রাউজান (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি : হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। এরপরই শুরু হচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান শারদীয় দুর্গাপূজা।
দেশের অন্যান্য স্থানের মতো রাউজানেও দুর্গাপূজার আয়োজনকে ঘিরে স্ব স্ব এলাকার পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দরা পূজার সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত। পূজার দিনক্ষণ যতই গণিয়ে আসছে ততই ব্যস্ত সময় পার করছে প্রতিমা শিল্পীরা।
রাউজান পুজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুমন দে বলেন, সারাদেশের মধ্যে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে রাউজানেও অনেক বেশি পুজা মন্ডপ রয়েছে। অন্যান্য বছরের মতো এবারো দুর্গাপূজাকে ঘিরে উৎসবমুখর রাউজানের সনাতন ধর্মের মানুষ। প্রতিবছর সমগ্র রাউজানে শারদীয় দুর্গাপূজার সময় যে উৎসবের আমেজ বিরাজমান থাকে তা সত্যিই বিরল।
সরেজমিনে পরিদর্শনকালে দেখা গেছে, রাউজানের বিভিন্ন ইউনিয়নে পুজা নিয়ে ব্যস্ততার দৃশ্য চোখে পড়ছে। মন্ডপগুলোতে চলছে প্রতিমা তৈরী সহ নানা আনুষাঙ্গিক প্রস্ততি।
উপজেলার নোয়াপাড়া গৌরাঙ্গ বাড়ী মাঠ, ফকিরহাট কালিবাড়ী, বাইন্ন্যা পুকুর পাড়, কুন্ডেশ্বরী, সত্যের দোকানসহ আরো বেশ কিছু স্থানে চলছে প্রতিমা তৈরীর কাজ।
গত মঙ্গলবার উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নের পল্লী মঙ্গল সমিতির গৌরাঙ্গ বাড়ির মাঠে গিয়ে কথা হয় শরিয়তপুরের প্রতিমা শিল্পী অনিল পালের সঙ্গে। তিনি বলেন, দীর্ঘ ১৮ বছর ধরেই প্রতিমা তৈরী করে আসছেন তিনি। শুধু দুর্গাপূজা নয় বছরের অন্যান্য সময়ে স্বরস্বতি পূজাসহ বিভিন্ন পূজা-পার্বনে প্রতিমা তৈরীর অর্ডার আসে। বছর জুড়েই তিনি এই কাজে ব্যস্ত থাকেন। তাকে সহযোগিতা করেন তার দুই পুত্র সমল পাল ও অলক পাল।
তিনি বলেন, এ বছর বড়-ছোট মিলিয়ে ৩৪ টি প্রতিমার অর্ডার পেয়েছেন তিনি।প্রকারভেদে তার তৈরীকৃত প্রতিমা সর্বোচ্চ ৩৭ হাজার টাকায় তিনি অর্ডার নিয়েছেন। বাকীগুলো ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যে।
প্রতিমা শিল্পী অনিল পাল আক্ষেপ করে বলেন, এখন প্রতিমা তৈরী করতে খরচ অনেক বেড়ে যাওয়ায় তাদের সংসার চালাতে অনেক হিমশিম খেতে হয়। তিনি বলেন, আগে আমরা কম টাকার অর্ডার নিয়েও পোষাতে পারতাম আর এখন কারিগরের বেতন, প্রতিমা তৈরীর আনুষাঙ্গিক খরচাদি বেড়ে যাওয়ায় তেমন একটা লাভ হয়না। একেকজন কারিগরের বেতন ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
দুর্গাপূজা মৌসুমে কারিগর ও হেলপার মিলে তার সাথে আটজন কাজ করেছেন।বর্তমানে শেষের দিকে কাজ কমে আসায় বর্তমানে ৪ জন কাজ করছেন।
উত্তর গুজরা রামকৃঞ্চ সেবাশ্রম পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক চন্দন খাস্তগীর বলেন, পূজা উদযাপনে তাদের মন্ডপে সাড়ে তিন লক্ষাধিক টাকার বাজেট থাকে। বাইরে থেকে শিল্পী এনে তাদের পূজা মন্ডপেই প্রতিমা তৈরী করা হচ্ছে। প্রতিমা তৈরীতে তাদের ত্রিশ হাজার টাকার মতো খরচ হচ্ছে।
রাউজান ফকিরহাট কালি বাড়ির প্রতিমা শিল্পী নান্টু পাল বলেন, শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে তিনি ২৫-৩০টি প্রতিমার অর্ডার পেয়েছেন। বর্তমানে প্রতিমা গুলোতে রং তুলির প্রলেপ দেওয়া হচ্ছে।
রাউজান উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি চেয়ারম্যান প্রিয়তোষ চৌধুরী ও সম্পাদক সুমন দে জানান, রাউজানের ১৪টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় এ বৎসর ২৩২টি পূজামণ্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব পালন করা হবে। অন্যান্য বছরের চাইতে চলতি বছর রাউজানে আরো ২টি পূজামন্ডপ বেড়েছে।
দক্ষিণ রাউজান পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি প্রকাশ শীল ও সাধারণ সম্পাদক ম্যালকম চক্রবর্তী বলেন, দুর্গাপূজাকে ঘিরে রাউজানের সর্বত্র উৎসবের আমেজচ সৃষ্টি হয়েছে।
রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জোনায়েদ কবির সোহাগ বলেন, রাউজানে অত্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্টিত হয়ে আসছে। অন্যান্য বছরের ধারাবাহিকতায় এবারো পূজার সময় যাতে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা উৎসবমুখর এবং আনন্দঘন পরিবেশে পূজা পালন করতে পারে সে ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
আগামী ৩ অক্টোবর থেকে শুরু হবে দুর্গাপূজার আনুষ্টানিকতা। ৮ অক্টোবর বিজয়াদশমীর মধ্যদিয়ে মা দূর্গাকে বিসর্জন দেয়া হবে।
২৪ঘন্টা/এন রানা/রাজীব..