শাহজাহান আলী মনন, নীলফামারী জেলা প্রতিনিধি ॥ নীলফামারীর সৈয়দপুরে চলতি মৌসুমে বিপুল পরিমান কুল (বরই) কেনা বেচা হওয়ার প্রত্যাশা করছেন ব্যবসায়ীরা। প্রতিদিন কুল আমদানী এবং রপ্তানির সন্তোষজনক অবস্থা দেখে এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন সৈয়দপুরের ফল আড়তদাররা।
তাদের অভিমত এবার এখানকার ফল বাজারে প্রায় ২ কোটি টাকার কুলের ব্যবসা হবে। ইতোমধ্যে রংপুর বিভাগের প্রায় প্রতিটি জেলা থেকে সৈয়দপুরে আসছে নানা জাতের কুল।
ক্রেতা-বিক্রেতারা বাছাই ও দরদাম করে কেনা-বেচা করছেন প্রতিদিনই। অনেকে এখান থেকে কুল কিনে পাঠিয়ে দিচ্ছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
জানা যায়, উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় ফলের আড়ত হচ্ছে সৈয়দপুর। তাই আশপাশের জেলা-উপজেলাগুলোর কৃষকদের কাছ থেকে আড়তদার ও মধ্যম মানের ব্যবসায়ীরা কুল কিনে এনে এ বাজারে ভাল দাম পাওয়ার আশায় নিয়ে আসছেন। এতে বানিজ্যিকভাবে বরই উৎপাদনকারী চাষীরাও পর্যাপ্ত দাম পাচ্ছে।
আড়তদাররা জানান, বর্তমান মৌসুমে এই অঞ্চলের কৃষকরা প্রতিযোগিতামূলক ভাবে কুল চাষ করেছেন। গাছে ফুল হওয়ার পর থেকে যত্ন নিয়ে আশাতিত ফলন হওয়ায় এ যাবত প্রায় কোটি টাকা মূল্যের কুল কেনাবেচা হয়েছে। স্থানীয় ও অন্যান্য স্থানের চাহিদানুযায়ী আগামী মার্চ ও এপ্রিল মাসের মধ্যে প্রায় দুই কোটি টাকারও বেশি মূল্যের কুল কেনা-বেচা হতে পারে বলে তারা মন্তব্য করেন।
সরেজমিনে সৈয়দপুর শহরের প্রাণ কেন্দ্র ১ নং রেলঘুমটি সংলগ্ন ফল আড়তে গেলে দেখা যায়। পুরো বাজার জুড়ে এখন শুধু কুলের সমারোহ। বস্তাভর্তি কুলের দখলে আড়তদারদের দোকানের সিংহভাগ অংশ। চলছে হাক-ডাক, বেচা-কেনা।
আড়তদাররা জানান, রংপুর বিভাগের কুল বাগান মালিকরা আপেল কুল, বাউ কুল, থাইকুল এ বাজারে নিয়ে আসছেন। এখানকার পাইকাররা ওই কুল কিনে বাছাইয়ের পর প্যাকেটজাত করে কাটুনে ভরে পাঠিয়ে দিচ্ছেন উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন ফল মার্কেটসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। কুলের জাত ও উপজাত অনুসারে প্রতিমণ কুল বিক্রি হচ্ছে ৮ থেকে ১ হাজার ২ শ’ টাকা দরে।
উপজেলার বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নের কুল বাগান মালিক আদর আলী জানান, তারা ছয় বছর যাবত পৈত্রিক চার বিঘা জমিতে আপেল কুল ও বাউ কুল আবাদ করেছেন। বিগত তিন বছর তেমন ফলন না হলেও এবার পর্যাপ্ত ফলন হয়েছে। যা প্রায় দুই লাখ টাকা মূল্যে বিক্রি করেছেন।
জাহাঙ্গীর নামের অপর এক কৃষক জানান, দীর্ঘ ৩০ বছর যাবত তার জমিতে বিভিন্ন জাতের ফসল উৎপাদন করছেন। কিন্তু বীজ, সার ও কীটনাশকসহ বিভিন্ন কৃষি উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি এবং ফসলের মূল্য না পাওয়ায় লোকসানের হিসাবই করতে হয়েছে। কিন্তু কুল চাষ করে প্রায় দুই লাখ টাকার মত লাভ করেছেন।
একইভাবে মন্তব্য করেন সৈয়দপুর শহরের সাহেবপাড়া এলাকায় রেলওয়ের বাংলোর জমিতে কুল চাষকারী মোছাঃ কেয়া সরকার। তিনি বলেন, কুল চাষে তেমন কোন খরচ নেই। শুধুমাত্র গাছ লাগানোর সময় প্রাথমিক যে খরচ হয় এরপর আর খরচ করতে হয়না। শুধুমাত্র আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে এবং পরিচর্যা করলেই ভালো ফলন পাওয়া যায়। যা বিক্রি করে লাভবান হওয়া যায়।
সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি অফিসার শাহিনা বেগম জানান, এ অঞ্চলের কৃষকদের কুল চাষে উৎসাহিত করা হয়েছিল। এর ফলে তারা প্রায় ৭/৮ বছর যাবত কুলের চাষাবাদ করে আসছেন। কৃষকরা কুলের ফলন ভালো হওয়ায় এবার প্রায় দুই কোটি টাকারও বেশি মূল্যের কুল বিক্রি হতে পারে।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মোখছেদুল মোমিন বলেন, সরকার কৃষকদের কুল চাষে উদ্বুদ্ধ করতে সুদমুক্ত ঋণের ব্যবস্থা কলে দিলে প্রতিটি কৃষকই কুল চাষে আগ্রহী হবে। পাশাপাশি মৌসুমী এ ফলে তারা সাবলম্বি হতে পারবে।