Tag: মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

  • মির্জা ফখরুলের ৭ ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠক!

    মির্জা ফখরুলের ৭ ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠক!

    খালেদা জিয়ার মুক্তি ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের বিষয়ে নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে নীতিনির্ধারণী ফোরামের বৈঠকে পরবর্তী কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

    বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাতে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে নির্বাহী কমিটির সঙ্গে দলের হাইকমান্ডের বৈঠক শেষে এ কথা জানান তিনি।

    বিকেল ৪টায় শুরু হওয়া রুদ্ধদ্বার এ বৈঠক প্রায় সাত ঘণ্টা পর শেষ হয় রাত সাড়ে ১০টায়। এর মধ্য দিয়ে শেষ হলো দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে দুই দফায় ছয় দিনের সিরিজ বৈঠক।

    যেখানে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও সাংগঠনিক বিষয়ে তৃণমূল থেকে শীর্ষপর্যায় পর্যন্ত নেতাদের কাছ থেকে মতামত গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান বিএনপি মহাসচিব। একই সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠকে প্রায় তিনশ’র মতো নেতারা নানা বিষয়ে তাদের মতামত তুলে ধরেছেন বলেও জানানো হয়।

    গত ১৪ থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর তিন দিন প্রথম ধাপে এবং ২১ থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দ্বিতীয় ধাপে সিরিজ বৈঠক করেছে বিএনপি।

    এর আগে মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও রাজনৈতিক পরিকল্পনা নির্ধারণে দলের হাইকমান্ডের সঙ্গে ৫ ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন।

    বৈঠক শেষে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন বিএনপি মহাসচিব। জানান, খালেদা জিয়ার মুক্তি ও পরবর্তী কর্মপরিকল্পনা ঠিক করতেই দলের নেতাদের মতামত জানতে ধারাবাহিক এ বৈঠক করছে বিএনপির হাইকমান্ড।

    বিএনপি মহাসচিব বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধার নিয়ে আলোচনা হয়েছে, সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে এটাই ছিল আমাদের আলোচনার বিষয়বস্তু।

    বৈঠকের আগে মঙ্গলবার দুপুরে একই স্থানে মির্জা ফখরুল ইসলামকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান কৃষকদলের নবগঠিত কমিটির সদস্যরা। এ সময় তিনি, ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।

    এন-কে

  • বাজেট ‘অন্তঃসারশূন্য-কল্পনাপ্রসূত’ বললেন ফখরুল

    বাজেট ‘অন্তঃসারশূন্য-কল্পনাপ্রসূত’ বললেন ফখরুল

    করোনা মহামারীর প্রেক্ষাপটে টেকসই অর্থনৈতিক ভিত্তি গড়ে তুলতে প্রস্তাবিত বাজেটে সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই উল্লেখ করে একে ‘অন্তঃসারশূন্য-কল্পনাপ্রসূত’ বাজেট হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

    আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে শুক্রবার বিকালে উত্তরার বাসা থেকে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে মাধ্যমে সাংবাদিকদের কাছে তিনি একথা বলেন।

    মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, করোনা কাটিয়ে একটি টেকসই অর্থনৈতিক ভিত্তি গড়ে তোলার কোনো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব বাজেটে নেই। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সামাজিক সুরক্ষা এবং খাদ্য নিরাপত্তার জন্য প্রত্যাশিত অর্থ বরাদ্ধ করা হয়নি।আমরা ভেবেছিলাম, জীবন ও জীবিকাকে কেন্দ্র করে এই বাজেটটা প্রণয়ন হবে, সেটা তো হয়নি।

    তিনি বলেন, ‘অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও ভবিষ্যত পথ পরিক্রমা’ শিরোনামে এই বাজেট প্রকৃত অর্থে একটি অন্তঃসারশূন্য কল্পনাপ্রসূত কথার ফুলঝুড়ি ছাড়া আর কিছুই নয়। এই বাজেট জনবান্ধব হয়নি।

    তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী গতকাল একটা অবাস্তবায়নযোগ বাজেট ঘোষণা করেছেন। এটা জাতিকে হতাশ করেছে।এই মুহুর্তে যেটা প্রয়োজন জাতির জন্যে, মানুষের জন্যে, মানুষগুলো বেঁচে থাকার জন্যে, উত্তরণ ঘটানোর জন্যে-কোনটাই এই বাজেটে আসেনি। এখানে যেটা এসেছে আমরা বলেছি তাদের যে চিন্তাটা কমিশন পাওয়া এটা এখানে (বাজেট) এসেছে।

    প্রস্তাবিত বাজেটে মোবাইল-ইন্টারনেট সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি না করে ‘বর্তমান ব্যয়’ বহাল রাখার আহবান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব।

    বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ৮ দশমিক ২ শতাংশ নির্ধারণকে ‘অসম্ভব’ এবং আয়-ব্যয়ের গ্রহনযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপি মহাসচিব।

    তিনি বলেন, সরকার বলছে চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৫ শতাংশ। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টাস ২০২০ শিরোনামের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে চলতি বছর প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে আসবে এবং ২০২০-২১ সালে হবে মাত্র ১ শতাংশ। সেখানে অর্থমন্ত্রী জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৮ দশমিক ২ শতাংশ নির্ধারণ করেছেন।

    তিনি বলেন,আমদানি, রপ্তানি, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ইত্যাদি মাইক্রো ইকোনমিক ইন্ডিকেটরগুলো আলোচনা করলেই স্পষ্ট যে, ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন নিতান্তই কল্পনাপ্রসূত। এটা করতে গেলে বিনিয়োগ দরকার ৩২-৩৪ শতাংশ যা কঠিন ও অসম্ভব।”

    জিডিপি ও রাজস্ব আহরণে প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা ‘প্রতারণার শামিল বলে মন্তব্য করেন ফখরুল। বাজেটে কালো টাকা সাদা করতে সুযোগ দেয়ার সমালোচনা করে অর্থনীতির সাবেক এই শিক্ষক বলেন, গত এক দশককালের অধিকাল ব্যাপী সরকার দলীয় যে সকল ব্যক্তি নজিরবিহীন দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে তাদের টাকা সাদা করার জন্য সরকার এবার কালো টাকা সাদা করার স্কোপ বৃদ্ধি করেছে। আমরা এহেন অনৈতিক, দুর্নীতি সহায়ক, বৈষম্যমূলক ও অসাংবিধানিক পদক্ষেপ গ্রহন করা থেকে বিরত থাকার আহবান জানাচ্ছি।

    তিনি বলেন, আমরা বিদেশে পাঁচার হয়ে যাওয়া লক্ষাধিক কোটি টাকার যে খতিয়ান দেশি-বিদেশী সংবাদ মাধ্যমের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে তা দেশে ফিরিয়ে আনার কার্য্কর উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।

    স্বাস্থ্যখাতে প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যয় বরাদ্ধ কম হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্বাস্থ্যখাতে যে বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে এটা একেবারেই ঠিক হয়নি, এই খাতে আরো অনেক বেশি বরাদ্ধ দেয়া উচিত ছিলো। এটা শুধু আমরা বলছি না, যারা বিশেষজ্ঞ চিকিতসক আছেন তারাও এই কথাটা বলছেন। আপনি দেখুন সারাদেশে আইসিইউ সম্বলিত অ্যাম্বুলেন্স নাই, জেলাগুলোতে কোনো আইসিইউ খুঁজে পাবেন না। ঢাকা শহরের মধ্যে সরকারি হাসপাতালগুলো আছে যেগুলো আপনার কোবিড-১৯ চিকিতসার জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে সেখানেও কিন্তু পর্যাপ্ত আইসিইউ নেই। মানুষ অক্সিজেন অক্সিজেন সিলিন্ডারের জন্য হাহাকার করছে।

    তিনি আরও বলেন, আপনি স্বাস্থ্যখাতের অবস্থা দেখছেন- কিভাবে এই খাত ভেঙে পড়েছে, ভঙ্গুর হয়ে গেছে। মানুষ কোথাও কোনো রকম চিকিতসা পাচ্ছে না। দেখুন বলা যেতে পারে যে, আল্লাহর ওপরে সব ছেড়ে দেয়া হয়েছে। যাচ্ছে ঠেলা গাড়িতে করে রোগী নিয়ে যায়, ভর্তি হতে পারে না, সেখান থেকে মৃতদেহ নিয়ে বাসায় আসছে। এই যে সরকারের ভুল সিদ্ধান্ত, তাদের অহংকার, তাদের দাম্ভিকতা এবং তারা নিজেরাই সব কিছু করতে পারবে এই যে একটা ধারণা, এই ধারনাই বাংলাদেশকে এ্ই অবস্থায় ফেলেছে।

    সরকারের রাজস্বের আয়ের লক্ষ্যমাত্রা সম্পর্কে ফখরুল বলেন, রিভিউ আর্নিং- টাকাটা আসবে কোত্থেকে? সরকার যেভাবে বলছে যে, সে টাকা তো আসবে না। ৫০% এর অধিক রেভিনিউ হতে হবে যে বাজেট দেয়া হয়েছে। ওইটা বলে তো লাভ নেই, এটা অবাস্তব হবে। আর টাকা কোত্থেকে আনবেন? সেজন্য আমরা বলছি যে, মেগা প্রজেক্টগুলোতে শুধু দুর্নীতি হচ্ছে সেগুলোতে বরাদ্ধ কমিয়ে দিয়ে অথবা বিলম্ব করে অনায়াসে নিতে পারতেন জরুরী খাতগুলোতে।রূপপুর আনবিক প্রকল্প, এটাতে কী বরাদ্ধ দেয়া এসেনশিয়াল হয়ে পেড়েছে? এমনিতেই বিদ্যুত উদ্ধৃত্ত হয়ে আছে বলে আপনারা(সরকার) বলছেন। তাহলে রুপপুর আনবিক প্রকল্পে এখন বরাদ্ধের দরকার কী?….।

    তিনি বলেন, আমরা যেসব কথা এখন বলছি এটা শুধু আমাদের কথা নয়, যারা বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আছেন এবং যারা বিভিন্ন সময়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন তারা সবাই কিন্তু এক বাক্যে এই কথাটা বলছেন যে- এই বাজেটটা করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য একেবারেই উপযোগী নয়।

    তিনি বলেন, আসলে এখন আপদকালীন বাজেট করা উচিত ছিলো। সামনে তো ভয়ংকর অবস্থা আসবে। মাইক্রো ইকোনমিক্সের অবস্থা কি হবে সেটা যারা ভুক্তভোগী তারাই বলতে পারবেন অর্থাত সমগ্র দেশের মানুষ সেটা বলতে পারবেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সরকার এটা উপলব্ধি করতে পারেনি। তারা সেই চিরায়ত গতানুগতিক লক্ষ্য তো একটা- কি করে সেখান থেকে কিছু টাকা পয়সা বানানো যায়-সরি টু সে দেট। দেট হেজ বিন ডান ইন দিস কান্ট্রি।এটাই করা হচ্ছে।

    শিক্ষাখাত, দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠির স্বার্থরক্ষা, বেকারত্ম দুরীকরণ, কৃষিখাত, কুটির শিল্পখাত, পল্লী উন্নয়নখাতে বাজেটে যে বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে তা ‘অপ্রতুল’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব। পানি সম্পদ ও দুযোর্গ ব্যবস্থাপনা খাতে বরাদ্ধ হ্রাস, করোনা পরিস্থিতিতে প্রবাসী ও পোষাক শিল্পখাতের বিষয়ে বাজেটে সুনির্দিষ্ট কোনো দিকনির্দেশনা থাকার সমালোচনাও করেন বিএনপি মহাসচিব।

    বাজেটে ব্যাংকি খাতসহ অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারের কোনো সুনির্দিষ্ট সংস্কার প্রস্তাবও নেই উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, বরং শীর্ষ ঋণ পরিশোধে আরো সময় বৃদ্ধি করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। যা ব্যাংকিং খাতকে আরো সংকটের দিকে ঠেলে দেবে, আর্থিক শৃঙ্খলা আরো ভেঙে পড়বে।

    বার্ষিক উন্নয়ন বাজেট (এডিপি) বরাদ্ধ সম্পর্কে তিনি বলেন, উন্নয়ন খাতে বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে দুই লাখ পাঁচ হাজার কোটি টাকা। করোনা সংকট মোকাবিলায় মাত্র ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্ধ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে। এই উন্নয়ন খাত থেকে এক লাখ কোটি টাকা করোনা সংকট মোকাবিলায় দেয়া তো। কারণ উন্নয়ন খাতে শুধু লুটপাট হয়।

    করোনা মহামারীর মধ্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২০-২০২১ অর্থবছরের জন্য পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। প্রস্তাবিত বাজেটের মধ্যে ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব খাত থেকে যোগান দেওয়ার কঠিন পরিকল্পনা সাজিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তারপরও তার আয় ও ব্যয়ের হিসাবে সামগ্রিক ঘাটতি থাকছে প্রায় ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ৬ শতাংশের মত।

    ২৪ ঘণ্টা/এম আর

  • সরকার করোনা মোকাবেলায় ব্যর্থ : মির্জা ফখরুল

    সরকার করোনা মোকাবেলায় ব্যর্থ : মির্জা ফখরুল

    করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

    মঙ্গলবার (৫ মে) বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের কার্যালয়ে চলমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

    মির্জা ফখরুল বলেন, কোভিড-১৯ মোকাবেলায় সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে সমন্বয়হীনতা, অদূরদর্শিতা, অদক্ষতা, অযোগ্যতা, সিদ্ধান্তহীনতা, সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব ও দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, দুর্নীতি, অস্বচ্ছতা, চরম ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটি ও জনগণের প্রতি জবাবদিহিতার প্রকট অভাব এ সঙ্কট গভীরতর করছে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের রুহের মাফেরাত কামনা করে তিনি বলেন, করোনার কারণে মৃত্যুর মিছিল একদিকে জনমনে বিভীষিকাময় আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে, অপরদিকে সরকারি অব্যবস্থাপনার কারণে তৈরি হয়েছে একটা দুর্ভিক্ষ অবস্থা। তার সাথে তথ্যের অধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা শিকার হচ্ছে নজিরবিহীন দমনপীড়নের। সারা দেশের মানুষ অস্থির এক যন্ত্রণায় ছটফট করছে।

    বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশে ৩ মে নতুন করে ২৪ ঘন্টায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়েছে ৬৬৫ জন। উদ্বেগের কারণ হলো এর আগে এক দিনে এত মানুষ আক্রান্ত হওয়ার খবর মানুষ পায়নি। এর আগে সর্বোচ্চ শনাক্ত ছিল ৬৪১ জন। ৩ মে পর্যন্ত মোট মৃত্যু ১৭৭ জন। অন্যদিকে সুস্থ হওয়াদের সংখ্যা এক লাফে ১৭৭ থেকে বেড়ে ১০৬৩ জন দাবি করা হয়েছে। কীভাবে এত অল্প সময়ের মধ্যে এত বেশি রোগী সুস্থ হলো তার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে যে, ক্লিনিক্যাল ম্যানেজমেন্ট কমিটির দেয়া নতুন গাইডলাইন অনুসরণ করা হয়েছে।

    কোভিড-১৯ সংক্রমণ পরিস্থিতিতে রোগ পরীক্ষার মূল সমন্বয়ের দায়িত্ব থেকে আইইডিসিআরকে সরিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষকে দায়িত্ব দেয়ায় সরকারের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, হঠাৎ পরীক্ষার দায়িত্বে বড় পরিবর্তনকে ঝুঁকিপূর্ণ, পরিকল্পনার অভাব এবং সমন্বয়হীনতার জের বলে আখ্যায়িত করছেন বিশেষজ্ঞরা। এদিকে নতুন পরীক্ষায় দীর্ঘসূত্রতায় সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়েই চলেছে। করোনা চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় অস্বচ্ছতা ও এর মান নিয়ে প্রশ্ন তোলায় খোদ স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরাই প্রশাসনিক হেনস্থার শিকার হচ্ছেন।

    তিনি আরো বলেন,করোনা টেস্ট কিটসহ সরবরাহকৃত মালামালের গুণগত মান নিয়ে অভিযোগ করায় কমপক্ষে ২টি হাসপাতালের পরিচালক দু’জন চিকিৎসককে ওএসডি বা বদলি করা হয়েছে। যদিও পরে সরকারি অনুসন্ধানেই সরবরাহকৃত মাস্ক, পিপিই ত্রুটিপূর্ণ বলে আখ্যায়িত হয়েছে এবং সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ক্ষমা চেয়েছে। তাহলে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হলো কেন? অথচ এসকল ত্রুটিপূর্ণ মাস্ক, পিপিই পরিধান করেই চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সম্মুখ সমরে যুদ্ধে নামিয়ে দেয়া হয়েছে।

    মির্জা ফখরুল বলেন, ইতোমধ্যে করোনা চিকিৎসার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত ৪১৯ জন ডাক্তার, ২৪৩ জন নার্স, ৩২৪ জন অন্যান্য স্বাস্থ্য সেবাকর্মীসহ সর্বমোট ৯৮৬ জন কোভিড-১৯-এর নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছেন এবং দুইজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মৃত্যুবরণ করেছেন। অপরদিকে পুলিশে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ন্যূনতম সুরক্ষা সামগ্রী নিয়েই সামনের সারিতে দেশের চিকিৎসক ও পুলিশ বাহিনী। কিন্তু করোনার ভয়াল থাবা তাদেরকে গ্রাস করছে।

    মির্জা ফখরুল বলেন, সাংবাদিকরা যখন ত্রাণ বিতরণে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের খবর তুলে ধরছেন, তখনই সরকার তাদের গলা চেপে ধরছে। আবার সরকার করোনা সংক্রান্ত তথ্য জানার সুযোগ সাংবাদিকদের জন্য সীমিত করছে। উদ্ভুত পরিস্থিতি মোকাবেলার নামে সমালোচনাকারীদের কন্ঠরোধে ব্যবহার করা হচ্ছে বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। প্রকৃত গুজব প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের পরিবর্তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিন্নমত প্রকাশকারীদের ওপর খড়গহস্ত হচ্ছে সরকার।

    তিনি বলেন, তথ্যের অধিকার, ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম, সাংবাদিকদের প্রতি সহিংসতাসহ ২০টি ক্যাটাগরিতে ১৫৭টি ঘটনা পর্যবেক্ষণ ও রেকর্ড করা হয়। এসকল ঘটনায় আক্রান্ত, ভুক্তভোগী ও অধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছেন ১৭৪ জন। ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে এমন আলোচিত ২৬টি ঘটনায় জড়িত ছিলেন ৪৫ জন যাদের সিংহভাগই সরকারি দলের সাথে সম্পৃক্ত। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে মতপ্রকাশের কারণে মামলা হয়েছে ২৫ জনের নামে। গুজব ছড়ানোর অভিযোগে গ্রেফতার ও জরিমানা করা হয়েছে ৫৪ জনকে।

    শুরু থেকেই সরকারের পক্ষ থেকে এক ক্ষমাহীন উদাসিন্য পরিলক্ষিত হয়েছে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রলয় এলে প্রলয় ঠেকাতে না পারলেও অন্তত আত্মরক্ষার ব্যবস্থা করা অপরিহার্য। শুরুর দিকেই যারা দেশের বাইরে থেকে এসেছেন বিশেষ করে চীন, কোরিয়া, সৌদি আরব তাদের কোয়ারেন্টিনে রাখার বিষয়টি সরকার নিশ্চিত করতে পারেনি। ওই সময় সরকারের মন্ত্রীরা যেসব গলাবাজি,

    দম্ভোক্তি করে বেড়িয়েছে তাতেই বোঝা যায় তারা কতটা অযোগ্য ও অদূরদর্শী। তিনি বলেন, চীন ও কোরিয়ায় করোনার প্রকটতার সময় থেকে সরকার পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণের যথেষ্ট সুযোগ পেয়েও কোনো কার্যকর প্রস্তুতি গ্রহণ না করেই বরং মিথ্যা ঘোষণা দিয়েছিল যে করোনা প্রতিরোধে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে যা পরবর্তীকালে ভিত্তিহীন প্রমাণিত হয়েছে।

    মির্জা ফখরুল বলেন, করোনা সঙ্কট প্রকট হলে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইতালি এমনকি ভারতসহ বিশ্বব্যাপী যখন কঠোর লকডাউন ঘোষণা করা হয় তখন বাংলাদেশ সরকার কোনো লকডাউন ঘোষণা এবং গণপরিবহন বন্ধ না করে ২৬ মার্চ থেকে পাবলিক হলিডে ঘোষণা করে যা পরে কয়েক ধাপে বাড়িয়ে ১৬ মে পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। কিন্তু এর মধ্যে বিপর্যয় যা ঘটার ঘটে গেছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পরামর্শ কাজে আসেনি। মানুষ দলে দলে গ্রামমুখী হয়েছে। সঙ্গে বেড়েছে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ। পরে তুঘলকি কান্ড ঘটানো হলো গার্মেন্টস শ্রমিকদের কাজে যোগদানের নির্দেশনা দিয়ে। যতই বিজেএমইএ এবং সরকারের সমন্বয়হীনতার কথা বলা হোক না কেন, এ জন্য সরকার দায় এড়াতে পারে না।

    গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন পরিশোধের জন্য ৫০০০ কোটি টাকার ঋণ প্যাকেজ ঘোষণা করা হলেও অধিকাংশ শ্রমিকই এখনো তাদের বেতন পায়নি অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, শ্রমিকদের বেতন না পাওয়া এবং চাকরিচ্যুতির হুমকিতে অনেকেই দিশেহারা হয়ে মরিয়া হয়ে উঠেছে। অঘোষিত আংশিক লকডাউনের কারণে এই দেশের কোটি কোটি দিন আনে দিন খায় এ শ্রেণির দরিদ্র মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ে। আমাদের খেয়াল রাখা আবশ্যক যে, পশ্চিমা উন্নত দেশের মতো লকডাউন বা ছুটির ঘোষণা দিয়েই শ্রমিকদের বাড়িতে অবস্থান নিশ্চিত করা আমাদের মতো আর্থ-সামাজিক কাঠামোতে সম্ভব নয়। খাবারের নিশ্চয়তা না থাকলে ক্ষুধার্ত মানুষকে ঘরে ধরে রাখতে পারার কোনো কারণ নেই। তিনি বলেন, সুষ্ঠুভাবে করোনা সঙ্কট মোকাবেলার জন্য সম্পদশালী রাষ্ট্র হওয়াটা জরুরি নয়। বৈশ্বিক অভিজ্ঞতার দেখা যায় যে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের তুলনায় ভিয়েতনাম, দক্ষিণ এশিয়ার ছোট দেশ নেপাল, ভুটান এমনকি ভারতের কেরালা রাজ্যে তাদের আন্তরিকতা, দক্ষ ব্যবস্থাপনা এবং দরিদ্র মানুষের জন্য রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে সরাসরি আর্থিক-মঞ্জুরি তুলে দেয়ার মাধ্যমে এ সাফল্য অর্জন করেছে।

    মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি প্রথম থেকেই করোনা বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা ও নীতিমালা অনুযায়ী যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সরকারকে বলে আসছে। গত ২১ মার্চ অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের উপনির্বাচনগুলোকে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের একটি উৎস বিবেচনা করে নির্বাচন কমিশনকে তা স্থগিত করার আহবান জানিয়েছিল বিএনপি। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিভিন্ন জনসচেতনামুলক কর্মসূচী বিএনপি গ্রহণ করেছিল। রাজধানীসহ দেশব্যাপী লিফলেট, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক বিতরণ করেছে। বিএনপির সহযোগী সংগঠন ড্যাব জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের সাথে যৌথ উদ্যোগে ডাক্তার, নার্সসহ সকল স্বাস্থ্যসেবী যারা এই করোনা যুদ্ধের ফ্রন্ট যোদ্ধা তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। পিপিইসহ সাস্থ্য সুরক্ষা সরঞ্জাম তাদের মধ্যে বন্টন করা হয়েছে। যা এখনো চলছে। পাশাপাশি টেলিমেডিসিন সেবার মাধ্যমে ড্যাবের ডাক্তাররা রোগীদেরকে টেলিফোনে চিকিৎসা পরামর্শ দিয়ে চলছেন। রাজধানীসহ দেশের প্রত্যস্ত অঞ্চলে কর্মহীন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে জরুরি খাদ্য সহযোগিতা নিয়ে। বিএনপির কেন্দ্রীয় ত্রাণ পর্যবেক্ষণ সেলের হিসেব অনুযায়ী বিএনপি নেতাদের থেকে ত্রাণ গ্রহণকারীদের সংখ্যা ইতিমধ্যেই ১২ লাখে পৌঁছেছে বলেও জানান তিনি।

    ২৪ ঘণ্টা/এম আর

  • জাতীয় ঐক্য গড়ার ডাক বিএনপির

    জাতীয় ঐক্য গড়ার ডাক বিএনপির

    বিশ্বব্যাপী মহামারি আকার ধারণ করা প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় জাতীয় স্বার্থে দল-মত-শ্রেণি নির্বিশেষে দেশে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার ডাক দিয়েছে বিএনপি।

    শনিবার (০৪ এপ্রিল) করোনা সংকট মোকাবিলায় অর্থনৈতিক প্যাকেজ প্রস্তাবনা ঘোষণার জন্য দলের পক্ষ থেকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ডাক দেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

    বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘জাতীয় ও বৈশ্বিক মহাদুর্যোগ মোকাবিলায় যে কোনও গঠনমূলক ও কল্যাণমুখী উদ্যোগে শামিল হতে বিএনপি প্রস্তুত রয়েছে। এ দুর্যোগ পরিস্থিতে দম্ভ, অহংকার ও রাজনৈতিক প্রহিংসা পরিহার করে সরকারকেই এই ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি, জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা এই মহাদুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবো।’

    মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কাশি, জ্বর হলেই তা করোনা নাও হতে পারে। তাই এখন প্রয়োজন পরীক্ষা, পরীক্ষা আর পরীক্ষা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, সরকারের রোগ পরীক্ষা এবং আক্রান্তের পরিসংখ্যানের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। অথচ কোরিয়া, সিঙ্গাপুরসহ যেসব দেশ স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করেছে তারাই সুফল পেয়েছে।’

    তিনি বলেন, ‘অপরদিকে বাংলাদেশে বেশিরভাগ মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা চেষ্টা করেও আইইডিসিআর-এর হটলাইনে ফোন করে সেবা পাচ্ছে না। বাংলাদেশে গত দুই মাসে ৮ লাখ মানুষ করোনা আতঙ্কে হট লাইনে ফোন করেছে। ২৮ মার্চ পর্যন্ত মাত্র ১১০০ জনকে টেস্ট করা হয়েছে। তারমধ্যে ৪৮টি কেইস করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে। অর্থাৎ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বারংবার তাগিদ সত্ত্বেও বাংলাদেশ সর্বনিম্ন টেস্টিং দেশের অন্যতম।’

    বাংলাদেশে করোনায় মৃত্যুর হার করোনা বিধ্বস্ত ইতালির তুলনায় অনেক বেশি দাবি করে ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশে করোনায় মৃত্যুর হার ১০.৪ শতাংশ, অথচ ইটালিতে মৃত্যুর হার ১০.২ শতাংশ। নিঃসন্দেহে রোগ পরীক্ষার স্বল্পতাই এই হিমশীতল মৃত্যুহারের কারণ। প্রতি হাজারে কোরিয়া যেখানে টেস্ট করেছে ৬ জন, সেখানে বাংলাদেশ প্রতি ১০ লাখে টেস্ট করেছে মাত্র ৬ জন। এটা কি উদাসীনতা না উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত- তা আমাদের বোধগম্য নয়।’

    ‘এ মহাদুর্যোগের সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ তথ্যের অস্বচ্ছতার কারণে জাতিকে কোনও চড়া মূল্য দিতে হয় কিনা সেটাই আশঙ্কা’— বলেন মির্জা ফখরুল।

    তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনা পরীক্ষার কিট নিতান্তই অপ্রতুল। হসপিটালগুলোতে পিপিই ও পরীক্ষা কিটের অভাবে সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্তদের চিকিৎসা করছে না। এমনকি অন্যান্য রোগে আক্রান্ত রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি করছে না। এক কথায় সারা দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।’

    বিএনপির পক্ষ থেকে নেয়া পদক্ষেপগুলোর কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল জানান, ‘স্থানীয় পর্যায়ে করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ এবং শাটডাউনের কারণে কর্মহীন দুঃস্থ জনগণের মুখে দু’মুঠো খাবার তুলে দিতে দলীয় নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের জনগণ ও বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে। মহামারির ভয়াবহতা অনুভব করে বিএনপিই প্রথম জনগণের মধ্যে গণসচেতনতামূলক সচিত্র লিফলেট ও মাস্ক বিতরণ শুরু করে।’

    ‘দিনমজুর শ্রেণির কষ্ট লাঘবের জন্য বিএনপি সারা দেশে খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি পালন করছে। জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন ও ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) হেল্প-লাইনের মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা ও সহযোগিতা প্রদান শুরু করেছে। প্রতিদিন এ কার্যক্রমের পরিধি বৃদ্ধি করা হচ্ছে। ক্ষুদ্র পরিসরে স্থানীয় নেতাকর্মীরা এলাকা ভিত্তিক দরিদ্র জনগণের ঘরে ঘরে খাদ্য সামগ্রী ও সাহায্য পৌঁছে দিচ্ছে। যতদিন প্রয়োজন সীমিত সামর্থের মধ্যে এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে’-জানান মির্জা ফখরুল।

    বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের বিদেহী আত্মার শান্তি ও মাগফেরাত কামনা করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

    তিনি বলেন, ‘জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যেসব চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা করোনায় আক্রান্তদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন এবং যেসব সংবাদকর্মী মহামারির নিউজ/তথ্য/চিত্র কাভার করছেন জাতির পক্ষ থেকে ও আমাদের দলের পক্ষ থেকে আমরা তাদের অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশপ্রেমিক সামরিক বাহিনী ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যবৃন্দ যে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন তাদের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা রইল।’

    বিশ্বব্যাপী যে সকল বিজ্ঞানী, রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ ও গবেষকবৃন্দ মানব সভ্যতা বাঁচিয়ে রাখতে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বিএনপির মহাসচিব।

  • ভাষা আন্দোলনের চেতনা ভুলুণ্ঠিত করেছে সরকার: ফখরুল

    ভাষা আন্দোলনের চেতনা ভুলুণ্ঠিত করেছে সরকার: ফখরুল

    ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে সরকার ভুলুণ্ঠিত করেছে এমন মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘ভাষা আন্দোলনের ওপর ভিত্তি করে আমাদের স্বাধীন একটি ভুখণ্ড তৈরি হয়েছে, আমরা একটি পতাকা পেয়েছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, যে চেতনাকে ভিত্তি করে স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছিল, সেই গণতান্ত্রিক চেতনাকে বর্তমান দখলদার সরকার হরণ করেছে।’

    তিনি বলেন, ‘জনগণের সব অধিকার হরণ করে, জনগণের ভোটের অধিকার হরণ করে, বেঁচে থাকার অধিকার হরণ করে, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়ে একদলীয় একটি রাষ্ট্র ব্যবস্থা তৈরি করার জন্য আজ সবধরনের অপকৌশল করছে।’

    শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের প্রতি দলের পক্ষে শ্রদ্ধা জানানোর পর তিনি এসব কথা বলেন।

    বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘দেশে গণতন্ত্র নেই। দেশের মানুষের অধিকার হরণ করা হচ্ছে। এখানে আইনের শাসন নেই, ন্যায়বিচার নেই। যে চেতনাকে ভিত্তি করে ভাষা আন্দোলন হয়েছিল, স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছিল, সেই গণতান্ত্রিক চেতনাসহ জনগণের অধিকার আজ ৬৮ বছর পরে বর্তমান দখলদার সরকার হরণ করেছে।’

    তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্য আমাদের, যে গণতান্ত্রিক চেতনার ওপর ভিত্তি করে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তার ওপর ভিত্তি করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করে তা প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছেন যে খালেদা জিয়া, সেই দেশনেত্রীকে আজ অন্যায়ভাবে-বেআইনিভাবে সাজা দিয়ে কারাবন্দি করে রাখা হয়েছে। এদেশের সংবিধান অনুযায়ী, তার যে ন্যূনতম প্রাপ্য সেই জামিন তাকে দেওয়া হচ্ছে না।’

    ফখরুল বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে আজ এই মহান দিবসে বলতে বাধ্য হচ্ছি, দেশে গণতন্ত্র নেই। আজ দেশের মানুষের অধিকার হরণ করা হয়েছে। এখানে আইনের শাসন নেই, ন্যায়বিচার নেই। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার জন্য আমরা শপথ নিচ্ছি- দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবো, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবো।’

    এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, যুগ্ম-মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, খায়রুল কবীর খোকন, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কেন্দ্রীয় নেতা আমিরুজ্জামান খান শিমুল, যুবদল সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

  • খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির সিদ্ধান্ত পরিবারের ব্যাপার:ফখরুল

    খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির সিদ্ধান্ত পরিবারের ব্যাপার:ফখরুল

    বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার প্যারোল প্রসঙ্গে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির আবেদন সম্পূর্ণ তাঁর পরিবারের ব্যাপার। এ সিদ্ধান্ত বেগম জিয়া নিজে কিংবা তার পরিবারের সদস্যরাই নেবেন।’

    মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) জাতীয়তাবাদী তাঁতী দলের ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যানে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

    মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছি। কবর জিয়ারত করেছি। পুষ্পার্ঘ অর্পণ করে আমরা শপথ নিয়েছি যে, গণতন্ত্রের মাতা ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আমাদের সংগ্রামকে অব্যাহত রাখবো। একইসঙ্গে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য আমাদের সংগ্রামকে আরও বেগবান করবো।’

    দলের চেয়ারপারসনের মুক্তির বিষয়ে বিএনপি কী করছে- এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়াকে বেআইনিভাবে একটা মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে কারাগারে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। আমাদের সংবিধান অনুযায়ী, তিনি জামিন যোগ্য, তিনি জামিন পেতে পারেন এবং পাওয়া উচিৎ ছিলো। কিন্তু এ সরকার সম্পূর্ণ রাজনীতিক প্রতিহিংসার কারণে তাকে জামিন না দিয়ে কারাকারে বন্দি করে রেখেছে। আমরা এর জন্য আন্দোলন করছি। গত দুই বছর ধরেই আমরা আন্দোলনের মধ্য আছি।’

    তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, জনগণের যে আকাঙ্ক্ষা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়া সেই মুক্তি দিতে সরকার বাধ্য হবে। অবশ্যই জনগণের দাবির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে তারা এগিয়ে আসবে।’

    বেগম জিয়ার প্যারোল কিংবা মুক্তি নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে ফোন করার প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, ‘আমরা তো কোনও প্যারোল নিয়ে কথা বলিনি। আমাদের দল থেকে আজ পর্যন্ত বলেছি কি? তো এটা নিয়ে কথা বলা কতটা সঠিক হয়েছে সেটা তিনি (ওবায়দুল কাদের) বিবেচনা করবেন।’

    এ ব্যাপারে তিনি আরও বলেন, ‘সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ। তার শরীরের যে অবস্থা তাতে যে কোনও সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সেজন্য আমরা বলেছি যে, এই সরকার অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে তাকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে কারাগারের মধ্যে। অবিলম্বে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়া উচিত। কারণ এই দেশে সত্যিকার অর্থে যদি গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হয় সেটা বেগম খালেদা জিয়াকে ছাড়া হবে না।’

    আইনি প্রক্রিয়ায় বিএনপি চেয়ারপারসনের মুক্তির না হলে প্যারোলে আবেদনের কোনও সম্ভাবনা রয়েছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ বেগম জিয়া ও তাঁর পরিবারের ব্যাপার। তারাই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।’

    এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, তাঁতী দলের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ, যুগ্ম-আহ্বয়ক ড.কাজী মনিরুজ্জামান মনিরসহ তাঁতী দলের নেতাকর্মীরা।

  • খালেদার মুক্তির বিষয়ে ফখরুল-কাদেরের ফোনালাপ

    খালেদার মুক্তির বিষয়ে ফখরুল-কাদেরের ফোনালাপ

    কারান্তরীণ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্যারোলের মুক্তির বিষয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

    শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর পৌনে ১২টার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

    মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব আমার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন, আলাপ হয়েছে। তাদের দলের পক্ষ থেকে তিনি খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়েছেন। আমি যেন বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করি।

    তিনি বলেন, খালেদা জিয়া যে মামলায় কারাগারে রয়েছেন তা হচ্ছে দুর্নীতির মামলা। এটা কোনো রাজনৈতিক মামলা নয়। রাজনৈতিক মামলা হলে সরকার বিবেচনা করতে পারতো। বিষয়টা এখন সম্পূর্ণ আদালতের এখতিয়ার।

    ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি এবং খালেদা জিয়ার স্বজনদের পক্ষ থেকে বিচ্ছিন্নভাবে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে বলছেন, তবে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো আবেদন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেননি।

    সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে সরকার অমানবিক আচরণ করতে পারে না।

    বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে তার (খালেদা জিয়া) চিকিৎসা চলছে। তার চিকিৎসার বিষয়টি সরকারের সুনজরে আছে।