Tag: ধর্ষণ

  • বোয়ালখালীতে অন্তঃসত্ত্বা কিশোরী ধর্ষণের ৯ মাস পর মামলা

    বোয়ালখালীতে অন্তঃসত্ত্বা কিশোরী ধর্ষণের ৯ মাস পর মামলা

    বোয়ালখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি : চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে এক কিশোরীকে (১৭) ধর্ষণের অভিযোগে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওই কিশোরী বর্তমানে ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা।

    ঘটনার ৯ মাস পর ধর্ষণের শিকার ওই কিশোরীর মা বাদী হয়ে সোমবার (৬ জুলাই) থানায় এজহার দায়ের করলে রাত ২টায় এজহারটি মামলা হিসেবে থানায় রেকর্ড করা হয়।

    দায়েরকৃত এজাহারে বলা হয়, গত বছরের ১০ অক্টোবর রাত সাড়ে ১১টার দিকে কিশোরীকে ঘরে রেখে বাবা-মা মন্দিরে পূজা দিতে যান। ওইদিন রাত সাড়ে ১২টার দিকে কিশোরীকে একা পেয়ে উপজেলা পোপাদিয়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের বাঁশি চন্দ্রের ছেলে মিন্টু চন্দ্র (২২) ঘরে ঢুকে জোর করে মুখ চেপে ধরে ধর্ষণ করে এবং বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বিষয়টি গোপন রাখার জন্য বলে।

    পরবর্তীতে চলতি বছরের শুরুর দিকে শারীরিক অবস্থার পরিবর্তন হলে ঘটনাটি পরিবারকে খুলে বললে মিন্টুর পরিবারকে জানান ওই কিশোরীর পরিবার।

    মিন্টুর পিতা বাঁশি চন্দ্র কিশোরীকে ছেলের বউ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সময়ক্ষেপণ করতে থাকলে ঘটনাটি কিশোরীর পরিবার স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে জানান। এতে দীর্ঘ সময় পেড়িয়ে গেলেও ন্যায় বিচার না পাওয়ায় থানায় এজাহার দায়ের করেছেন কিশোরীর মা।

    স্থানীয়রা জানান, ওই কিশোরীর পিতা রিকশা ও মা অন্যের বাড়ীতে গৃহস্থালি করে সংসার চালান।

    ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ইউপি চেয়ারম্যান এসএম জসিম উদ্দিন জানান, মেয়ে বাবা-মা এ বিষয়ে জানিয়েছিলেন। তবে তারা উভয়পক্ষ বিষয়টি সামাজিকভাবে সমাধানের কথা বললেও কিশোরীর পরিবারকে আইনের আশ্রয় নিতে পরামর্শ দিয়েছিলাম।

    বোয়ালখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল করিম বলেন, অভিযোগ পেয়ে মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। আসামি গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। কিশোরীকে জবানবন্দির গ্রহণের জন্য আদালতে পাঠানো হয়েছে।

    তবে স্থানীয়ভাবে আপস-মীমাংসার নামে এ ধরনের ঘটনায় দীর্ঘ সময়ক্ষেপণ দুঃখজনক বলে জানান তিনি।

    ২৪ ঘণ্টা/এম আর/পূজন

  • ধর্ষণ থেকে বাঁচতে লঞ্চ থেকে নদীতে ঝাপ দিলো কিশোরী

    ধর্ষণ থেকে বাঁচতে লঞ্চ থেকে নদীতে ঝাপ দিলো কিশোরী

    ঢাকা টু বেতুয়া নৌরুটে চলাচলকারী কর্ণফুলী-১৩ লঞ্চের কর্মচারীদের যৌন হয়রানি থেকে বাঁচতে মেঘনা নদীতে ঝাঁপ দিয়য়েছেন এক কিশোরী যাত্রী।

    কিশোরী নদীতে ঝাপ দেয়ার পর লঞ্চ কর্তৃপক্ষ তাকে নদী থেকে উদ্ধার না করে ঢাকায় চলে যায়।

    পরে মাছ ধরার ট্রলারের মাঝিরা কিশোরীকে উদ্ধার করে তজুমদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি করেন। বর্তমানে ওই কিশোরী তজুমদ্দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

    হাসপাতালে ভর্তি কিশোরী (১৬) বলেন, উপজেলার বিচ্ছিন্ন তেলিয়ার চরের মোঃ কবিরের কন্যা সে। কাজের সন্ধানে রাজধানী ঢাকায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে তজুমদ্দিন স্লুইজঘাট থেকে কর্ণফুলি-১৩ লঞ্চে উঠেন।

    লঞ্চে উঠার পর লঞ্চের কর্মচারীরা ওই কিশোরীকে বিভিন্ন কুপ্রস্তাবের মাধ্যমে যৌন হয়রানি করতে থাকেন। এক পর্যায়ে কিশোরীকে তাদের সাথে কেবিনে রাত্রি যাপন করতে টানাটানি করলে সম্ভ্রম রক্ষার্থে সে নদীতে ঝাপ দেয়। লঞ্চ কর্তৃপক্ষ তাকে উদ্ধার করতে একটি বয়া ফেললেও পানির স্রোতে বয়া ধরতে পরেনি কিশোরী।

    পরবর্তীতে তাকে উদ্ধারে অন্যকোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করেই ঢাকার উদ্দেশ্যে চলে যায় লঞ্চটি।

    নদীতে ঝাপ দেয়ার প্রায় ৩ ঘণ্টা পর জেলেরা তাকে উদ্ধার করে তজুমদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি করেন। বর্তমানে কিশোরী তজুমদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

    জানতে চাইলে কিশোরীকে উদ্ধার করা নৌকার জেলে রায়হান বলেন, সন্ধ্যার সময় আমরা নদীতে মাছ ধরার জন্য নৌকা প্রস্তুত করছিলাম হঠাৎ নদীর মাঝে একজন লোক বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার দিতে শুনে আমরা তাকে উদ্ধার করে তীরে নিয়ে আসি। পরে তাকে মিজান তালুকদারসহ অন্যরা হাসপাতালে ভর্তি করেন।

    কর্ণফুলি-১৩ লঞ্চের সুপারভাইজার মোঃ রুবেল বলেন, আমি লঞ্চের উপরে ছিলাম পরে শুনছি লঞ্চ থেকে একজন মহিলা পানিতে লাফ দিয়েছে। তাকে উদ্ধারের জন্য আমরা একটি বয়া ফেলছি সে বয়া ধরতে পারেনি। আমরা ঢাকায় চলে যাই পরে কি হয়েছে জানি না।

    হাসপাতালে থাকা তজুমদ্দিন থানার এসআই মোঃ শামীম বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কিশোরীর সাথে কথা হয়েছে। ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত চলছে, দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

    উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কবির সোহেল বলেন, রোগীর ভাষ্যমতে তাকে লঞ্চের কর্মচারীরা অনৈতিক প্রস্তাব দিলে সে নদীতে ঝাপ দেয়ার সময় ডান হাতে আঘাত পায়।

    জেলেরা নদী থেকে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে আনলে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হয়। বর্তমানে তার অবস্থা ভালো রয়েছে।

    ২৪ ঘণ্টা/এম আর

  • ক্ষোভে ফুঁসছে ঢাবি ক্যাম্পাস

    ক্ষোভে ফুঁসছে ঢাবি ক্যাম্পাস

    রাজধানীর কুর্মিটোলা এলাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হওয়ার জেরে ক্ষোভে ফুঁসছে গোটা ক্যাম্পাস। রোববার দিবাগত রাতেই দোষীদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। সোমবারও বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে নানা ধরনের প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।

    ধর্ষকদের বিচারের দাবিতে সোমবার সকালে একাই অনশনে বসে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের এক ছাত্র। অনশনে বসা ওই ছাত্রের নাম সিফাতুল ইসলাম। দর্শন বিভাগের ২০১৩/১৪ সেশনের ছাত্র তিনি। পরে তার সঙ্গে যোগ দেন আর কয়েকজন শিক্ষার্থী। সেখানে ব্যানারে লেখা রয়েছে, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে ধর্ষণের প্রতিবাদে অনশন।’

    সিফাতুল ইসলাম বলেন, আমাদের বোন ধর্ষণের শিকার হয়েছে তার প্রতিবাদে আমরা অনশন পালন করছি। আমরা দ্রুত ধর্ষকদের গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি।

    বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ধর্ষণের প্রতিবাদে ও বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। বেলা ১১ টায় সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বিশাল মানববন্ধন করে তারা। এসময় ধর্ষণের প্রতিবাদ ও বিচার চেয়ে নানা ধরনের প্ল্যাকার্ড-ব্যানার ছিল তাদের হাতে।

    অন্যদিকে, ছাত্রী নির্যাতন ও ধর্ষণে জড়িতদের শাস্তির দাবিকে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।

    ছাত্রী নির্যাতনের প্রতিবাদে ঢাবি শামসুন নাহার হলের ভিপি তাসনীম আফরোজ ইমির আহ্বানে বিক্ষোভ ও মানববন্ধনের ডাক দিয়েছে শিক্ষার্থীদের অপর একটি অংশ।

    ধর্ষণের শিকার ওই ছাত্রী ঢাকা মেডিকেল কলেজের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী তার সাথে দেখা করতে যাওয়া সহপাঠী, শিক্ষক ও চিকিৎসকদের জানিয়েছেন, রবিবার রাতে রাজধানীর কুর্মিটোলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস থেকে নামার পর অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজন তার মুখ চেপে ধরে। এ সময় তাকে মারধরও করা হয়। এক পর্যায়ে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। অচেতন অবস্থায়ই তাকে ধর্ষণ করা হয়।

    রাত ১০টার দিকে জ্ঞান ফেরার পর তিনি সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে এক বান্ধবীর বাসায় যান। এরপর সহপাঠীরা তাকে ক্যাম্পাসে নিয়ে আসেন। সেখান থেকে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।

    চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মানসিকভাবে বিপর্যস্ত আছেন। আর সুচিকিৎসায় মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।

    ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক আব্দুল কাহান জানান, ২১ বছরের ওই শিক্ষার্থী তার সহপাঠীদের জানিয়েছেন, মুখ চেপে ধরায় তিনি অজ্ঞান হয়ে যান এবং রাত ১০টার পরে তার জ্ঞান ফেরে। এরপর বন্ধুদের ফোন করলে তারা গিয়ে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসেন।

    সহপাঠীরা জানান, হাসপাতালে নেওয়ার সময় ওই শিক্ষার্থী বাম পায়ে প্রচণ্ড ব্যথার কথা বলছিলেন।

    ক্যান্টনমেন্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী শাহান সাহান জানান, পুলিশ ঘটনাটির তদন্ত করছে।

  • মামাতো বোনকে ধর্ষণ করে গ্রেফতার হলেন ফুফাত ভাই

    মামাতো বোনকে ধর্ষণ করে গ্রেফতার হলেন ফুফাত ভাই

    চট্টগ্রামে মামার বাড়িতে বেড়াতে এসে ৯ বছরের মামাতো বোনকে একা পেয়ে ফুঁসলিয়ে ধর্ষণ করেছে ফুফাত ভাই মো. ইসমাইল (৩২)।

    মঙ্গলবার রাতে ঘটনাটি জানাজানি হলে বাঁশখালী উপজেলার চাম্বল এলাকার ৪ নম্বর ওয়ার্ড সিন্দিপাড়া পাড়ার নিজ বাড়ি থেকে ফুফাত ভাই মো. ইসমাইল (৩২)কে পুলিশ আটক করে। আটক ইসমাইল ওই বাড়ির অজিউর রহমানের ছেলে। সে চট্টগ্রাম শহরে একটি পান দোকান ব্যবসায়ি বলে জানা গেছে।

    এলাকাবাসীর কাছ থেকে জানা যায়, গত ২৭ অক্টোবর রবিবার ধর্ষক ইসমাইলের মা তার ভাই বোন ও ইসমাইলসহ উপজেলার উপজেলার উত্তর জলদি মামা বাড়িতে বেড়াতে আসেন। একদিন পরম মঙ্গলবার বিকালে ইসমাইলের মা তার ভাইকে নিয়ে স্থানীয় এক বৈদ্য বাড়িতে যায়।

    এসময় শিশুটির মাও বাড়িতে না থাকায় নয় বছর বয়সী তৃতীয় শ্রেণি পড়ুয়া মামাত বোনকে একা পেয়ে ফুঁসলিয়ে ধর্ষণ করে ইসমাইল। শিশুটির চিৎকারে পার্শ্ববর্তী লোকজন এগিয়ে এলে ইসমাইল পালিয়ে তার নিজ বাড়িতে চলে যায়।

    ওইদিন রাতে শিশুটির মা ঘরে ফিরলে তার মাকে সব খুলে বলে ধর্ষিত শিশুটি। এরপর শিশুটির মা বিষয়টি পৌরসভার মহিলা কাউন্সিলর রোজিয়া সুলতানা রুজিকে অবহিত করলে তিনি বাঁশখালী থানা পুলিশকে ঘটনাটি জানায়।

    বাঁশখালী থানার ওসি (তদন্ত) কামাল উদ্দীন জানান, পৌরসভার মহিলা কাউন্সিলর রোজিয়া সুলতানা রুজিকে নিয়ে শিশুটির মা থানায় এসে অভিযোগ করলে ওইদিন রাতেই বাঁশখালী থানা পুলিশের একটি টিম চাম্বল এলাকার ৪ নম্বর ওয়ার্ড সিন্দিপাড়া পাড়ার নিজ বাড়ি থেকে ইসমাইলকে গ্রেফতার করে আনে।

    তিনি বলেন, ধর্ষণের শিকার শিশুটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও চিকিৎসার জন্য আজ বুধবার চট্টগ্রাম চমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সকালে শিশুটির মা বাদি হয়ে বাঁশখালী থানায় ইসমাইলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন।

  • বাড়ছে অপরাধ প্রবণতা খুন, ধর্ষণ: নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ জরুরী

    বাড়ছে অপরাধ প্রবণতা খুন, ধর্ষণ: নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ জরুরী

    অপরাধ বলতে সমাজ কর্তৃক শস্তিযোগ্য কোনো অন্যায় আচরণকে বুঝায়। সাধারণত অপরাধ আইন বা দন্ডবিধি উদ্দেশ্যমূলকভাবে লঙ্ঘন করাকে আইনগত দৃষ্টিকোণ হতে অপরাধ বলা হয় এবং এর জন্য রাষ্ট্র কর্তৃক শাস্তির বিধান রয়েছে। অপরাধের আইনগত সংজ্ঞার একটি বড় সুবিধা হলো এটি অপরাধের সামাজিক সংজ্ঞা হতে অনেক সংক্ষিপ্ত ও দ্ব্যর্থক।

    সুতরাং আইনগত সংজ্ঞানুযায়ী- (ক) অপরাধ হচ্ছে এক ধরনের আচরণ এবং (খ) ওই আচরণটি বিদ্যমান অপরাধ আইনকে অমান্য করে। এ সংজ্ঞার একটি বড় দুর্বলতা হচ্ছে সমাজের জটিল সমস্যাকে আড়াল করা হয়। কেননা কোনো সমাজই চিরস্থির নয়। আসলে প্রতিনিয়ত সমাজ পরিবর্তিত হচ্ছে।

    একইভাবে অপরাধ প্রবণতা ও এর ধরনও প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। আবার সমাজভেদে অপরাধ আচরণের ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। যেমন সিঙ্গাপুরে চুইংগাম বিক্রি করা একটি অবৈধ কাজ কিন্তু আমেরিকানদের কাছে তা অচিন্তনীয়। সুতরাং অপরাধ সম্পর্কে একটি পূর্ণাঙ্গ ধারণা পেতে হলে একটি বিশেষ সমাজ কোনো কাজগুলোকে অপরাধ হিসাবে বিচার করে তা দেখা অপরিহার্য।

    এছাড়াও সামাজিক সংজ্ঞানুসারে সমাজে প্রচলিত আদর্শসমূহের যে কোনো লঙ্ঘণকে অপরাধ বলে। অর্থাৎ অপরাধ সমাজ বিরোধী কাজ। মানুষের মধ্যে কিছু মানবীয় আচরণ আছে যা অপরাধ আইনের পরিপন্থী নয় কিন্তু সামাজিকভাবে নিন্দনীয় বা সামাজিক রীতিনীতি, প্রথা বা অনুশাসনের পরিপন্থী। ফলে তা সামাজিকভাবে ঘৃণিত ও দন্ডনীয়। এমতাবস্থায় অপরাধ প্রবণতা বা অপরাধ সংঘটিত হওয়া কারো কাম্য নয়। তদুপরি আদিম যুগ থেকেই মানুষের মধ্যে নৃশংসতা ও বর্বরতা ছিল।

    সভ্যতার ক্রমবিকাশের সঙ্গে সঙ্গে তা নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়াস চালানো হয়। যদিও মানুষ সভ্যতার মুখোশ পরে আছে। মানুষের অমানবিক আচরণগুলো মূলত তার পাশবিক প্রবৃত্তির বহিঃপ্রকাশ। জন্মগত পাশবিক প্রবৃত্তিগুলো পারিপার্শ্বিকতার কারণে জাগ্রত হয়। কমবেশি পশুত্ব স্বভাব প্রত্যেক মানুষের মধ্যে রয়ে গেছে। জাতি-গোষ্ঠী, শ্রেণি-লিঙ্গ, অর্থনৈতিক বৈষম্য, না পাওয়ার অতৃপ্তি ও ঘৃণা মানুষের স্বাভাবিক সহজাত প্রবৃত্তিকে বাধাগ্রস্ত করে।

    বিশ্লেষণে দেখা যায় মানুষের অপরাধ প্রবণতা ও নিষ্ঠুরতা সমাজে আগেও ছিল। এখন এর ভিন্ন আকারের চরম বহিঃ প্রকাশ ঘটছে। মানুষের পাশবিকতার যে বহিঃপ্রকাশ ঘটছে, তা এক দিনে তৈরি হয়নি। আগে কোনো অপরাধ করলে সমাজে জবাবদিহি করতে হতো। এখন কোথাও তা করতে হয় না। অন্যায়-অপরাধ করে দিনের পর দিন অপরাধীরা অনায়াসে পার পেয়ে যায়। এতে মানুষের মধ্যে ভীষণ হতাশা তৈরি হয়।

    একজন নিরাশ মানুষ নিজের হতাশাকে কাটাতে, নিজের অপ্রাপ্তিবোধের তাড়না থেকে নিজের চেয়ে দুর্বল কাউকে বেছে নিয়ে তার ওপর হিংস্রতা দেখিয়ে একধরনের মানসিক পরিপূর্ণতা লাভ করতে চায়। এ ধরনের পরিস্থিতিতে সমাজে অপরাধপ্রবণতা বাড়ে। পক্ষান্তরে মানুষ যখন দেখবে, অপরাধ করে পার পাওয়া যায় না, তখন অন্যায় পথে পা বাড়াতে সাহস পাবে না।

    তখন সমাজে অপরাধ করার প্রবণতা কমে আসবে। সভ্য সমাজে কোমলমতি শিশু ও অসহায় নারী নির্যাতনসহ তুচ্ছ কারণে খুনখারাবি, নৃশংসতা, বর্বরতা ও নির্মমতার ঘটনা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে! সমাজ জীবনে মানুষ কেন এমন জঘন্য অপরাধমূলক কর্মকান্ড ঘটাচ্ছে, কেন পশুর মতো এতটা হিংস্র ও নৃশংস হয়ে উঠছে? কেনই-বা মানুষ নিজের ‘মান’ আর ‘হুঁশ’ হারিয়ে অমানুষ হয়ে যায় তা এখন ভাবিয়ে তুলছে সকলকে।

    মানবাধিকার ও সমাজকর্মী, অপরাধ বিশ্লেষক, মনোবিজ্ঞানী, আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা এসব নৃশংসতার জন্য দোষী ব্যক্তিদের যথাসময়ে বিচারের মুখোমুখি করতে না পারাকে দায়ী করছেন; একই সঙ্গে তাঁরা ধর্মীয় মূল্যবোধের অভাব, সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয়কেও দোষারোপ করছেন।

    যদিও সীমা লঙ্ঘনকারী মানুষকে সাবধান করে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমাদের পূর্বে বহু মানবগোষ্ঠীকে আমি ধ্বংস করেছি, যখন তারা সীমা অতিক্রম করেছিল। স্পষ্ট নিদর্শনসহ তাদের কাছে তাদের রাসুল এসেছিল, কিন্তু তারা বিশ্বাস করার জন্য প্রস্তুত ছিল না। এভাবে আমি অপরাধী সম্প্রদায়কে প্রতিফল দিয়ে থাকি।’ অথচ ধর্ম-কর্ম ভুলে ক্ষুদ্র, তুচ্ছ কারণে সমাজে যত বীভৎস ঘটনা ঘটছে, কয়েক বছর আগে তা ছিল না।

    এ ব্যাপারে বর্তমানে গণমাধ্যম অনেক সোচ্চার বলে ঘটনাগুলো বেশি আলোচিত হচ্ছে। ব্যক্তিগত আর সামষ্টিক মূল্যবোধের মধ্যে সংঘাত সব সময় রয়েছে। প্রতিটি বীভৎস ঘটনাকে তাই আলাদাভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করতে হবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে যাদের মধ্যে ধর্মীয় নীতি-নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধ কম, তাদের এই বার্তা দিতে হবে। আর অপরাধ করলে সাজা নিশ্চিত করতে হবে। সম্প্রতি ভাবনার বিষয় হল ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থায় মানবিক মূল্যবোধের আজ দারুণ সংকট।

    সমাজের সর্বস্তরে নৈতিক আধ্যাত্মিক, দার্শনিক ও ধার্মিক চিন্তা-চেতনার পরিবর্তে আস্থাহীনতা, অমানবিকতা, অসভ্যতার মাত্রা দিন দিন বেড়ে চলেছে। কৃত্রিমতা, চাতুরতা, স্বার্থপরতা, তিক্ততা, হীনমন্যতা, ঈর্ষা, ক্রোধ, অহমিকা, দাম্ভিকতা, অনাচার অবিচার, অকৃতজ্ঞতা, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, বেলাল্লাপনা, যৌনাচার, অবিচার, অমিতাচার, নৃসংসতা, বারবনিতা, বহুগামিতা, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, অত্যাচার, ষড়যন্ত্র, খুন, গুম, অপহরণ, পণ আদায়, ঠকবাজী, প্রতারণা, সুদ, ঘুষ, মদ, জুয়া, যৌতুক, মাদক, বাল্যবিবাহ, চোরাচালানী, মজুদখোরী, ব্লু-ফিল্ম, পর্ণসাহিত্য, বিজাতীয়, আকাশ সংস্কৃতির অবাধচর্চা, অমিতাচার, পরকীয়া, ঝগড়া, কলহ, বিরোধ, গোপনে অবৈধ মেলামেশা, ইভটিজিং, এসিড নিক্ষেপ, নারী ও শিশু ধর্ষণ, শিশু খাদ্যে বিষক্রিয়া, চাঁদাবাজী, বোমাবাজী, কোচিং ব্যবসা, সাইবার ক্রাইম, সাইবার, মসজিদ, মন্দির, উপাসনালয়ে হামলা, হত্যা, দান বাক্স ও জুতা চুরি ইত্যাদি অনৈতিক কর্মকান্ড সামাজিক নিরাপদ পরিবেশকে মারাত্তকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করছে। এর ফলে স্বস্থি, শান্তি ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে।

    উদ্ধিঘ্ন হওয়ার বিষয় হল পিতা-মাতা কর্তৃক সন্তান ও সন্তান কর্তৃক পিতা-মাতা হত্যার মত ন্যাক্কার ও কলঙ্কজনক ঘটনা ঘটছে এদেশে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণের সেঞ্চুরী থেকে চলন্ত ট্রেন, চলন্ত বাসে আগামি দিনের কর্ণধার শিক্ষার্থীদের ধর্ষণ করা হচ্ছে।

    বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের হত্যার পর লাশের উপর নৃত্য করা হচ্ছে। শিশুদের ও নারীদের উপর চলছে নির্যাতনের মহড়া। সর্বত্র ভীতি, আতঙ্ক, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা আর অনিরাপত্তার মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করছি আমরা। হতাশ হয়ে পড়ছে সুশীল সমাজ, সাদা মনের মানুষ, সমাজ বিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞানী, অভিজ্ঞ মহল, মানবতাবাদী, পরিবেশবাদী আর সেই সাথে এদেশের নাগরিকরা। কারণ একটির পর একটি বীভৎস ঘটনা ঘটেই চলেছে। ম্লা করে দিচ্ছে অতীতের বীভৎস রেকর্ড। সব মিলিয়ে গোটা সমাজ ব্যবস্থায় নেমে এসেছে এক চরম হতাশা, অমানিষার অন্ধকার ও ক্রান্তিকাল।

    প্রতিদিন খবরের কাগজে ও সার্বক্ষণিক ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াগুলোতে আমরা যা দেখছি তা সমাজ উন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার বিপরীতে সমাজ ব্যবস্থায় চরম অবনতি ও অবক্ষয়ের খবরা খবরের পরিমাণ বেশি। দেশের নানা স্থানে ঘটে যাওয়া পৈশাসিক, আতঙ্কিত, নিষ্ঠুর, লোমহর্ষক, বীভৎস সংবাদগুলো জাতির বিবেককে মারাত্মকভাবে আহত করছে। মানবতা ও মানবাধিকারের হালচিত্র দেখে মনে হয় আমরা এ কোন যুগে আছি।

    এ অবক্ষয় থেকে মুক্তির উপায় বের করার জন্য উচ্চতর গবেষণা জরিপ ও পর্যবেক্ষণ করার এখনি সময়। কারণ কি কি কারণে সামাজিক অবক্ষয় ঘটছে, কারা এর জন্য দায়ী, কি উপায়ে এর প্রতিকার সম্ভব, এ বিষয়ে প্রথমে রাষ্ট্রের কর্ণধাদের এগিয়ে আসতে হবে, সেই সাথে এগিয়ে আসতে হবে দেশের সুশীল সমাজ, সাদা মনের মানুষ, সমাজ বিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞানী, মানবতাবাদী, পরিবেশবাদী সংশি¬ষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ মহল, দেশি- বিদেশি স্বেচ্ছাসেবি সংস্থা, মানবাধিকার প্রবক্তা, সাংবাদিক, গবেষক, দার্শনিক, ধর্মীয় নেতাসহ সর্বস্তরের প্রসাশনিক কর্মকর্তা, সামরিক বাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, আনসার-ভিডিপি এবং সর্বপরি রাষ্ট্রযন্ত্র ও সর্বস্তরের গণমানুষকে।

    তাহলে হয়তো সামাজিক অবক্ষয়ের মাত্রা কমিয়ে এদেশকে মহা দুর্যোগ থেকে বাঁচানো সম্ভব। তা নাহলে দেশের ভবিষ্যৎ পরিণতি হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। ভূলুণ্ঠিত হবে মানবিক মূল্যবোধ।

    লেখক: প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট, সাংবাদিক।