খুনিরা সরকারের আশ্রয়ে রেহাই পেয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
শনিবার (২৬ অক্টোবর) নয়াপল্টনে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের উদ্যোগে বুয়েট ছাত্র আবরার হত্যার প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এ অভিযোগ করেন।
সমাবেশের পর আবরার হত্যার প্রতিবাদে ও বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল বের করে জাতীয়তাবাদী মহিলা দল। নয়াপল্টনস্থ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে মিছিলটি নাইটিঙ্গেল মোড় হয়ে আবারও বিএনপি কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়।
রিজভী বলেন, ‘আমরা দেখেছি, সরকারের সোনার ছেলেরা অপরাধ করলে সেই অপরাধকে প্রটেকশন দেন এ সরকার বা সরকার প্রধান। নাটোরের নুর হোসেন বাবুর হত্যাকারীদের বিচার হয়নি, নাটারের রানার হত্যাকারীদের ফাঁসি হয়েছিলো সেটা রাষ্ট্রীয় ক্ষমা পেয়েছেন। খবরের কাগজে বেরিয়েছে এই আওয়ামী লীগের আমলে দুইজন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান এবং আবদুল হামিদ সাহেবের আমলে ৩৪ থেকে ৩৫ জন হত্যাকারীরা যাদের ফাঁসি হয়েছে তারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমা পেয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘অপরাধীরা প্রটেকশন পায় সরকারের কাছ থেকে। সেই সরকারের হঠাৎ করে সোনারকাঠি-রুপাকাঠি পরিবর্তন করে আজকে রাক্ষস থেকে মানবতার মূর্ত প্রতীক হলেন কি করে? ঘটনা কি? বিশ্বজিৎকে যারা হত্যা করেছে তাদেরও কিন্তু কিছু হয়নি। একের পর এক খুন, একের পর এক হত্যা, এই হত্যার সঙ্গে এই সরকার দলীয় যারা জড়িত তারা কোনো না কোনোভাবে রেহাই পেয়ে যাচ্ছে।’
রিজভী বলেন, ‘আজকে হঠাৎ করে টাকার খনি, ডলারের খনি, ক্যাসিনোর খনি। গত ১০ বছর কিছুই হলো না তাহলে হচ্ছে কেনো? এ নিয়ে জনমনে বড় বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কেউ বলেন গৃহ বিবাদ, কেউ বলেন অন্য কোনো বিষয় আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এ ব্যাপারে কিছু বলতে চাই না। আমরা বলতে চাই, দুর্নীতি করা নিশ্চয় অপরাধ। সবচাইতে বড় দুর্নীতি হচ্ছে জনগণকে ধোঁকা দিয়ে জনগণকে প্রতারিত করে দিনের ভোটকে রাতে করা। এটা হলো মহাদুর্নীতি। এই দুর্নীতির জন্য সবার আগে এই সরকারের বিচার হওয়া উচিত ছিলো।’
তিনি বলেন, ‘এই ভোটারবিহীন সরকার জনগণের সরকার নয়, এটি একটি মাফিয়া সিন্ডিকেট। তা না হলে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জামিন হবে না কেনো? এরকম মামলায় অসংখ্য জামিন হয়েছে। কারণ প্রধানমন্ত্রীই বলেছেন, তারেক যদি বেশি বাড়াবাড়ি করে তার মা মুক্ত হবে না। ওই জামিনের চাবিটা শেখ হাসিনার হাতে আছে, ওই চাবিটা শেখ হাসিনা যতক্ষন পর্যন্ত না তালা খুলবেন ততক্ষন পর্যন্ত দেশনেত্রী মুক্ত হবেন না।’
রিজভী বলেন, ‘দেশনেত্রীর কাছে তার আত্বীয়-স্বজনরা যাচ্ছেন, খবর নিয়ে আসছেন। তিনি ডান হাত বাম হাত নাড়াতে পারছেন না, প্রতিদিন সেটা ফিক্সড হয়ে যাচ্ছে। যে ভদ্র মহিলা, যে জাতীয় নেত্রী তিনি আজকে ‘হুইল চেয়ারবাউন্ড’ হয়ে গেছেন। তাকে দুইজন লোক ধরে তুলতে হয়। কিন্তু আমরা দেখলাম তিনি হেঁটে কারাগারের মধ্যে গেছেন। কেনো তার এই অবস্থা? তার এই চরম শারীরিক অবস্থার জন্য দায়ী আজকের প্রধানমন্ত্রী, তার ক্ষোভ, তার প্রতিহিংসা, তার জিজ্ঞাসা, তার রাষ্ট্রক্ষমতায় ভোগ দখলের জন্য আজকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ধুঁকে ধুঁকে জেলখানায় আছেন।’
তিনি বলেন, ‘দেশনেত্রী হাসপাতালে আছেন তার চিকিৎসা নাই। তার আত্বীয়-স্বজনরা বলছেন, দেশনেত্রী মুক্ত হলে তিনি সিদ্ধান্ত নেবে। তারা দেশের বাইরে নিয়ে যাবে, দেশের মধ্যে বা বাইরে যেখানে উন্নতমানে চিকিৎসা হয় তারা করাবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারের এই আকুতি আজকে সরকারের কানে ঢুকে না। আজকে কোথায় যাবো? মানুষের শেষ আশ্রয় আদালত সেখানে কোনো বিচার নেই, কোনো বিচার পাওয়া যায় না। আমরা মনে করি, অবিলম্বে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে, তার মুক্তি নিশ্চিত করতে হবে, গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হবে।’
মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস বলেন, বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার। যে প্রদীপ জ্বলে উঠার আগেই এই স্বৈরাচারী সরকার তাকে নিভিয়ে দিলো তার সোনার ছাত্রলীগ বাহিনী দিয়ে। এই আবরারকে যেভাবে তিল তিল করে হত্যা করা হয়েছে শারীরিক ও মানসিক অবর্ণনীয় বর্বর হামলা করে এটা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। সে আমার মতোই কোনো মায়ের সন্তান।
তিনি বলেন, যারা হত্যা করেছে এই হত্যাকারী শুধু ধরলেই হবে না, তাদের প্রত্যেককে দৃশ্যমান ফাঁসি দিতে হবে। হত্যাকারীর পরিবারের প্রত্যেকটা সদস্যদের আমি বিচার চাই। কারণ যারা এই সন্তানদের জন্ম দিয়েছে, লালন-পালন করেছে অবশ্যই তারা দায়-দায়িত্ব রাখে। আমি সবার বিচার চাই।
খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, যিনি এই দেশের গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে। গণতন্ত্রের অপর নাম দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, বাংলাদেশের অপর নাম দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। আজকে তিনি কারাগারে মানে বাংলাদেশ কারাগারে, গণতন্ত্র কারাগারে। তাকে অবশ্যই আমাদের মুক্ত করে আনতে হবে।
সংগঠনের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্ব ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ সভা পরিচালনা করেন। সমাবেশে মহিলা দলের হেলেন জেরিন খান ও পেয়ারা মোস্তফা বক্তব্য দেন।