গণপরিবহনে শৃংখলা এবং যৌন হয়রানি বন্ধে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিআরটিএ উপ-পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ’র প্রতি আহবান জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন।
আজ মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) বিআরটিএ চট্টগ্রাম বিভাগীয় অফিসে উপ-পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) এর দফতরে এক মতবিনিময় সভায় উক্ত আহবান জানান সুজন।
এ সময় সুজন বলেন নাগরিক উদ্যোগ সরকারের উন্নয়নের সুফলসমূহ জনগনের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে কাজ করে যাচ্ছে। বিভিন্ন সেবা সংস্থা এবং সেবা গ্রহীতাদের মধ্যে মেলবন্ধনের কাজ করছে নাগরিক উদ্যোগ। তাই বর্তমান সময়ের বহুল আলোচিত সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ কার্যকর নিয়ে পরিবহন মালিক, শ্রমিক ও যাত্রী সাধারণের বিভিন্ন অসুবিধা এবং দুর্ভোগ নিয়ে একগুচ্ছ প্রস্তাবনা বিআরটিএ উপ-পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) এর নিকট পেশ করেন।
প্রস্তাবনাসমূহ নিম্নরূপঃ
১। বিআরটিএ অফিস হয়রানি এবং দালালমুক্ত করা।
২। সকল প্রকার ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তি আরো সহজীকরণ করা।
৩। দ্রুততার সাথে ড্রাইভিং লাইসেন্স হস্তান্তর করা। ড্রাইভিং লাইসেন্সের কারণে ড্রাইভাররা রাস্তায় গাড়ী চালাতে পারছে না। ফলে রাস্তায় গাড়ীর ব্যাপক সংকট। অন্যদিকে সাধারন যাত্রী সাধারণকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
৪। গণপরিবহন চলে এ রকম রুটের মধ্যে যে সকল রুটে সিলিং খালি আছে সে সকল রুটে প্রয়োজনীয় সংখ্যক গাড়ীর অনুমোদন প্রদান করা। এতে করে গণপরিবহন বৃদ্ধি পাবে এবং যাত্রী সাধারণ গণপরিবহন সংকট থেকে মুক্তি পাবে।
৫। যে সকল পারমিট ইস্যু হয়েছে সে সকল পারমিটগুলো সত্বর স্ব-স্ব মালিকদের নিকট হস্তান্তর করা।
৬। সীতাকুন্ড সড়কে চলাচলকারী ৪নং এবং ৭নং সার্ভিসটি টাইগারপাস এবং কদমতলীর পরিবর্তে নিউমার্কেট হয়ে লালদিঘী পর্যন্ত বিস্তৃত করা।
৭। ফিটনেস বিহীন, ভাঙ্গা সিট, বডি ও রং বিহীন চলাচলের অযোগ্য গাড়ী রাস্তা থেকে অপসারণ করা।
৮। স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী ডিপ্লোমা কোর্স এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রশিক্ষিত চালক তৈরী করা। এতে করে সড়কে দূর্ঘটনার হার অনেকাংশে কমে আসবে।
৯। অনলাইনে লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স ফরম পূরণ সহজীকরণ করা এবং লার্নার লাইসেন্স থেকে মূল লাইসেন্স প্রাপ্তির সময়কাল কমিয়ে আনা।
১০। মোটর সাইকেল বর্তমান সময়ে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। কম পয়সায় দ্রুত যাতায়াতের কারণে অ্যাপভিত্তিক মোটর সাইকেল রাইড পরিসেবা দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তাই মোটর সাইকেলের লাইসেন্স প্রাপ্তিটাও সহজীকরণ করলে সময় এবং অর্থের অপচয় রোধ করা যাবে।
১১। বর্তমান সময়ের আতংকিত বিষয় গণপরিবহনে যৌন হয়রানি। গণপরিবহনে নারী যাত্রীদের হয়রানি রোধে বাসের ভিতর গাড়ীর নাম্বার, চালক এবং হেলপারের পরিচয় পত্র দৃশ্যমান স্থানে ঝুলিয়ে রাখতে হবে।
১২। প্রতিটি গাড়ীর সামনে ড্যাশ ক্যামেরা এবং ব্যাক ক্যামেরা স্থাপন বাধ্যতামূলক করা যা গাড়ীর ফিটনেস এর সাথে অর্ন্তভুক্ত থাকবে। এতে করে দূর্ঘটনা অনেকাংশে কমে আসবে।
১৩। পুরাতন রেলষ্টেশন থেকে সীতাকুন্ড এবং বড় দারোগার হাঁট পর্যন্ত ৪০ সিটের বাসের একটি নতুন রুট চালু করা। কারণ মহাসড়কে ছোট গাড়ী চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়াতে ঐ এলাকায় যাতায়াতকারী সকল যাত্রীদের প্রচন্ড ভোগান্তি হচ্ছে। অসুস্থ রোগীদের ক্ষেত্রে এ অবস্থা আরো মারাত্নক পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে। সামাজিক আচার অনুষ্ঠানে যেতে না পারার কারণে সামাজিক ব্যবস্থাও নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
১৪। সড়ক পরিবহন আইন বলবৎ এবং সড়কে শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে বিআরটিএর ম্যাজিষ্ট্রেট দিয়ে নিয়মিত ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করা।
বিআরটিএ উপ-পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে নাগরিক উদ্যোগের নেতৃবৃন্দের বক্তব্য শুনেন।
তিনি নাগরিক উদ্যোগের প্রস্তাবিত প্রতিটি প্রস্তাবনার সাথে সহমত পোষন করেন এবং এগুলো যাতে সহসাই বাস্তবায়ন করা যায় সে লক্ষ্যে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। তিনি নাগরিক উদ্যোগকে বর্তমান সময়ের শ্রেষ্ঠ সংগঠনে আখ্যায়িত করেন এবং এ সংগঠনের সাথে কাজ করার আগ্রহ ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, সরকার দীর্ঘদিন ধরে সড়কের সাথে জড়িত পরিবহন মালিক, শ্রমিক, সুশীল সমাজ, প্রশাসন, বিআরটিএ সহ বিভিন্ন পক্ষের সাথে আলোচনা করে সড়ক পরিবহন আইনটি কার্যকর করতে চলেছে। বিআরটিএ এখানে শুধু একটি পক্ষ হিসেবে কাজ করছে। সড়কে শৃংখলা আনার দায়িত্ব কিন্তু সকল পর্যায়ের জনসাধারনের। সরকার এবং সরকারের দায়িত্বশীল বিভিন্ন সংস্থা প্রতিনিয়ত জনগনকে সচেতন করার কাজ করছে। আমাদের সকলকে আরো বেশী সচেতন হতে হবে এবং আইনের প্রতিও শ্রদ্ধাশীল হতে হবে নচেৎ এ আইনটি বাস্তবায়ন করা কঠিন হয়ে যাবে। তিনি সড়ক পরিবহনের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে আন্তরিকতার সাথে সড়ক পরিবহন আইনটি কার্যকরে ভ‚মিকা রাখার আহবান জানান।
এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রাজনীতিবিদ হাজী মোঃ ইলিয়াছ, আব্দুর রহমান মিয়া, সাইদুর রহমান চৌধুরী, নাগরিক উদ্যোগের সদস্য সচিব হাজী মোঃ হোসেন, নুরুল কবির, সিরাজদৌল্ল্যা নিপু, সাইফুল্লাহ আনছারী, মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, মোঃ বাবলু, মোঃ ওয়াসিম, মোঃ নাছির উদ্দিন প্রমূখ।