শাহজাহান আলী মনন, নীলফামারী জেলা প্রতিনিধি ॥ নীলফামারীর সৈয়দপুরে রেলওয়ে বিভাগের একটি কোয়াটার দীর্ঘ প্রায় ১১ বছর যাবত নথিতে শুণ্য (খালি) হিসেবে থাকলেও তা একজন রেলকর্মচারীই দখল করে বসবাস করছেন বিনা বরাদ্দে।
ওই রেল কর্মচারীর একই শহরে নিজস্ব বাসা-বাড়ি থাকলেও তিনি কোয়াটার দখল করে সেখানে অবস্থান করছেন আর বাসা ভাড়া দিয়ে নিজের পকেট ভরছে। কিন্তু রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কোয়াটারের ভাড়া বাবদ কোন অর্থই পাচ্ছে না।
রেলওয়ে ভূ-সম্পতি কর্মকর্তা (আইওডাব্লু) এর সহযোগিতায় তিনি ওই কোয়াটারটি দখল করে বসবাস করলেও নিয়মানুযায়ী তার বেতন থেকে এক পয়সাও কর্তন হচ্ছেনা। ফলে সৈয়দপুর রেলওয়ে বিভাগ তথা বাংলাদেশ রেলওয়ে রাজস্ব হারাচ্ছে দীর্ঘ দিন থেকে।
সৈয়দপুর শহরের রেলওয়ে অফিসার্স কলোনী এলাকায় জেলা ডাকবাংলো সংলগ্ন ৬১০ নং ডাবল কোয়াটারটি মূলতঃ বরাদ্দ ছিল রেলওয়ে কারখানার জিওএইচ শপের তৎকালীন খালাসী মোস্তাক এর নামে। কিন্তু তিনি কোয়াটারটি ছেড়ে দিলে বিগত ২০০৯ সালের ২৩ নভেম্বর তারিখে এটি শুন্য তথা খালি ঘোষণা করে সৈয়দপুর রেলওয়ে ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা (আইওডাব্লু)। এর পর প্রায় ১ বছর যাবত এটি খালিই ছিল। কিন্তু তারপর কোয়াটারটি কোন প্রকার বরাদ্দ না নিয়ে ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে দখল করেন জিওএইচ শপেরই গ্রেড-১ মিস্ত্রি মোঃ রফিকুল ইসলাম (টিকিট নং ২৫০৬৯)। তিনি তখন থেকে আজ অবধি সেখানে বসবাস করছেন। বিষয়টি বর্তমান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা অবগত হলেও কোয়াটারটি ওই রেল কর্মচারীর নামে বরাদ্দ প্রদান করা বা দখলমুক্ত করার বিষয়ে কোন ব্যবস্থাই নেননি। বরং তিনিই পরবর্তীতে ওই রেল কর্মচারীকে সহযোগিতা করেছেন সেখানে বিনা বরাদ্দে বসবাসের ক্ষেত্রে।
এ ব্যাপারে কথা হয় কোয়াটার দখলকারী রেলওয়ে কর্মচারী মোঃ রফিকুল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন কোয়াটারটি তার নামে বরাদ্দ নেই তবে তার শপের (জিওএইচ) একজন কর্মচারীর নামে বরাদ্দ রয়েছে। তার বদলে তিনি সেখানে বসবাস করছেন। এ ব্যাপারে আইওডাব্লুসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অবগত আছেন।
সৈয়দপুর রেলওয়ে ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা (আইওডাব্লু) মোঃ তহিদুল ইসলামকে মুঠোফোনে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, সৈয়দপুরে তো অনেক কোয়াটার কোন কার নামে বরাদ্দ বা কার দখলে আছে সে ব্যাপারে সঠিক ভাবে কিছু বলা যাচ্ছেনা। আমি এখন অফিসের বাইরে আছি।
সৈয়দপুরের রেলওয়ে কোয়াটার ও বাংলো বরাদ্দ ও বরাদ্দ বাতিল বিষয়ক কর্মকর্তা (ব্যারাক মাস্টার) মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, ২০০৯ সাল থেকেই অফিসার কলোনীর ৬১০ নং ডাবল কোয়াটারটি শুন্য রয়েছে। এটি জিওএইচ শপের মোস্তাক নামের একজন খালাসীর নামে বরাদ্দ ছিল। পরবর্তীতে তিনি তা ছেড়ে দিলে তখন থেকেই এটি আজ পর্যন্ত শুন্য হিসেবে খাতায় রয়েছে। কিন্তু সেখানে রফিকুল ইসলাম নামে একজন রেলওয়ে কর্মচারী আইওডাব্লুকে ম্যানেজ করে দখলে রেখে বসবাস করছেন। খালি কোয়াটার রক্ষণাবেক্ষনের দায়িত্ব মূলতঃ আইওডাব্লু’র। তিনি কোন কোয়াটারে কাকে থাকার জন্য দিচ্ছেন সে বিষয়ে আমাদের কিছুই জানার নেই।
একটি সূত্রের অভিযোগ আইওডাব্লু মোঃ তহিদুল ইসলাম সৈয়দপুরে যোগদানের পর থেকে প্রায় শতাধিক কোয়াটার ও বাংলো যেগুলো খালি হিসেবে নথিভুক্ত রয়েছে সেগুলো বিভিন্ন ব্যক্তিকে বসবাসের সুযোগ করে দিয়ে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। সেসাথে কোন কোন কোয়াটারকে পরিত্যক্ত দেখিয়েও সেখানে বহিরাগতদের দখলে দিয়ে মাসোহারা আদায় করে চলেছেন।
সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার ওয়ার্কস ম্যানেজার (ডাব্লুএম) ও কোয়াটার এবং বাংলো বরাদ্দ কমিটি (হাউজিং কমিটি) এর চেয়ারম্যান শেখ হাসানুজ্জামান জানান, রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তি তথা জায়গা, কোয়াটার, বাংলো দেখা শোনার দায়িত্ব মূলতঃ আইওডাব্লু’র। আমরা শুধু আমাদের রেলওয়ে কারখানার কোন কর্মকর্তা কর্মচারী বরাদ্দ নিলে বা ছেড়ে দিলে সে বিষয়ে লিখিতভাবে জানাই। বরাদ্দ প্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রাপ্ত বেতনের ৪০ ভাগ বেতন কর্তন করা হয় বেতন থেকে। তাছাড়া সৈয়দপুরের বেশিরভাগ রেলওয়ে কোয়াটার ও বাংলো অনেক বড় বড় মানুষ দখল করে রেখেছে। তাদের বিরুদ্ধে নিউজ করেন রেলওয়ে কারখানার কর্মচারীদের বিরুদ্ধে নিউজ করে কি হবে। কোন কোয়াটার যদি কোন কর্মচারী আইওডাব্লু ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে বা তাদের অজ্ঞাতে দখল করে বাস করে সেক্ষেত্রে আমার করার কিছুই নেই। কেননা তার বেতন থেকে কর্তনও করতে পারবোনা। আর আইওডাব্লু আমার অধিনে নয় তিনি ইএন বা রেলওয়ে ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা পাকশী রেলওয়ে বিভাগের অধিনে। তাই তার বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ আমরা নিতে পারিনা।