বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে কোনো বর্ষই সফল হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি কারাবরণ করেছেন। গণতন্ত্রের জন্য দীর্ঘ নয় বছর সংগ্রাম করেছেন। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য এখন জেলে আছেন, তাকে কারাগারে রেখে কোনো বর্ষই সফল হবে না।’
শনিবার (৭ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা-১০ আসনে বিএনপির প্রার্থী শেখ রবিউল আলম রবিসহ দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ পালনের অনুষ্ঠানে ১৭ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঢাকায় আসছেন। তার সঙ্গে বিএনপির কোনো বৈঠক হবে কি না জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের সঙ্গে এখন পর্যন্ত কোনো আলোচনা হয়নি।’
মোদীর আগমন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা আগেই পরিষ্কার করে বলেছি, আজকে বাংলাদেশের যে অবস্থা, ভারতের এনআরসি নিয়ে দাঙ্গা হয়ে গেলো, সেটার যে প্রভাব এখানে পড়েছে, তাতে তার (মোদীর) এখানে আসাটা কতটুকু সমীচীন এটা তারাই বিচার করবেন।
‘বিএনপি সিরিয়াসলি নির্বাচনে অংশ নেয় না, তারা নির্বাচনে অংশ নেয় নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য’ আওয়ামী লীগ নেতাদের এমন বক্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগতো কত কথাই বলবে। তারাতো জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া, ভোট ছাড়া, শুধু অস্ত্র দিয়ে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে। স্বাভাবিকভাবেই তারা এ ধরণের কথাবার্তা বলবে, যাতে করে জনগণকে বিভ্রান্ত করার সুযোগ হয়। কিন্তু সেটাতে তারা সফল হয়নি। আমরা এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি কারণ আমরা বিশ্বাস করি ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতার পরিবর্তন হয়। আমরা লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি বলেই আমরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, আগেও বলেছি এই নির্বাচনটা গণতন্ত্র ও গণতন্ত্রের মাতা দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার আন্দোলনের অংশ। আমরা এই নির্বাচনে অত্যন্ত সিরিয়াস। প্রত্যেকটি নির্বাচনেই আমরা সিরিয়াসলি অংশগ্রহণ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু এই সরকার জনগণের সাথে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। জনগণ তাদের সহ্য করে না। তারা জোর করে ভয়ভীতি দেখিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে নির্বাচনকে তারা তাদের পক্ষে নেওয়ার চেষ্টা করে। সেটার প্রতিবাদ করার জন্য ও প্রতিরোধ করার জন্য আমরা এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি। অতএব তাদের যে যুক্তি সেটা কোনোদিনই গ্রহণযোগ্য নয়।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের মূল চেতনা ছিল গণতন্ত্র। এটাকে কেন্দ্র করেই দীর্ঘকাল ধরে স্বাধীনতার দাবি উঠেছে, স্বাধীনকারের সংগ্রাম হয়েছে। সুতরাং একজন ব্যক্তি বা একটা গোষ্ঠি-একটা দল স্বাধীনতার দাবিদার হতে পারে না। সমগ্র বাংলাদেশের মানুষ সুদীর্ঘ সময় ধরে স্বাধীনতার জন্য লড়াই সংগ্রাম করেছে। তারই ফলে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে। আমরা স্বাধীন হয়েছি।
সরকারের পক্ষ থেকে দল মত নির্বিশিষে সবাইকে নিয়ে মুজিববর্ষ পালনের কথা বলা হচ্ছে এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এটা একটা মকারি প্রহসন। কারণ বেগম জিয়া যিনি গণতন্ত্রের জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছেন। গণন্ত্রের জন্য দীর্ঘ নয় বছর সংগ্রাম করেছেন। তাকে কারাগারে রেখে কোনো বর্ষই সফল হবে না।
ঢাকা-১০ আসনের বিএনপির প্রার্থী শেখ রবিউল আলম রবির বিষয়ে মহাসচিব বলেন, আমাদের প্রার্থী গণতান্ত্রিক সংগ্রামের একজন নেতা। তিনি ছাত্র রাজনীতি করেছেন, দীর্ঘকাল রাজনীতি করছেন। এলাকায় তিনি যথেষ্ট জনপ্রিয় নেতা। আমি বিশ্বাস করি তিনি মেধাবী ছেলে নিজের মেধা প্রমাণ করে জনগণের ভোটে জয়ী হতে পারবেন।
এ সময় ঢাকা-১০ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী শেখ রবিউল আলম রবি, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, যুগ্ম-মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুনসী বজলুল বাসিত আঞ্জু, দক্ষিণের সহসভাপতি নবী উল্লা নবী, সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশারসহ দলীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।