Tag: মরক্কো

  • হিজাব পরে নারী বিশ্বকাপে ইতিহাস গড়লেন মরক্কোর বেনজিনা

    হিজাব পরে নারী বিশ্বকাপে ইতিহাস গড়লেন মরক্কোর বেনজিনা

    নারী বিশ্বকাপ ফুটবলে দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে আজ নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নামে আফ্রিকান মুসলিম দেশ মরক্কো। ম্যাচের শুরুর একাদশেই রাখা হয় ডিফেন্ডার নউহাইলা বেনজিনাকে। যিনি মাঠে নামেন মাথায় হিজাব বেধে এবং পুরো শরীর ঢাকা পোশাক পরে।

    শুধু বিশ্বকাপই নয়, নারী ফুটবলের সিনিয়রদের কোনো বৈশ্বিক কিংবা মহাদেশীয় টুর্নামেন্টে এই প্রথম কোনো মুসলিম ফুটবলার মাথায় হিজাব পরে মাঠে নামার ইতিহাস গড়লেন।

    এক সময় নারী ফুটবলে কোনো ফুটবলার মাথায় হিজাব বেধে খেলতে নামার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলো ফিফা। তাদের যুক্তি ছিল, স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তা ইস্যুতে এই নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছিলো। তবে, ২০১৪ সালেই এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে বাধ্য হয়েছিলো ফিফা। অ্যাক্টিভিস্ট, অ্যাথলেট, বিভিন্ন দেশের সরকার এবং ফুটবল কর্মকর্থাদের আইনি লড়াইয়ের পর এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়।

    ২০১৪ সালে এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার প্রায় ৯ বছর পর এই প্রথম কোনো মুসলিম নারী ফুটবলার মাথায় হিজাব বেধে এবং পুরো শরীর পোশাকে ঢেকে ফুটবল খেলতে নামলেন।

    মুসলিম উইমেন ইন স্পোর্টস নেটওয়ার্ক-এর কো ফাউন্ডার আসমাহ হেলাল বলেন, ‘আমার কোনো সন্দেহ নেই যে আরও অনেক অনেক মুসলিম নারী এবং বালিকারা বেনজিনাকে দেখে উৎসাহী হবে। শুধুমাত্র একজন খেলোয়াড় হিসেবে উৎসাহী হবে তা নয়, বরং সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী থেকে শুরু করে, কোচ এবং অন্য খেলাগুলোয়ও এভাবে মেয়েদের আগমণ ঘটবে বলে আমার বিশ্বাস।’

    বেনজিনা মরক্কোর নারী ফুটবল লিগে নিয়মিত খেলে থাকেন। তিনি খেলেন অ্যাসোসিয়েশন অব ফোর্সেস আর্মড রয়্যাল ক্লাবের হয়ে। মরক্কোর শীর্ষ নারী ফুটবল লিগে তার ক্লাব বর্তমানে টানা অষ্টমবার চ্যাম্পিয়ন।

    চলতি নারী বিশ্বকাপে মেলবোর্নে জার্মানির সঙ্গে প্রথম ম্যাচে ৬-০ গোলে হেরে গিয়েছিলো মরক্কো। ওই ম্যাচে খেলেননি বেনজিনা। অবশেষে দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর আজ দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে অ্যাডিলেইডে প্রথম একাদশেই খেলার সুযোগ পান তিনি। এই ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়াকে ১-০ গোলে হারিয়ে দিয়েছে মরক্কান মেয়েরা।

    এই ম্যাচে ডিফেন্সিভ লাইনে খুব দারুণ ভুমিকা রাখেন বেনজিনা। দক্ষিণ কোরিয়ার একটি কাউন্টার অ্যাটাক ঠেকাতে গিয়ে ম্যাচের শেষের দিকে একটি হলুদ কার্ডও দেখতে হয়েছে তাকে।

    প্রথম আরব এবং উত্তর আফ্রিকান দেশ হিসেবে নারী বিশ্বকাপে খেলছে মরক্কো। মরক্কো অধিনায়ক গিজলানে চেবাক বলেন, ‘আমরা গর্বিত প্রথম আরব দেশ, যারা নারী বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পেয়েছি।’

  • মরক্কোকে হারিয়ে তৃতীয় ক্রোয়েশিয়া

    মরক্কোকে হারিয়ে তৃতীয় ক্রোয়েশিয়া

    ‘অমানবিক’ ম্যাচ। ফাইনালে খেলার স্বপ্নভঙ্গের পর খেলোয়াড়, ভক্তদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ স্বাভাবিক। মাঠে নামার মানসিক প্রস্তুতি থাকা যেমন কঠিন, উৎসাহ পাওয়ায় কঠিন। তবু ফিফার নিয়ম। তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচ খেলতেই হবে।

    ওই লড়াইয়ে শনিবার চমক দিয়ে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলা মরক্কো ২-১ গোলে হেরেছে। স্বান্তনার তৃতীয় স্থান পেয়েছে গত আসরে রানার্স আপ হওয়া ক্রোয়েশিয়া।

    তৃতীয় হওয়ার লড়াইয়ে দুই দল সমান তালে লড়াই করেছে। ম্যাচের ৭ মিনিটে অসাধারণ এক হেডে গোল করে দলকে এগিয়ে নেন ক্রোয়াট সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার জোসকো গার্ডিওল। কিন্তু ওই লিড মুহূর্তে হারায় মডরিচ-পেরিসিচরা।

    ম্যাচের ৯ মিনিটে গোল শোধ করেন মরক্কোর আশরাফ দারি। তিনিও হেড থেকে গোল করেন। আফ্রিকার দলটির নেওয়া ফ্রি কিক ক্রোয়াট খেলোয়াড় হেড দিলেও বিপদমুক্ত করতে পারেননি। দারি ফাঁকায় পেয়ে জালে পাঠিয়ে দেন।

    শুরুতেই জমে যায় দুই দলের গোল লড়াই। ফ্রান্সের বিপক্ষে দুর্দান্ত ফুটবল খেলা মরক্কোও এই ম্যাচে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ছিল। প্রথমার্ধে ক্রোয়াটদের সঙ্গে তাই বলের ও গোলের দুর্দান্ত লড়াই জমিয়ে তোলে তারা। কিন্তু প্রথমার্ধে দ্বিতীয় গোলের দেখা পায় ইউরোপের প্রতিনিধি ক্রোয়েশিয়া।

    ম্যাচের ৪২ মিনিটে মিস্লাভ অরসিচ গোল করেন। তার দুর্দান্ত গোলে সহায়তা দেন লিভাজা। ওই গোল শোধ করতে দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণের জোর বাড়ায় মরক্কোর খেলোয়াড়রা।

    ক্রোয়াটদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ৪৯ শতাংশ বল পায়ে রাখে ওয়ালিদ রেগরাগুই-এর দল। গোলে ভালো দুটি শটও নেয়। ভালো পাঁচটি আক্রমণ তুলে শট নেয় বাইরে। সমতাসূচক গোলটি তারা তাই করতে পারেনি।

  • তৃতীয় স্থানের লড়াইয়ে আজ ক্রোয়েশিয়ার সামনে মরক্কো

    তৃতীয় স্থানের লড়াইয়ে আজ ক্রোয়েশিয়ার সামনে মরক্কো

    কাতার বিশ্বকাপের তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে আজ মুখোমুখি হতে যাচ্ছে ক্রোয়েশিয়া ও মরক্কো। বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় আল রাইয়ানের খলিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠেয় এই ম্যাচে দুই দলের কোন একটা দল শেষটা রাঙিয়ে হবেবিশ্বকাপের তৃতীয় সেরা দল।

    ‘সমতা ভাঙার’ প্রশ্ন সবার আগে আসে কারণ দল দুটি এবারের বিশ্বকাপে দ্বিতীয়বারের মতো মুখোমুখি হতে যাচ্ছে আজ। বিশ্বকাপে একই গ্রুপে ছিল ক্রোয়েশিয়া ও মরক্কো। গোলশূন্য সমতায় শেষ হয়েছিল সেই ম্যাচটি।

    গ্রুপ পর্যায়ের মতো তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে সমতায় ম্যাচ শেষ হওয়ার সুযোগ নাই। নির্ধারিত সময়ে ম্যাচ নিষ্পত্তি না হলে অতিরিক্ত সময়, এবং সেখানেও নিষ্পত্তি না হলে টাইব্রেকার।

    প্রথম সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ৩-০ গোলে হারে ক্রোয়েশিয়া। অন্যদিকে দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে ২-০ গোলে হারে দল দুটিকে ফের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।

    এবারের বিশ্বকাপের ‘এফ’ গ্রুপে মরক্কো ও ক্রোয়েশিয়া নিজেদের প্রথম ম্যাচে গোলশূন্য ড্র করে। এরপর মরক্কো বেলজিয়ামকে ২-০ গোলে এবং কানাডাকে হারায় ২-১ গোলে। শেষ ষোলোতে নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়ে গোলশূন্য ড্র ম্যাচে মরক্কো টাইব্রেকারে স্পেনকে ৩-০ গোলে হারানোর পর কোয়ার্টার ফাইনালে আফ্রিকার দেশটি পর্তুগালকে হারায় ১-০ গোলে।

    অন্যদিকে, প্রথম ম্যাচে মরক্কোর সঙ্গে গোলশূন্য ড্রয়ের পর দ্বিতীয় ম্যাচে ক্রোয়েশিয়া কানাডাকে হারায় ৪-১ গোলে, এরপর বেলজিয়ামের সঙ্গে ড্র হয় ম্যাচ গোলশূন্য সমতায়। শেষ ষোলোতে জাপানের বিপক্ষে ম্যাচটি ১-১ গোলে সমতায় শেষ হলে টাইব্রেকারে ক্রোয়াটরা ম্যাচ জেতে ৩-১ গোলে। কোয়ার্টার ফাইনালে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলকে হারিয়ে ক্রোয়েশিয়া ওঠে যায় সেমিফাইনালে। ব্রাজিলের সঙ্গে ম্যাচটি নির্ধারিত সময়ে গোলশূন্য সমতার পর অতিরিক্ত সময়ে ১-১ গোলে শেষ হয়। এরপর টাইব্রেকারে ক্রোয়াটরা ম্যাচটি জিতে নেয় ৪-২ গোলে।

    বিশ্বকাপে এবারের আসরের গ্রুপ পর্যায় বাদে আর কখনই মুখোমুখি হয়নি ক্রোয়েশিয়া ও মরক্কো। বিশ্বকাপ ছাড়া ১৯৯৬ সালে একবার দল দুটি পরস্পরের বিপক্ষে খেলেছিল। কিং হাসান ইন্টারন্যাশনাল কাপের সেমিফাইনালের ম্যাচটির ফলাফল নির্ধারিত হয়েছিল টাইব্রেকারে, যেখানে ৭-৬ গোলে জিতেছিল ক্রোয়েশিয়া। নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়ে ওই ম্যাচটি ২-২ গোলে সমতায় ছিল।

    বিশ্বকাপে এবারই প্রথম সেমিফাইনাল পর্যায়ে এসে স্থান নির্ধারণী ম্যাচ খেলছে আরব আফ্রিকান দেশ মরক্কো। এটাই বিশ্বকাপের তাদের সর্বোচ্চ অর্জন। অন্যদিকে, ২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপের রানার্সআপ ক্রোয়েশিয়া ১৯৯৮ বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে তৃতীয় হয়েছিল।

  • মরক্কোর স্বপ্ন ভেঙে টানা দ্বিতীয়বার ফাইনালে ফ্রান্স

    মরক্কোর স্বপ্ন ভেঙে টানা দ্বিতীয়বার ফাইনালে ফ্রান্স

    উড়ছেন এমবাপে, উড়ছে ফ্রান্স। আবারও বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠলো বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। সেমিফাইনালে দারুণ জমজমাট লড়াই শেষে আফ্রিকার সিংহ মরক্কোকে ২-০ গোলের ব্যবধানে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠলো ফ্রান্স।

    ২০১৮ বিশ্বকাপ যেখান থেকে শুরু করেছিল সেখান থেকেই যেন এই বিশ্বকাপ শুরু করেন এমবাপেরা। দুর্দান্ত খেলেই আবারও বিশ্বকাপের ফাইনালে জায়গা করে নিলো ফ্রান্স। অথচ পুরো ম্যাচেই দাপট দেখিয়ে খেলেছে মরক্কো।

    ফেবারিটের তকমা লাগিয়ে বিশ্বকাপে আসা ফ্রান্স শুরুটাও করে স্বপ্নের মতো। থিও হার্নান্দেজের বা পায়ের দারুণ শটে ম্যাচের ৫ মিনিটের মাথায় ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় ফ্রান্স। বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো প্রতিপক্ষ ফুটবলারের কাছ থেকে গোল হজম করলো মরক্কো।

    এক গোল খেলেও দারুণভাবে খেলতে থাকে মরক্কো। ১১ মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থেকে উনাহির দূরপাল্লার শট বা পাশে ঝাঁপিয়ে পড়ে রুখে দেন ফ্রেঞ্চ গোলরক্ষক হুগো লরিস।

    ১৮ মিনিটে আবারও গোলের সুযোগ পায় মরক্কো। বৌফালের পাস থেকে ডি বক্সে বল পেলেও বা পায়ের দুর্বল শটে গোল করতে ব্যর্থ হন জিয়েচ।

    এর ঠিক এক মিনিট পর সুযোগ পেয়েছিল ফ্রান্সও। ডি বক্সের ভেতর গোলরক্ষককে একা পেয়ে বা পায়ে শট নেন জিরুড। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বারে লেগে বল চলে যায় বাইরে।

    ৩৬ মিনিটে দারুণ এক কাউন্টার অ্যাটাকে মরক্কোর রক্ষণভাগে ভয় ধরিয়ে দেন এমবাপে ও জিরুড। এমবাপের পেসের কাছে পরাস্ত হন মরক্কোর ডিফেন্ডার।

    ফলে এমবাপের দুর্বল শট ক্লিয়ার করেন মরক্কোর ডিফেন্ডার। কিন্তু ফোফানার পাস থেকে দারুণভাবে একা বল পেয়ে গোলবারের বাইরে শট নেন জিরুড।

    ৪১ মিনিটে গ্রিজম্যানের কর্নার থেকে ভারানের ডান পায়ের শট আবারও লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে বাইরে চলে যায়। ম্যাচের ৪৭ মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার দারুণ সুযোগ পায় মরক্কো। কিন্তু এল ইয়ামিকের ওভার হেড কিক গোলবারে লেগে প্রতিহত হয়, ফলে গোলবঞ্চিত হয় মরক্কো।

    দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে আরও আক্রমণাত্মক খেলতে থাকে মরক্কো। ৫৫ মিনিটে ফ্রেঞ্চ রক্ষণভাগে ভয় ধরিয়ে দেন মরক্কোর ফুটবলাররা। বৌফাল, এল নাসিরের দুই প্রচেষ্টা রুখে দেন ভারান ও থিও হার্নান্দেজ।

    পুরো ম্যাচে দারুণভাবে বল দখলে নিয়ে খেলতে থাকে মরক্কো। কিন্তু আক্রমণভাগে গিয়েই যেন খেই হারিয়ে ফেলছিল তাদের ফুটবলাররা।

    মরক্কোর ভুলের খেসারত দিতে হয় ৮০ মিনিটে। দারুণ এক কাউন্টার অ্যাটাক থেকে এমবাপের একক নৈপুণ্যে ডিবক্সের ভেতর শট নিলে সেট প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়ের পায়ে লেগে যায় কোলো মুয়ানির কাছে৷ এমন সুযোগ আর তিনি মিস করেননি। বদলি হিসেবে নামার দুই মিনিটের ভেতরেই ফ্রান্সের জার্সি গায়ে নিজের প্রথম গোলটি করেন তিনি।

    দুই গোলে পিছিয়ে থেকে আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি মরক্কো। ৯২ মিনিটে ডিবক্সের বাইরে থেকে মরক্কোর উনাহির শট চলে যায় গোলবারের ওপর দিয়ে। শেষদিকে আরও কয়েকবার ফ্রান্স আক্রমণভাগে বল নিয়ে ঢুকলেও ফিনিশিংটাই করতে পারেনি ফ্রান্স। ফলে বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল থেকেই বিদায় নিতে হলো আফ্রিকান প্রতিনিধি মরক্কোকে।

  • মরক্কোর ইতিহাস, পর্তুগালের বিদায়

    মরক্কোর ইতিহাস, পর্তুগালের বিদায়

    অবিশ্বাস্য-অকল্পনীয়, তবে পুরোপুরি অপ্রত্যাশিত নয়। কাতার বিশ্বকাপে চলছেই মরক্কো মিরাকল। গ্রুপপর্বে বেলজিয়াম বধ, এরপর রাউন্ড অব সিক্সটিনে স্পেন বিদায় নিয়েছিল মরোক্কান রূপকথায়। এরপর আফ্রিকার মুসলিম দেশটির প্রতি প্রত্যাশার পারদ এক ধাপে শতগুণ বেড়ে যায়। সমর্থকদের সেই প্রত্যাশার প্রতিদান কড়ায় গণ্ডায় বুঝিয়ে দিয়েছে মরক্কো।

    এবার তাদের শিকার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর পর্তুগাল। শনিবার রাতে আল থুমামা স্টেডিয়ামে ১-০ গোলে পর্তুগিজদের হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে আফ্রিকার দেশটি। মরক্কোর হয়ে একমাত্র গোলটি করেছেন ইউসুফ এন-নেসিরি। আফ্রিকা ও আরব বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে সেমিতে উঠলো মরক্কো।

    এদিনও প্রথম একাদশে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে বেঞ্চে রাখেন কোচ ফের্নান্দো সান্তোস। প্রথম থেকেই আক্রমণে নামে পর্তুগাল। দুই প্রান্ত ব্যবহার করে বক্সে ক্রস করার চেষ্টা করে তারা। ৪ মিনিটের মাথায় ব্রুনো ফের্নান্দেজের ফ্রিকিক থেকে দুরন্ত হেড করেন জোয়াও ফেলিক্স। তার হেড বাঁচিয়ে দেন মরক্কোর গোলরক্ষক ইয়াসিন বোনো।

    মাঝে মাঝে দুরন্ত আক্রমণ চালাচ্ছিল মরক্কোও। প্রান্ত ধরে কয়েকটি আক্রমণ করেছেন হাকিমি, জিয়েচরা। কিন্তু খুব একটা সমস্যায় পড়েননি পর্তুগালের গোলরক্ষক কোস্তা।

    ৩০ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে ডান পায়ে জোরালো শট মারেন ফেলিক্স। বল সরাসরি গোলের দিকে যাচ্ছিল। কিন্তু ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে গোলের একটু উপর দিয়ে বল চলে যায়।

    ৪০ মিনিটে গোলের সুযোগ পায় পর্তুগাল। বাঁ দিক থেকে ক্রসে শট মারেন ফেলিক্স। কিন্তু তার শট বার উঁচিয়ে চলে যায়।

    ৪২ মিনিটে এগিয়ে যায় মরক্কো। নিজেদের মধ্যে বেশ কয়েকটি পাস খেলে বাঁ প্রান্ত ধরে আক্রমণে ওঠে মরক্কো। বক্সে বল ভাসিয়ে দেন বৌফাল। আগুয়ান গোলরক্ষক কোস্তা বলের নাগাল পাওয়ার আগে হেডে গোল করেন ইউসুফ এন-নেসিরি।

    গোল খাওয়ার পরে শোধ করার চেষ্টা করে পর্তুগাল। সুযোগও পায় তারা। বক্সের বাইরে থেকে ব্রুনো ফের্নান্দেজের শট বারে লেগে বেরিয়ে যায়। প্রথমার্ধে ০-১ গোলে পিছিয়ে সাজঘরে যায় পর্তুগাল।

    বিরতির পর ম্যাচের ৫০ মিনিটে ব্যবধান আরও বাড়ানোর সুযোগ ছিল মরক্কোর। ৪৯ মিনিটের মাথায় হাকিম জিয়েচের ফ্রিকিক আর একটু হলে জালে জড়িয়ে যেত। কোনও রকমে সেই বল বার করেন কস্তা।

    ৫২ মিনিটে বদলি হিসেবে নামেন রোনালদো। এরপর একের পর আক্রমণ চালায় পর্তুগাল। বেশ কয়েক বার মরক্কোর বক্সে পৌঁছেও যান রোনালদোরা। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সব আক্রমণ প্রতিহত হয়ে যায়। গোল না পেয়ে অস্থির হয়ে ওঠেন পর্তুগালের ফুটবলাররা।

    ম্যাচের ৮২ মিনিটে আবারও দারুণ সুযোগ পায় পর্তুগাল। রোনালদোর পাসে দারুণ শট নিয়েছিলেন ব্রুনো ফের্নান্দেজ। ঝাঁপিয়ে পড়ে সেটি ঠেকিয়ে দেন মরোক্কান গোলকিপার ইয়াসিন বুনো।

    একের পর এক আক্রমণ করেও শেষ পর্য কোনও গোল পাননি রোনালদো, ফের্নান্দেজরা। ০-১ গোলের হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় তাদের। প্রথম আরব দেশ হিসেবে সেমিফাইনালে ওঠে মরক্কো।

    চলতি কাতার বিশ্বকাপে এখনও হারের স্বাদ পায়নি আটলান্টিক মহাসাগর ও ভূমধ্যসাগরের কোলঘেঁষা উত্তর আফ্রিকার দেশটি। গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে তারা ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করে। দ্বিতীয় ম্যাচে ২-০ গোলে হারিয়ে দেয় ফিফার বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বেলজিয়ামকে। আর গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে কানাডাকে ২-১ গোলে হারায় কোচ ওয়ালিদ রেগরাগুইর দল।

    রাউন্ড অফ সিক্সটিনে স্পেনকে হারিয়ে কেয়ার্টারে যায় তারা। কোয়ার্টারে পর্তুগালকে বিদায় করে এবার তারা পা রাখলো সেমিতে। কতদূর যাবে এই মরক্কো মিরাকল- উত্তর মিলবে সেমিফাইনালে।

  • স্পেনকে বিদায় করে মরক্কো ইতিহাস সৃষ্টি করলো

    স্পেনকে বিদায় করে মরক্কো ইতিহাস সৃষ্টি করলো

    আশরাফ হাকিমির পেনাল্টিতে গোল হওয়ার সাথে সাথে যেন গর্জে উঠলো পুরো মরক্কো তথা পুরো আফ্রিকা। কেননা এবারের বিশ্বকাপের একমাত্র আফ্রিকান দল হিসেবে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠলো মরক্কো। গোলশূন্য ১২০ মিনিট খেলা শেষে টাইব্রেকারে স্পেনকে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠলো আফ্রিকান সিংহরা। পেনাল্টি শুটআউটে মরক্কোর গোলরক্ষক বৌনর অসাধারণ দক্ষতায় ৩টি শট নিয়ে একটিতে গোল করতে পারেনি স্পেন।

    পুরো ম্যাচে মরক্কোর খেলা দেখে একবারও মনে হয়নি তারা হারার জন্য এসেছে। ২০১০ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে দাঁতে দাঁতে কামড়ে লড়াই করেছে আটলাস লায়নরা।

    ম্যাচের প্রথম ১০-১৫ মিনিট যেভাবে খেলেছে আফ্রিকান দেশ মরক্কো, তাতে মনে হচ্ছিল স্পেন তাদের সামনে পাত্তাই পাবে না; কিন্তু সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ম্যাচের রাশ নিজেদের হাতে নিয়ে নেয় স্পেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য তাদের। গোলই আদায় করতে পারেনি। একের পর এক আক্রমণ চালিয়েও গোলের দেখা পায়নি মরক্কো। পরিসংখ্যান টেবিলের দিকে তাকালে দেখা যাবে, মাত্র ৩১ ভাগ ছিল মরক্কোর দখলে বল। ৬৯ ভাগ ছিল স্পেনের তখলে। কিন্তু গোলের জন্য সঠিক একটি বল তৈরি করতে পারেনি স্প্যানিশরা।

    চতুর্থ মিনিটেই স্পেনের পেদ্রি মরোক্কোর ডিফেন্ডারদের বুড়ো আঙুল দেখিয়ে পাস দেন গাভিকে। তিনি বলটি নিয়ন্ত্রণ করে গোলে ঢোকানোর আগেই ক্লিয়ার করে দেয় মরক্কো। ১২তম মিনিটে দারুন সুযোগ পেয়েছিলো মরক্কো। আশরাফ হাকিমির বড় সুযোগ ছিল! তিনি মরক্কোর হয়ে ফ্রি-কিক নেন। তবে ক্রসবারের উপর দিয়ে বের হয়ে যায়।

    ২২ মিনিটে ডানদিক থেকে মরক্কোর জিয়েচের বাজে ফ্রি-কিক, ওলমো হেড করে বিপদমুক্ত করেন। ২৫ মিনিটে স্পেনের গাভির একটি শট বারে লেগে ফিরে আসে। যদিও সাইড রেফারি অফসাইডের ফ্লাগ তুলে বসেন। তবে এ সময় একবার নয়, বারে দু’বার বল বারে আঘাত করে।

    ২৬তম মিনিটে অ্যাসেনসিও নেটের সাইডে ধাক্কা দেন। বাজেভাবে গোল মিস হয়। ৩৩তম মিনিটেও সুযোগ পায় মরক্কো। তোরেসের কাছ থেকে বলটি ছিনিয়ে নেন মাজরাউই। এবং তারপর বক্সের বাইরে থেকে জোরালো শট নেন তিনি। সিমন কোনও মতে সেভ করেন।

    দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে দারুণ খেলতে থাকে মরক্কো। বিশ্বকাপের প্রথমার্ধে মাত্র একটি শট গোলমুখে নেয় স্পেন যা তাদের বিশ্বকাপের ইতিহাসে ১৯৬৬ সালের পর সর্বনিম্ন। দলের আক্রমণের ধার বাড়াতে দ্বিতীয়ার্ধে নামানো হয় মোরাতাকে।

    ৭০ মিনিটে ডানি ওলমোর ডি বক্সের ভেতর থেকে নেয়া শট দারুণভাবে ব্লক করে অগার্ড। ম্যাচের একদম অন্তিম মুহূর্তে দানি ওলমোর বাকান ফ্রি কিকে কোন স্প্যানিশ খেলোয়াড়ই মাথা ছোঁয়াতে পারেননি; উলটো বল গোলমুখে গেলে দারুণভাবে কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন বৌনৌ। কর্নার থেকে দারুণ বলে হেড করেছিলেন লাপোর্ত কিন্তু মরক্কোর জমাট রক্ষণভাগের কাছে তা পরাস্ত হলে গোলশূন্য অবস্থাতেই শেষ ম্যাচ হয়। ফলে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।

    অতিরিক্ত সময়ের শুরু থেকেই গোলের জন্য মরিয়া হয়ে খেলতে থাকে স্পেন। বড় টুর্নামেন্টের নকআউট রাউন্ডে এই নিয়ে ৬টি ম্যাচই অতিরিক্ত সময়ে গড়ালো স্পেনের ম্যাচ। কিন্তু ১০৪ মিনিটে ম্যাচের সবচেয়ে সহজ সুযোগটা মিস করে মরক্কো। উনাহি ডি বক্সের ভেতর উনাই সিমনকে একা পেয়েও তার গায়ে বল মারেন ফলে গোলবঞ্চিত হয় মরক্কো।

    ম্যাচের একদম অন্তিম মুহূর্ত বদলি হিসেবে নামা পিএসজির তারকা পাবলো সারাবিয়ার শট গোলবারে লেগে বাইরে চলে গেলে গোলশূন্য অবস্থাতেই শেষ হয় ১২০ মিনিট।

    পেনাল্টি শুটআউটে প্রথম তিনটি শট থেকেই গোল করতে ব্যর্থ হন স্পেনের পাবলো সারাবিয়া, কার্লস সোলার ও বুসকেতস। অন্যদিকে মরক্কো প্রথম দুটি শটে গোল দিলেও তৃতীয় শটটি মিস করে তারা। কিন্তু ৪র্থ শটে গোল করে দলের বিজয় নিশ্চিত করেন আশরাফ হাকিমি।

  • কানাডাকে হারিয়ে ৩৬ বছর পর নক আউটে মরক্কো

    কানাডাকে হারিয়ে ৩৬ বছর পর নক আউটে মরক্কো

    টানা ৩৬ বছর পর কাতার বিশ্বকাপে ইতিহাস গড়ে নক আউটে জায়গা করে নিল উত্তর আফ্রিকার দেশ মরক্কো। শেষবার ১৯৮৬ সালে প্রি-কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছিল মরক্কো। কানাডাকে ২-১ গোলে হারিয়ে ‘এফ’ গ্রুপের শীর্ষে থেকে নক আউট নিশ্চিত করলো হাকিমি-ইউসেফ নেসিরিরা। ৩ ম্যাচে ৭ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ শীর্ষে মরক্কো।

    নিজদের প্রথম ম্যাচেই গতবারের রানার্স ক্রোয়েশিয়া আটকে দিয়েছিল মরক্কো। তখনই বোঝা গিয়েছিল, কাতার বিশ্বকাপে বাড়তি কিছু করে দেখাবে। আর সেটাই হল। প্রথম ম্যাচের পারফরম্যান্স থেকে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে নিয়ে দ্বিতীয় ম্যাচে ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ে দুই নম্বরে থাকা বেলজিয়ামকে ২ গোলে উড়িয়ে দেয় মরক্কো। আর এবার কানাডাকে হারানোর ফলে নক আউটে খেলতে নামবে এই দল।

    কাতারের আল থুমামা স্টেডিয়ামে ‘এফ’ গ্রুপের শেষ ম্যাচে কানাডার মুখোমুখি হয় মরক্কো। তবে ম্যাচের মাত্র চার মিনিটে লিড পায় মরক্কো। কানাডার রক্ষণ ভেঙে মুহূর্তের মধ্যে বল নিয়ে ডি বক্সে ঢুকে যান মরক্কোর হাকিম জিয়েখ। তার নেওয়া শট মিলান বরজানকে পরাস্ত করে কানাডার জালে ঢুকে যায়।

    এরপর কানাডা কয়েকটি সুযোগ তৈরি করলেও সেগুলোকে গোলে পরিণত করতে পারেনি। উল্টো ২৩ মিনিটের সময় আরেকটি গোল হজম করে বসে দলটি। রাইটফ্লাঙ্ক থেকে আচরাফ হাকিমির বাড়ানো বল পান ইউসেফ নেসিরি। রক্ষণভাগের এক ফুটবলারকে পরাস্ত করে তিনি গোলকিপার বরজানকেও বোকা বানান, মরক্কোর পক্ষে স্কোরলাইন তখন ২-০।

    এরপর ৪০ মিনিটে একটি গোল শোধ করে কানাডা। সেই গোলটিও অবশ্য আসে মরক্কোর রক্ষণভাগের ভুলে। কানাডা আক্রমণ শানালে নায়াফ আগার্দের ভুলে গোল খায় মরক্কো। যদিও বিরতির ঠিক আগে আরও একটি গোল করেছিল মরক্কো। কিন্তু রেফারি সেই গোল বাতিল করে দেন অফসাইডের কারণে। তবে দ্বিতীয়ার্ধে কোনও দল গোলের মুখ খুলতে পারেনি।

  • বেলজিয়ামকে ধসিয়ে দিল মরক্কো

    বেলজিয়ামকে ধসিয়ে দিল মরক্কো

    বিশ্বকাপের ফেবারিটের তালিকায় যেন ‘শনির দৃষ্টি’ লেগেছে। আর্জেন্টিনা, জার্মানি অপ্রত্যাশিত হারের স্বাদ পেয়েছে। ডেনিসরা এখনও স্বরূপে ফেরেনি। কানাডার বিপক্ষে জিতলেও ফেবারিট তকমা নিয়ে কাতারে পা দেওয়া বেলজিয়াম সেরা দল ছিল না। এবার মরক্কোর বিপক্ষে ২-০ গোলে হারল বেলজিয়াম।

    আল থুমামা স্টেডিয়ামে রোববার ম্যাচের প্রথমার্ধে গোল করতে পারেনি কোন দল। মরক্কো অবশ্য প্রথমার্ধে গোল করে উদযাপন শুরু করেছিল। কিন্তু নেদারল্যান্ডসকে না করে মরক্কোয় খেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হাকিম জায়েখের ফ্রি কিক থেকে করা গোল অফসাইডের ফাঁদে বাতিল হয়ে যায়। তার নেওয়া শটে থিবো কর্তোয়া বোকা বনলেও অফসাইড থেকে হেডে গোল করার চেষ্টা করায় গোলটি বাতিল হয়।

    কাউন্টার অ্যাটাকে খেলা মরক্কো দ্বিতীয়ার্ধের ৭৩ মিনিটে প্রথম গোলের দেখা পায়। গোলের লক্ষ্যে দ্বিতীয় শট নিয়ে প্রথম গোলের দেখা পায় ফ্রান্সের প্রতিবেশি দেশটি। জালে বল জড়িয়ে দেন ইতালির ক্লাব সাম্পাদোরিয়ায় খেলা মিডফিল্ডার আব্দেলহামিদ সাবেরি। তার গোলটি চলতি আসরে ফ্রি কিক থেকে সরাসরি করা প্রথম গোল।

    এরপর যোগ করা সময়ে দ্বিতীয় গোল করে মরক্কো। ১৯৯৮ বিশ্বকাপের পর বিশ্বকাপে দেশকে প্রথম জয়ের উল্লাসে ভাসান আবুখালাল। তার গোলটি আসে দারুণ এক কাউন্টার অ্যাটাক থেকে। ম্যাচে ৩৩ শতাংশ বল পায়ে নিয়েও গোলে ও লক্ষ্যভ্রষ্ট শট নেওয়ার বিচারে সেরা দল হিসেবেই জিতেছে মরক্কো। কেভিন ডি ব্রুইনারা ৬৬ শতাংশ বল পায়ে রেখে গোলে মাত্র তিনটি শট নিতে পারে। যা মুনির মোহামেদি ফিরিয়ে দেন। অন্যদিকে মরক্কো লক্ষ্যে চারটি ও বাইরে শট নিয়েছে ছয়টি।

    কানাডার বিপক্ষে একটি পেনাল্টিসহ ১৫টি গোলে আসা শট ফিরিয়ে দলকে ১-০ গোলে জিতিয়েছিলেন বেলজিয়ামের গোলরক্ষক কুর্তোয়া। এবার মরক্কোর বিপক্ষে হারায় রাশিয়া বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলা দলটির গ্রুপ পর্বে বিদায়ের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। শেষ ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে জয়ের চ্যালেঞ্জ নিয়ে নামতে হবে বেলিসদের। অন্যদিকে মরক্কো প্রথম ম্যাচে ক্রোয়াটদের আটকে দিয়েছিল। কানাডার বিপক্ষে শেষ ম্যাচে এই ধারা ধরে রাখতে পারলেই নকআউটে চলে যাবেন আশরাফ হাকিমি-সাবেরিরা।

  • ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে গোলশুন্য ড্র করল মরক্কো

    ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে গোলশুন্য ড্র করল মরক্কো

    বিশ্বকাপে ‘এফ’ গ্রুপের ম্যাচে গত আসরের রানার্সআপ ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে গোল শুন্য ড্র করেছে মরক্কো। আজ কাতারের আল-খোরের আল-বায়াত স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত গ্রুপে এবং দিনের প্রথত ম্যাচে গোল শুন্য ড্র করেছে দল দুটি। দ্বিতীয়বারের মত বিশ্বকাপ খেলতে নামা মরক্কোর বিপক্ষে গত আসরের রানার্স আপ ক্রোয়েশিয়া ফেবারিট হিসেবে মাঠে নামলেও নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেনি।

    আবার কাগজে-কলমে শক্তিমত্তার দিক থেকে দুই দলের সামর্থ্য কাছাকাছি হওয়ায় শুরু থেকেই উত্তাপ ছড়াতে থাকে ম্যাচটি। দুই দলই একে অপরের উপর চড়াও হলেও কোন পক্ষই কোন আক্রমনের সফল সমাপ্তি টানতে পারেনি।
    ম্যাচের ২০তম মিনিটে আক্রমণে যাওয়া মরক্কোর ডিফেন্ডার আচরাফ হাকিমিকে ক্রোয়েশীয় ডিফেন্ডাররা ফাউল করলে ফ্রি কিক পায় তারা। ডি বক্সের বাইরে থেকে ফ্রি কি কাজে লাগাতে পারেনি আফ্রিকান দলটি।

    পরের মিনিটে লুকা মড্রিচের নেতৃত্বে আক্রমণে যায় ক্রোয়েশিয়া। তবে কর্নারের বিনিময়ে সেটি প্রতিহত করে মরক্কোর রক্ষণভাগ। এভাবে আক্রমন ও পাল্টা আক্রমনে ম্যাচটি এগিয়ে গেলেও সেটি সীমাবদ্ধ ছিল মধ্যমাঠে। গোল করার মতো একটি আক্রমনও করতে পারেনি প্রতিদ্বন্দ্বি দল দুটি।

    ৪৫ মিনিটে ইভান পেরিসিচের দুর্দান্ত এক আক্রমন দক্ষতার সাথে রুখে দেন মরক্কোর গোল রক্ষক ইয়াসিন বুনু। ডি বক্সের বাঁ দিকে চলন্ত বলে পেরিসিচ শট নিলে ঝাঁপিয়ে পড়ে সেটি গোল লাইন থেকে গ্রীবে পুরে নেন গোল রক্ষক। ফলে গোল শূন্য সমতা নিয়ে বিরতিতে যায় প্রতিদ্বন্দ্বী দল দুটি।
    বিরতির পরও ম্যাচের চেহারা ছিল একই রকম। তবে বল দখলের দিক থেকে বর্তমান রানারআপদের চেয়ে এগিয়ে ছিল মরক্কানরা। যদিও প্রথমার্ধের মতো মধ্যমাঠের মধ্যেই সিমাবদ্ধ ছিল প্রতিদ্বন্দ্বিতা। ৬৩ মিনিটে মরক্কোর সেলিম আমাল্লাহকে ফাউল করেন লুকা মড্রিচ। ফলে ডি বক্সের বাইরে ফ্রি কিক থেকে জোড়ালো শট নেন হাকিমি। তার অসাধারণ শটের বল পোস্টে প্রবেশের সময় ফিস্ট করেন ক্রোয়েশিয়ার গোলরক্ষক ডোমিনিক লিভাকোভিচ।
    ৭০ মিনিটে ক্রোয়েশিয়ার আক্রমণ কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করে মরক্কোর রক্ষণ। ৭৯ তম মিনিটে ক্রোয়েশিয়া পেয়েছিল পাল্টা ফ্রি কিক। ফ্রি কিকের ক্রসে মরক্কান গোল পোস্টেও সামনেই হেড করেছিলেন ক্রোয়েশিয়ার ডিফেন্ডার জোসকো গাভারডিওল। তবে সেটি অল্পের জন্য সাইডবার ঘেষে বাইরে চলে যায়। ছয় মিনিটের ইনজুরি টাইমেও কোন পক্ষ উল্লেখ করার মতো সুযোগ সৃস্টি করতে পারেনি। ফলে পয়েন্ট ভাগাভাগি করেই সন্তুস্ট থাকতে হয় দুই দলকে।
    উল্লেখ্য, ২০০০ সালের পর এর আগে পাঁচবারের প্রচেষ্টায় চার বারই বিশ^কাপের মূল পর্বে খেলতে ব্যর্থ হয়েছে মরক্কো। চার বছর আগে রাশিয়া বিশ^কাপে একমাত্র মূল পর্বে খেলার অভিজ্ঞতা হয়েছিল দলটির। ঐ আসরে গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচ থেকে এক পয়েন্ট অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিল দলটি ।

    পর্তুগালের কাছে ১-০ গোলে পরাজিত হবার পর স্পেনের বিপক্ষে পুরো ৯০ মিনিট পর্যন্ত ২-১ গোলে এগিয়ে থেকেও ইনজুরি টাইমে গোল হজম করে ইতিহাসের অন্যতম বড় অঘটনের সাক্ষি হতে পারেনি তারা। ২-২ গোরেল ড্রয়ের সুবাদে এক পয়েন্ট পেয়েছিল মরক্কো।

    এবার তারা পাঁচ ম্যাচে অপরাজিত থেকে আত্মবিশ^াস নিয়েই বিশ^কাপ খেলতে এসেছিল। প্রস্তুতি ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা, চিলি ও জর্জিয়ার বিপক্ষে জয়ী হবার পর সেপ্টেম্বরে প্যারাগুয়ের সাথে গোলশুন্য ড্র করে তারা।
    এদিকে চার বছর আগে ফাইনালে ফ্রান্সের কাছে ৪-২ গোলে পরাজিত হওয়ার হতাশা শেষ পর্যন্ত কাটিয়ে উঠতে পারলনা ক্রোয়েশিয়া। ঐ ম্যাচের পর আজ বিশ^কাপে প্রথম ম্যাচ খেলতে মাঠে নেমে পয়েন্ট ভাগাভাগি করল ক্রোয়েটরা।