষে আমরা ঘোষণা করেছি কোন মানুষই আশ্রয়হীন থাকবে না। সেজন্য আমরা ভূমিহীন পরিবারকে বিনামূল্যে জমিসহ ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছি। এ পর্যন্ত ৩৫ লাখ মানুষকে বিনামূল্যে ঘর নির্মাণ করে দিয়ে পুনর্বাসন করা হয়েছে।

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, শহর থেকে গ্রাম – প্রতিটি ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে গেছে, সকলের ঘর আলোকিত হয়েছে। কম্পিউটার শিক্ষা, ব্রডব্যান্ড, ইন্টারনেট সংযোগ গ্রামে গ্রামে পৌঁছে গেছে। ২ কোটি কৃষক কৃষি উপকরণ কার্ড দিয়ে স্বল্পমূল্যে সার, বীজসহ অন্যান্য উপকরণ সংগ্রহ করতে পারছেন।

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের বিজয়ের ৫১ বছর পূরণ হলো। আমাদের অব্যাহত প্রচেষ্টা হলো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের দারিদ্র্য-ক্ষুধামুক্ত অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলা। পঁচাত্তরের পর, ২৯ বছর মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তি রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিল এবং তারা দেশের সম্পদ লুটে-পুটে খেয়ে দেশটাকে খোকলা বানিয়েছিল।

    তিনি বলেন, বিজয় দিবসে আমি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাদানকারী বিভিন্ন দেশ ও সেসব দেশের জনগণ, ব্যক্তি এবং সংগঠনের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। বিশেষ করে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বীর সদস্য আমাদের মুক্তিযুদ্ধে শহিদ হয়েছেন। তাঁদের প্রতি আমি গভীর শ্রদ্ধা জানাচিছ। কৃতজ্ঞতা জানাচিছ ভারতের তৎকালীন সরকার, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং সর্বোপরি সাধারণ জনগণকে- যাঁরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সমর্থন জানিয়েছিলেন, শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছিলেন এবং নানাভাবে সহযোগিতা করেছিলেন।

    শেখ হাসিনা বলেন, আসুন, এবারের বিজয় দিবসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে সম্মিলিতভাবে শপথ নেই, সকল ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে আমরা বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাব। একটি সুখী-সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন পূরণ করবো।

  • সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী

    সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী

    মহান বিজয় দিবস-২০২২ উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে তার ভাষণ সরাসরি সম্প্রচার করবে বিটিভিসহ বিভিন্ন টেলিভিশন।

    প্রধানমন্ত্রী সহকারী প্রেস সচিব এম এম ইমরুল কায়েস (রানা) এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

    তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহান বিজয় দিবস-২০২২ উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ভাষণ দেবেন।

  • উন্নয়ন-অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত করার অপচেষ্টা সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

    উন্নয়ন-অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত করার অপচেষ্টা সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের চলমান উন্নয়ন ও অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত করার যে কোন ধরনের অপচেষ্টা সম্পর্কে সকলকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ প্রদান করেছেন।
    টানা তৃতীয় মেয়াদে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে তিনি আজ এই ভাষণ প্রদান করেন।

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের যে মহাসড়ক বেয়ে দুর্বার গতিতে ধাবিত হচ্ছে তা যেন কোনভাবেই বাধাগ্রস্ত হতে না পারে সেদিকে আপনাদের সকলের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। উন্নয়নের পথে সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করতে আমরা বদ্ধপরিকর।’

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর গত ১২ বছরে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে একটি আত্মমর্যাদাশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।

    ‘আর্থ-সামাজিক এবং অবকাঠামো খাতে বাংলাদেশের বিস্ময়কর উন্নয়ন সাধিত হয়েছে,’ বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

    শেখ হাসিনা বলেন, ‘দ্য ইকোনমিস্ট’-এর ২০২০ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী ৬৬টি উদীয়মান সবল অর্থনীতির দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৯ম এবং ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম’র পূর্বাভাস অনুযায়ী ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৪তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ।

    তিনি বলেন, দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই বাংলাদেশকে একটি আত্মমর্যাদাশীল দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। তবে, মাঝে ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত বিএনপি-জামাত এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সে প্রচেষ্টায় ছেদ পড়েছিল।

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ আজ একটি সমীহের নাম। জাতিসংঘের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনসহ আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব আজ চোখে পড়ার মত।

    তিনি বলেন, ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে উচ্চ মধ্যম-আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ আয়ের সমৃদ্ধশালী-মর্যাদাশীল দেশ। আমরা ২০২১ সালের পূর্বেই উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছি। প্রত্যাশিত লক্ষে পৌঁছতে আমরা পথ-নকশা তৈরি করেছি। রূপকল্প ২০৪১-এর কৌশলগত দলিল হিসেবে দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১ প্রণয়ন করা হয়েছে।

    শেখ হাসিনা বলেন, আমরা আজ অনেক দূর এগিয়েছি সত্য। আমাদের আরও বহুদূর যেতে হবে। হতে পারে সে গন্তব্য পথ মসৃণ, হতে পারে বন্ধুর।

    বাঙালি বীরের জাতি। পথ যত কঠিনই হোক, আমাদের কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছতে হবে। আমরা যদি পরিশ্রম করি, সততা-দেশপ্রেম নিয়ে দায়িত্ব পালন করি, তাহলে আমরা সফলকাম হবোই, ইনশাআল্লাহ,বলেন তিনি।

    প্রধানমন্ত্রী এ সময় তাঁর সরকারের সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ-মাদক এবং দুর্নীতি বিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখার প্রত্যয় পুণর্ব্যক্ত করেন।

    তিনি বলেন, আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছি। দুর্নীতিবাজ যে দলেরই হোক আর যত শক্তিশালীই হোক, তাদের ছাড় দেওয়া হচ্ছে না এবং হবে না। এ ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশন স্বাধীনভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করছে।

    শেখ হাসিনা বলেন, আইনের শাসন সমুন্নত রেখে মানুষের নাগরিক এবং গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করতে যা যা করা প্রয়োজন আমরা তা করবো।

    তিনি আরো বলেন, আমরা কঠোর হস্তে জঙ্গিবাদের উত্থানকে প্রতিহত করেছি। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এখানে সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষ পারস্পরিক সহনশীলতা বজায় রেখে বসবাস করে আসছেন এবং ভবিষ্যতেও করবেন।

    প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে কোভিড-১৯ বিষয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলায় জনগণের প্রতি তাঁর আহ্বান পুণর্ব্যক্ত করে কোভিড-১৯ চলাকালে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সরকারি উদ্যোগ, ভ্যাকসিন প্রাপ্যতা নিশ্চিতে সরকারের প্রচেষ্টা, রোহিঙ্গা সমস্যা, দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের চিত্র, মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনসহ বিভিন্ন প্রসঙ্গেরও উল্লেখ করেন।

    তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্বদেশে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আরও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান।

    বৈশ্বিক মহামারির অস্বাভাবিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে বর্তমান সময়কে প্রধানমন্ত্রী ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রার এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং তৃতীয় মেয়াদে সরকার পরিচালনার প্রাপ্ত দায়িত্বকে ‘পবিত্র আমানত’ উল্লেখ করে এর তৃতীয় বর্ষে পদার্পণকালে দেশ ও দেশের বাইরে অবস্থানরত বাংলাদেশের সকল নাগরিককে অভিনন্দন এবং ইংরেজী নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান।

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের সরকার হিসেবে মানুষের জীবনমান উন্নয়ন করা আমাদের দায়িত্ব এবং কর্তব্য বলেই আমি মনে করি। গত একযুগে আমরা জনগণের জন্য কী করেছি, তা মূল্যায়নের ভার আপনাদের।

    তিনি বলেন, আমার পরম সৌভাগ্য যে, আপনাদের সকলের সঙ্গে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালন করতে পারছি এবং মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছি।

    তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং আদর্শকে ধারণ করে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্য-নিরক্ষরতামুক্ত একটি অসাম্প্রদায়িক কল্যাণকামী বাংলাদেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকার ও পুণর্ব্যক্ত করেন।

    প্রধানমন্ত্রীর এই ভাষণ বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার সহ বেশ কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এবং রেডিওতে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়।

    শেখ হাসিনা চতুর্থবার এবং টানা তৃতীয় বারের মত ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। এরআগে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তাঁর দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নিরংকুশ বিজয় অর্জন ককরে।

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ুর পরিবর্তনের ঘাত-প্রতিঘাত মোকাবিলা করে কাক্সিক্ষত উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য এর আগে আমরা ‘বাংলাদেশ বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ শীর্ষক পরিকল্পনা গ্রহণ করে। করোনাভাইরাসের মহামারি সত্ত্বেও আমাদের অর্থনীতি সঠিক পথে অগ্রসর হচ্ছে এবং বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে বহুল আরাধ্য নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতুর সর্বশেষ স্প্যান বসানোয় দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে রাজধানীসহ অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত করা হয়েছে।

    তিনি বলেন, এ পর্যন্ত পদ্মাসেতুর ৮২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, আগামী বছর এই স্বপ্নের সেতু যানবাহন এবং রেল চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া সম্ভব হবে। অন্যান্য বৃহৎ প্রকল্পগুলোর কাজও পূর্ণদ্যোমে এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার অংশে রেললাইন বসানো হয়েছে।

    শেখ হাসিনা বলেন, ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের ইতিহাসে এ যাবতকালের সর্ববৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১,২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন প্রথম ইউনিটের নির্মাণ কাজের ৮০ শতাংশ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে এবং নির্ধারিত ২০২৩ সালের এপ্রিল নাগাদ এই ইউনিট থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হবে।

    রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র দেশের প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করবে, বলেন তিনি।

    প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, চট্টগ্রামে কর্ণফুলির নদীর তলদেশে ট্যানেল নির্মাণের কাজও দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে, এই ট্যানেলের ৬২ শতাংশ কাজ সমাপ্ত হয়েছে।

    দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করে-সেরকম কয়েকটি খাতের অতীত এবং বর্তমানের তুলনামুলক চিত্র তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের পর্যালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী।

    তিনি বলেন, ২০০৯ সালে আমাদের সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পূর্বে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতির কথা একবার স্মরণ করুন-বিদ্যুৎ কখন আসবে আর কখন যাবে তার কোন নিশ্চয়তা ছিল না। তাঁর সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পর স্বল্প, মধ্যম এবং দীর্ঘ-মেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করে আজ বিদ্যুৎ উৎপাদনে স্বনির্ভরতা অর্জন করেছে।

    তিনি বলেন, ২০০৯ থেকে ২০২০ পর্যন্ত প্রায় ১৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। বর্তমানে দৈনিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা দাঁড়িয়েছে ২৪ হাজার ৪২১ মেগাওয়াটে এবং বিদ্যুৎ সুবিধাভোগী সংখ্যা ৪৭ শতাংশ থেকে ৯৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

    পায়রাতে ইতোমধ্যে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে। রামপাল, পায়রা, বাঁশখালী, মহেষখালী এবং মাতারবাড়িতে আরও মোট ৭ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট শক্তিসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ কাজ চলছে, বলেন তিনি।

    শেখ হাসিনা বলেন, মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে শতভাগ মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে সব ঘর আলোকিত করা হবে।
    তিনি আরো বলেন, ২০০৯ সালে জাতীয় গ্রিডে ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হতো বর্তমানে যা ২ হাজার ৫২৫ মিলিয়ন ঘনফুটে দাঁড়িয়েছে। ২০১৮ সাল থেকে তরলীকৃত গ্যাস আমদানি করা হচ্ছে।

    তাঁর সরকারের অব্যাহত নীতি সহায়তা ও প্রণোদনায় দেশে কৃষি বিপ্লব সাধিত হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে দানাদার খাদ্যশস্য উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৪ কোটি ৫৩ লাখ ৪৪ হাজার মেট্রিক টন।

    তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বে ধান উৎপাদনে ৪র্থ থেকে ৩র্থ স্থানে উন্নীত হয়েছে। মাছ-মাংস, ডিম, শাকসবজি উৎপাদনেও বাংলাদেশ স্বয়ং-সম্পূর্ণ। অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মাছ উৎপাদন বৃদ্ধির হারে বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্থানে এবং ইলিশ উৎপাদনকারী ১১ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম।

    আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে তাঁর সরকার দেশের প্রায় সকল গ্রামে পাকা সড়ক নির্মাণ করেছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

    তিনি বলেন, ঢাকায় বিমানবন্দর থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ ২০২৩ সাল নাগাদ শেষ হবে।

  • ধর্মকে রাজনীতির হাতিয়ার করবেন না: প্রধানমন্ত্রী

    ধর্মকে রাজনীতির হাতিয়ার করবেন না: প্রধানমন্ত্রী

    ধর্মকে রাজনীতির হাতিয়ার না করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ, ধর্মান্ধ নয়। ধর্মকে রাজনীতির হাতিয়ার করবেন না। প্রত্যেককে নিজ নিজ ধর্ম পালনের অধিকার রাখেন। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান – সকল ধর্মের-বর্ণের মানুষের রক্তের বিনিময়ে এ দেশ স্বাধীন হয়েছে।

    মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জাতির উদ্দেশে দেয়া এক ভাষণের শুরুতেই তিনি এসব কথা বলেন। ওই ভাষণটি বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি), বাংলাদেশ বেতার এবং বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও রেডিও এক যোগে সম্প্রচার করা হয়।

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বাংলাদেশ লালন শাহ, রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল, জীবনানন্দের বাংলাদেশ। এ বাংলাদেশ শাহজালাল, শাহ পরান, শাহ মকদুম, খানজাহান আলীর বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশ শেখ মুজিবের বাংলাদেশ; সাড়ে ষোল কোটি বাঙালির বাংলাদেশ। এ দেশ সকলের। এ দেশে ধর্মের নামে আমরা কোন ধরনের বিভেদ-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে আমরা দিব না। ধর্মীয় মূল্যবোধ সমুন্নত রেখে এ দেশের মানুষ প্রগতি, অগ্রগতি এবং উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাবেন।

    বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ১৯৭৫-এর বিয়োগান্তক ঘটনার ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার পরিচালনার দায়িত্বে আসে। ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে এবং ২০০৯ থেকে আজ পর্যন্ত আমাদের সরকার দেশের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে অভাবনীয় উন্নয়ন সাধন করেছে।

    শেখ হাসিনা বলেন, আমার সরকার ধর্মীয় শিক্ষা প্রচার এবং প্রসারে যত কাজ করেছে, অতীতে কোনো সরকারই তা করেনি। আমরা ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেছি। ৮০টি মডেল মাদ্রাসায় অনার্স কোর্স চালু করা হয়েছে। কওমি মাদ্রাসাকে স্বীকৃতি দিয়েছি এবং দাওয়ারে হাদিস পর্যায়কে মাস্টার্স মান দেওয়া হয়েছে। মাদ্রাসার শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ দিয়েছি।

    প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, প্রতিটি জেলা-উপজেলায় দৃষ্টিনন্দন মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। ইমাম- মোয়াজ্জিনদের সহায়তার জন্য কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করে দিয়েছি। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আওতায় সারা দেশে মসজিদ-ভিত্তিক পাঠাগার স্থাপন করা হয়েছে। লক্ষাধিক আলেম-ওলামায়ে কেরামের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তথাপি ১৯৭১’র পরাজিত শক্তির একটি অংশ মিথ্যা, বানোয়াট, মনগড়া বক্তব্য দিয়ে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বিভ্রান্ত করতে ইদানিং মাঠে নেমেছে। সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করতে চাচ্ছে।

    শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা ১৯৭২ সালে বলেছিলেন ধর্মকে রাজনীতির হাতিয়ার না করতে। কিন্তু পরাজিত শক্তির দোসররা দেশকে আবার ৫০ বছর আগের অবস্থায় ফিরে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে। রাজনৈতিক মদদে সরকারকে ভ্রæকুটি দেখানোর পর্যন্ত ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে।

  • ২৫ মার্চ জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী

    ২৫ মার্চ জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী

    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২৫ মার্চ (বুধবার) জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগ ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারসহ দেশের সবগুলো টেলিভিশন চ্যানেল সরাসরি সম্প্রচার করবে।

    ধারণা করা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ভাষণে দেশে সংক্রমিত নভেল-১৯ করোনা ভাইরাস রোধে বিশেষ দিক-নির্দেশনা দিবেন।

    এছাড়া প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের ভয়াল কালরাত্রি ও স্বাধীনতা দিবস প্রসঙ্গ তুলে ধরতে পারেন।