২৪ ঘণ্টা ডট নিউজ। আলীউর রহমান : ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, ডাক্তার তাহমিনা বানু, ডাক্তার মহসীন জিল্লুর করিম, ড. আদনান মোর্শেদ চারজনই দেশের নক্ষত্র। তাদের মা জোহরা বেগম (৮৭) মঙ্গলবার রাত দুইটায় পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকার নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেছেন।
নিরবে আড়ালে থেকে আজীবন তিনি নিজ সন্তানদের মানুষের কল্যাণে কাজ করার অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। একজন মায়ের চার সন্তান সমাজের সর্ব উচ্চ শিখরে অবস্থান করে গণমানুষের কল্যাণে কাজ করে এমন নজির দেশে বিরল। তিনি চন্দনাইশের বড়মা গ্রামের ডাক্তার আবদুল মতিন স্ত্রী।
চার সন্তানের পরিচিতি :
(১) ড. হোসেন জিল্লুর রহমান : জন্ম ২৬ জুলাই ১৯৫১। তিনি একজন শিক্ষাবিদ, অর্থনীতিবিদ ও বেসরকারি সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান ব্র্যাকের চেয়ারম্যান। তিনি ড. ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন এবং বাণিজ্য ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন।
বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, যুক্তরাজ্য আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিভাগ, ডেনিশ আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা, সুইডিশ আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতা সংস্থা, টেকসই উন্নয়ন কমিশন, অ্যাকশন এইড, জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও জাতীয় সংস্থার পরামর্শদাতা ছিলেন। তাছাড়াও বাংলাদেশের নীতি নির্ধারক ও সুশীলদের একজন হিসেবে পরিচিত ড. হোসেন জিল্লুর রহমান।
(২) ডাক্তার তাহমিনা বানু : চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে অধ্যাপক হিসাবে অবসর গ্রহনকারী এই মহিয়সী নিজে ঘর সংসার করেননি। দেশের ক্রটি নিয়ে জন্মগ্রহণ কারী কঠিন রোগে কষ্ট পাওয়া শিশুরাই তার সন্তান।
১৯৯৩ সালে ডা. তাহমিনা বানুর হাত দিয়ে যাত্রা করে শিশু সার্জারি বিভাগ। দেশে অসংখ্য শিশুর ক্রিটিক্যাল অপারেশন সম্পন্ন হয়েছে ‘শিশুবন্ধু’ খ্যাত এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে। অবিরাম চালিয়ে যাচ্ছেন শিশু সার্জারিসহ চিকিৎসা নিয়ে নানা গবেষণা।
শিশু সার্জারি জগতে আন্তর্জাতিক আঙিনায় ইতিমধ্যে তৈরি করেছেন নিজের সর্বোচ্চ অবস্থান। দেশি ৬৯টি এবং আন্তর্জাতিক ৪১টি চিকিৎসা সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর গবেষণা প্রবন্ধ।
বিশ্বে প্রথম তিনি জন্মগত ত্রুটির ওপর গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেন ২০১৩ সালে। এর আগে বিষয়টি ভারতে আলোচনা হলেও লিখিতভাবে প্রথম আন্তর্জাতিক জার্নালে তাঁর গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ হয়। তাছাড়া, বর্তমানে দেশের একমাত্র চিকিৎসক তিনি, যিনি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত অক্সফোর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি অধ্যাপক হিসেবে ক্লাস নেন।
তাঁর ‘লো কস্ট কোলাবোরেট’ ফান্ড ২০১৭ সালে যাত্রা করা এ ফান্ডের মাধ্যমে ইতিমধ্যে ২৫০ জন রোগীর সেবা দেওয়া হয়েছে। যেখানে কোটি টাকার চিকিৎসা খরচ হয় শিশুদের এমন জটিল রোগ বিনা পয়সায় অথবা সামর্থ্য অনুযায়ী ফিতে করা হয়।
(৩) ডাক্তার মহসীন জিল্লুর করিম : MBBS, MRCP, FRCP, FACC. Cardiacare Heart and General HospitalSt। দেশের নাম করা কার্ডিয়াক বিশেষজ্ঞ। তিনি গত ১৫ বছর ধরে নিজ এলাকা চন্দনাইশে ফ্রি ক্লিনিক সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। চট্টগ্রামে যে কোন চ্যারিটি চিকিৎসা ক্যাম্পে ডাকলেই চলে আসেন।
(৪) ড. আদনান মোর্শেদ : তিনি বর্তমানে স্কুল অফ আর্কিটেকচার অ্যান্ড প্ল্যানিং, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয়, ওয়াশিংটন ডিসির সহযোগী অধ্যাপক। এমআইটি, এবং বি আর্চ থেকে আর্কিটেকচারে মাস্টার্স ওপিএইচডি করেছেন।
তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেছেন। ওয়াশিংটন, ডিসির স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউশনের জাতীয় বায়ু ও মহাকাশ যাদুঘরে স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন তিনি।
তিনি সোসাইটি অফ আর্কিটেকচারাল হিস্টোরিস্টসের পরিচালনা পর্ষদে, মানবিক অনুদানের জন্য জাতীয় অনুদানের জন্য জুরি এবং সম্প্রতি, অ্যালিস ডেভিস হিচকক বই পুরস্কারের জন্য সোসাইটি অব আর্কিটেকচারাল হিস্টোরিয়ানস কমিটির সভাপতিত্ব করেছেন।
আদনান মোর্শেদকে ন্যাশনাল গ্যালারী অফ আর্টের ভিজ্যুয়াল আর্টস (সিএএসভিএ) এর সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিতে ওয়াইথ ফেলোশিপ, অন্যদের মধ্যে অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক ফেলোশিপ প্রদান করা হয়েছে। স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউশন; ওল্ফসোনিয়ান-ফ্লোরিডা আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়; আর সোসাইটি অফ আর্কিটেকচারাল হিস্টোরিয়ানস।
তাঁর গবেষণা গ্রাহাম ফাউন্ডেশন, ন্যাশনাল এন্ডোমেন্ট ফর হিউম্যানিটিস এবং এমআইটি থেকে সম্মানজনক গবেষণা অনুদান পেয়েছে। তিনি ইম্পসিবল হাইটস: স্কাইস্ক্রেপার্স, ফ্লাইট এবং মাস্টার বিল্ডার (ইউনিভার্সিটি মিনেসোটা প্রেস, ২০১৫) এবং ওকুলাস: অ্যাডসাইড অফ ইনসাইটস ইন বাংলাদেশি অ্যাফেয়ার্স (ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড, ২০১২)।
তিনি আধুনিক স্থাপত্য ও নগরবাদের ইতিহাস এবং তত্ত্ব, নগর পরিবেশ ও জেন্ডার ন্যায়বিচার এবং উন্নয়নশীল দেশগুলিতে টেকসই নগর পরিকল্পনার বিষয়ে বিশ্বজুড়ে বক্তৃতা দিয়েছেন।
তাঁর নিবন্ধগুলি সোসাইটি অফ আর্কিটেকচারাল হিস্টোরিয়ানস, জার্নাল অফ আর্কিটেকচারাল এডুকেশন, জার্নাল অফ সাউথ এশিয়ান স্টাডিজ, থ্রেশহোল্ডস (এমআইটি), সেন্টার (আর্ট গ্যালারী অফ আর্ট), কনস্ট্রাক্টস (ইয়েল), নিউ জিওগ্রাফিজ (হার্ভার্ড), স্থাপত্য নকশা এবং dition ঐতিহ্যগত আবাসন এবং সেটেলমেন্ট পর্যালোচনা। আরো পড়ুন : মারা গেছেন ব্র্যাকের চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমানের মা
তিনি বিভিন্ন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক রেফার্ড জার্নালের জন্য পর্যালোচক হিসাবে কাজ করেছেন। ২০১২ সালে, তিনি দক্ষিণ এশিয়ার তিনটি শহর: ঢাকা, দিল্লি এবং চণ্ডীগড়ে সোসাইটি অব আর্কিটেকচারাল হিস্টোরিয়ান্সের অধ্যয়ন সফরে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
বর্তমানে তিনি প্রফেসর মার্ক জারজমবেকের নেতৃত্বে এমআইটি’র গ্লোবাল আর্কিটেকচার হিস্ট্রি টিচিং কোলাবরেটিভকে M1M মেলন ফাউন্ডেশন মঞ্জুরি বোর্ডেও কাজ করছেন। একজন অনুশীলনকারী স্থপতি এবং নগরবিদ, আদনান মোর্শেদ আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, লেবানন, মালয়েশিয়া এবং বাংলাদেশে ভবনগুলি নকশা করেছেন।
২৪ ঘণ্টা/রাজীব প্রিন্স