চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ.জ. ম নাছির উদ্দীন বলেছেন, সবুজ উদ্ভিদ জগত মানবকুল সহ জীব-প্রাণীর বেঁচে- থাকার অবলম্বন। এ সুবজ উদ্ভিদ মানব ও প্রাণীকূলকে বেঁচে থাকার অক্সিজেন জোগায় এবং নির্গত কার্বনডাই অক্সাইড টেনে নিয়ে প্রাণ-প্রকৃতি জগতের ভারসাম্য রক্ষা করে। এ সবুজ উদ্ভিদের প্রতি অশেষ ঋণ থাকা সত্বেও আমরা কতটুকুই বা তা অনুধাবন করি!
আজ লাগামহীন সবুজ উদ্ভিদ নিধনের ফলে অক্সিজেন শূন্যতার সৃস্টি হচ্ছে। প্রকৃতির প্রতি মানুষের নির্দয় ও অবিবেচক আচরণের ফলেই আমরা আজ করোনাকালের দূর্যোগের ঘনঘটায় বিপর্যস্থ।
মনে রাখতে হবে সবুজ উদ্ভিদ ও পরিবেশ ঘাতকরা করোনার চেয়ে ভয়ংকর ভাইরাস। এই সত্যকে উপলব্ধি করে চসিকের উদ্যোগে নগরীতে সবুজায়নের ধারাবাহিক প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে চলতি বর্ষার মৌসুমেই ৫০ লক্ষ চারাগাছ রোপন করা হবে।
তিনি আজ সকালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন মিউনিসিপ্যাল স্কুল এন্ড কলেজ প্রাঙ্গনে বৃক্ষরোপন কর্মসূচীর উদ্বোধন কালে একথাগুলো বলেছেন।
তিনি বৃক্ষের গুরুত্ব, উপযোগিতা, কার্যকারিতা এবং প্রাকৃতিক দূর্যোগ প্রতিরোধে একে সবচেয়ে বড় সহায়ক শক্তি হিসেবে অবিহিত করে বলেন, আমরা বহুবার প্রমাণ পেয়েছি যে, সবুজ উদ্ভিদ মানব ও প্রাণি জাতিকে প্রাকৃতিক মহাদূর্যোগ থেকে রক্ষা করে। এই তো কিছুদিন আগেও আম্ফান নামক বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়টি তীব্র গতিতে বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে আসার পথে সুন্দরবনের বৃক্ষ বেষ্টনী তার গতি রুদ্ধ করে দূর্বল করে দেয়। এই কারণে আম্ফানের আগ্রাসনে কোলকাতা সহ পশ্চিমবঙ্গ লন্ডভণ্ড হলেও করোনাকালে ভয়াভহ ক্ষতি থেকে আমরা রক্ষা পেয়েছি। আজ এটাই প্রমাণিত হয় যে, সুন্দরবনের এই বৃক্ষ বেষ্টনী না থাকলে বাংলাদেশে মানুষের হাহাকার ভারি হয়ে উঠতো।
আরও একটি বিষয় মনে রাখতে হবে যে, মানবকুল ও প্রাণি জগত উদ্ভিদ থেকে খাদ্য সংগ্রহ করলেও একমাত্র উদ্ভিদই নিজে থেকেই নিজের খাদ্য সংগ্রহ করে। শুধু তাই নয় ওষুধ, বস্ত্র ও বাসস্থান যোগায়। ঝড়-ঝঞ্জার ও জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা করে। শিল্পের কাচাঁমাল ও জ্বালানী যোগায়। শব্দ ও বায়ু দুষণ থেকে রক্ষা করে। সময়মত বৃষ্টিপাত ঘটাতে সহায়তা করে। উঞ্চায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাব থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করে। তাই পরিবেশ রক্ষায় গাছ লাগানোর কোন বিকল্প নেই।
তিনি ক্ষোভ উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূল রক্ষায় বিপুল অর্থ ব্যয়ে যে প্যারাবন বেষ্টণী গড়ে তোলা হয়েছে তা ভূমিদস্যুদের আগ্রাসনে ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছে। এই প্যারাবন উজাড় করে সেখানে অপরিকল্পিত মাছের ঘের করা হচ্ছে। এর ফলে আমাদের উপকূল অরক্ষিত বলে প্রাকৃতিক দূর্যোগে এসকল জনপথ বার বার লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়।
মেয়র আরো উল্লেখ করেন যে, এই চট্টগ্রাম নগরীতেই অনেকগুলো শতবর্ষী বড় বড় বৃক্ষ ছিল। এক শ্রেণির দস্যু প্রকৃতির মানুষ যারা সরকারি জায়গা থেকে এই শতবর্ষী বৃক্ষগুলোকে একে একে নিধন করেছে এবং এখনও করা হচ্ছে। এ কারণে চট্টগ্রামে যে ভূ-প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছিল তা আজ অনেকাংশে লুন্ঠিত।
তিনি প্রশ্ন করেন যে, লক ডাউনের মধ্যেও পাহাড় নিধন কেন হয়েছে, কেন বৃক্ষ নিধন হয়েছে, কেন জবর দখলের মাধ্যমে সেখানে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে? কেমন করে এভাবে প্রকৃতি বিনাশ হলো তার জবাব অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জনগণ চাইতে পারে। এই দাবীর সাথে সকলকে কন্ঠ মেলাতে হবে।
সিটি মেয়র বৃক্ষরোপনে অতুলনীয় অবদানের জন্য একাধিকবার জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কৃত হওয়ার কৃতিত্বের কথা তার ধারাবাহিকতায় রক্ষায় চট্টগ্রাম নগরীর প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, চিকিৎসাকেন্দ্র, ওয়ার্ড অফিস, নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও মিড আইল্যান্ড, নদীর পাড়,কবরস্থান, ঘরের আঙ্গিনা এবং ছাদবাগানসহ সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প স্থানে বৃক্ষরোপনের ব্যপক পরিকল্পনা তুলে ধরেন।
তিনি এই কর্মসূচী সফল করার জন্য ওয়ার্ড কাউন্সিলর সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ইতিবাচক ভূমিকা রাখার আহবান জানান।
এ সময় প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ এ কে এম রেজাউল করিম, সিটি মেয়রের একান্ত সচিব মোহাম্মদ আবুল হাশেম, মিউনিসিপ্যাল মডেল হাই স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ সাহেদুল কবির চৌধুরী, কৃষ্ণকুমারী সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আহমেদ হোসাইন, বন কর্মকর্তা মঈনুল হোসেন আলী জয়সহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধন শেষে সিটি মেয়র শিক্ষার্থীদের হাতে ৫শত চারাগাছ বিতরণ করেন।
অপর্ণাচরণ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের উন্নয়ন কাজ পরিদর্শন :
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ.জ. ম নাছির উদ্দীন আজ অপরাহ্নে চসিক পরিচালিত অপর্ণাচরণ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের উন্নয়ন ও অবকাঠামো নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করেন।
এ সময় তিনি মাষ্টার দা সূর্যসেন এর নেতৃত্বাধীন চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের সহযোদ্ধা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ও কল্পনা দত্তের স্মৃতি বিজরিত ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে চসিক অধিগ্রহণ করার পর যে উন্নয়ন হাতে নিয়েছে তা দ্রুততার সাথে বাস্তাবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও প্রকৌশলীদের নির্দেশনা দেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্ণেল সোহেল আহমেদ, সহকারী প্রকৌশলী গোলাম আফজল মহিউদ্দিন, উপসহকারী প্রকৌশলী সুদেব কুমার দেব, ঠিকাদার মোঃ মিনহাজ, বেলাল আহমদ, এস এম মামুনুর রশিদ উপস্থিত ছিলেন।
এইচকে গ্রুপের পক্ষ থেকে হোমিও ঔষধ আর্সেনিক এ্যালবাম-৩০ হস্তান্তর: আজ দুপুরে টাইগারপাসস্থ মেয়র দপ্তরে সিটি মেয়র আ. জ. ম নাছির উদ্দীনের হাতে এইচকে গ্রুপের পক্ষ থেকে করোনা (কোভিড-১৯) চিকিৎসায় বহুল ব্যবহৃত হোমিও ঔষধ আর্সেনিক এ্যালবাম-৩০ একশ জনের জন্য এক মাসের ঔষধ হস্তান্তর করেন।
হস্তান্তরকালে মেয়র করোনা মহামারী দুর্যোগকালিন সময়ে দেশের মানুষকে এ মহামারী থেকে বাঁচাতে এগিয়ে আসায় এইচকে গ্রুপকে ধন্যবাদ জানান এবং সাধারণ মানুষের চিকিৎসায় সকল হোমিও চিকিৎসকদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্ণেল সোহেল আহমেদ, সিটি মেয়রের একান্ত সচিব মোহাম্মদ আবুল হাসেম, এইচকে গ্রুপ সিইও ছৈয়দ ছারওয়ার আলম ও ডা. কাজী সাজিয়া আফরিন শাওন উপস্থিত ছিলেন।
মিমি আবাসিক এলাকার গেইট উদ্বোধন :
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীন বলেছেন, নগরীকে সুন্দর করতে হলে প্রথমে এলাকাভিত্তিক সৌন্দর্য্যের গুরুত্ব রয়েছে। প্রত্যেকে যার যার এলাকায় পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ গড়ে তুলতে পারলেই পুরো নগরী বদলে যাবে।
মেয়র প্রত্যেককে করোনা প্রতিরোধে সচেতন থাকার আহবান জানান।
আজ সকালে ফলক উম্মোচনের মাধ্যমে পূর্বনাসিরাবাদস্থ মিমি সুপার মার্কেট সংলগ্ন মিমি আবাসিক এলাকার স্থায়ী গেইট নির্মাণ কাজের উদ্বোধনকালে মেয়র একথাগুলো বলেন।
তিনি আবাসিক এলাকার নিরাপত্তা সহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধাগুলো যদি আবাসিক এলাকার অধিবাসীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায় তাহলেই এই নিরাপত্তা মূলক তোরণ নির্মাণে স্বার্থকতা বয়ে আনবে। সাথে সাথে এই তোরণে নিরাপত্তামূলক প্রযুক্তিগত সরঞ্জাম স্থাপনের উপরও গুরুত্বারোপ করেন মেয়র।
এ সময় কাউন্সিলর মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, আবাসিক এলাকার সহ সভাপতি এ.কে.এম মহিউদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক সামসুদ্দিন মজুমদার, ফখরুল ইসলাম, এস এম সিরাজ, ওয়াহিদুল আলম শিমুল, তোফাজ্জল হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আফিয়া আখতারকে বিদায় সংবর্ধনা দিল চসিক :
দুই বছর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালন শেষে বিদায় নিয়েছেন আফিয়া আখতার। চট্টগ্রামে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের মহাব্যবস্থাপক পদে তার যোগদানের কথা রয়েছে।
আজ সকালে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় দিয়েছে চসিক। নগর ভবনের চসিক মেয়র দপ্তরে অনুষ্ঠিত বিদায় সংবর্ধনায় প্রধান অতিথি ছিলেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মেয়র বলেন, আফিয়া আখতার চসিকে আন্তরিকতা ও সফলতার সঙ্গে অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছেন। এজন্য মেয়র তাঁর পেশাগত দক্ষতার প্রশংসা করে বলেন, তিনি যেখানে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং করবেন সেই ধারাবাহিতকতাকে অব্যাহত রাখার জন্য আহবান জানান।
তিনি বলেন, আফিয়া আখতার চট্টগ্রাম নগরে অনেক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ সহ গুরুত্বপুর্ণ অভিযান পরিচালনা করেছেন। তাঁর এই কার্যক্রম চট্টগ্রামবাসী স্মরণীয় করে রাখবেন।
মেয়র তার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করেন। বিদায় অনুষ্ঠানে চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা, প্রধান প্রকৌশলী লে.কর্নেল সোহেল আহমদ, স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট জাহানারা ফেরদৌস, মেয়রের একান্ত সচিব মোহাম্মদ আবুল হাশেম উপস্থিত ছিলেন।
বিদায়ী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে ফুল, চসিকের মনোগ্রাম খচিত ক্রেস্ট তুলে দেন সিটি মেয়র।
২৪ ঘণ্টা/এম আর