২৪ ঘন্টা স্পেশাল : অন্যের বাসা বাড়ির বিভিন্ন আঙ্গিনা প্রতিদিন রাঙ্গিয়ে দিতে ব্যস্থ থাকতেন রঙমিস্ত্রি নুরুল ইসলাম (৩০)। তবে ১৭ নভেম্বর রবিবার ছিলো তার জন্য বিশেষ একটি দিন। নিজ শরীরের লাল রঙ্গে সড়ক রাঙ্গিয়ে স্ত্রী ও মাত্র এক বছর বয়সী শিশু কণ্যাকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেছে না ফেরার দেশে।
রবিবার সকালে চট্টগ্রামের পাথরঘাটা ব্রিক ফিল্ড রোডের বড়ুয়া বিল্ডিংয়ে গ্যাস লাইনে লিকেজ হয়ে বিস্ফোরণের পর সড়কের উপর ধ্বসে পড়া দেয়ালের চাপায় শেষ হয় রঙ মিস্ত্রি নুরুল ইসলামের জীবন।
জানা যায়, রঙ মিস্ত্রি নূরুল ইসলাম কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুবের খিল এলাকার আবদুল হামিদের ছেলে। দুবছর আগেই বিয়ে করেন নুরুল ইসলাম। বিয়ের পর এক শিশু কণ্যা জন্ম হয়। স্ত্রী সাদিয়া সুলতানা ও শিশু কণ্যাকে নিয়ে নগরীর শাহ আমানত সেতু সংলগ্ন বাস্তুুহারা কলোনিতে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন নিহত নুরুল ইসলাম।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিহত নুরুল ইসলামের স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠে হাসপাতালের পরিবেশ। নিহতের স্ত্রী সাদিয়া সুলতানা অকালে স্বামী হারিয়ে পাগল প্রায়। তিনি বিলাপ করতে করতে মূর্ছা যাচ্ছে বারবার। এক হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় পুরো হাসপাতাল জুড়ে।
নিহত রঙমিস্ত্রি নুরুল ইসলামের রঙ্রের কাজে অন্যতম সহযোগী ছিলেন তার ভাগ্নে মেহেদী হাসান। ঘটনার দিন তিনিও ছিলেন ঘটনাস্থলে। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, দুর্ঘটনার আগের দিন রাত থেকেই তার মামার সাথে ওই ভবনে রঙ্ এর কাজ নেন তারা। ওইদিন কাজের অর্ধেক শেষ করতেই তাদের রাত পেরিয়ে যায়।
সকালে আমি ভবনের ছাদে রঙ্রে কাজ করছিলাম আর মামা ঘুমঘুম চোখে ভবন থেকে নেমে বড়ুয়া ভবনের সামনে দিয়ে হেটে যাচ্ছিলেন বাসার উদ্দ্যেশে। তার আর বাসায় ফিরে এক বছরের শিশু কণ্যাকে আদর করা হলনা। এর মধ্যেই হঠাৎ বিকট শব্দে সড়কের পাশের দেয়ালটি ধ্বসে পড়ে। এতে চাপা পড়ে মামা। দ্রুত নেমে এসে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার আগেই সব শেষ হয়ে যায়।
নিহত মামার সংসারের কথা বলতে গিয়েই অজোর নয়নে অশ্রু ঝরে পড়ছিলো মেহেদির। কান্না জড়িত কণ্ঠে সে বলছেন, তার অবুঝ শিশুটিকে কিভাবে সে বোঝাবে তার বাবা আর ফিরবে না?
উল্লেখ্য : আজ ১৭ নভেম্বর রবিবার সকাল ৯টার দিকে পাথরঘাটা ব্রিকফিল্ড রোডের বড়ুয়া ভবনে গ্যাস লাইন লিকেজ হয়ে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণের পর দু’টি ভবনের দেয়ালের একাংশ ধসে পড়ে। এ ঘটনায় ৪ জন পুরুষ ২ জন মহিলাসহ ৭ জন নিহত হয়। আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধিন আছে আরো ১০ জন। এরমধ্যে তিন জনের অবস্থা আশংকাজনক বলে জানা গেছে।
হতাহতের ঘটনার পর চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও সিএমপির উদ্ধতন কর্মকর্তা, সিডিএ কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেন।
এ ঘটনায় ৫ সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠন করে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত টিমের প্রতিবেদন দিতে বলেছেন জেলা প্রশাসক। এছাড়া নিহতদের প্রত্যেককে ২০ হাজার এবং আহতদের চিকিৎসা সেবার ভার নিয়েছেন চসিক ও জেলা প্রশাসন।