উপ-সচিব এ কে এম রেজাউল করিম রতনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে সরকার। ধর্ষণ মামলার অভিযোগে তিনি সাময়িকভাবে বরখাস্ত থাকা অবস্থায় গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন। এরপর বিভাগীয় মামলায় দোষী প্রমাণিত হওয়ায় চাকরি হারালেন তিনি।
তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিভাগীয় মামলায় ‘অসদাচরণ’-এর অভিযোগে এ উপ-সচিবকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর কারণ দেখানো হয়েছে। উপ-সচিব রেজাউল রতন শিক্ষা ক্যাডারের ১৪ ব্যাচের কর্মকর্তা হিসেবে সরকারি চাকরি শুরু করেছিলেন।
মঙ্গলবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেছেন বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।
জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, রেজাউল করিম গ্রন্থকেন্দ্র থেকে ২০১৯ সালে সাময়িক বরখাস্ত হন। তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ চেষ্টার মামলা হয়েছিল। সাময়িক বরখাস্ত থাকার সময়টিকে বিশেষ ছুটি হিসেবে বিবেচনা করেছে সরকার। এরপর ২০১৯ সালের ১২ অক্টোবর ঢাকার হাজারীবাগ এলাকা থেকে রেজাউলকে গ্রেপ্তার করে হাজারীবাগ থানা পুলিশ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, রেজাউল করিম রতন ২০১৭ সালে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে মোহাম্মদপুর সরকারি কলেজের এক ছাত্রীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এরপর তাদের মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে উপ সচিবের বিরুদ্ধে মামলা করেন ওই ছাত্রী।
উল্লেখ্য, ঘটনার সময় রেজাউল করিম রতন মোহাম্মদপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। এরপর তিনি উপ সচিব হয়ে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছিলেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, রেজাউল করিমের নামে আনা অভিযোগের বিষয়ে তাকে ব্যক্তিগত শুনানি এবং লিখিতভাবে জবাব দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। পরে অভিযুক্তের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় তদন্তকারী কর্মকর্তা রেজাউল করিমকে সরকারি চাকরি হতে বাধ্যতামূলক অবসর প্রদানের সুপারিশ করেন। এরপর এ বিষয়ে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) মতামত চাওয়া হলে তারাও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একমত পোষণ করে। চূড়ান্তভাবে সেটি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর হয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে গেলে রাষ্ট্রপতি রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে দেওয়া শাস্তি অনুমোদন করেন।
এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের শীর্ষস্থানীয় এক কর্মকর্তা বুধবার সকালে বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে দীর্ঘদিন পর কড়া একটি পদক্ষেপ আসল। এটা নিঃসন্দেহে ভালো সিদ্ধান্ত। প্রশাসন চালাতে গেলে এভাবেই পদক্ষেপ নিতে হবে। না হলে প্রশাসন ঠিক থাকবে না।
তবে জনপ্রশাসনের অপর এক কর্মকর্তা বলেন, এটা ভালো উদ্যোগ। কিন্তু যে ‘অসদাচরণের’ কারণে রেজাউল করিম রতনের চাকরি গেলে তার চেয়েও বেশি অপরাধ করেও কেউ কেউ কম শাস্তি পেয়ে পার পেয়ে গেছেন। এমন শাস্তির নজির যেন সবার জন্য সমান হয় তা নিশ্চিত করা উচিত।
তিনি বলেন, মুখ দেখে বা ক্ষমতা দেখে শাস্তি কাম্য নয়। এমন ঘটনায় সবারই যাতে রেজাউলের মতো শাস্তির সম্মুখীন হতে হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। এটাই জনপ্রশাসনের কাজ।