রংপুরের পীরগঞ্জের ভেন্ডাবাড়ি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে শামছুল হক (৫৮) নামের এক আসামির রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। বুধবার সকাল ৯টায় তার মৃত্যু হয়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে ভেন্ডাবাড়ি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র ঘেরাও করে বিক্ষোভ করে।
এক পর্যায়ে দুপুর সাড়ে ১২টায় বিক্ষিপ্ত জনতা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় পুলিশ পাল্টা ২৩ রাউন্ড রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। আধাঘণ্টা ধরে পুলিশ ও উত্তেজিত জনতার মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় রংপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাফিজ উদ্দিন ও ভেন্ডাবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলামসহ স্থানীয় জনতা, ব্যবসায়ী ও পথচারীসহ অর্ধ শতাধিক জনতা গুরুতর আহত হয়েছে।
জানা যায়, শামছুল হককে গতকাল মঙ্গলবার রাত ৯ টায় পীরগঞ্জ উপজেলার বড়দরগা বাজার থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তাকে ভেন্ডাবাড়ি তদন্ত কেন্দ্রে নিয়ে আটকে রাখা হয়। বুধবার সকাল ৯টায় হাজতে গ্রিলের সঙ্গে ফাঁস দেওয়া অবস্থায় তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
এদিকে নিহতের পরিবার জানায়, ভেন্ডাবাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শামছুল হককে গ্রেফতারের পরে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। তার এই দাবির টাকা পূরণ করতে না পারায় তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে।
পুলিশের ভাষ্য, গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত একটার দিকে ভেন্দাবাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ২৫ লিটার চোলাই মদসহ শামসুল ইসলামকে পীরগঞ্জ উপজেলার বড় দরগা ইউনিয়নের ইসমাইলপুর গ্রাম থেকে আটক করে। আটকের পর তাঁকে নিয়ে আসা হয় ভেন্দাবাড়ি পুলিশ ফাঁড়িতে। আজ বুধবার সকালে পুলিশ ফাঁড়ির গ্রিলের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় তাঁর মরদেহ দেখা যায়।
রংপুরের পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, আমাদের অতিরিক্তি পুলিশ সুপার হাফিজসহ বেশ কয়েক জন আহত হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’
পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) টি এ এম মোমিনের নেতৃত্বে পীরগঞ্জ থানায় শামসুল ইসলামের লাশের সুরতহাল করা হয়েছে। ইউএনও জানিয়েছেন, সুরতহালে লাশের দেহে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট হবে।
এদিকে আজ বেলা পৌনে তিনটার দিকে উক্ত ঘটনায় পাঁচ পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করে রংপুর পুলিশ লাইনসে যুক্ত করা হয়েছে।
প্রত্যাহার হওয়া পুলিশের সদস্যার হলেন ভেন্দাবাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক (ইনচার্জ) আমিনুল ইসলাম। সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) শাহ আলম, এএসআই হরিকান্ত বর্মণ, এএসআই তাজউদ্দিন ও কনস্টেবল আরিফুল ইসলাম।
প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, দায়িত্বে অবহেলার কারণে ওই সদস্যদের প্রত্যাহার করা হয়েছে।