বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, আওয়ামীলীগ জনগণের ভোটে ক্ষমতায় আসেনি, ভবিষ্যতেও তারা জনগণের ভোটে ক্ষমতায় আসতে চায় না। তারা যদি আগামিতে জনগণের ভোটে ক্ষমতায় আসতে চাইত, তাহলে তারা জনগণকে কষ্ট দিতে পারত না। তারা চায় আবারও ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় আসতে।
তিনি শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারী) বিকালে নগরীর কাজীর দেউরীস্থ নুর আহম্মেদ সড়কে বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
কর্তৃত্ববাদী সরকারের পদত্যাগ এবং বিএনপির ১০ দফা দাবিতে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিএনপি কেন্দ্র ঘোষিত এই সমাবেশের আয়োজন করে।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ানের পরিচালনায় প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন, বিএনপির উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, জয়নাল আবেদীন ফারুক, অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন ভিপি, গোলাম আকবর খোন্দকার, এস এম ফজলুল হক, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিভাগীয় সমন্বয়কারী মাহবুবের রহমান শামীম। উপস্থিত ছিলেন ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমদের স্ত্রী হাসনা মওদুদ।
আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি দেশের সকল ইউনিয়নে বিএনপি পদযাত্রা করবে জানিয়ে নজরুল ইসলাম খান বলেন, অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন সারাদেশে চলছে। সেটা আরো বেগবান করতে হবে। আন্দোলনের মধ্য দিয়েই এ অবৈধ সরকারের পতন হবে। আর সে পতনের অংশীদার আমরা হব। আগামী শনিবার বাংলাদেশের সকল ইউনিয়নে পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। আমরা কর্মসূচি দিলেই এ সরকার বাঁধা দেয়। আমরা দেখতে চাই সারা বাংলাদেশের কয়টা ইউনিয়নে তারা বাঁধা দিতে পারে। সব ইউনিয়নের সকল নারী-পুরুষ পদযাত্রায় অংশগ্রহন করবে।
তিনি বলেন, আমরা একবার বাকশালের গোরস্থানের উপর জিয়াউর রহমানের হাত ধরে গণতন্ত্র পেয়েছিলাম। পরে স্বৈরাশাসক এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে খালেদা জিয়ার হাত ধরে গণতন্ত্র পেয়েছি। এবার আমরা তারেক জিয়ার হাত ধরে এ সরকারের হাত থেকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করব। বিএনপি বারবার বিজয় হয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছে। এবারও করবে।
সরকার জনগণের পরোয়া করে না উল্লেখ তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে যারা হালাল উপার্জন করে সে শ্রমিক,কৃষক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, সরকারি কর্মচারী ও সাধারণ মানুষ তারা আজ চলতে পারছেনা। প্রতিদিন জিনিসের দাম বাড়ছে। এ সরকারের তাতে কোনো পরোয়া নেই। তিন সপ্তাহের মধ্যে দুইবার জ্বালানির দাম বেড়েছে। যদি এ সরকার জনগণের পরোয়া করত তাহলে এটা তারা করতে পারত না।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, আওয়ামীলীগ সরকার নিজেরা সংবিধানকে লঙ্ঘন করে আবার সেটা প্রয়োগের কথা বলছে। দেশের আজকের চলমান পরিস্থিতির উপরে এ সরকারের পতনের আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। তাই এ সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের আন্দোলন আরো গতিশীল করতে হবে। আমরা একটা মহাযুদ্ধের মধ্যে আছি। এ যুদ্ধে আমাদের জিততে হবে। এ যুদ্ধ গণতন্ত্রের লড়াইয়ের যুদ্ধ, মানুষের ভোটের যুদ্ধ। আমাদের দেশের মানুষ আজ না খেয়ে আছে। দেশের মানুষের অন্ন,বস্ত্র,বাসস্থান,শিক্ষা চিকিৎসার নূন্যতম সু্যোগ সুবিধা নেই।
নোমান বলেন, সরকার দেশে যে কতৃত্ববাদী, নৈরাজ্যবাদী প্রশাসনসহ যাদের সৃষ্টি করেছে, এ পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পেতে আন্দোলন ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। আমরা শাসনক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার জন্য লড়াই করছিনা। আমাদের লড়াই হচ্ছে জনগণের জন্য। জনগণের মাধ্যেমে রাষ্ট্র ক্ষমতা আবার কেড়ে নিতে হবে। জনগণের মধ্যে দিয়ে গণতন্তেরে রক্ষা হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মীর মো, নাছির উদ্দিন বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেন তারা মিছিল করলে আমরা নাকি পালানোর জায়গা পাবো না। আজ এসে তিনি দেখে যাক মানুষের এই জনসমুদ্র। আমরা যদি ঘোষণা দিই আজ থেকে বাংলাদেশ বন্ধ তাহলে আপনাদের সে ক্ষমতা নেই আবার চালু করার। তারা নাকি স্মার্ট বাংলাদেশ করবে! দূর্নীতিবাজদের মুখে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা মানায় না। বাংলাদেশের গণতন্ত্র আবার ফিরিয়ে আনতে আরেকটা গণ অভ্যুত্থান ঘটাতে হবে। সে ডাক আসবে। তখন সব অচল হয়ে যাবে।
জয়নাল আবেদিন ফারুক বলেন, গাছের ফল যখন পঁচে যায় তখন সেটা ঝরে পড়ে যায়। আওয়ামী লীগও আজ পচে গেছে। মানুষের হৃদয়ে তাদের আর জায়গা নেই। জনগণ আর তাদের চায় না। ক্ষমতায় আর আপনারা যেতে পারবেন না। ভোটারবিহীন সরকার দেশ পরিচালনা করতে পারে না। আমরা আন্দোলনে নেমেছি। সে আন্দোলন বানচাল করতে অনেক পাঁয়তারা আপনারা করছেন। সেটা আর আমরা করতে দিব না।
আবুল খায়ের ভূঁইয়া বলেন, আওয়ামী লীগ অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসে দুর্নীতি করে বিদেশে টাকা পাচার করেছে। বিএনপি’র ১০ দফা দাবির প্রতি ভ্রূক্ষেপ করছেনা। তারা আবারো কালো টাকা দিয়ে আরেকটা নির্বাচন করার পায়তারা করছে। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া এদেশে কোন নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না।
জয়নাল আবেদীন ভিপি বলেন, আমাদের আন্দোলন হচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য। সরকার বলছে ৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবে। কিন্তু তাদের সেই আশা পুরণ হবে না। আন্দোলনের মাধ্যমে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে।
গোলাম আকবর খোন্দকার বলেন, এই সমাবেশের আওয়াজ হচ্ছে আগামী নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করতে হবে। বর্তমান সরকার জনগণকে ভয় পায়। ভয় পায় বলেই মামলা-হামলা দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। তারা শুধু জনগনকে নয়, হিরো আলমকেও ভয় পায়।
এস এম ফজলুল হক বলেন, ১৯৭১ সালে রক্ত দিয়েছি গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য। এখন সে গণতন্ত্র আর নেই। শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হবে।
ব্যারিষ্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, দাবি আমাদের একটাই, তা হলো শেখ হাসিনার পদত্যাগ। কয়েকদিন আগে শেখ হাসিনা বলেছিল, অনির্বাচিত সরকার আসলে অশুদ্ধ হবে। এখন তিনি নিজেইতো অনির্বাচিত। তাকে দেশের ৯০/ মানুষ চায় না। অবিলম্বে ক্ষমতা না ছাড়লে তাদেরকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে।
বিভাগীয় সমাবেশের সমন্বয়কারী মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, আজকে চট্রগ্রাম মিছিলের নগরীতে পরিণত হয়েছে। এই সমাবেশের মাধ্যমে শেখ হাসিনার পতনের ঘন্টা বেজে গেছে। জনগণ রাস্তায় নেমেছে, ভালোয় ভালোয় বিদায় নেন, পালাবার পথ পাবেন না। শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে এদেশে কোনো নির্বাচন হবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, আজকের এই বিশাল সমাবেশ প্রমাণ করেছে চট্টগ্রাম বিএনপির ঘাটি। এই সমাবেশ থেকে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া, যুগ্ম মহাসচিব লায়ন আসলাম চৌধুরী ও মহানগর যুবদলের সভাপতি মোশাররফ হোসেন দিপ্তী সহ গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবী করছি। তিনি সমাবেশ সুন্দরভাবে শেষ করায় সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
সমাবেশে অন্যান্নের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় বিএনপির শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দিন, মৎস্যজীবী সম্পাদক লুৎফুর রহমান কাজল, উপজাতি সম্পাদক মা ম্যা চিং, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল উদ্দিন মজুমদার, হারুনুর রশীদ ভিপি, সহ কর্মসংস্থান সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ ভূইয়া, সহ গ্রাম সরকার সম্পাদক বেলাল আহমদ, কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী, সহ সমাজ কল্যাণ সম্পাদক শাহাবুদ্দীন সাবু, নোয়াখালী জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম হায়দার বি এস সি, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ব্যারিষ্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, উদয় কুসুম বড়ুয়া, কাজী মুফিজুর রহমান, মশিউর রহমান বিপ্লব, সাচিং প্রু জেরী, ফেনী জেলা বিএনপি’র আহবায়ক শেখ ফরিদ বাহার, রাঙ্গামাটি জেলা বিএনপির সভাপতি দিপেন তালুকদার, নোয়াখালী জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক এড. আব্দুর রহমান, উত্তর জেলা বিএনপির সি. যুগ্ম আহবায়ক এম এ হালিম, কক্সবাজার জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এড, শামীম আরা স্বপ্না, ফেনী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল, বান্দরবন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাবেদ রেজা, খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক এম এন আফসার, রাঙ্গামাটি জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশিদ মামুন, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য এনামুল হক এনাম।