২৪ ঘণ্টা ডট নিউজ। রাউজান প্রতিনিধি : রাউজানের তরুণ রাজনীতিবিদ, সাংসদপুত্র ফারাজ করিম চৌধুরীর ব্যাবস্থাপনায় আল আমিন কমিউনিটি সেন্টারে প্রতিদিন তৈরি হচ্ছে কয়েক হাজার প্যাকেট সেহেরির খাবার।
চট্টগ্রাম শহর জুড়ে ব্যতিক্রমী মানবিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে করোনা ভাইরাস রোগীদের সেবা প্রদানে ফ্রন্টলাইনে থাকা চট্টগ্রামের ২ হাজার চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ড বয় ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পুরো রমজান মাস জুড়ে সেহরি খাওয়ানোর জন্য এ আয়োজন।
রাউজান উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জমির উদ্দিন পারভেজ, সহ সভাপতি সুমন দে, সেন্ট্রাল বয়েজ অব রাউজানের সভাপতি সাইদুল ইসলামসহ খাবার প্যাকেটজাত কাজে ব্যস্ত বেশ কিছু সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকরা।
করোনা যুদ্ধে প্রাণ হারানো প্রথম চিকিৎসক ডা. মঈনের স্মৃতির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে মানবিক এ কাজে এবার সরাসরি স্বেচ্ছাসেবকের ভুমিকায় রাউজানের সাংসদ, রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী।
পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ করে বৃহস্পতিবার (৩০ এপ্রিল) রাত আনুমানিক আটটার দিকে রাউজান উপজেলার দায়ার ঘাটাস্থ আল আমিন কমিউনিটি সেন্টারে হাজির হন তিনি। সাংসদের উপস্থিতিতে গাড়ীর পাশে ছুটে যান নেতাকর্মী ও সেহেরির খাবার তৈরিতে ব্যস্থ স্বেচ্ছাসেবকরা।
সবার সাথে কুশল বিনিময় শেষে সাংসদ ফজলে করিম চৌধুরী সরাসরি চলে যান রান্না ঘরে। একদিকে রান্নার কাজ চলছিল অন্যদিকে লম্বা টেবিলের দুইপাশে দাঁড়িয়ে ত্রিশ জনের মতো স্বেচ্ছাসেবক তখন খাবার প্যাকেট তৈরির কাজে ব্যস্ত।
সাংসদ সেখানে ঢুকেই প্রথমে স্বেচ্ছায় মানবিক এই কাজে অংশ গ্রহণ করায় ধন্যবাদ জানালেন স্বেচ্ছা সেবকদের। এরপর হাতে গ্লাভস লাগিয়ে তিনি স্বেচ্ছা সেবকদের উদ্দেশ্যে বললেন, আমিও তোমাদের সাথে হাত লাগাই, আমাকে প্যাকেট দাও।
এরপর সাংসদ নিজেই স্বেচ্ছাসেবকদের কাতারে দাঁড়িয়ে খাবারের বক্সে খাবার আইটেমগুলো তুলে দেন। একজন সাংসদ হয়েও ফজলে করিম চৌধুরীকে খাবার প্যাকেটজাত কাজে অংশ নিতে দেখে আপ্লুত হন কমিউনিটি সেন্টারে উপস্থিত নেতৃবৃন্দ ও স্বেচ্ছাসেবকগণ।
রান্নার কাজ তদারকি করতে আল আমিন কমিউনিটি সেন্টারে সাংসদের আগমনের সংবাদ শুনে সেখানে ছুটে আসেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জোনায়েদ কবির সোহাগ, উপজেলা আ.লীগের সি. সহ সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম, উপজেলার বিভিন্ন চেয়ারম্যান, উপজেলা আ.লীগ ও অঙ্গসংগঠন, স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
সাংসদের মানবিক কাজের মুহুর্তগুলি ফ্রেমবন্দী করতে অনেকেই মোবাইলে ছবি তোলা শুরু করতে দেখে সাংসদ তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ছবি তোলার প্রয়োজন নেই। সবাই যদি এসব মানবিক কর্মকান্ডে স্ব স্ব অবস্থান থেকে আন্তরিকভাবে কাজ করেন তাহলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশে করোনা নিয়ন্ত্রণে যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা সার্থক হবে।
দীর্ঘক্ষণ সাংসদ খাবার প্যাকেট তৈরী শেষে খাবার সরবরাহে নিয়োজিত গাড়ীতে নিজেই খাবার প্যাকেট ও সুপেয় পানির বোতলগুলো তুলে দেন।
এ সময় তিনি সেখানে উপস্থিত মানসিক প্রতিবন্ধী ফারুককে কাছে ডেকে তার মাথায় হাত বুলিয়ে খাবার তৈরী কার্যক্রমে তার জমানো দুই হাজার টাকা প্রদান করায় তাকে ধন্যবাদ জানান।
পাশাপাশি সবাইকে অনুরোধ করেন, কাউকে হেলা করবেননা। কারণ দেশের এই কঠিন সময়ে একজন প্রতিবন্ধী হয়েও ফারুক যে কাজটি করেছে তা সমাজের অনেক সামর্থ্যবান মানুষ করতে পারেনি। ভালো কাজ করতে একটি মহৎ হৃদয় লাগে। প্রতিবন্ধী হলেও ফারুক সেই কাজটি করে দৃষ্টান্তের জন্ম দিয়েছে।
তিনি প্রতিবন্ধী ফারুকের ভবঘুরে জীবনের অবসানকল্পে এবং তার মানবিক কাজে উদ্বুদ্ধ হয়ে তাকে জমি প্রদান ও ঘর তৈরী করে দেবেন বলে ঘোষণা দেন।
সাংসদ ফজলে করিম চৌধুরী সবার উদ্দেশ্য বলেন, করোনা ভাইরাস শুধু আমাদের দেশে নয় সারা বিশ্বে মহামারি আকার ধারণ করেছে। এই কঠিন পরিস্থিতিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় আমরা কাজ করছি। মানুষের পাশে দাঁড়াতে প্রধানমন্ত্রীর আহবানে আমরা রাউজানের প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গরীব, অসহায়, দুস্থ ও নিন্ম আয়ের মানুষের পাশে খাদ্য সহায়তা প্রদান করেছি।
সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে রাউজানে ৪০ হাজার পরিবারের মাঝে খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়েছে এবং আমাদের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
লকডাউন পরিস্থিতিতে মানুষ যাতে কোনো সমস্যায় না পড়ে সেদিকে আমরা দৃষ্টি রাখছি। শুধু নিন্মবিত্ত নয় মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর মধ্যে যারা এই পরিস্থিতিতে কষ্টে আছে আমরা তাদেরকেও সহায়তা প্রদান করছি।
করোনা পরিস্থিতিতে মানবিক কাজে দায়িত্বপালনরত যে সকল চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্য কর্মী হাসপাতালগুলোতে জীবনের ঝুঁকি উপেক্ষা করে মানবসেবায় নিয়োজিত আছেন তাদের রমজানে সেহেরি খাওয়ানোর জন্য আমার পুত্র ফারাজ করিম চৌধুরী যে উদ্যোগ নিয়েছেন পিতা হিসেবে আমি তাকে নিয়ে গর্ববোধ করছি।
তার আহবানে সাড়া দিয়ে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন পেশাজীবি নেতৃবৃন্দ, সেন্ট্রাল বয়েজ, সোশ্যাল সার্ভিসেস ইউনিয়ন অব রাউজানসহ রাউজানের অনেক সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সেচ্ছায় কাজ করছে। সকলকে মানবিক কাজে এগিয়ে আসায় ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন তিনি।
রাউজানের সাংসদ এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী সেচ্ছাসেবকদের সাথে একই কাতারে গিয়ে মানবিক কাজে অংশ নেওয়ার কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সাংসদের মানবিক কর্মকান্ডের প্রশংসা করেন বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ।
জাতীয় দৈনিক সংবাদের চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান, রাউজানের নন্দীপাড়া নিবাসী সাংবাদিক নিরুপম দাশ গুপ্ত তাঁর ফেইসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, “বাংলাদেশে এই মূহূর্তে এ ধরনের কোনো মানবিক আয়োজন আর কোনো উপজেলা দূরে থাক, জেলাতেও হচ্ছে বলে আমার মনে হয় না।’ মাদার তেরেসা বলেছিলেন, যে জীবন অপরের জন্য না, সেটি কোন জীবন না। সত্যিই তা উপলব্ধি করেছেন ফারাজ।”
২৪ ঘণ্টা/নেজাম উদ্দিন রানা/আর এস পি