Tag: বাঁশখালীর

  • নিখোঁজের ৪দিন পর আফ্রিকার মোজাম্বিকে মিলল বাঁশখালীর ইসলামের লাশ!

    নিখোঁজের ৪দিন পর আফ্রিকার মোজাম্বিকে মিলল বাঁশখালীর ইসলামের লাশ!

    চট্টগ্রাম ডেস্ক : দক্ষিণ আফ্রিকার মোজাম্বিকের প্রেম্বা এলাকা থেকে নিখোঁজ হওয়ার ৪ দিন পর সন্ধান মিলেছে প্রবাসি বাংলাদেশি নুরুল ইসলাম (৩০)র। তবে জীবিত নয়, তার গলাকাটা লাশের খোঁজ পাওয়া যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক কল্যাণে।

    গতকাল ১৬ সেপ্টেম্বর বুধবার বিকেলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দেখে লাশটি উদ্ধার করে সেদেশের পুলিশ। তারা জানিয়েছে প্রেম্বা এলাকা থেকে অন্তত ৬শ কিলোমিটার দুরে মাতামিয়া পাহাড়ি এলাকা থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়েছে।

    এর আগে গত ১২ সেপ্টেম্বর বাসা থেকে বের হয়ে ৪ দিন ধরে নিখোঁজ ছিলেন এ রেমিট্যান্স যোদ্ধা। তিনি চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার চাম্বল ইউনিয়নের পূর্ব চাম্বল ৬ নম্বর ওয়ার্ডের চাম্বল পাতালা মার্কেট এলাকার মুহাম্মদ হোসাইনের ছেলে বলে জানা গেছে। সে মোজাম্বিকের পালমা ডিস্ট্রিকের পালমাতে এক বাঙ্গালীর অধীনে চাকরি করত।

    নিহত নুরুল ইসলামের ছোট ভাই সাইফুল ইসলাম জানান, ‘ভিসা সংক্রান্ত কাজের জন্য শনিবার আমার বড় ভাই তার গাড়ি নিয়ে নিকটস্থ সরকারি দফতরের উদ্দেশ্য যান। এরপর থেকে তার কোনো খোঁজখবর পাওয়া যাচ্ছে না। ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরটিও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।

    তিনি বলেন, এই ব্যাপারে নিকটস্থ পুলিশ স্টেশনে অভিযোগ করা হয়েছে। বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) নিখোঁজের ৪ দিন পর বাংলাদেশ সময় বিকাল আনুমানিক ৪টায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাতামিয়া পাহাড়ি এলাকায় আমার ভাইয়ের গলাকাঁটা লাশের সন্ধান পাই।

    আফ্রিকা প্রবাসী অনেকেই ধারণা করছেন, মোজাম্বিকের প্রেম্বা শহরকে জনশুন্য করতে মূলত একটি জঙ্গিগ্রুপের সক্রিয় বাহীনি সবসময় তৎপর থাকে। স্থানীয়সহ প্রবাসী বাঙ্গালীদেরকে তারা ধরে নিয়ে যায় প্রায় ৬শ কিলোমিটার দুরে তাদের আস্তানা পালমা এবং মাতামিয়া পাহাড়ি এলাকায়।

    তারা জানিয়েছেন, সন্ত্রাসী গ্রুপের ওই জায়াগা স্থানীয় প্রশাসের নিয়ন্ত্রণের বাহিরে। তারা প্রতিনিয়ত লোকজনদের ধরে নিয়ে হত্যা করে এবং তারা নিজেরাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিহতদের ছবি প্রচার করে।

    এদিকে প্রবাসি ব্যবসায়ি নুরুল ইসলামের গলাকাঁটা লাশ উদ্ধারের খবরে তার নিজ বাড়ী বাঁশখালীর পূর্ব চাম্বল মাঝর পাড়া এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।

    ২৪ ঘণ্টা/আর এস প্রিন্স

  • ভক্ত, পূর্ণার্থী ও সন্নাসীদের মিলনমেলায় পরিণত বাঁশখালীর ঋষিকুম্ভ মেলা

    ভক্ত, পূর্ণার্থী ও সন্নাসীদের মিলনমেলায় পরিণত বাঁশখালীর ঋষিকুম্ভ মেলা

    ২৪ ঘন্টা ডট নিউজ। রাজীব প্রিন্স : চট্টগ্রামের বাঁশখালী ঋষিধামে বর্ণাঢ্য মহাশোভাযাত্রার মাধ্যমে গত ৩১ জানুয়ারি ১০ দিন ব্যাপী বিংশতম আন্তর্জাতিক ঋষিকুম্ভ ও কুম্ভমেলা শুরু হয়।

    আজ শনিবার ছিল মেলার নবম দিন। এ দিনে চলছে অহোরাত্র মহানাম সংকীর্তন। আগামীকাল রবিবার মেলার দশম ও শেষ দিনে মঙ্গল আরতি ও ষোড়শ প্রহরব্যাপী মহা নামযজ্ঞের পূর্ণাহুতি, গঙ্গাপূজা ও মহাস্নান, বিশ্ব কল্যাণে গীতাযজ্ঞ অনুষ্ঠিত হবে।

    মেলার প্রথমদিনে মহাশোভাযাত্রার পৌরহিত্য করেন চট্টগ্রাম তুলসীধাম ও বাঁশখালী ঋষিধামের মোহন্ত মহারাজ শ্রীমৎ স্বামী সুদর্শনানন্দ পুরী মহারাজ। মহাশোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন বিভিন্ন দেশ হতে আগত সাধু সন্ন্যাসীগণ।

    মেলার শুরু থেকেই প্রতিদিন ঢল নামছে হাজার হাজার পূর্ণার্থীর। মেলা উপলক্ষে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত সন্ন্যাসীরাও ভিড় জমিয়েছেন। প্রতিদিনই রুপ নিয়েছে ভক্ত, পূর্ণার্থী ও সন্নাসীদের মিলনমেলায়।

    বাঁশখালী উপজেলার কালীপুর ইউনিয়নের কোকদণ্ডী গ্রামের ঋষিধামের ঋষিকুম্ভ ও কুম্ভমেলায় অষ্টম দিন শুক্রবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত ঋষিধাম মন্দিরে চলছে পূজা-অর্চনা। মন্দিরে ঢোকার মুখে পাশের মাঠে বসেছে মেলা। পাশেই রাখা হয়েছে দুর দুরান্ত থেকে আগত ভক্তদের জন্য প্রসাদ আস্বাদনের ব্যবস্থা। কুম্ভমেলাকে কেন্দ্র করে আশপাশের গ্রামেও উৎসবের আবহ তৈরি হয়েছে।

    মন্দিরের সুদৃশ্য বিশাল ফটক দিয়ে শত শত মানুষের ভিড় ঠেলে মন্দিরে মন্দিরে প্রবেশ করতেই দেখা যায় কিছু দূরে মঞ্চে কয়েকজন যোগবিদ শিশুদের যোগাসন শিক্ষা দিচ্ছেন। যোগাসনের মাধ্যমে রোগমুক্তির এই শিক্ষা দেখতে মঞ্চের সামনে ভিড় করেছেন শত শত নর-নারী।

    হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী ভারতের চারটি স্থানে কুম্ভমেলা হয়। এগুলো হলো হরিদ্বার, প্রয়াগ, নাসিক ও উজ্জয়িনী। তিন বছর পর চক্রাকারে চারটি স্থানে কুম্ভমেলা বসে। সে হিসাবে একেকটি স্থানে ১২ বছর পরপর এই মেলা ঘুরে আসে। বাংলাদেশে একমাত্র ঋষিধামেই তিন বছর পরপর এই মেলার আয়োজন করা হয়।

    মেলায় কথা হয় বিংশতম আন্তর্জাতিক ঋষিকুম্ভ ও কুম্ভমেলা উদ্যাপন পরিষদের আহবায়ক দেবাশীষ পালিতের সাথে। তিনি মেলা সুন্দর ও শান্তিপুর্ণভাবে কার্যক্রম পরিচালনায় কমিটির পক্ষ থেকে সকল ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করায় কোন বিশৃঙ্খলা ছাড়াই মেলার অষ্টম দিন পর্যন্ত অতিবাহিত হয়েছে বলেন।

    তিনি জানায়, যাঁরা দূরদূরান্ত থেকে ভারতের এই চারটি স্থানে গিয়ে তীর্থ করতে অক্ষম, তাঁদের কথা বিবেচনা করে বাঁশখালী ঋষিধামের প্রতিষ্ঠাতা মোহন্ত শ্রীমৎ অদ্বৈতানন্দ পুরী মহারাজ ১৯৫৭ সাল থেকে এখানে কুম্ভমেলার প্রবর্তন করেছিলেন। ভারতের চারটি স্থানের যেকোনো একটি মেলা অনুষ্ঠিত হওয়ার এক বছর পর বাংলা মাঘ মাসের ত্রয়োদশী তিথিতে ঋষিধামে কুম্ভমেলা বসে।

    তিনি আরো বলেন, প্রতিবারই ভারতসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শতাধিক সন্ন্যাসী আসেন। এটি এক মহা মিলনমেলা। মেলা উপলক্ষে দূরদূরান্ত থেকে ইতিমধ্যে অর্ধশতেরও বেশি সন্ন্যাসী এসেছেন।

    মন্দিরে আগত কয়েকজন সন্ন্যাসীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, কুম্ভ মানে কলস। অমৃতের কলস। অমরত্ব লাভের আশায় একবার দেবতাদের সঙ্গে অসুরকুলের সমুদ্রমন্থন হয়েছিল। সমুদ্রমন্থনের ফলে উঠে এল বহু মূল্যবান সামগ্রী। উঠল একটি অমৃতের ভাণ্ড। অসুরদের এই অমৃতকুম্ভ না দেওয়ার জন্য দেবরাজ ইন্দ্রপুত্র জয়ন্ত একসময় সেটি নিয়ে পালালেন।

    পালানোর সময় অমৃত ভাণ্ডার রাখা হয়েছিল চারটি স্থানে। হরিদ্বার, প্রয়াগ, ত্রিম্বকেশ্বর-নাসিক ও উজ্জয়িনী এই চারটি স্থানে কলস থেকে কয়েক ফোঁটা অমৃত রস পড়েছিল বলে ধারণা। তাই এই চারটি স্থানে অমৃত সুধারস আস্বাদনের জন্য বসে কুম্ভমেলা। এগুলো তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিত।

    মেলা উপলক্ষে প্রতিদিনই চলছে নানা অনুষ্ঠান। গত ৯দিন ধরে মন্দির প্রাঙ্গণে শোভাযাত্রা, দেব-দেবীর পূজা, চণ্ডীযজ্ঞ, গঙ্গা স্নান, ঋষি সম্মেলন, ধর্মীয় সংগীতানুষ্ঠান, ধর্ম মহাসম্মেলন এমন নানা আয়োজনে মুখর হয়ে ওঠে বাঁশখালীর জনপদ। অংশ নেন দেশ-বিদেশ থেকে আসা ঋষি-সন্ন্যাসীরা।

    এর আগে ঋষিকুম্ভ মেলা উপলক্ষে মঙ্গল আরতি ও জয়গানে মঙ্গল আহ্বান, জাতীয় পতাকা উত্তোলন, তৈজস সামগ্রী সহকারে ভান্ডারগৃহের উদ্বোধন, মহাশোভাযাত্রা, গুরু মন্দিরে শ্রীগুরু বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা ও মন্দিরের মাঙ্গলিক কাজের উদ্বোধন, গুরু মহারাজের পূজা, ভোগরাগ ও সমবেত প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়।

    এছাড়াও ধর্মসম্মেলন ও সঙ্গীতাঞ্জলি, সন্ধ্যারতি ও সমবেত প্রার্থনা, বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা, গীতাপাঠ প্রতিযোগিতা, সঙ্গীতাঞ্জলি, চণ্ডীযজ্ঞ, ভগবান শ্রী বিষ্ণুর অভিষেক, সংগীতাঞ্জলি, ধর্ম মহাসম্মেলন, দেবাদিদেব মহাদেব’র অভিষেক, সংগীতাঞ্জলি, ধর্ম মহাসম্মেলন, নাটক যুগাবতার পরম পুরুষ স্বামী অদ্বৈতানন্দ, দশমহাবিদ্যা পূজা, ধর্মীয় সংগীতাঞ্জলি, স্বামীজি রচিত শ্রী শ্রী দশমহাবিদ্যা অনুসরণে ধর্ম মহাসম্মেলন, গঙ্গা পূজা ও মহাস্নান, ঋষিধ্বজা উত্তোলন, বেদমন্ত্র পাঠ, ১০৮ দীপমণ্ডিত মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, সাধু ভাণ্ডার ও আন্তর্জাতিক ঋষি সম্মেলন, গঙ্গারতি ও অদ্বৈতানন্দ সরোবরে দীপদান উৎসব, সমবেত প্রার্থনা, অষ্টপ্রহরব্যাপী মধুসুদন কীর্তনের শুভ অধিবাস, চতুষ্প্রহরব্যাপী অহোরাত্র কীর্তন, রাধাকৃষ্ণের অভিষেক, সংগীতাঞ্জলি, ধর্ম মহাসম্মেলন, ষোড়শ প্রহরব্যাপী মহানাম যজ্ঞের অধিবাস, ষোড়শপ্রহর ব্যাপী মহানামযজ্ঞের শুভারম্ভ ও অহোরাত্র নামসংকীর্তন, গঙ্গাপূজা ও মহাস্নান, সপ্তশতী তুলসীদান, বিশ্বকল্যাণে পঞ্চাঙ্গ স্বস্থ্যয়ন, শান্তি হোম ও অঞ্জলি প্রদান, অন্নকূট উৎসব, গুরু মহারাজের ভোগরাগ ও সমবেত প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়।

    অনুষ্ঠানমালায় পৌরহিত্য করছেন ঋষিধামের মোহন্ত শ্রীমৎ স্বামী সুদর্শনানন্দ পুরী মহারাজ। বর্ণাঢ্য এই আয়োজনে অংশ নেওয়া লাখো পুণ্যার্থীদের জন্য প্রতিদিন দুপুর ও রাতে থাকছে অন্ন প্রসাদ। লোকজ পণ্যের বিশাল পসরা বসেছে মেলা প্রাঙ্গণে। মেলায় বাঁশ-বেতের জিনিসপত্র, দা-বঁটি, হাতপাখা, শিশুদের খেলনাসহ নানা পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা।