বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক প্রকৌশলী ফরিদ আহমেদ, সাবেক অতিরিক্ত প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক বর্তমানে বেজার উপ-সচিব মুহাম্মদ রাশেদুল আমিন, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী তাপস কুমার দাস এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ট্রেড অ্যান্ড টেকনোলজির স্বত্বাধিকারী এএসএম ইকবাল মোর্শেদকে আসামি করে ১ কোটি ৩৭ লাখ ৮৭ হাজার টাকা আত্মসাতের মামলা করেন দুদক।
সংস্থাটির সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম- ১ এর উপপরিচালক আহসানুল কবীর পলাশ বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
এজহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২১ সালের ২৩ মার্চ পাহাড়তলী ডিপো হতে ১৪৬ দশমিক ৯২৭ টনের কাঁচা লোহা (পিগ আয়রন) ক্রয়ের চাহিদা প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক দপ্তরে পাঠানো হয়। ওই অর্থবছরে বাজেট স্বল্পতার কারণে ১৪৬ দশমিক ৯২৭ টনের পরিবর্তে ৮৫ মেট্রিক ক্রয় করা যেতে পারে বলে ক্রয় পরিকল্পনার অনুচ্ছেদ ৫.১-এ উল্লেখ করা হয়। সেই মোতাবেক প্রাক্বলিত ব্যয় নির্ধারণী কমিটি বাজার যাচাইপূর্বক প্রতি টন কাঁচা লোহার দাম ২ লাখ ৩৪ হাজার ১০০ টাকা নির্ধারণ করেন। ওই মালামাল ক্রয়ের আনুমানিক সরকারি খরচ অনুমোদন দেওয়া হয় ২০২২ সালের ১৫ নভেম্বর এবং প্রতিবেদন দাখিল হয় একই বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর। সবশেষ মালামাল ক্রয়ের চুক্তিপত্র সম্পাদিত হয় ২০২৩ সালের ৮ আগস্ট। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রাক্কলন ব্যয়ের ৩১ শতাংশ কমে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে মালামাল সরবরাহের কাজ পায়। কিন্তু মালামাল সরবরাহ না করে বিল নিয়েছে বলে দুদক অনুসন্ধানে পেয়েছে। ক্রয়ের প্রাক্কলন কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী বাজারমূল্য ৩ কোটি ৪১ লাখ ৭৮ হাজার ৬০০ টাকা। টেন্ডার কমিটির সদস্যরা ঠিকাদারের সাথে পরস্পর যোগসাজসে অসৎ উদ্দেশ্যে লাভবান হওয়াসহ প্রতারণামূলকভাবে পিপিআর ২০০৮ এর ধারা লঙ্ঘন করে। ফলে চাহিদাকৃত ১৪৬ দশমিক ৯২৭ টনের পরিবর্তে ৮৫ টন সরবরাহ দেখিয়ে মালামাল সরবরাহ না করে সরকারের ১ কোটি ৩৭ লাখ ৮৭ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে দুদকের অনুসন্ধানে ওঠে এসেছে।
দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এর উপ-পরিচালক মো. নাজমুচ্ছায়াদাত বলেন, ১ কোটি ৩৭ লাখ ৮৭ হাজার টাকা আত্মসাতের দায়ে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/১০৯ ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় মামলা রুজু হয়েছে।
কিন্তু মামলায় অভিযুক্তরা বলছেন ভিন্নকথা। তারা বলেন, একটি পক্ষ আমাদের সম্মানহানি করার জন্য এধরণের তথ্য দিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করিয়েছেন।
রেলবুদ্ধারা বলছেন, মালামাল ক্রয়ের দরপত্র আহ্বান ও মূল্যায়নের সঙ্গে জড়িত কমিটির সদস্যরা মামলার আসামি হলেও মালামাল পরিদর্শন, পরীক্ষণ ও গ্রহণের সঙ্গে জড়িতদের মামলায় আসামি করা হয়নি। প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রকসহ মুল্যায়ন কমিটির সদস্যরা মালামাল গ্রহণ ও মুল্য পরিশোধের সঙ্গে জড়িত নয়। ফলে এখানে মালামাল গ্রহণ, পরীক্ষণ ও বণ্টনের সঙ্গে জড়িত দপ্তরগুলো মূলত দায়ী হওয়ার কথা।
জানা গেছে, প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রকের দপ্তর থেকে ৮৫ মেট্রিক টন পিগ আয়রন ক্রয়ে ইজিপি দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্র মূল্যায়ন শেষে সর্বনিম্ন দরদাতা মেসার্স ট্রেড অ্যান্ড টেকনোলজির সঙ্গে চুক্তি হয়। সরবরাহকারী মালামালগুলো জেলা সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রকের পরিদর্শন দপ্তরে সরবরাহ করে। পরিদর্শন দপ্তর পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর গ্রহণ করে ও গ্রহণপত্র জারি করে। ওই গ্রহণপত্রের ভিত্তিতে হিসাব বিভাগ থেকে বিল পরিশোধ করা হয়। এরপর মালামালগুলো পরিদর্শন দপ্তর থেকে জেলা সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক, পাহাড়তলী ডিপো ও সৈয়দপুর জেলা সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রকের দপ্তরে পাঠায়। প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রকসহ মুল্যায়ন কমিটির সদস্যবৃন্দ দরপত্র আহ্বান ও মুল্যায়নের সংগে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। মালামাল গ্রহন ও মুল্য পরিশোধের সংগে জড়িত ছিলেন না।