২৪ ঘণ্টা আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত (বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৬টা) যুক্তরাষ্ট্রে আরও ২,৪৪৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এনিয়ে দেশটিতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৭৫ হাজার ছাড়াল।
তাছাড়া মৃত্যু ও আক্রান্তের দিক থেকে শীর্ষে থাকা দেশটিতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যাও প্রায় ১৩ লাখ যা বিশ্বের মোট আক্রান্তের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ!
বাল্টিমোরভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয় জনস হপকিন্স জানিয়েছে, দেশটিতে মোট আক্রান্ত দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ৫৪ হাজার ৭৫০ জন। দেশটিতে মোট মৃত্যু দাঁড়িয়েছে ৭৫ হাজার ৫৪৩ জন, যা এই ভাইরাসে বিশ্বের মোট মৃত্যুর এক-চতুর্থাংশের বেশি।
গত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় আড়াই হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে দেশটিতে। নিউ ইয়র্কের চেহারা এখনও ভয়াবহ। হাসপাতালে নতুন রোগী নেওয়ার কার্যত কোনও জায়গা নেই। পাওয়া যাচ্ছে না মৃতদেহ কবর দেওয়ার জায়গা।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এখনও লকডাউন তুলে জনজীবন স্বাভাবিক ছন্দে ফেরানোর পক্ষপাতী। তিনি আগেই বলেছিলেন, দিনের পর দিন এ ভাবে সব কিছু বন্ধ করে বসে থাকা সম্ভব নয়। অর্থনীতিকে সচল করতেই হবে।
যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রুত জীবনযাত্রা স্বাভাবিক করে দিলে মৃতের সংখ্যা অনেক গুণ বেড়ে যাবে। বাড়বে আক্রান্ত। তখন পরিস্থিতি সামাল দেওয়া আরও কঠিন হয়ে পড়বে।
এরই মধ্যে আরও এক আতঙ্কের কথা জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। আফ্রিকাতেও মৃতের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার। তাদের বক্তব্য, নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা না গেলে আফ্রিকায় এই মহামারি ভয়াবহতম চেহারা নিতে পারে। আক্রান্ত হতে পারেন তিন থেকে চার কোটি মানুষ। মৃত্যু হতে পারে ৮০ হাজার থেকে দুই লাখ লোকের।
শুধু তাই নয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, প্রথম আঘাতের পরে ফের নতুন ঢেউ নিয়ে ফিরে আসতে পারে করোনা। ফলে যে সব দেশ দ্রুত লকডাউন তোলার পরিকল্পনা করছে, তাদের আরও সতর্ক হওয়া উচিত।
ইউরোপ কিংবা অ্যামেরিকা যে ভাবে করোনার সঙ্গে লড়াই করেছে, আফ্রিকার দেশগুলির পক্ষে স্বাভাবিক ভাবেই সে ভাবে লড়াই করা সম্ভব নয়। অর্থনৈতিক ভাবে আফ্রিকার অধিকাংশ দেশই পিছিয়ে পড়া। করোনার পরীক্ষাও সেখানে ঠিক ভাবে হচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন না।
পরিস্থিতি এমনই চলতে থাকলে আফ্রিকায় করোনা ভয়াবহ চেহারা নেবে বলে আশঙ্কা। মৃত্যু হবে অসংখ্য লোকের। কিন্তু বিকল্প উপায়ও দেখতে পাচ্ছেন না অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ।
তাঁদের বক্তব্য, ক্যামেরুন বুঝিয়ে দিয়েছে, এক মাস অর্থনীতি সচল না থাকলে আফ্রিকার অধিকাংশ দেশের কী ধরনের বিপর্যয় ঘটতে পারে। বিপুল পরিমাণ অর্থ সাহায্য করে ক্যামেরুনের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করার চেষ্টা চলছে। অন্য দিকে সেখানে করোনা আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে।
জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী শুক্রবার সকাল পর্যন্ত গোটা বিশ্বে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৩৯ লাখ ১৬ হাজার। মৃত দুই লাখ ৭০ হাজার। সুস্থ হয়েছেন ১৩ লাখ ৪৩ হাজার।
তিরিশ হাজার ছাড়ানো মৃত্যু নিয়ে মৃত্যুর মিছিলে যুক্তরাষ্ট্রের পরেই রয়েছে যুক্তরাজ্য। আক্রান্তে চতুর্থস্থানে আছে দেশটি, প্রায় ২ লাখ ৮ হাজার। তিরিশ হাজার ছুঁই ছুঁই মৃত্যু নিয়ে তৃতীয়স্থানে ইতালি; আক্রান্তে তৃতীয়স্থানে আছে দেশটি, ২ লাখ ১৫ হাজার।
মৃত্যুর তালিকায় এক সময় দ্বিতীয়স্থানে থাকা স্পেন চতুর্থস্থানে নেমে এসেছে, ২৬ হাজার। তবে আক্রান্তের তালিকায় এখনো দ্বিতীয়স্থানে দেশটি, ২ লাখ ২১ হাজার। মৃত্যুতে পঞ্চমস্থানে ফ্রান্স, ২৬ হাজার ছুঁই ছুঁই। আক্রান্তে ষষ্ঠস্থানে আছে দেশটি, প্রায় ১ লাখ ৭৫ হাজার।
আক্রান্তে হঠাৎ ওপরে উঠে আসছে রাশিয়া। এক লাখ ৭৭ হাজার ছাড়ানো আক্রান্ত নিয়ে বর্তমানে পঞ্চমস্থানে আছে বিশ্বের বৃহত্তম দেশটি। দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম দেশ ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৬ হাজার; মৃত্যু ১ হাজার ৮৮৯ জন। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বাংলাদেশে মৃত্যু ১৯৯ জন।
করোনার প্রকোপ যত দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে, পৃথিবী জুড়ে অর্থনীতি ততই সংকটজনক চেহারা নিচ্ছে। অর্থনৈতিক ভাবে পৃথিবীর তৃতীয় শক্তিশালী দেশ জাপানে গভীর মন্দা শুরু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আপাতত এই সংকট কাটার কোনও সম্ভাবনা নেই।
এ দিকে হংকংয়ের একটি বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রতি জানিয়েছে, শুধু মুখ আর নাক নয়, চোখ দিয়েও করোনা ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করছে। শুধু তাই নয়, তাদের বক্তব্য সার্স ভাইরাসের চেয়ে করোনা অন্তত ১০০ গুণ বেশি শক্তিশালী।
২৪ ঘণ্টা/আর এস পি