Tag: মানব সেবায়

  • অলি-গলি ঘুরে ভাসমান মানুষের খাবার দিচ্ছে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগ/মানব সেবায় হটলাইন চালু

    অলি-গলি ঘুরে ভাসমান মানুষের খাবার দিচ্ছে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগ/মানব সেবায় হটলাইন চালু

    ২৪ ঘণ্টা ডট নিউজ। চট্টগ্রাম ডেস্ক : করোনা পরিস্থিতিতে একাকিত্ব ও অক্ষম হয়ে পড়া ভাসমান মানুষের একবেলা খাবারের ব্যবস্থা করতে নগরীর অলি-গলি চষে বেড়াচ্ছেন চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দরা।

    তাছাড়া প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক সময়ের দাবি, ত্রাণ যাবে বাড়ি শ্লোগানে অসহায় পরিবারে ত্রাণ সহায়তা কর্মসূচি হাতে নেয় তারা। চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সুভাষ মল্লিক সবুজের উদ্দ্যোগে চট্টগ্রামে প্রথম ‘হ্যালো ছাত্রলীগ’ এই খাদ্যসামগ্রী উপহারের সেবা চালু করে।

    “হ্যালো ছাত্রলীগ”এর হটলাইন নাম্বার (০১৮৮৩-২৭৩৮৫০ এবং ০১৬৭৮-৩০৪০৬০) এ যোগাযোগ করলেই অসহায় মানুষের ঘরে দ্রুত খাদ্য সেবা পৌঁছে দিচ্ছে কর্মীরা।

    ইতিমধ্যে নগরীর সাবেরিয়া আদালত কলোনি, এস আলম কলোনি, পাথরঘাঁটা, জয়নাব কলোনি, ঘাঁসিয়া পাড়া, খলিফা পট্টি, দেয়ান বাজার ও প্রবর্তক মোড়সহ প্রতিদিন গৃহবন্দী কর্মহীন হয়ে পড়া খেটে খাওয়া দিনমজুর ও অসংখ্য শ্রমজীবী পরিবারে ছাত্রলীগের উপহার পৌছে দিয়েছেন।

    গত ১৬দিন ধরে প্রত্যেকটা পরিবারের বাজারের প্যাকেটে একবেলার চাল, আলু, পেঁয়াজ, মাছ, টমেটো, কাঁচা মরিচ, ধনে পাতাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের উপহার ঘরে নিয়ে যাচ্ছে টিমের কর্মীরা। এছাড়া প্রতিদিন রিক্সা ও মোটর সাইকেলে নগরীর অলি গলি ঘুরে ভাসমান মানুষদের খাবার ব্যবস্থাও করছেন ছাত্রলীগ নেতারা।

    এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সুভাষ মল্লিক সবুজ বলেন, করোনা মহামারীকে কেন্দ্র করে যখন মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়, ঠিক তখনও ব্যাক্তিগত উদ্দ্যেগে হ্যান্ড স্যানিটাইজার প্রস্তুত থেকে শুরু করে প্যারেড মাঠকে জনশূন্য করতে সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণ করি।

    পরবর্তীতে লকডাউন শুরু হলে এবং খাবার রেষ্টুরেন্ট গুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভাসমান মানুষগুলোর কথা চিন্তা করে তাদেরকে রান্না করা খাবার পৌছে দেয়ার চেষ্টা করেছি। এবার প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মতো মানব সেবায় হটলাইন চালু করেছি। যেখানে ফোন দিলেই সাধ্যমত খাদ্য সহায়তা পৌছে দেওয়ার চেষ্টা করছি।

    তিনি বলেন, যতদিন মহামারি থাকবে ততদিন কার্যক্রম চলমান রাখার আপ্রান চেষ্টা করব। যতদিন সুস্থ আছি ততদিন যেন মানবের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করতে পারি সেজন্য সকলের দোয়া/আশির্বাদ কামনা করছি।

    ২৪ ঘণ্টা/রাজীব প্রিন্স

  • নিজের সঞ্চিত অর্থ দান করে মানব সেবায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন মানসিক প্রতিবন্ধী ফারুক

    নিজের সঞ্চিত অর্থ দান করে মানব সেবায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন মানসিক প্রতিবন্ধী ফারুক

    ২৪ ঘণ্টা ডট নিউজ। নেজাম উদ্দিন রানা, রাউজান :  রাউজান উপজেলা সদরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ঘুরে বেড়ানোই তার দৈনন্দিন কাজ।

    কার্লভাটের নিচে ঘুমায়। কারো কাছেই হাত পাতে না, কেউ নিজে থেকে দিলে নেয়, কেউ খাওয়ালে খায়। মানসিক প্রতিবন্ধী,নাম তার ফারুক।

    তবে সে মানসিক প্রতিবন্ধী হয়েও সে অনুধাবন করেছে বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে কতটা অসহায় মানুষ। আর তাইতো সে তার সকল সঞ্চিত অর্থ দান করে মানবিক কাজে সহযোগীতার প্রয়াসে এগিয়ে এসেছে।

    খবর নিয়ে জানা যায়, উপজেলা সদরের মুন্সির ঘাটাস্থ উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের নিচেই বেশীরভাগ সময় কাটান সে। ফারুক মানসিক প্রতিবন্ধী হলেও এই এলাকার বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ তাকে এক নামেই চেনেন।

    বিশেষ করে প্রতিবন্ধীদের আপনজন, রাউজান পৌরসভার প্যানেল মেয়র জমির উদ্দিন পারভেজ খুবই স্নেহ করেন মানসিক প্রতিবন্ধী ফারুককে। পারভেজের গাড়ী দেখলেই ভোঁ দৌঁড়ে তার গাড়ীর কাছে ছুটে যান ফারুক। গাড়ী থেকে নেমেই ফারুকের হাতে কচকচে ১০০ টাকার নোট গুঁজে দিলেই তবেই প্রশান্তি ফারুকের।

    আবার রাউজান সরকারি কলেজ মাঠের মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা মঞ্চে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে একটা অনুষ্টানের আয়োজন করেন জমির উদ্দিন পারভেজ। সেই মঞ্চে জ্বালাময়ী বক্তব্যে সবাইকে মাতিয়ে রেখে এলাকায় আলাদা পরিচিতি লাভ করেন ফারুক। এই কারণেই সবাই খুব পছন্দ করে তাকে।

    তবে একজন মানসিক প্রতিবন্ধী হয়েও তার ভেতর যে মানবিকতার টান যে আছে সেটি এতদিন অজানা ছিল সবার।

    সম্প্রতি করোনা পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতাল সমূহে কর্তব্যরত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্য কর্মীদের রমজান মাসে সেহেরি খাওয়ার কথা অনুধাবন করে নিজে উদ্যোগ নিয়ে ১লা রমজান থেকে প্রতিরাতে দুই হাজার প্যাকেট সেহেরির খাবার বিতরণের উদ্যোগ নেন রাউজানের সাংসদ ও রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ.বি.এম ফজলে করিম চৌধুরীর জ্যেষ্ঠ সন্তান ফারাজ করিম চৌধুরী।

    ১০ জন বাবুর্চির মাধ্যমে রাউজান দায়ারঘাটাস্থ একটি কমিউনিটি সেন্টারে রান্নার কার্যক্রম দেখতে ছুটে যান মানসিক প্রতিবন্ধী ফারুক। সে সময় রান্নার তদারকিতে থাকা নেতৃবৃন্দের কাছে তিনি জানতে চান, খাবারগুলো কি জন্য তৈরী করা হচ্ছে।

    পুরো বিষয় বুঝতে পেরে প্রতিবন্ধী ফারুক নিজের সঞ্চিত অর্থ এই মানবিক কাজে দিয়ে দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। এ সময় তার কথা শুনে উপস্থিত অনেকেই হতবাক হয়ে যান।

    বিষয়টি কারো কারো কাছে পাগলের প্রলাপ মনে হলেও গত ২৬ এপ্রিল রবিবার সন্ধ্যায় রাউজান পৌরসভার দায়ার ঘাটাস্থ সেহেরীর খাবার আয়োজনের জন্য প্রস্তুতকৃত রান্নাঘরে নিজের জমানো অর্থ নিয়ে ছুটে যান ফারুক।

    এ সময় রাউজান পৌরসভার প্যানেল মেয়র জমির উদ্দিন পারভেজ ও উপজেলা যুব লীগের সহ সভাপতি সুমন দে’র হাতে জমানো টাকাগুলো তিনি সেহেরি কার্যক্রমের জন্য তুলে দেন।

    সেহেরি কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত থাকা পারভেজ ও সুমন গুণে দেখেন ফারুকের প্রদানকৃত ১৯৯০ টাকা। টাকা তুলে দেওয়ার পর দুই হাত তুলে সে মোনাজাতও করেন।

    প্রতিদিন ফারুককে এলাকার বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ যে দশ, বিশ টাকা সহযোগীতা করেন সেগুলো থেকে জমিয়ে টাকাগুলো রেখেছিলেন ফারুক। নিজে একজন মানসিক প্রতিবন্ধী হলেও করোনাকালীন সময়ে মানুষের কষ্টটুকু অনুধাবন করে মানবিক কাজে নিজের জমানো সবটুকু টাকাই দিয়ে দিলেন সে।

    মানসিক প্রতিবন্ধী হয়েও এভাবে মানবিক কাজে তার সহযোগীতার ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ হলে রাউজানজুড়ে তার মানবিকতার ঘটনাটি নিয়ে আলোচনা চলতে থাকে উপজেলার সর্বত্র। এক সময় মানসিক প্রতিবন্ধী হিসেবে যারাই ফারুককে নিয়ে ঠাট্টাতামাসা করতো তারাও তার মানবিকতার গল্প শুনে অবাক হয়ে যান।

    অনেকেই ফারুককে নিয়ে তাদের অনুভূতি তোলে ধরেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। একজন মানসিক প্রতিবন্ধী ফারুকই যেন হয়ে উঠেন মানবিকতার প্রতিচ্ছবি হয়ে।

    বিষয়টি নিয়ে জমির উদ্দিন পারভেজ ২৪ ঘণ্টা ডট নিউজকে বলেন, দেশে করোনা পরিস্থিতির সংকটময় সময়ে করোনা আক্রান্ত রোগীদের সেবা দিতে যারা নিজেদের প্রাণের মায়া ত্যাগ করে হাসপাতালে চিকিৎসা সেবায় নিজেদের নিয়োজিত রেখেছেন, জাতির সেই গর্বিত সন্তানদের জন্য নিজে উদ্যোগ নিয়ে রাউজানবাসীর সহযোগীতায় রমজান মাসজুড়ে প্রতিরাতে নগরীতে দুই হাজার প্যাকেট সেহেরির খাবার বিতরণের যে মানবিক উদ্যোগ নিয়েছেন রাউজানের সাংসদপুত্র ফারাজ করিম চৌধুরী সেই মানবিক কাজে একজন মানসিক প্রতিবন্ধী হয়েও ফারুক যে সহযোগিতার দৃষ্টান্ত দেখালেন সেটি অনেকের জন্য অনুকরণীয় হতে পারে।

    রাউজান উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য সুমন দে ২৪ ঘণ্টা ডট নিউজকে বলেন, “ নিজে একজন মানসিক প্রতিবন্ধী হয়েও মানবিক কাজে নিজের সঞ্চয়কৃত সব অর্থ দিয়ে ফারুক এই সমাজে একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত দেখিয়েছেন। আমরা ফারুককে নিয়ে গর্ববোধ করি।”

    নিজ উদ্যোগে সেহেরী বিতরণ কার্যক্রমে একজন মানসিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সহযোগিতা প্রসঙ্গে রাউজানের সাংসদপুত্র ফারাজ করিম চৌধুরী ২৪ ঘণ্টা ডট নিউজকে বলেন, ” কয়েকদিন আগে ফারুক নামের একজন সমাজের চোখে মানসিক প্রতিবন্ধী (সম্মানের সাথেই বলছি) আমাদের সেহেরীর কার্যক্রম দেখতে এসে চট্টগ্রামের ভাষায় বলেন, “এগিন কি মাইনষুর লাই গইরতে লাইজ্ঞু দে না?” অর্থাৎ, এগুলো কি মানুষের জন্য করছেন? তাকে যখন বলা হল, হ্যাঁ এগুলো মানুষের জন্যই করা হচ্ছে। তখন সে বললো, “আইও কিছু দিয়ুম!” অর্থাৎ, আমিও কিছু (অর্থ) দিবো।

    সে ২৬ এপ্রিল (রবিবার) আমাদের সেহেরীর খাবার তৈরীর রান্নাঘরে এসে তার পলিথিনের থলে থেকে গুণে গুণে ১৯৯০ টাকা দিল। মানসিক প্রতিবন্ধী বলে ফারুকদের সবাই অবজ্ঞা করে, অথচ ফারুকরা কোন প্রতিবন্ধী নয় বরং এরাই দেশের রত্ন।

    কথায় আছে ধনী হতে টাকা লাগে না, প্রকৃত ধনী তারাই যাদের বিশাল একটি মন আছে। ফকির বা গরিব সেই সমাজের ধনীরা, যারা মানুষের এই দুর্দিনেও মানুষের হক মেরে খায়। তাদেরই মানসিক প্রতিবন্ধী বলতে হবে, যারা এই দুর্দিনে মানুষের খাবার চুরি করে।

    ফারুকের জন্য ১৯৯০ টাকা নিশ্চয়ই কম টাকা নয়। আমি চাই আপনারা এই ছবি সকলের কাছে পৌঁছে দিয়ে আমাদের সমাজের ফারুক নামের এই রত্নকে পরিচয় করিয়ে দিন।”

    ২৪ ঘণ্টা/রাজীব প্রিন্স