পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে প্রেমিক মাইনুদ্দীনের সহযোগীতাই জোড়া খুনের দায় স্বীকার করে নিয়েছে হাছিনা আক্তার। পরকীয়া প্রেমিকের সাথে অনৈতিক সম্পর্ক দেখে ফেলায় শিশু কণ্যা ফাতেমা বিবি ও পথের কাটা সরিয়ে নিজ প্রেমিককে একান্তে পেতে স্বামী আবু তাহেরকে হত্যা করার দোষ স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি।
হাছিনা পুলিশের কাছে জানিয়েছে মাইনুদ্দীনের সঙ্গে তার শারিরীক সম্পর্কের বিষয়টি শিশু ফাতেমা দেখে ফেলার পর তার বাবাকে ঘটনাটি বলে দেয়ার ভয় দেখালে মেয়েকে সে নিজেই খুন করে। পরে আবু তাহেরকেও শ্বাসরোধ করে এবং ছুরি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করা হয়।
চট্টগ্রামে নিজ বাসায় বাবা-মেয়ে খুনের ঘটনায় মূল আসামীদের গ্রেফতারের পর রোববার (২০ অক্টোবর) সকালে নগরীর দামপাড়ায় সিএমপি কমিশনারের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা গণমাধ্যমের কাছে তুলে ধরেন নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) আমেনা বেগম।
তিনি বলেন, হাছিনার দেওয়া তথ্যে তার কথিত প্রেমিক মাহিন উদ্দিনের অবস্থান শনাক্ত করে নোয়াখালীতে অভিযান চালিয়ে শনিবার রাতেই তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে আমেনা বেগম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, চট্টগ্রাম নগরীর বন্দর থানা নিমতলা এলাকায় বুচুইক্যা কলোনির জনৈক শাহআলমের মালিকানাধীন ৩ তলা ভবনের নিচতলার একটি ঘরে স্ত্রী হাছিনা আক্তার ও মেয়ে বিবি ফাতেমাসহ একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে থাকতেন আবু তাহের।
তিনি এসএপিএল কন্টেইনার ডিপোতে দিন মজুরের কাজ করতেন। নোয়াখালী জেলার চরপার্বতী এলাকার মো মোস্তফার ছেলে আবু তাহেরের স্ত্রী হাছিনা আক্তার বাসা ভাড়িতে বুয়ার কাজ করতেন।
তাদের বাসাটির অর্ধেক অংশ বোডের পার্টিশান দিয়ে অপর প্রান্তে থাকতেন ওই কন্টেইনার ডিপোতে শ্রমিকদের নেতা মাইনুদ্দিন। সে সুবাধে দীর্ঘদিন ধরে আবু তাহেরের স্ত্রী হাছিনা আক্তারের সাথে মাইনুদ্দিনের অবৈধ সম্পর্ক চলে আসছিলো। সম্প্রতি স্বামী আবু তাহের বিষয়টি বুঝতে পারলে স্বামী স্ত্রী দুজনের মাঝে অশান্তি শুরু হয়।
অন্যান্য দিনের মত ১৯ অক্টোবর শনিবার সকাল সাড়ে আটটায় কর্মস্থলের উদ্দ্যেশে বাসা থেকে বেরিয়ে যায় দিনমজুর আবু তাহের। তখন বাসায় ছিলেন হাছিনা এবং শিশু কণ্যা ফাতেমা। একটু পরে বাসায় ঢুকে হাছিনার প্রেমিক মাইনুদ্দিন। দুজনের মাজে শারিরীক সম্পর্ক স্থাপনের সময় দেখে ফেলে শিশু ফাতেমা। ঘটনা তার বাবাকে বলে দেওয়ার হুমকি দেয়।
তখন মাইনুদ্দীন ফাতেমার হাত-পা চেপে ধরে আর হাসিনা ছুরি দিয়ে নিজ কণ্যাকে হত্যা করে লাশ খাটের উপর রেখে কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয়। কিছুক্ষণ পর তাহের বাসায় প্রবেশ করলে মাইনুদ্দীন ও হাসিনা তাকে জাপটে ধরে গলায় রশি দিয়ে শ্বাসরোধ এবং পেটে ও মাথায় ছুরিকাঘাতের পাশাপাশি গলা কেটে ফেলে।
আরো খবর : পরকিয়ার বলি স্বামী ও শিশু সন্তান
নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (বন্দর) কামরুল ইসলাম জানান, নিহত আবু তাহের ও তার স্ত্রী হাছিনা আক্তারের আগেও বিয়ে হয়েছে। আবু তাহেরের স্ত্রী মারা গেলেও হাছিনার আগের স্বামীর সাথে বনিবনা না হওয়ায় ছাড়াছাড়ি হয়ে গেলে গত ৫ বছর আগে পারিবারিক সম্মতিতে তাহেরের সাথে দ্বিতীয় বিয়েতে বসে।
সম্প্রতি কিছুদিন আগে তাদের রুমে বোড লাগিয়ে আরেকটি স্পেস ভাড়া নেন শ্রমিক নেতা মাইনুদ্দিন। তার স্ত্রী থাকেন নোয়াখালীর বাড়িতে। এরমধ্যে পরকীয়ার সম্পর্কে জড়ায় তাহেরের স্ত্রী হাছিনা এবং মাইনুদ্দিন। শনিবার দুজনের অনৈতিক সম্পর্ক দেখে ফেলায় শিশু কণ্যা ফাতেমাকে খুন করে হাছিনা। একই দিন মাইনুদ্দিন ও হাছিনা মিলে স্বামী আবু তাহেরকেও হত্যা করে।
হত্যার পর লাশ উদ্ধার হলে হাছিনা পুলিশকে জানিয়েছে আবু তাহের মেয়েকে হত্যার পর নিজেই আত্মহত্যা করেছে। তবে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সে স্বামী ও মেয়েকে হত্যা করার কথা স্বীকার করে নিয়েছে।
শনিবার (১৯ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে বন্দর থানাা পুলিশ ওই ভাড়া বাসা থেকে দিনমজুর আবু তাহের ও মেয়ে বিবি ফাতেমার গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে। দুজনের গলায় ছুরিকাঘাতের চিহ্ন পায় পুলিশ। এছাড়া ঘটনাস্থল থেকে ধারালো রক্তমাখা একটি ছুরিও উদ্ধার করে।
আরো খবর : চট্টগ্রামের নিমতলার বাসায় বাবা ও মেয়ের গলাকাটা লাশ
এসময় স্ত্রী হাছিনা আক্তার দাবি করেন, ঘটনার দিন সকাল ৮ টার দিকে কাজে গিয়ে ৯টার দিকে এসে মেয়ে ফাতেমার লাশ খাটের উপর এবং স্বামী আবু তাহেরের লাশ মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়দের মাধ্যমে সে পুলিশকে খবর দেন। ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধারের পরপর হত্যার রহস্য উদঘাটনে পুলিশের সাথে সিআইডির ফরেনসিক টিম, ডিবি ও পিবিআই যৌথভাবে ঘটনার তদন্ত শুরু করে।