Tag: ঝাঁকে ঝাঁকে

  • সীতাকুণ্ডে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ : খুশি ক্রেতা, খুশি জেলেরাও

    সীতাকুণ্ডে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ : খুশি ক্রেতা, খুশি জেলেরাও

    সীতাকুণ্ডের সদ্বীপ চ্যানেলের বিভিন্ন ঘাট দিয়ে জোঁতে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে রূপালী ইলিশ। তবে মহাজন বা দাদনদের হাতে জিম্মি উপজেলার প্রায় ৩৮ হাজার জেলে।

    সরকার ঘোষিত চিহ্নিত উপকূলীয় এলাকার ইলিশ প্রজনন ক্ষেত্রসহ সারা দেশে ইলিশ মাছ আহরণ, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাত করণ ও বিক্রয় নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। ফলে এসময় উপজেলার মৎস্যজীবীরা ইলিশ ধরার জন্য সাগরে নামতে পারেনি।

    বেধে দেওয়া সময়ের পর সীতাকুণ্ড উপজেলার সৈয়দপুর, বাঁশবাড়ীয়া, বোয়ালীয়াকুল, কুমিরা,সোনাইছড়ি, সলিমপুর, শেখেরহাট, মুরাদপুর, বাড়বকুন্ড, ভাটিয়ারী, ফৌজদারহাটসহ বিভিন্ন উপকূলীয় অঞ্চলের জেলে পরিবারের সদস্যরা এখন ইলিশ শিকারে ব্যস্ত।

    জানা যায়, ইলিশ মৌসুম বলতে শ্রাবন, ভাদ্র, আশ্বিন এই তিন মাসকে বোঝায়। তবে মৌসুমের শুরুতে তারা ইলিশ শিকারে গহীন সাগরে অবস্থান করলেও মাছ না পেয়ে ক্রমশ হতাশ হয়ে পড়ে। ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞার টানা ৬৫ দিন পর এবার উপকূলীয় অঞ্চলের জেলেদের মুখে হাসি ফুটেছে।

    নদীতে জাল ফেললেই জেলেদের জালে ধরা পরছে ঝাঁকে ঝাঁকে রুপালি ইলিশ। মহাজন ও বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ নিয়ে জেলেরা মাছ ধরেন। এ অবস্থায় মাছের দাম ভালো থাকলে ঋণ পরিশোধে এ বছর জেলেদের সমস্যা হবে না বলে মনে করছেন তারা। গত দুুই/তিনদিন উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে জেলেদের জালে প্রচুর পরিমান ইলিশ ধরা পড়ছে।

    বেশি মাছ ধরা পড়াতে জেলেরা যেমন খুশি তেমনী দামও ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকায় ক্রেতারাও খুশি। সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন ঘাটে ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে কেজি ১০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা ধরে বিক্রি হচ্ছে। তবে কেজিতে ৪/৫ টা ধরা মাছ বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ২০০ টাকা কেজি এবং কেজিতে ১টি এমন ওজনের মাছ বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৪শত থেকে ৫শ টাকা কেজি দরে সীতাকুন্ড উপজেলা জুড়ে ৩৩টি জেলে পল্লীর প্রায় ৩৮ হাজার জেলে পরিবারের সদস্য রয়েছে।

    তবে সাগরে আগের মত জলদস্যুর উৎপাত দেখা না গেলেও ইলিশ মৌসুম ছাড়া অন্যান্য সময়ে বিভিন্ন প্রজাতীর মাছ পাওয়া যাচ্ছেনা সাগরে। ফলে তারা সংসার চালাতে দাদনদের কাছ থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে। তাই দাদন সমস্যা রোধ করা না গেলে একদিকে যেমন অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রুস্ত হবে সরকার, অন্যদিকে মাছ তথা আমিষ থেকে বঞ্চিত হবে সাধারন মানুষ।

    এ প্রসঙ্গে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ শামীম ২৪ ঘন্টা ডট নিউজকে বলেন, উপজেলার বিভিন্ন উপকূলীয় অঞ্চলের জেলেরা দাদনদের কাছে জিম্মি বিষয়টি শুনেছি। জেলে সম্প্রদায়ের মানুষগুলো অর্থের ভাবেই দাদনদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে জাল,নৌকা কিনে এবং সংসার চালায়। তাই তারা দাদনদের কাছে ইলিশ মাছ দিতে বাধ্য হচ্ছে।

    তবে এ বিষয়ে কোন জেলে সহযোগিতা চাইতে উপজেলায় আসেনি। বর্তমানে মৎস্য জীবীদের প্রয়োজন তারা অন্যত্র থেকে ঋণ নিয়ে জাল ও নৌকা কিনতে পারলে দাদনদের সাথে তাদের যে সমস্যা সেটা আর থাকবেনা। ফলে তারা মাছেরও ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে পারবে বলে মনে করেন তিনি।

    এদিকে গত কয়েক বছর ইলিশ মাছের অনেকটা আকাল ছিল সমুদ্রে। কিন্তুু এবার দেশের সবগুলো উপকূলীয় এলাকায় জেলেদের মুখে হাসি। প্রতি ১৪ থেকে ১৫ বছর অন্তর এ ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় বলেও জানিয়েছেন সমুদ্র বিশেষজ্ঞরা।

    দেশের অন্যান্য জেলার মত চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডেও সাগরে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। লবণ ও বরফের দাম বেড়ে যাওয়ায় সব মাছ সংরক্ষণ করতে না পারায় ইলিশ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন জেলেরা। অনেকেই তরতাজা মাছগুলো রেখে বাসি-পঁচা মাছ ফেলে দিচ্ছেন।

    উপজেলার কুমিরা ইউনিয়নের কুমিরাঘাট, বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের বোয়ালিয়াকুল, সোনাইছড়ি ইউনিয়নের ফকিরহাট সাগরপাড়ে সরেজমিনে দেখা যায়, যেখানে-সেখানে পঁচে যাওয়া ইলিশ পড়ে আছে। এতে পুরো এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। খালের পানিতেও প্রচুর পঁচা ইলিশ ভাসতে দেখা গেছে।

    জেলেরা তরতাজা ইলিশগুলো রেখে বাকি মাছ ফেলে দিচ্ছেন। কুমিরার জেলে নিতাই দাশ বলেন, গত তিন দিন এত বেশি মাছ পড়েছে যে অনেকে জালের কিছু অংশ কেটে সাগরে ফেলে দিয়ে এসেছেন। অনেকে জাল থেকে মাছ খুলতে না পারায় জাল-মাছ একসঙ্গে তীরে নিয়ে এসেছেন। এ সময় পঁচে যাওয়ায় অনেক মাছ ফেলে দিতে হচ্ছে।