লেবাননের বৈরুত বন্দরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আগুন লাগার কারণ জানা যায়নি। এক মাস আগে বন্দরের গুদামে ভয়াবহ বিস্ফোরণে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় পুরো বৈরুত।
এরমধ্যেই বৃহস্পতিবার (১০ সেপ্টেম্বর) আগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলো।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, বন্দরে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। আশপাশ কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে গেছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস। তাৎক্ষণিকভাবে আগুনের সূত্রপাত কীভাবে তা জানা যায়নি।
৪ আগস্ট বৈরুতের রাসায়নিক গুদামে অগ্নিকাণ্ডে ১৯১ জন মারা যায়। আহত হয় ৬ হাজার জন। বাস্তুচ্যুত হয় ৩ লাখ মানুষ। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১ হাজার ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার। গুদামে রাখা ২ হাজার ৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বিস্ফোরণে ক্ষয়ক্ষতির এ ঘটনা ঘটে।
লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে এ পর্যন্ত চার বাংলাদেশি নিহত এবং ৯৯ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ২১ জন বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সদস্য।
বুধবার (৫ আগস্ট) রাতে এ তথ্য জানান লেবাননে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) আব্দুল্লাহ আল মামুন।
জানা গেছে, নিহত চারজনই প্রবাসী বাংলাদেশি। তারা হলেন- ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেহেদী হাসান রনি (২৫) ও মো. রাসেল (২২), মাদারীপুরের মিজানুর রহমান এবং কুমিল্লার রেজাউল।
আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, আহতদের মধ্যে বর্তমানে হাসপাতালে আছেন ৮-১০ জনের মতো। বাকিদের বেশিরভাগই চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
তিনি বলেন, আহত ২১ জন নৌবাহিনীর সদস্যের মধ্যে ৭ জন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
আবদুল্লাহ আল মামুন আরও জানান, বিস্ফোরণ স্থলের ৪ থেকে ৫ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত হলেও বাংলাদেশ দূতাবাসের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
এদিকে বৈরুতের ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে গেছে এবং আহত হয়েছেন চার হাজারের বেশি। ধ্বংসস্তূপের নিচে অনেকে আটকা থাকায় হতাহতের এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
বুধবার স্থানীয় একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বৈরুত বিস্ফোরণের ব্যাপারে এ তথ্য দিয়েছেন লেবাননের রেড ক্রসের প্রধান জর্জ কিত্তানেহ।
লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছে বলে দেশটির স্থানীয় গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে।
বিস্ফোরণের ভয়াবহতায় এলাকার বেশ কয়েকটি ভবন ধসে পড়েছে। দুর্ঘটনাকবলিত এলাকায় উচ্চমাত্রার বিস্ফোরক দ্রব্যের গুদাম রয়েছে বলে জানা গেছে।
এর আগে বৈরুতে ২০০৫ সালে একটি বিস্ফোরণে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী নিহত হন। আজকের হামলাকে সেই সময়ের হামলার চেয়েও ভয়াবহ বলে দাবি করেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
মঙ্গলবার (০৪ আগস্ট) বাংলাদেশ সময় রাত ১০টার দিকে এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
ঘটনায় আহত এক ব্যক্তি রয়টার্সকে জানান, ‘আমি জানি না কি হয়েছে। আমি মাছ ধরছিলাম এরই মধ্যে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। কালো ধোঁয়ায় অন্ধকার হয়ে যায় গোটা আকাশ। আমি আহত হয়েছি।’
কয়েকদিন আগে লেবানন ও ইসরায়েলের বিরোধপূর্ণ দক্ষিণ লেবাননের শেবা ফার্মস সীমান্তে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। ইসরায়েল শীর্ষ সংবাদ মাধ্যম হারেৎজ এটিকে হিজবুল্লাহ কর্তৃক হামলা বলে উল্লেখ করে। এক সাক্ষাৎকারে হিজবুল্লাহর উপমহাসচিব শেখ নাঈম কাসেম বলেন, গত সপ্তাহে সিরিয়ায় সদস্য আলী কামেল মোহসিনকে বিমান হামলার মাধ্যমে হত্যা করে ইসরাইল।
এ ব্যাপারে ইহুদিবাদী ইসরায়েলকে তাদের হিসাব-নিকাশ করতে দেন। ওই সাক্ষাৎকারে তিনি ইসরায়েলকে কঠিন পরিণতির হুমকি দেন। এতে আক্রমণাত্মক অবস্থান নেয় ইসরায়েল। এসব বিষয়ে যখন দু’দেশের সম্পর্ক ফের যুদ্ধাবস্থার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায় তখন লেবাননের অভ্যন্তরে এমন বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটলো। তবে এ খবর লেখা পর্যন্ত কোনো পক্ষ কাউকে দায়ী করা বা কেউ হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেনি।
উল্লেখ্য, লেবাননের রাজধানী বৈরুতের এ এলাকাতেই ২০০৫ সালে এক বোমা হামলায় প্রাণ হারান সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাফিক হারিরি। সেই সময় বিস্ফোরণে হারিরির দেহরক্ষীসহ নিহত হন আরো নয় জন। বিস্ফোরণে আশপাশের বিল্ডিং-এর গুরুতর ক্ষতি হয়। হারিরির গাড়ির কনভয় যাচ্ছিল বৈরুতের পশ্চিমে সেন্ট জর্জ হোটেলের কাছ দিয়ে৷ বোমা ফাটে তখনই। প্রাক্তন লেবানিজ প্রধানমন্ত্রী হারিরিকে সঙ্গে সঙ্গে বৈরুতের আমেরিকান হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালের সামনে সমবেত হন শোকার্ত বহু মানুষ।
গাড়ি বোমার প্রচণ্ড বিস্ফোরণে এক মিটার গভীর এক ফাটল তৈরি হয় রাস্তায়। কাছাকাছি অবস্থিত একাধিক ভবনের প্রাচীর পুরোপুরি ভেঙে যায়। শহরের ঐ অংশে বহু ব্যাংক আর হোটেল অবস্থিত। আগুনের গনগনে শিখার কারণে জ্বলন্ত গাড়ির ভেতর থেকে হতাহতদের সঙ্গে সঙ্গে বের করে আনা সম্ভব হয় নি৷ অগ্নিদগ্ধ দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায় রাস্তার ওপর। লেবানিজ রেডক্রসের কর্মীরা আহতদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসে। বহু আহত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷
লেবাননে ১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত স্থায়ী রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের পর ওই দেশের রাজনীতির ওপর ব্যাপক প্রভাব রাখেন রাফিক হারিরি৷