লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি : চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি সাতগড় খন্দকার পাড়ার জহির উদ্দিন নামের এক প্রতারক আদম বেপারীর প্রতারণার ফাঁদে পড়ে নি:স্ব হয়েছে দুই প্রবাসী। প্রতারণার অভিযোগ এনে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন তাঁরা।
ওই অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার চুনতি পানত্রিশা এলাকার মৃত এয়াকুব মিয়ার পুত্র সাদ্দাম হোসেন ২০১৭ সালে একই ইউনিয়নের সাতগড় খন্দকার পাড়ার মৃত আবদুর রাজ্জাকের পুত্র আদম বেপারী খ্যাত জহির উদ্দিনের মাধ্যমে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখানে আবাহার মাহিল খানা শহরে জহির তাকে মুদির দোকানে চাকরি দেন। দৈনিক ১৯ ঘন্টা শ্রম দিয়ে ৫ মাসেও কপালে জুটেনি বেতনের টাকা। সে বেতনের টাকা খুঁজলে উল্টো করা হতো শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন।
এক পর্যায়ে বকেয়া বেতন পেতে কপিলকে (মালিক) অভিযোগ করলে জহির ক্ষিপ্ত হয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানোর হুমকি দেন। পরে তিনি জহিরের কপিলের (মালিককে) কাছে চাকরি না করলে প্রতিমাসে ২৫০ রিয়াল হিসেবে ১০০০ হাজার রিয়াল জহিরকে দেওয়ার পরও সাদ্দামের ভিসা বাতিল করে পুলিশের হাতে আটক হয়। পরে তিন মাস কারাভোগের পর দেশে ফিরেন। এর আড়াই বছরেও ৫ মাসের বেতন এবং ভিসা বাবদ মোট ৭ লাখ টাকা ফেরত না দেওয়ায় চলতি বছরের ২৭ আগষ্ট চুনতি ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতে সাদ্দাম বাদি হয়ে জহিরের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন (মামলা নং- ২৮৪)। এরপর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কয়েক বার নোটিশ দেওয়ার পরেও তিনি হাজির না হওয়ায় স্থানীয় চেয়ারম্যান বাদীকে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশ দেন।
এদিকে, প্রতারক জহিরের প্রতারণার শিকার হয়েছেন তার প্রতিবেশী ছৈয়দ মোক্তার আহমেদের পুত্র মোহাম্মদ ফারুক। থানায় তার করা অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, জহির আবাহা এলাকায় শেয়ারি ব্যবসার নামে ফারুককে ফাঁদে ফেলে তার কাছ থেকে ৫০ হাজার সৌদি রিয়াল নেন। এ সময় মৌখিকভাবে প্রতিমাসে তাকে লভ্যাংশ প্রদান করার কথা বলেন। এরপর বেশ কিছুদিন ব্যবসা করার পরেও তাকে হিসাব-নিকাশ দেখানো তো দুরের কথা লভ্যাংশের এক টাকাও না দিয়ে অন্যজনকে দোকান বিক্রি করে দিয়ে অন্যত্র চলে যান। পরে চলে-বলে কৌশলে প্রতারণার ফাঁদ পেতে পূর্বের টাকা ফেরত দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কাবাঘর সাক্ষী রেখে মোরশেদ আলম ও মুসা নামের দুই ব্যক্তির অনুরোধে আবারও ১ লাখ রিয়াল ধার নেন জহির। দুই দফায় বাংলাদেশী মুদ্রায় ৩৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে দেশে চলে আসেন প্রতারক জহির। ফারুক দেশে এসে চলতি বছরের ১০ মে চুনতি ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতে ফারুক বাদী হয়ে জহিরের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কয়েকবার নোটিশ দেওয়া হলেও জহির হাজির না হওয়ায় স্থানীয় চেয়ারম্যান বাদীকে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন।
এমতাবস্থায় চলতি বছরের ৩ আগষ্ট বিকেল ৪টার দিকে বিবাদীর নিজ বাড়ির পাশে দেখা হলে তাকে পাওনা টাকা ফেরত দেয়ার অনুরোধ জানালে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে পাওনা টাকার বিষয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে কিংবা তার বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নিলে খুন-জখমের হুমকি দেন। এছাড়া মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকিও দেন। বর্তমানে প্রতারক আদম বেপারী জহিরের প্রাণনাশের হুমকিতে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন প্রতারণার শিকার দুই প্রবাসী। এ ব্যাপারে প্রতারক জহিরের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবী জানিয়েছেন তারা।
২৪ ঘণ্টা/রিহাম/আজাদ