Tag: রাজাকারের তালিকা

  • ২০২৪ সালের মার্চের মধ্যেই রাজাকারের তালিকা: মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী

    ২০২৪ সালের মার্চের মধ্যেই রাজাকারের তালিকা: মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী

    রাজাকারের তালিকা প্রণয়নের কাজ চলমান রয়েছে। আগামী বছরের মার্চের মধ্যেই সারাদেশের রাজাকারের পূর্ণাঙ্গ তালিকা জাতির সামনে পেশ করা হবে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।

    শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধ কমপ্লেক্স উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী এ কথা জানান।

    মোজাম্মেল হক বলেন, রাজাকারের তালিকা করার আইনগত এখতিয়ার এতদিন ছিল না।

    গত পার্লামেন্টে আবেদন জানানোর প্রেক্ষিতে আইন পাস হয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা স্বাধীনতার বিরুদ্ধে কাজ করেছে রাজাকার, আলবদর, আল-শামস বা জামায়াতে ইসলাম, যারা ঘোষণা দিয়ে সাংগঠনিকভাবে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে তাদের তালিকা প্রণয়নের কাজ চলমান রয়েছে।
    মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী বলেন, তালিকার কাজ ডিসেম্বরের মধ্যে হবে কিনা নিশ্চিত না। তবে আগামী বছরের মার্চের মধ্যেই ইনশাআল্লাহ মূল তালিকাটা জাতির সামনে পেশ করব।’

    বিএনপির চলমান পদযাত্রার প্রসঙ্গে মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আমাদের বক্তব্য আমাদের সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অবহিত করেন। এর বাইরে আমার কোনো কথা নাই। তবে পদযাত্রা করে সরকার পতন করা যায় এ রকম কোনো নজির নেই। ’

    মন্ত্রীর সঙ্গে স্থানীয় সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক, রাজশাহী-৫ আসনের সংসদ সদস্য ডা. মনসুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

  • মুক্তিযোদ্ধা পরিবারগুলোকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

    মুক্তিযোদ্ধা পরিবারগুলোকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

    মুক্তিযোদ্ধাদের নাম রাজাকারের তালিকায় থাকা অসম্ভব উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, স্থগিত হওয়া তালিকা রাজাকারের তালিকা নয়। অনভিজ্ঞতার কারণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এরকম তালগোল পাকিয়েছে উল্লেখ করে, এ তালিকার কারণে ক্ষুব্ধ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারগুলোকে বিষয়টি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

    বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সবশেষ সভায় তিনি আরও জানান, বিজয় দিবসের আগে ভালোভাবে যাচাই বাছাই না করে, তাড়াহুড়ো করে রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করার ব্যাপারে সতর্ক করেছিলেন মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রীকে।

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মুক্তিযোদ্ধামন্ত্রীকে বলেছিলাম, আপনি এখন তাড়াহুড়ো করে এটা করতে যাইয়েন না। কারণ, এই তালিকার মধ্যে কি আছে না আছে দেখে নিতে হবে। আমি বলেছিলাম, তালিকায় অনেক ঝামেলা মিলিটারি ডিক্টেটররা করে রেখে গেছে।’

    মহান বিজয় দিবসের একদিন আগে প্রথমবারের মত মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতা করা রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। প্রকাশের সময় এ তালিকা যাচাই বাছাই শেষে প্রণয়ন করা হয়েছে দাবি করলেও, বস্তুত এ তালিকা ভুলে ভরা। রাজাকারের তালিকায় নাম আসতে দেখে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখায় মুক্তিযোদ্ধারা ও তাদের পরিবার।

    দলের কাউন্সিলকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে ওঠে এ তালিকা।

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, একজন মুক্তিযোদ্ধার নাম রাজাকারের তালিকায় আসা অসম্ভব। খুবই খারাপ কাজ।

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় থেকে হঠাৎ একটা তালিকা বের করা হল। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন আমাদের আওয়ামী লীগ বা মুক্তিযুদ্ধে যারা গিয়েছিলো তাদের সকলের একটা তালিকা করে তাদের সন্ত্রাসী, দুর্বৃত্ত হিসেবে চিহ্নিত করে পাকিস্তান সরকার সেই সময় অনেকের বিরুদ্ধে মামলা দেয়। যেটা পরবর্তীতে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে ওই তালিকা ধরে ধরে আওয়ামী লীগের নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে বা শাস্তি দিয়েছে। আবার এরশাদের সময়ও সেটা ব্যবহার করা হয়েছে।

    তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় থেকে কোলাবরেটর হিসেবে যাদের বিরুদ্ধে মামলা তাদেরটা নিতে গিয়ে সেখানে সব মিলিয়ে একটা গোলমাল করে ফেলেছে। সেখানে অনেকের নাম চলে এসেছে যারা মুক্তিযোদ্ধা। এ তালিকাকে রহস্যজনক আখ্যা দিয়ে জড়িতদের শাস্তি দেওয়ার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী।

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, কীভাবে এটা ওয়েবসাইটে চলে গেলো সেটা রহস্য বটে। আসলে রাজাকারদের যে তালিকা তার কিন্তু আলাদা গেজেট করা আছে।

    তিনি বলেন, আমি একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, কোনো মুক্তিযোদ্ধাকে রাজাকার খেতাব দেয়া হবে না, হতে পারে না। এটা অসম্ভব। অন্তত আমার সময়ে না। কোনোমতেই এটা রাজাকারের তালিকা না।

    তিনি বলেন, এটা চলে আসাতে খুব স্বাভাবিকভাবে একটা মানুষের কষ্ট লাগবে। যে পরিবারের মানুষ শহীদ হলো, যারা মুক্তিযুদ্ধ করলো তাদের যদি রাজাকার বলা হয় তাহলে এর থেকে আর বেশি দুঃখের কিছু থাকে না। যারা এই দুঃখ পেয়েছেন তাদের আমি বলবো, তারা যেন শান্ত হন এবং ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। সরকারপ্রধান হিসেবে আমারও আরেকটু শক্ত হয়ে বোধহয় বলা উচিৎ ছিলো। আমিও বলেছিলাম, এটা দিয়েন না। কিন্তু উনি যে কেনো দিয়ে দিলেন জানি না। এটা দেয়ার কথা ছিলো না।

    তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়ই দেশ চলবে। যারা এ তালিকা প্রকাশের সঙ্গে জড়িত তাদের শাস্তি দেয়া হবে।

  • ৬০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে রাজাকারের তালিকা করতে

    ৬০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে রাজাকারের তালিকা করতে

    মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় যে তালিকা প্রকাশ করেছে তা রাজাকার, আলবদর, আলশামসের তালিকা নয় বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

    বুধবার সচিবালয়ে নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।

    স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এটি কোনো রাজাকারের তালিকা নয়। মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়কে রাজাকার, আলবদর, আল শামসের তালিকা দেয়া হয়নি; দালাল আইনে অভিযুক্তদের তালিকা দেয়া হয়েছে। নোট দেয়া সত্ত্বেও মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় সবার নাম প্রকাশ করেছে। সুতরাং এর পুরো দায় ওই মন্ত্রণালয়ের।’

    স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এটি হচ্ছে ১৯৭২ থেকে ১৯৭৩ সালের দালাল আইনে যাদের নামে মামলা হয়েছে তাদের নামের তালিকা। অনেকে শত্রুতা বসতও অনেকের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল। সেই নামগুলোও এই তালিকায় আছে। এর মধ্যে ৯৯৬ জনকে বিভিন্ন অভিযোগ থেকে খালাসও দেওয়া হয়। আমরা খালাসপ্রাপ্তদের নামের ওই তালিকাটিও নোট হিসেবে যুক্ত করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে পাঠিয়েছিলাম।’

    এমন একটি ঘটনায় মর্মাহত হয়েছেন বলে জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমি অবশ্যই মানসিকভাবে আহত হয়েছি। এ ধরনের ভুল কতখানি সহনীয় তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি করা হবে।’

    এই তালিকা করার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে ৬০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল, সেটা কোথায় খরচ হয়েছে- প্রশ্ন করা হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি মন্তব্য করতে চাই না। কারণ তিনি একজন সিনিয়র মন্ত্রী।’

    ১৫ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ১০ হাজার ৭৮৯ জন রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করে। তবে ওই তালিকায় গেজেটেড মুক্তিযোদ্ধাদের নামও রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধা আওয়ামী লীগ নেতাদের নামও রয়েছে। এমনকি খোদ আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপুর নামও রাজাকারের তালিকায় আসে। তালিকাটি প্রকাশ হওয়ার পরই দেশব্যাপী তুমুল সমালোচনা শুরু হয়েছে। সবশেষ বিতর্কিত এই তালিকা স্থগিত করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

  • রাজাকারের তালিকা প্রত্যাহার

    রাজাকারের তালিকা প্রত্যাহার

    প্রকাশিত রাজাকারের তালিকাটি প্রত্যাহার করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। আগামী ২৬ মার্চ সংশোধিত তালিকা প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছে তারা।

    এর আগে বিজয় দিবসের একদিন আগে গেল রোববার (১৫ ডিসেম্বর) মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ১০ হাজার ৭৮৯ ব্যক্তির নাম প্রকাশ করে সেটিকে রাজাকারের তালিকা বলে উল্লেখ করে।

    অথচ ওই তালিকায় গেজেটেড মুক্তিযোদ্ধাদের নামও রয়েছে।

    বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরই ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

  • রাজাকার তালিকা থেকে নাম প্রত্যাহারের আবেদন টিপুর

    রাজাকার তালিকা থেকে নাম প্রত্যাহারের আবেদন টিপুর

    মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত রাজাকারের তালিকা থেকে নাম প্রত্যাহার চেয়ে স্বরাষ্ট্র, আইন ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠি দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর ও একুশে পদকপ্রাপ্ত ভাষাসৈনিক গোলাম আরিফ টিপু।

    বুধবার তিনি এই তিন মন্ত্রণালয়কে ওই তালিকা থেকে নাম প্রত্যাহার ও সংশোধনের আবেদন জানান।

    চিঠিতে ভাষাসৈনিক গোলাম আরিফ টিপু অতীতে দেশের জন্য ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা যুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং অর্জিত সম্মাননার কথা উল্লেখ করেন। পাশাপাশি এতকিছুর পরও এই তালিকায় তার নাম আসায় ব্যথিত ও অপমানিত বোধ করছেন বলেও জানান তিনি। চিঠিতে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এই ভুলের জন্য তাদের অযত্ন ও অবহেলার কথাও উল্লেখ করেন।

    রাজাকারদের তালিকার বিষয়ে আগেই নোট দেওয়া হলেও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় তা সংশোধন করেনি বলে দাবি করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেন, ‘রাজাকারদের তালিকার বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে নোট দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা তা সংশোধন করেনি। তাদের আরও যাচাই-বাছাই করা উচিত ছিল।’

    এদিকে সম্প্রতি প্রকাশ ওই তালিকায় কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার নাম আসার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। মঙ্গলবার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এই ঘটনার দায় নিজের কাঁধে নিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেন তিনি। সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে রাজাকারদের যেই তালিকা পেয়েছি, সেটাই প্রকাশ করেছি। এটা আমরা তৈরি করি নি। জাতি এই তালিকা চেয়েছে, আমরা শুধু প্রকাশ করেছি মাত্র।

    তিনি আরও বলেন, ‘এই ঘটনার পুরো দায় আমি নিজের কাঁধে নিচ্ছি। এবং এর জন্য আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি। বেশ কয়েকটি অভিযোগ ইতোমধ্যে আমাদের হাতে এসেছে। অভিযোগের পরিমাণ বেশি হলে তালিকা প্রত্যাহার করা হবে। এরপর তদন্ত করে আবার যখন নতুন করে তালিকা ছাপাবো, অবশ্যই দুঃখ প্রকাশ করে ছাপাবো।’

    এর আগে, গত রবিবার মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী যেসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে ১৯৭২ সালের দালাল আইনে মামলা করা হয়েছিল তাদেরকে রাজাকার আল-বদর, আল-শামস বাহিনীর সদস্য হিসাবে চিহ্নিত করে ১০ হাজার ৭৮৯ জনের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক তার মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তালিকা প্রকাশ করেন। তবে তালিকা প্রকাশের পরই তালিকায় কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার নাম থাকার অভিযোগ ওঠে।

  • রাজাকারের তালিকা ষড়যন্ত্রের অংশ ও সকারের মনগড়া:নোমান

    রাজাকারের তালিকা ষড়যন্ত্রের অংশ ও সকারের মনগড়া:নোমান

    বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়াম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেছেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে আমরা অংশ গ্রহণ করেছিলাম। বিএনপি মুক্তিযোদ্ধার দল। সরকার যদি মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে রাজাকারের তালিকা করতো তা হলে কোনো ধরনের অভিযোগ থাকতো না। এই রাজাকারের তালিকা সরকারের ষড়যন্ত্রের অংশ। রাজাকারের তালিকা সকারের মনগড়া।

    সমাবেশে তিনি বলেন, প্রশাসন নিরপেক্ষ না হলেও মানবিক হবে, এটা আমরা আশা করেছিলাম। কিন্তু এটা হয়নি। নির্বাচন যেমন ৩০ তারিখের টা ২৯ তারিখ হয়ে গেছে। আজকে বিজয় দিবসও ১৬ তারিখের পরিবর্তে ১৭ তারিখে পালন করতে হচ্ছে আমাদের। এটা আমাদের নয়, জাতীয় লজ্জার বিষয়। বিএনপিকে যথা সময়ে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান পালন করতে দিচ্ছে না এ সরকার।

    আজকে যদি বিজয় বিদবসের র‌্যালি বিজয় দিবসের দিন করার অনুমতি দিতেন, তাহলে সকলের সাথে বিজয় দিবসের আনন্দ ভাগাভাগি করা যেতো। বিজয় দিবস কোন একক দলের নয়।

    তিনি আজ ১৭ ডিসেম্বর মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির কাজীর দেউরী মোড়ে বিজয় দিবসের র‌্যালিপূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য এ কথা বলেন।

    এতে তিনি আরো বলেন, বিএনপিকে মিছিল করার অনুমতি প্রদান করে না প্রশাসন। মুক্তিযুদ্ধের আগে ও পরে এমন কি এরশাদ সরকারের আমলেও প্রশাসন বাস্তব ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন। এখন এই ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে না তারা। আমাদের মিছিলে পুলিশের হুমকি ধমকি দেখি। আমাদের সময় দেয়া হয় মাত্র ৫ মিনিট। ৫ মিনিটে কি একটা বিজয় মিছিল করা যায়?

    তিনি বলেন, প্রথম বাংলাদেশ গান গাইতে শহীদ জিয়া বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। শেষ বাংলাদেশ বলতে বলতে আমাদের সামনে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে শাহাদত বরণ করেছেন। তার আদর্শেআমরা উজ্জ্বীবিত। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চায়। তিনি যতদিন মুক্ত না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা চলতে থাকবে। দেশনেত্রীকে জেলে রেখে দেশের সংকট দূর হবে না। তাই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য লড়াই করছি। আমাদের নেতাকর্মীরা সুশৃংখলভাবে এখন সে লড়াইয়ে অবতীর্ণ। ইনশাআল্লাহ বিজয় আমাদের হবেই।

    চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্করের পরিচালনায় সমাবেশে ডা. শাহাদাত বলেন, মেজর জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণায় দিশেহারা জাতি মুক্তিযুদ্ধে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে বিজয় অর্জন করেছিলো। আজকের এই বিজয় মিছিল প্রমাণ করেছে চট্টগ্রামের মাটি শহীদ জিয়া ও বেগম খালেদা জিয়ার ঘাঁটি। বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে দেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে না। বিজয়’র এই দিনে আজকে আমাদের শপথ নিতে হবে দেশে গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, আইনের শাসন, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার।

    কেন্দ্রীয় বিএনপির শ্রমবিষয়ক সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দিন বলেন, বিনা ভোটের নির্বাচনে নিজেদেরকে বিজয়ী ঘোষণা করে পেশীশক্তির জোরে দেশ চালাতে গিয়ে সরকার সম্পূর্ণ হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েছে। তারা নিশ্চিত হয়ে গেছে যে, শাসনক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে জনগণের সমর্থন বা ভোটের প্রয়োজন নেই। আর এ কারণেই দেশ পরিচালনায় অবৈধ সরকারের নির্মম আচরণ দেশকে গভীর সংকটে ফেলেছে।

    চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর বলেন, বিএনপি স্বাধীনতার ঘোষকের হাতে গড়া দল। এই দলকে দাবিয়ে রাখা যাবে না। মিছিল মিটিং বন্ধ করে বিএনপিকে ধ্বংস করা যাবে না। আওয়ামীলীগ যদি লালদীঘির মাঠে সমাবেশ করতে পারে তাহলে বিএনপি কেন পারবে না? আগামীতে আমরা লালদীঘির মাঠে সমাবেশ করতে চায়। আশাকরি সরকার জনগণের মনের ভাষা বুঝে বিএনপিকে লালদীঘির মাঠে সমাবেশ করতে সহযোগিতা করবে।

    র‌্যালী ও সমাবেশে চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের সভাপতি মোশাররফ হোসেন দিপ্তী ও সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ শাহেদ, মহিলা দলে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফাতেমা বাদশা, সি: যুগ্ম সম্পাদক ছকিনা বেগম, স্বেচ্ছাসেবকদলের সি: সহসভাপতি তফাজ্জল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বুলু, মৎস্যজীবি দলের আহবায়ক হাজী নুরুল হক, সদস্যসচিব এড. আবদুল আজিজ, শমিক দলের সভাপতি তাহের আহমেদ, নগরীর ১৫ টি থানা ও ৪৩ টি ওয়ার্ড ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা মিছিল সহকারে অংশ গ্রহণ করেন।

    র‌্যালী ও সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি আলহাজ্ব এম এ আজিজ, মোহাম্মদ মিয়া ভোলা, সামশুল আলম, এড. আবদুস সাত্তার, হাজী মোহাম্মদ আলী, এস কে খোদা তোতন, নাজিমুর রহমান, এস এম আবু ফয়েজ, অধ্যাপক নুরুল আলম রাজু, যুগ্ম সম্পাদক কাজী বেলাল উদ্দিন, শাহ আলম, ইসকান্দর মির্জা, আর ইউ চৌধুরী শাহীন, ইয়াসিন চৌধুরী লিটন, আবদুল মান্নান, জাহাঙ্গির আলম দুলাল, আনোয়ার হোসেন লিপু, শাহেদ বক্স, সাংগঠনিক সম্পাদক মনজুর আলম চৌধুরী মনজু, কামরুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক শিহাব উদ্দিন মুবিন প্রমুখ।

  • রাজাকারদের তালিকা ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’: বিএনপি

    রাজাকারদের তালিকা ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’: বিএনপি

    রাজাকারদের তালিকা প্রকাশ করা প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘দেশ স্বাধীনের ৪৮ বছর পর রাজাকারদের তালিকার প্রয়োজনটা কী? এটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বলা হচ্ছে তালিকা নাকি পাকিস্তানের। পাকিস্তানের তালিকায় তো এদেশের তালিকা হবে না। এই তালিাকায় আসল রাজাকারদের নাম বাদ পড়েছে।’

    আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধকে একটি প্রোডাক্ট হিসেবে ব্যবহার করে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরে প্রকৃত রাজাকারদের বাদ দিয়ে তারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রাজাকারদের তালিকা তৈরি করেছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।’

    মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিজয় দিবসের র‌্যালি উদ্বোধনের পূর্বে এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

    মির্জা ফখরুল বলেন, ‘স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরে আজকে আমরা দেখতে পাচ্ছি— এই সরকার অন্যায় ভাবে দেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে, জোর করে জনগণের সকল অধিকার কেড়ে নিয়ে ক্ষমতায় বসে আছে। আজকে আমরা দেখতে পাই— আমাদের যেই ভাই গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে সেই ভাই’ই গুম হয়ে যাচ্ছে। চার-পাঁচ বছর পার হয়ে যায় কিন্তু আমাদের সেই ভাইয়দের সন্তানেরা তাদের পিতার খোঁজ পায় না।’

    তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বলে— তারা মুক্তিযুদ্ধের ধারক বাহক কিন্তু এরাই দেশের সকল গণতন্ত্র হত্যা করেছে। এরা ১৯৭৫ সালে বাকশাল কায়েম করে দেশের গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যা করেছিল। ৭৫ আওয়ামী লীগের সময় দুর্ভিক্ষ হয়েছিল এবং মানুষ না খেয়ে মারা গেছিলো, সেই আওয়ামী লীগ এখন আবার জোর করে ক্ষমতায় চেপে বসেছে। আমাদের লক্ষ লক্ষ দেশ প্রেমিক মানুষকে মিথ্যা মামলা দিয়ে এই দেশকে কারাগারে পরিণত করেছেন। তারা আমাদের সকল অধিকারগুলোকে কেড়ে নিয়ে জোর করে ক্ষমতায় আছে।’

    বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজকে এই র‌্যালির নেতৃত্ব দেয়ার কথা ছিল দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার, যিনি শহীদ প্রেসিডেন্ট ও স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের সহধর্মিণী। যিনি ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে বন্দি ছিলেন। কিন্তু আজকের দুঃখভারাক্রান্ত মন নিয়ে দেশনেত্রীকে ছাড়াই আমাদের এই র‌্যালিতে অংশ নিতে হচ্ছে।’

    এ সময় বিএনপি মহাসচিব দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার লক্ষ্যে প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমরা অবশ্যই আমাদের গণতন্ত্রের মা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে মুক্ত করে আনবো ইনশাল্লাহ। আপনারা সকল বিভেদ ভুলে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার জন্য একটি ইস্পাতকঠিন ঐক্য গড়ে তুলুন এবং এই সরকারের পতন ঘটিয়ে দেশনেত্রীকে মুক্ত করুন।’

    এ সময় খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে আমাদের স্বাধীনতা অর্জন করেছি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের যে মূল চেতনা ছিল, আজকে দুঃখের সহিত বলতে হয় সেই মূল চেতনা ‘গণতন্ত্র’ বাংলাদেশে ভুলণ্ঠিত।’

    তিনি বলেন, ‘একটি মিথ্যা মামলায় সরকারের নির্দেশে মাদার অফ ডেমোক্রেসি গণতন্ত্রের মা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে রাখা হয়েছে। তিনি জামিনপাপ্য হলেও তাকে জামিন দেয়া হচ্ছে না।’

    তিনি আরও বলেন, ‘শুধুমাত্র একব্যক্তি ও একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করার জন্য, এদেশের সকল কিছু ধ্বংস করে বর্তমান সরকার লুটেরা অর্থনীতি তৈরি করেছে। তাই আজ কেউ শান্তিতে নেই। এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে সরাতে না পারলে, আমরা দেশনেত্রীকে মুক্ত করতে পারবো না, দেশের গণতন্ত্র মুক্তি হবে না। তাই আমাদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে সরিয়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আনতে হবে।’

    বিএনপির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্ত্রী গণতন্ত্রের মা বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে। আসুন আমরা আজ মরি বাঁচি (ডু অর ডাই) শপথ নেই, রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে বেগম জিয়াকে মুক্ত করি।’

    র‌্যালিতে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বেগম সেলিমা রহমান, ভাইস-চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, আব্দুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, আব্দুল হাই, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, শ্যামা ওবায়েদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, শহিদুল ইসলাম বাবুল প্রমুখ।

    এছাড়া অঙ্গ সংগঠনের মধ্যে যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, সাধারণ সম্পাদক সুলতান টুকু,টুকু, সিনিয়র সহ-সভাপতি মোরতাজুল করিম বাদরু, ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল, কৃষক দলের সদস্য সচিব কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, মৎসজীবী দলের আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহতাব, সদস্য সচিব আব্দুর রহিম,তাঁতীদলের আহবায়ক আবুল কালাম আজাদ, ওলামা দলের আহ্বায়ক হাফেজ মাওলানা শাহ মোহাম্মদ নেসারুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

  • ভুলবশত রাজাকারের তালিকায় নাম এসে থাকলে আবেদন করলে বাদ দেয়া হবে

    ভুলবশত রাজাকারের তালিকায় নাম এসে থাকলে আবেদন করলে বাদ দেয়া হবে

    ভুলবশত রাজাকারের তালিকায় কারো নাম এসে থাকলে আবেদনের প্রেক্ষিতে যাচাই করে তালিকা থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নাম বাদ দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক।

    রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস, শান্তিকমিটি ও স্বাধীনতাবিরোধী তালিকায় তালিকায় অনিচ্ছকৃত ভুলের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে মন্ত্রী বলেন, প্রকাশিত তালিকায় ভুলভাবে যদি কারও নাম এসে থাকে, আবেদনের প্রেক্ষিতে যাচাই অন্তে তার বা তাদের নাম এ তালিকা থেকে বাদ দেয়া হবে। এই প্রকাশিত তালিকায় অনিচ্ছকৃত ভুলের জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত।

    তিনি বলেন, গত ১৫ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস, শান্তিকমিটি ও স্বাধীনতাবিরোধী ১০ হাজার ৭৮৯ জনের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।

    প্রকৃতপক্ষে, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে নতুন কোন তালিকা প্রণয়ন করা হয়নি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তালিকা যেভাবে পাওয়া গেছে, সেভাবেই প্রকাশ করা হয়েছে।

    তিনি বলেন, অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, এ তালিকায় বেশ কিছু নাম এসেছে, যারা রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস, শান্তি কমিটি বা স্বাধীনতাবিরোধী নন বরং মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের বা মুক্তিযোদ্ধা। এ ধরনের কোন ব্যক্তির নাম তালিকায় কিভাবে এসেছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে ।

  • রাজাকারের তালিকায় একুশে পদকপ্রাপ্ত ভাষাসৈনিক গোলাম আরিফ টিপু

    রাজাকারের তালিকায় একুশে পদকপ্রাপ্ত ভাষাসৈনিক গোলাম আরিফ টিপু

    একুশে পদকপ্রাপ্ত ভাষা সৈনিক, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, এ দেশের সকল প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অগ্রমুখ, রাজশাহীতে দেশের প্রথম শহীদ মিনারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, ভুবন মোহন পার্কের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের উদ্বোধক, রাজশাহীর সর্বজন শ্রদ্ধেয় নেতা, বর্ষিয়ান আইনজীবী, মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট গোলাম আরিফ টিপুর নাম রাজাকারের তালিকায় দেখে সবমহল বিস্মিত, তিনি নিজেও হতবাক বিস্মিত।

    রাজাকারের তালিকায় নাম আসার বিষয়ে গোলাম আরিফ টিপু বলেন, ‘আমি এটা শুনে বিস্মিত হয়েছি। এটা কি করে সম্ভব? আমি জীবনে কখনো ওদের লাইনে যাইনি। রাজাকারের তালিকায় আমার নাম আসবে এটা আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। আমি এটার শক্ত প্রতিবাদ করবো।’

    এক ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, অন্যভাবে সমাধান না হলে, আদালতে গিয়ে আইনের আশ্রয় নেব। সারা জীবন বাঙালি, দেশের জন্য লড়াই করেছি। এভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার অধিকার রাষ্ট্রের নেই।

    গোলাম আরিফ টিপু বলেন, ‘সারা জীবন দেশের জন্য, মানুষের জন্য কাটিয়ে দিলাম। আর আজ এই অভিযোগ পেলাম। আমি ব্যথিত, মর্মাহত। আমি বিষয়টিকে সিরিয়াসলি নিচ্ছি এবং কোনোভাবেই প্রশ্রয় দিতে চাই না। আমি কোনো দুর্বলতা দেখাতে চাই না।’

    তিনি বলেন, ‘মন্ত্রণালয় যে ধরনের কাজ করার কথা, তা যথাযথভাবে করতে পারছে না। আমি অন্তত তাই মনে করছি। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী যদি গোলাম আরিফ টিপু, সালাম ভাই, মহসিন ভাইকে রাজাকার বানায়, তাহলে কার কাছে কী বলব! অথচ আমরাই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মূল শক্তি। ছাত্র ইউনিয়ন করতাম। ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছি। আর আজকে আমাকে রাজাকার বানালো হলো?’

    কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে এই আইনজীবী বলেন,‘চিন্তা করছি। অন্যভাবে সমাধান হলে ভালো। নইলে আদালতে গিয়ে আইনের আশ্রয় নেব। পাক বাহিনীর তালিকা হতে পারে বলে মন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে দায় এড়াতে পারবেন না। এই প্রশ্নে আমরা রাষ্ট্রের অবস্থান দেখব।’

    মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় থেকে রোববার (১৫ ডিসেম্বর) ১০ হাজার ৭৮৯ জন রাজাকারের যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে তাতে রাজশাহী বিভাগের ৮৯ নম্বর তালিকায় (ক্রমিক নম্বর ৬০৬) নাম রয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কৌঁসুলি গোলাম আরিফ টিপুসহ পাঁচজনের নাম।

    স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এই পাঁচজন এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা ছিলেন স্বাধীনতার পক্ষের মানুষ। আবার তৎকালীন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক অ্যাডভোকেট মহসিন আলীর নামও রয়েছে তালিকায়। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে পরিচিত অ্যাডভোকেট আব্দুস সালামের নামও রয়েছে তালিকায়। তার পরিবারের পাঁচজন সদস্য মুক্তিযুদ্ধের সময় নিহত হন। ওই সময় আব্দুস সালাম পাকিস্তানি হানাদারদের ভয়ে ভারত পালিয়েছিলেন।

    রাজশাহী বিভাগে স্বাধীনতাবিরোধীদের এক থেকে ১৫৪টি তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এসব তালিকায় কয়েক শ ব্যক্তির নাম রয়েছে। যাদের কয়েকজনের নাম দ্বিতীয়বারও রয়েছে।
    ৮৯ নম্বর তালিকায় থাকা পাঁচজনের মধ্যে অপর দুজন হলেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক আব্দুর রউফ ও পুলিশ কর্মকর্তা এস এস আবু তালেব। যদিও এই ৮৯ নম্বর তালিকার মন্তব্যের ঘরে লেখা আছে তাদের অব্যাহতি দিতে জেলা কমিটি আবেদন করেছিল। এর বাইরে কোনো তথ্য নেই। সেই হিসেবে ধরে নেওয়া যায়, এই পাঁচ ব্যক্তি রাজাকার বা স্বাধীনতাবিরোধী ছিলেন না বলেই তাদের অব্যাহতি দিতে আবেদন করা হয়েছিল।

    তালিকায় এসব ব্যক্তির নাম যেভাবেই আসুক না কেন সেটি লজ্জাজনক বলে দাবি করেছেন অ্যাডভোকেট আব্দুস সালামের পরিবারের সদস্য আরিফুল হক কুমার।

    তিনি বলেন, ‘এই তালিকায় কেন আসবে এসব ব্যক্তির নাম। যারা মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন, আবার যিনি যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর—তার নাম কেন আসবে। হয়তো রাজাকাররা এই তালিকা তৈরিতে কাজ করেছেন।’

    রাজশাহীর মুক্তিযুদ্ধের গবেষক ওয়ালিউর রহমান বাবু বলেন, ‘যারা মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন তাদের নামও যদি তালিকায় থাকে, সেটিও হবে চরম লজ্জাজনক। কেন তাদের নাম এ তালিকায় উঠে এলো, কোন প্রসঙ্গে এলে তা বিস্তারিত উল্লেখ নাই।’

    তবে তালিকায় অনেক প্রকৃত স্বাধীনতাবিরোধীর নাম স্থান পেয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের তৎকালীন ডিন আহম্মেদ মোহাম্মদ প্যাটেল (তিনি কানাডায় রয়েছেন), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাজ্জাদ হোসেন, ড. মোহাম্মদ ওয়াসিম, জিল্লুর রহমান, রাজশাহী নগরীর খোরশেদ আলম, আব্দুস সোবহান, খন্দকার আব্দুল বাকি প্রমুখ।

    নাম আছে কিন্তু ঠিকানা উল্লেখ করা হয়নি—এমনও রয়েছে তালিকায়। এঁদের মধ্যে ৩৮ নম্বর তালিকায় নজির আহমেদ, ৪৮ নম্বরে দলিলুর রহমান প্রমুখের শুধু নামই রয়েছে।

    ৪১ নম্বর তালিকায় উল্লেখ করা হয়েছে রাজশাহী জেলার সিংড়া থানার অন্তর্গত ভুল বাড়িয়া গ্রামের আব্দুল আজিজ কর্তৃক রাজাকার ও দালালদের বিরুদ্ধে অভিযোগ। কিন্তু কাদের নামে অভিযোগ করা হয়েছিল তাঁদের নাম উল্লেখ নেই তালিকায়।একই রকম অবস্থা আরো কয়েকটি ক্রমিক নম্বরে।

    ৪৪ নম্বর তালিকায় রাজশাহীর রাজাকার খোরশেদ আলম কর্তৃক দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগের কথা বলা হলেও বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়নি।

    মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষক আহম্মেদ শফিউদ্দিন বলেন, ‘স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের দুষ্কৃতকারী মনে করতেন রাজাকাররা। তাহলে রাজাকার খোরশেদের করা অভিযোগ কি ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে? যদি তা-ই হয়ে থাকে, তাহলে এটি হাস্যকর। যদিও আমি তালিকাটা দেখিনি।’

    রাজশাহীর মুক্তিযুদ্ধ গবেষকদের দাবি, এ তালিকা সম্পূর্ণ নয়। এটি ওই সময়ের তালিকার একটি খসড়া হতে পারে। আবার কপি পেস্টও হতে পারে। কোনো অনুসন্ধান ছাড়ায় যাচ্ছে, তাই সেভাবেই নামগুলো তুলে ধরা হয়েছে। যেহেতু সরকার এটিকে রাজাকারের তালিকা বলছে, কাজেই এখানে কোনোভাবেই মুক্তিযোদ্ধা বা মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন এ রকম ব্যক্তির নাম উঠে আসা বাঞ্ছনীয় নয়। এটি মেনে নেওয়া যায় না।