নিলয় ধর,যশোর প্রতিনিধি:যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার জহুরপুর খবির-উর-রহমান কলেজের এক কর্মচারী ও কলেজের জন্য তার জমিদাতা বাবাকে হাতুড়িপেটা করেছে দুর্বৃত্তরা।
অভিযোগ, কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি নূর মোহাম্মদ পাটোয়ারী ও তার ভাই স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান দিলু পাটোয়ারীর নেতৃত্বে এই হামলার ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলো, ওই কলেজের ৫৫ শতক জমিদাতা শেখ আবু বক্কার (৬৭) ও তার ছেলে কলেজটির কর্মচারী শেখ মো. রিপন (৪২)।
তবে ইউপি চেয়ারম্যান দিলু পাটোয়ারী অভিযোগ অস্বীকার করে উল্টো কলেজের আহত কর্মচারী শেখ রিপনকে ঘটনার জন্য দায়ী করছে।
আহত শেখ রিপন জানান, মঙ্গলবার সকাল দশটার দিকে তিনি কলেজগেটে ছিলেন। এ সময় কলেজের সভাপতি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নূর মোহাম্মদ, তার ভাই জহুরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দিলু পাটোয়ারী ও সহযোগী ডা. মিজানুর রহমান খোকনসহ ১৪-১৫ জন কলেজ চত্বরে ঢুকে তাকে হাতুড়ি ও রড দিয়ে বেদম পেটায়। খবর পেয়ে তার বৃদ্ধ বাবা শেখ আবু বক্কার ঘটনাস্থলে এলে তাকেও বেদম পেটানো হয়েছে। পরে খাজুরা ক্যাম্পের পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে তাদের উদ্ধার এবং হাসপাতালে ভর্তি হতে সাহায্য করে।
বর্তমানে বাবা ছেলে যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
রিপন অভিযোগ করে, গত শনিবার সকাল ১০টার দিকে সভাপতি নুর মোহাম্মদ লোকজন নিয়ে কলেজের ভেতর সভা করতে আসেন। ওই সময় তিনি ডিউটিতে ছিলেন। করোনা পরিস্থিতিতে ‘অধ্যক্ষের অনুমতি ছাড়া গেট খোলা যাবে না, বলে শেখ রিপন তাদের জানিয়েছেন। এরপর সভাপতিসহ অন্যরা সেখান থেকে ফিরে যান।
মঙ্গলবার কলেজে ৮৫ লাখ টাকার বহুতল ভবন নির্মাণের জন্যে প্রকৌশলীরা জমি মাপতে এসেছিলেন। তারা ফিরে যাওয়ার পর এ হামলা চালানো হয়।
কলেজের অধ্যক্ষ শামছুর রহমান জানান, তার কলেজের নারীঘটিত একাধিক ঘটনার সঙ্গে জড়িত শিক্ষক আনিছুর রহমান। তার সঙ্গে শিক্ষক সাখাওয়াত হোসেন, প্রদীপকুমার ও বেল্লাল হোসেন রয়েছেন। ওই চক্রকে হাত করে মোটা টাকার বিনিময়ে আনিছুর রহমান অধ্যক্ষ পদে আসীন হতে চান। এই সব ষড়যন্ত্র নিয়ে কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি নূর মোহাম্মদ পাটোয়ারী অঘটন ঘটাচ্ছেন।
এদিকে, তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ অস্বীকার করেছে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দিলু পাটোয়ারী।
গণমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, কলেজের নতুন ভবনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে তার ভাই কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি নূর মোহাম্মদ পাটোয়ারী কর্মচারী রিপনকে ডেকে অধ্যক্ষের সামনে শনিবার কলেজের কক্ষ খুলে না দেওয়ার বিষয়ে জানতে চান। ওই সময় কর্মচারী তর্ক শুরু করে। তখন আওয়ামী লীগ নেতা নূর মোহাম্মদ পাটোয়ারীর মোটরসাইকেল-চালক একই উপজেলার হলিহট্ট গ্রামের সোবহানের ছেলে জিয়া থাপ্পড় মারেন রিপনকে। তখন রিপনও পাল্টা হামলা করায় উপস্থিতদের রোষের শিকার হন। একপর্যায়ে রিপন দৌঁড়ে কলেজ চত্বর থেকে বেরিয়ে প্রায় ২০০শত গজ দূরে তার বাবা আবু বক্কারের কাছে গিয়ে আশ্রয় নেন। আবু বক্কার ওই সময় কাচি দিয়ে ঘাস কাটছিলেন। রিপনকে ধাওয়াকারীদের সঙ্গে তার (আবু বক্কার) ধস্তাধস্তি হয়। এতে বক্কার রক্তাক্ত জখম হন।
ধাওয়াকারীদের মধ্যে জিয়া ও বেতালপাড়ার জয়নালের ছেলে শাহিনও জখম হন দাবি করে চেয়ারম্যান বলেছেন, এর মধ্যে জিয়া যশোর জেনারেল হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে।
এদিকে খাজুরা পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (এসআই) জুম্মন জানিয়েছেন, কলেজে হট্টগোলের খবর পেয়ে তিনি সেখানে যান। তখন আহত বাবা-ছেলেকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য গাড়িতে তোলা হচ্ছিল। তিনি আহতদের স্বজনদের কাছে হামলাকারীদের পরিচয় জানতে চান। তাকে জানানো হয়, হামলাকারীরা চলে গেছে।পরে অধ্যক্ষকে খাজুরা পর্যন্ত পৌঁছে দেন এই পুলিশ কর্মকর্তারা।
২৪ ঘণ্টা/এম আর