পেঁয়াজের বাজারমূল্য মাত্রাতিরিক্ত হওয়ায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেনের নির্দেশে আজ বাংলাদেশের বৃহত্তম পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে চতুর্থ দফায় অভিযান পরিচালনা করা হয়।
অভিযানের খবর পেয়ে এবং ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতি টের পেয়ে মিয়ানমারের পেয়াজ নিয়ে নতুন উপায়ে কারসাজির সাথে জড়িত মুনাফালোভী কমিশন এজেন্টরা গা ঢাকা দিয়ে মার্কেট থেকে পালিয়ে যায়। অন্যদিকে অভিযান চলাকালীন মাত্র দু ঘন্টার ব্যবধানে মিয়ানমারের পেয়াজ ১১০ টাকা কেজি থেকে তাৎক্ষণিকভাবে ৭০-৭৫ টাকা দরে নেমে আসে।
আজ রবিবার বিকেল ৪ টা থেকে ৬টা পর্যন্ত পরিচালিত ভ্রাম্যমান আদালতের নেতৃত্ব দেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম। এসময় আমদানিকারকদের কাছ থেকে ক্রয় মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত দামে পেঁয়াজ বিক্রি করার অপরাধে ভোক্তা অধিকার আইনে খাতুনগঞ্জের চার আড়তদারকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। অভিযানে পুলিশের পাশাপাশি র্যাবের সদস্যরাও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে সহায়তা করেন।
জানা যায়, অভিযানের সময় দোকানে সংরক্ষিত কাগজপত্র পরীক্ষা করে মিয়ানমারের পেয়াজের দামে কারসাজি ও প্রতারণার প্রমাণ পাওয়ায় মেসার্স খাতুনগঞ্জ ট্রেডিংকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আরো খবর : খাতুনগঞ্জে ফের অভিযান : চার প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা
অন্যদিকে প্রতারণামূলকভাবে মূল্য তালিকা থেকে অধিক দামে পেয়াজ বিক্রি করার অপরাধে মেসার্স হাজী অছি উদ্দিন সওদাগরকে ৪০ হাজার টাকা এবং মিয়ানমারের পেয়াজ আমদানি মূল্যের চাইতে মাত্রাতিরিক্তভাবে ১০০-১০৫ টাকা প্রতি কেজি দরে বিক্রি করার অপরাধে সৌমিক ট্রেডার্স ও বেঙ্গল ট্রেডার্সকে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম।
এছাড়া খাতুনগঞ্জের আরো শতাধিক আড়ত পরিদর্শণ করে প্রতিকেজি পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করার জন্য মুল্য নির্ধারণ করে দিয়ে শেষবারের মতো সতর্ক করে দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
প্রায় দুঘন্টার অভিযান শেষে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেনের নির্দেশে আজ বাংলাদেশের বৃহত্তম পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে চতুর্থ দফায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। আরো খবর : দেশে আসছে এস আলম গ্রুপের ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ!
তিনি বলেন, অভিযানে খাতুনগঞ্জের শতাধিক আড়ত পরিদর্শন করা হয়। এসব আড়ত পরিদর্শন করে পেয়াজের দামে কারসাজির প্রমাণ পাওয়া যায়। আমদানিকারক, কমিশন এজেন্ট ও আড়তদাররা বাজারে পর্যাপ্ত পেয়াজ মজুদ থাকা সত্ত্বেও দামে কারসাজি করছে।
আড়তে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ থাকার পরও পেঁয়াজের সংকট দেখিয়ে এবং নানা অজুহাতে পেঁয়াজের দর পাইকারিতে কেজি প্রতি ৯০ থেকে ১১০ টাকা করে বিক্রি করছে কিছু আড়তদার। অতচ প্রতি কেজি পেঁয়াজের আমদানি মূল্য পড়ছে মাত্র ৪২ টাকা।
তিনি বলেন, বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রির অপরাধে খাতুনগঞ্জের চারটি আড়তকে মোট এক লাখ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এবং প্রতিটি আড়তকে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করতে দর নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
অভিযান চলমান থাকবে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, অভিযানের সময় গা ঢাকা দেওয়া কারসাজির সাথে জড়িত কমিশন এজেন্টদের ব্যাপারে সরেজমিনে খাতুনগঞ্জ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অধিক নজরদারির জন্য র্যাব ও পুলিশকে দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
প্রসঙ্গত : চলতি বছরের গত ১৪ সেপ্টেম্বর ভারত সরকার পেঁয়াজের রপ্তানিমূল্য ৮৫০ ডলার বেঁধে দেয়। এরপর থেকে বাজারে অস্থিরতা শুরু হয়। ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্যবিষয়ক দপ্তর গত ২৯ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়।
এরপর একেবারে আকাশচুম্বিতে উঠে পেঁযাজের দর। একলাফে পাইকারি বাজারে ভারতীয় আমদানি করা পেঁয়াজের দর ৯০-৯৫ টাকায় পৌঁছে। জেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন সংস্থার অভিযান ও নিয়মিত তদারকিতে মাঝে সামান্য দরপতন হলেও ফের লাগামহীন হয়ে পড়েছে পেঁয়াজের বাজার।
বর্তমানে পাইকারিতে সেঞ্চুরি পেরিয়ে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়।