Tag: দেশ গঠনে

  • সুখি-সমৃদ্ধ দেশ গঠনে শিক্ষিত তরুণরাই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে-রাষ্ট্রপতি

    সুখি-সমৃদ্ধ দেশ গঠনে শিক্ষিত তরুণরাই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে-রাষ্ট্রপতি

    রাউজান (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি : চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)-এর ৪র্থ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি এবং চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে সামনে রেখে একটি তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর জ্ঞানভিত্তিক সুখী-সমৃদ্ধ দেশ গঠনে ‘রূপকল্প ২০২১’ ও ‘রূপকল্প ২০৪১’ ঘোষণা করেছেন।

    এ রূপকল্প বাস্তবায়নে আমাদের নিরলস প্রচেষ্টা চালাতে হবে। এরই মধ্যে আমরা স্বল্প মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার মধ্য দিয়ে উন্নয়নের রূপকল্প বাস্তবায়নে এগিয়ে চলেছি। আজকের শিক্ষিত তরুণরাই এ কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

    আজ ৫ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি এ কথা বলেন।

    রাষ্ট্রপতি কৃতি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, জনবহুল এ দেশকে সমৃদ্ধশালী করতে হলে প্রয়োজন পরিকল্পিত উপায়ে বিদ্যমান সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার। প্রকৌশলীগণ উন্নয়নের কারিগর। তাদের মেধা, মনন ও সৃজনশীল চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসে টেকসই উন্নয়নের রূপরেখা। তাই প্রকৌশলীদের চিন্তা ও চেতনায় থাকবে দূরদৃষ্টির সুস্পষ্ট প্রতিফলন।

    আগামী ২০৫০ সালে বা ২১০০ সালে বাংলাদেশের উন্নয়ন কেমন হওয়া উচিত বা বাংলাদেশের অবস্থান কোন্ স্তরে পৌঁছাবে তা বিবেচনায় রেখেই উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টিকেও যথাযথভাবে গুরুত্ব দিতে হবে।

    বিশ্বায়নের এই যুগে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে আমাদের জ্ঞান ও দক্ষতাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমরা আজ স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের নাগরিক। আমাদের আত্ম-মর্যাদা সমুন্নত রাখতে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে হবে। আমি আশা করি, আজকের নবীন প্রকৌশলীরা বিষয়টি গুরুত্বের সাথে উপলব্ধি করবে এবং তাদের সৃজনশীল চিন্তা ও লব্ধ জ্ঞানকে এ লক্ষ্যে কাজে লাগাবে।

    নবীন গ্রাজুয়েটবৃন্দের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতি বলেন, সমাবর্তন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি মাইলফলক; একইসাথে তা স্নাতকদের জন্যও একটি স্মরণীয় দিন। জীবন চলার পথে তোমরা আজ একটা গুরুত্বপূর্ণ সোপান অতিক্রম করলে। জীবনের আসল সংগ্রাম এখন থেকে শুরু হবে। আজকের এ সনদ প্রাপ্তি সেই সংগ্রামে অবতীর্ণ হবার স্বীকৃতি পত্র। এ সনদের সম্মান তোমাদের রাখতে হবে।

    মনে রাখতে হবে, তোমাদের এ অর্জনে দেশের মানুষের অনেক অবদান রয়েছে। তোমরা তোমাদের সেবা, সততা, নিষ্ঠা ও দেশপ্রেম দিয়ে এ সনদের মান সমুজ্জ্বল রাখবে। কর্মক্ষেত্রে তোমরা পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাক না কেন; মাতৃভূমি এবং এ দেশের জনগণের কথা কখনো ভুলবে না। অন্যায় ও অসত্যের কাছে মাথা নত করবে না। তোমাদেরকে এ পর্যায়ে আসতে দেশবাসী যে সহায়তা করেছে তোমরা তোমাদের মেধা, মনন ও কর্মের মাধ্যমে তা পরিশোধ করবে। আমি তোমাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করি। তোমরা বড় হও এবং দেশ ও জাতির কল্যাণে অবদান রাখ।

    এতে সমাবর্তন বক্তার বক্তব্যে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ.কে. আজাদ চৌধুরী বলেন, গত কয়েক দশকে বাংলাদেশের ধারাবাহিক অর্থনৈতিক সামাজিক সূচকের অগ্রগতি সারা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষন করেছে। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও বাংলাদেশের সাফল্য সারা বিশ্বে প্রসংশিত হয়েছে। আর এই ক্রমবর্ধমান অগ্রগতির পিছনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে চলেছেন যে সব তরূণ প্রকৌশলী এবং প্রযুক্তিবিদ যাদের অনেকেই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক। আমার বিশ্বাস জাতিসংঘ ঘোষিত টেকশই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (ঝউএ) অর্জনেও তোমরা বিশ্বে প্রসংশনীয় ভূমিকা রাখবে।

    অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন চুয়েটের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম। ধন্যবাদ জ্ঞাপন বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. ফারুক-উজ-জামান চৌধুরী।

    অনুষ্ঠানে সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন, রাউজানের সাংসদ এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. শিরীণ আকতার, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নান, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোঃ ইলিয়াছ হোসেন, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক, চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার নুরেআলম মিনা, কেডিএস গ্রুপের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান, রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান এহেছানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল, রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জোনায়েদ কবির সোহাগসহ অন্যান্য অতিথিগণ উপস্থিত ছিলেন।

    এবারের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে গত চার বছরের সর্বোচ্চ সিজিপিএধারী ৪ জনকে “বিশ্ববিদ্যালয় স্বর্ণপদক” প্রদান করা হয়। তাঁরা হলেন- ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ই.এম.কে. ইকবাল আহমেদ, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী রুবাইয়া আবসার, ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী সঞ্চয় বড়–য়া এবং ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মোঃ রাশেদুর রহমান। এছাড়া সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ২ হাজার ১৪৮ জন গ্র্যাজুয়েট এবং ৮৩ জন পোস্ট-গ্র্যাজুয়েটসহ মোট প্রায় ২ হাজার ২৩১ জন ছাত্র-ছাত্রীদেরকে সমাবর্তন ডিগ্রী প্রদান করা হয়।