Tag: যুদ্ধবিরতি

  • গাজায় ৪ দিনের যুদ্ধবিরতি শুরু

    গাজায় ৪ দিনের যুদ্ধবিরতি শুরু

    অবশেষে জিম্মি মুক্তির বিনিময়ে চার দিনের যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে গাজা উপত্যকায়। শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল ৭টা (বাংলাদেশ সময় বেলা ১১টা) থেকে শুরু হয়েছে।

    এর আগে বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) দোহায় এক সংবাদ সম্মেলনে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি এসব তথ্য জানান।

    তিনি বলেন, যেসব জিম্মি একই পরিবারের, তাদের একসঙ্গে রাখা হবে। জিম্মিদশা থেকে মুক্তি দিতে প্রতিদিন বেশ কিছু বেসামরিক নাগরিককে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। চার দিনের মধ্যে ৫০ জন ইসরাইলিকে মুক্তি দেওয়া হবে।

    কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ মুখপাত্র আরও বলেন, বুধবার থেকে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে যেভাবে যোগাযোগ করা হচ্ছিল, বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত মিশর ও দোহায় উপস্থিত পক্ষগুলোর সঙ্গে সেভাবেই সমন্বয় করা হয়েছে। সভাগুলো খুব ভালো ও ইতিবাচক পরিবেশে হয়েছিল।

    তিনি আরও বলেন, অবশ্যই ফলটি ছিল চুক্তি বাস্তবায়ন পরিকল্পনার অংশ। আমরা সবসময় বলেছি— এমন কিছু হওয়া দরকার, যা কংক্রিট এবং জিম্মিদের মুক্তির জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে প্রস্তুত।

    মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার সকাল ৭টা থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরু হবে। বিকাল ৪টায় যুদ্ধবিরতির চুক্তি অনুসারে প্রথমে ১৩ ইসরাইলি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হবে।

    গাজা থেকে বন্দিদের কোন পথে নিয়ে যাওয়া হবে, সে সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয় মাজেদের কাছে। কিন্তু ‘নিরাপত্তার কারণে’ তিনি এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারবেন না বলে জানান। মাজেদ আল-আনসারি বলেন, এখানে আমাদের মূল লক্ষ্য জিম্মিদের নিরাপত্তা। আমাদের অপারেশন কক্ষের মাধ্যমে তারা যাতে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছায় তা নিশ্চিত করার দিকে আমরা মনোযোগ দেব।

    যারা ইসরাইলি নন, সেসব বন্দিকে মুক্তির বিষয়ে এক উত্তরে তিনি বলেন, জিম্মিদের অগ্রাধিকার দেওয়ার মানদণ্ডটি সম্পূর্ণরূপে মানবিক। আমাদের ফোকাস ছিল যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নারী ও শিশুদের ক্ষতির পথ থেকে সরিয়ে আনা। আশা ছিল, এই চুক্তির মাধ্যমে আমরা সবাইকে সময়মতো বের করে আনতে পারব। এবং মানবিক বিরতির মাধ্যমে গাজার মানুষের কষ্ট নিরসন হবে।

    আলজাজিরার এক প্রশ্নের জবাবে, কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, যে মানবিক সহায়তা এই চুক্তির ‘একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ’। আমরা রাফাহ ক্রসিং থেকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সাহায্য পাঠানোর আশা করছি। এটি গাজার প্রয়োজনের একটি ভগ্নাংশ মাত্র, তবে সেখানে প্রচুর সহায়তা দরকার।

    তিনি আরও বলেন, আমাদের লক্ষ্য এই চুক্তিটি একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে শেষ করা।

    শুক্রবার কতজন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হবে জানতে চাইলে তিনি উত্তর দিতে অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমি শুধু বলতে পারি যে চুক্তিটি পারস্পরিক। আমরা ইসরাইলি পক্ষ থেকেও মুক্তির আশা করছি। যখনই দুই পক্ষের তালিকা নিশ্চিত করা হবে, আমরা জিম্মিদের বের করে আনার প্রক্রিয়া শুরু করতে পারি। আমাদের দলগুলো দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে।

    যুদ্ধবিরতি ভাঙলে কী হবে এমন প্রশ্নের জবাবে আল-আনসারী বলেন, চুক্তিটি চারদিনের মধ্যে শত্রুতা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করার বিষয়ে। সুতরাং স্পষ্টতই যে কোনো ধরনের শত্রুতা পুনরায় শুরু করার অর্থ চুক্তি লঙ্ঘন করা।

    গত বুধবার হামাস ও ইসরাইল যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। চার দিনের এ বিরতিতে গাজায় অত্যাবশ্যকীয় মানবিক সাহায্য মোতায়েনও অন্তর্ভুক্ত। তবে চুক্তি হলেও ইসরাইল অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ব্যাপক বোমা হামলা চালিয়েছে।

  • গাজায় লঙ্ঘিত হচ্ছে মানবাধিকার, যুদ্ধবিরতি চাইলেন প্রধানমন্ত্রী

    গাজায় লঙ্ঘিত হচ্ছে মানবাধিকার, যুদ্ধবিরতি চাইলেন প্রধানমন্ত্রী

    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফিলিস্তিনের গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে আনীত প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন প্রস্তাব অনুযায়ী পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী করে ১৯৬৭ সালের সীমান্তের ভিত্তিতে দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানকে বাস্তবায়িত করার জন্য সংলাপ ও আলোচনা পুনরায় শুরু করার আহ্বান জানিয়েছেন।

    জাতিসংঘের ৭৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জাতিসংঘ দিবসের প্রাক্কালে এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

    ১৯৪৫ সালে জাতিসংঘ সনদ কার্যকর হওয়ার বার্ষিকী উপলক্ষে ২৪ অক্টোবর জাতিসংঘ দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্যসহ এর বেশিরভাগ স্বাক্ষরকারীর দ্বারা প্রতিষ্ঠার নথি অনুমোদনের মধ্য দিয়ে জাতিসংঘ আনুষ্ঠানিকভাবে এই দিনে অস্তিত্ব লাভ করে।

    শেখ হাসিনা বলেন, মানবাধিকারের সমস্ত মৌলিক নীতিমালা, আন্তর্জাতিক মানবিক আইন এবং যুদ্ধের সাধারণ নিয়ম লঙ্ঘন করে গাজায় নিরপরাধ বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ইসরায়েলের চলমান হামলা জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে।

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘ এবং এর বিশেষায়িত সংস্থাগুলো বহু ফ্রন্টে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে, যেমন উপনিবেশ রহিতকরণ, শান্তিরক্ষা, মানবিক কার্যক্রম, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, এমডিজি এবং চলমান এসডিজি অর্জন, মানবাধিকার উন্নয়ন ও সুরক্ষা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বহুমুখী প্রভাব মোকাবেলা।

    শেখ হাসিনা বলেন, তবে, বেসামরিক নাগরিকদের দুর্ভোগ বাড়িয়ে যেমন বিশ্বের অনেক জায়গায় আমরা সশস্ত্র সংঘাত প্রত্যক্ষ করছি এবং সমৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করছি, তেমনিভাবে পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার রোধ এবং অস্ত্র প্রতিযোগিতার অবসানেও বাস্তব কোনো অগ্রগতি নেই। তিনি বলেন, জাতিসংঘের ৭৮তম বার্ষিকী উপলক্ষে, আমি জাতিসংঘ সনদের উদ্দেশ্য ও নীতির প্রতি বাংলাদেশের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছি এবং আমাদের সময়ের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পারস্পারিক আস্থা ও বৈশ্বিক সংহতি গড়ে তোলা এবং শান্তি, নিরাপত্তা এবং টেকসই উন্নয়নের অগ্রগতির লক্ষ্যে বহুপাক্ষিকতাকে পুনরুজ্জীবিত করার ক্ষেত্রে জাতিসংঘের নেতৃত্ব ও নিরলস প্রচেষ্টার প্রশংসা করছি।

    ‘শান্তির সংস্কৃতি’র প্রবক্তা হিসেবে, বাংলাদেশ আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং অপর দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিরোধের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তিতে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা সকল প্রকার সন্ত্রাস ও সহিংস চরমপন্থার ব্যাপারে ‘জিরো টলারেন্স’ বজায় রাখি।

    একইভাবে শান্তি ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতায় অবদান রাখার স্বার্থে মিয়ানমারের নৃশংসতা থেকে পালিয়ে আসা এবং জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের দশ লাখেরও বেশি নাগরিককে বাংলাদেশ অস্থায়িভাবে আশ্রয় দিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারপর থেকে রোহিঙ্গা সংকট শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করতে আমরা দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক এবং বহুপাক্ষিক কূটনীতি অব্যাহত রেখেছি।

    জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শান্তিমুখী পররাষ্ট্রনীতি এবং দৃষ্টিভঙ্গি থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে আমরা কাজ করছি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা জাতিসংঘ এবং বৃহত্তর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের শান্তি, সাম্য, স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার, উন্নয়ন ও সহযোগিতার সাথে আমাদের সম্পৃক্ততাকে মূল নীতি হিসেবে অনুসরণ করে যাচ্ছি।

    সরকারপ্রধান বলেন, আমরা সকল অংশীজনের সাথে অংশীদারিত্বে শান্তিরক্ষা এবং শান্তি-প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘের অত্যন্ত মূল্যবান কাজের অগ্রভাগে রয়েছি এবং থাকব।

    বহুপাক্ষিকতার দঢ় সমর্থক হিসেবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জাতিসংঘের সাথে থাকবো। বৈশ্বিক সুশাসনের প্রতীকের আসনে বসিয়ে আমরা জাতিসংঘকে দেখতে চাই, যা আমাদেরকে সামনে থেকে প্রেরণা দিবে বস্তুনিষ্ঠ ও নিমোহভাবে গোঠা বিশ্বেও প্রত্যাশা পূরণে।

    শেখ হাসিনা বলেন, আসুন, আমরা আমাদের প্রচেষ্টাকে শক্তিশালী করতে এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধা, অংশীদারিত্ব, সহযোগিতা ও সংহতির ভিত্তিতে একটি আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতিসংঘ গড়তে এই উপলক্ষ্যকে ব্যবহার করি।