নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় ঘরে ঢুকে এক গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন এবং নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানোর ঘটনায় প্রধান আসামি বাদলসহ আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ নিয়ে এ ঘটনায় চার আসামি গ্রেপ্তার হলো।
গ্রেপ্তার চারজন হলেন- আব্দুর রহিম, রহমত উল্লাহ, বাদল ও দেলোয়ার। এদের মধ্যে আব্দুর রহিমকে রোববার সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর রোববার রাতে রহমত উল্ল্যা (৪১) নামে আরেক আসামিকেও পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এ ছাড়া মামলার প্রধান আসামি বাদল এবং দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ারকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
বেগমগঞ্জ মডেল থানার ওসি হারুনুর রশিদ চৌধুরী জানিয়েছেন, রোববার রাতে বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের জয়কৃষ্ণপুর গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে রহমত উল্ল্যাকে গ্রেপ্তার করা হয়। রহমত জয়কৃষ্ণপুর গ্রামের প্রয়াত আব্দুর রহিমের ছেলে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ জানিয়েছেন, মামলার প্রধান আসামি বাদলকে ঢাকা থেকে এবং দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ারকে নারায়ণগঞ্জ থেকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে ভুক্তভোগী গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন এবং নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করে একদল যুবক। ঘটনার এক মাস পর রোববার দুপুরে নির্যাতনের ওই ভিডিও কেউ একজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেন। মুহূর্তের মধ্যে তা ছড়িয়ে (ভাইরাল) পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশও তৎপর হয়ে ওঠে। পুলিশ জানতে পারে, স্থানীয় দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার ও তার সেকেন্ড ইন কমান্ড বাদল এবং কর্মী রহিম, সুমনসহ পাঁচ-ছয়জন গৃহবধূর সঙ্গে এমন বর্বর আচরণ করেছে। পরে অভিযান চালিয়ে সন্ধ্যায় আবদুর রহিম নামের একজনকে আটক করা হয়।
বেগমগঞ্জ মডেল থানার ওসি হারুনুর রশীদ জানান, এ ঘটনায় নির্যাতনের শিকার নারী বাদী হয়ে রোববার রাতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এবং পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করেন। মামলায় ৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৭-৮ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার আসামিরা হলেন- বাদল, মো. রহিম, আবুল কালাম, ইস্রাফিল হোসেন, সাজু, সামছুদ্দিন সুমন, আবদুর রব, আরিফ ও রহমত উল্যা। তাদের সবার বাড়ি বেগমগঞ্জে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই গৃহবধূর বিয়ে হয় বছর তিনেক আগে। স্বামী তাকে রেখে দ্বিতীয় বিয়ে করে অন্যত্র বসবাস করতে থাকে। দীর্ঘদিন স্বামীর কোনো যোগাযোগ ছিল না। গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে স্বামী তার সঙ্গে দেখা করতে আসে। মাদক ব্যবসায়ী দেলোয়ার বিষয়টি জানতে পেরে তার লোকজন নিয়ে রাত ১০টার দিকে গৃহবধূর ঘরে প্রবেশ করে ‘অনৈতিক’ কাজের অভিযোগ এনে তাকে মারধর শুরু করে। একপর্যায়ে ওই নারীকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করে তারা।
এক মিনিট ২৩ সেকেন্ডের ওই ভিডিও ফুটেজ দেখে অনেকেই অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
নোয়াখালীর পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন বলেন, ন্যক্কারজনক এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা যতই ক্ষমতাধর হোক, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
২৪ ঘণ্টা/এম আর