Tag: রিসেপ তায়িপ এরদোগান

  • প্রেসিডেন্টের শপথ নিলেন এরদোয়ান

    তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ভোটে টানা তৃতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হওয়ার এক সপ্তাহ পর তুরস্কের প্রেসিডেন্টের শপথ নিয়েছেন রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান। শনিবার শপথগ্রহণের মাধ্যমে নিজের ক্ষমতাকে তৃতীয় দশকে নিয়ে গেছেন তুরস্কের এই প্রেসিডেন্ট।

    আঙ্কারায় পার্লামেন্ট ভবনে শপথ নেওয়ার সময় এরদোয়ান বলেছেন, প্রেসিডেন্ট হিসাবে আমি রাষ্ট্রের অস্তিত্ব ও স্বাধীনতা রক্ষার জন্য মহান তুর্কি জাতি ও তুরস্কের ইতিহাস-অখণ্ডতার প্রতি আমার শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।

    গত ১৪ মে তুরস্কে নির্বাচনে ৪৯ দশমিক পাঁচ শতাংশ ভোট পান এরদোয়ান। আর তার প্রতিদ্বন্দ্বী কেমাল কিলিচদারোগলু পেয়েছিলেন ৪৪ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট। কোনও প্রার্থী ৫১ শতাংশের বেশি ভোট না পাওয়ায় দেশটির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রান-অফ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় গত ২৮ ফেব্রুয়ারি।

    রাফ-অফ নির্বাচনে ৫২ দশমিক ২ শতাংশ ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তুরস্কে দীর্ঘসময় ধরে ক্ষমতায় থাকা এরদোয়ান। ৯ বছর প্রেসিডেন্ট আর ১১ বছর প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করা এরদোয়ানের নেতৃত্বে ক্রমাগত কর্তৃত্ববাদী শাসনের পথে হাঁটা তুরস্কে স্মরণকালের ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট চলছে। এরদোয়ানের পেশীবহুল পররাষ্ট্র নীতি আর অপ্রচলিত উপায়ে দেশের অর্থনীতি পরিচালনার ফলে রেকর্ড মূল্যস্ফীতির মুখোমুখি হয়েছে দেশটি।

    এমন পরিস্থিতিতে অনুষ্ঠিত ভোটে এরদোয়ানের জন্য আরও বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছিল তিন মাস আগে দেশটিতে আঘাত হানা স্মরণকালের ভয়াবহ এক ভূমিকম্প। ওই ভূমিকম্পে অর্ধ-লাখের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। ভূমিকম্পের পর উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতায় প্রশাসনের ব্যর্থতা নিয়ে দেশ ও বিদেশি তীব্র সমালোচনার শিকার হতে হয় এরদোয়ান নেতৃত্বাধীন সরকারকে।

    পার্লামেন্টে শপথ গ্রহণের পর প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে একটি অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, ন্যাটো মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ, ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো, হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর আরবান ও আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ানসহ ৭৮টি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন বলে তুরস্কের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা আনাদোলু জানিয়েছে।

    শনিবারই তুরস্কের নতুন মন্ত্রিসভার নাম ঘোষণা করার কথা রয়েছে এরদোয়ানের। তুরস্কের অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড় করানোর প্রচেষ্টায় তার অপ্রচলিত নীতিতে পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

  • বিশ্বনেতাদের অভিনন্দনে ভাসছেন এরদোয়ান

    বিশ্বনেতাদের অভিনন্দনে ভাসছেন এরদোয়ান

    প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কেমাল কিলিচদারগলুকে হারিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। তার বিজয় উদযাপনে রাজধানী আঙ্কারাসহ দেশটির বিভিন্ন শহরের রাস্তায় নেমে এসেছে হাজার হাজার মানুষ। এ জয়ের খবরে এরদোয়ানকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন বিশ্বনেতারাও।

    বাংলাদেশ সময় রোববার (২৮ মে) রাত ১২টার আগেই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে এরদোয়ানের বিজয়ের খবর বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ে।

    এরপর থেকেই শুভেচ্ছা আর অভিনন্দনে ভাসছেন এরদোয়ান। মুসলিম বিশ্বনেতাদের পাশাপাশি অমুসলিম নেতারাও তাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য পাঠিয়েছেন।

    কাতারের আমির তামিম বিন হামাদ আল থানি এরদোয়ানকে শুভেচ্ছা জানিয়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদারের ইচ্ছে পোষণ করেছেন।

    লিবিয়ার প্রধানমন্ত্রী আব্দুল হামিদ এরদোয়ানের জয়কে তুরস্কের বিজয় বলে আখ্যা দিয়েছেন। এরদোয়ানের বিজয়কে অভূতপূর্ব উল্লেখ করে তাকে স্বাগত জানিয়েছেন হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্তর ওরবান।

    ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি এরদোয়ানকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, তুরস্কের মানুষের আস্থা অর্জন করেছেন তিনি। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফও পুনর্নির্বাচিত হওয়ায় এরদোয়ানকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

    সৌদির রাষ্ট্রীয় বার্তাসংস্থা জানিয়েছে, দেশটির বাদশাহ সালমান এরদোয়ানকে তার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ের জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন।

    নির্বাচনে জয়ের পর এরদোয়ানকে অভিনন্দন জানিয়েছেন, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।

    তিনি তুরস্ক ও জাতিসংঘের মধ্যে সহযোগিতা আরও জোরদার করার জন্য কাজ করবেন বলেও জানিয়েছেন মুখপাত্র স্টেফান দুজারিক।

    যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এরদোয়ানকে তার বিজয়ের জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন।

    এক টুইট বার্তায় বাইডেন বলেন, দ্বিপাক্ষিক ইস্যু ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জগুলোতে ন্যাটোর মিত্র হিসেবে একসঙ্গে কাজ চালিয়ে যাবো।

    তাছাড়া অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন তুরস্ককে একটি মূল্যবান ন্যাটো মিত্র ও অংশীদার বলে অভিহিত করেছেন।

    প্রিয় বন্ধু রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, এরদোয়ানের বিজয় প্রমাণ করে তুর্কি জনগণ তার নিঃস্বার্থ কাজ ও স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতির প্রশংসা করেছে।

    জয়ের জন্য এরদোয়ানকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও। দুই দেশের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারত্ব জোরদার হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

    অভিনন্দন জানিয়ে জার্মান চ্যান্সেলর উল্লেখ করেছেন, উভয় দেশের জনগণ ও অর্থনীতি কতটা গভীরভাবে জড়িত। তাছাড়া একটি নতুন উদ্দীপনার সঙ্গে সাধারণ এজেন্ডাকে এগিয়ে নেওয়ার কথাও বলেছেন তিনি।

    ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছেন, ফ্রান্স ও তুরস্ক এগিয়ে যেতে থাকবে।

    অভিনন্দন জানিয়েছেন, ইইউ কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেল ও ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লেইন। দুইজনেই তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের ইঙ্গিত দিয়েছেন।

    ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেছেন, ন্যাটো মিত্র হিসেবে নিরাপত্তা হুমকি মোকাবিলাসহ যুক্তরাজ্য ও তুরস্কের মধ্যে শক্তিশালী সহযোগিতা অব্যাহত রাখার জন্য কাজ করবেন।

    এছাড়াও আর্মেনিয়া, সুইডেন, ইসরায়েল, ফিলিস্তিনি, হাঙ্গেরি, আজারবাইজান, সুদান, সার্বিয়া, পাকিস্তান, ভেনেজুয়েলা, আমিরাত, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও আফগানিস্তানের রাষ্ট্রপ্রধানরাও এরদোয়ানকে অভিনন্দন ও সম্পর্ক জোরদারের কথা জানিয়েছেন।

    গত ২০ বছর ধরে তুরস্ক শাসন করে আসা প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান রোববারের ভোটে পুনরায় নির্বাচিত হয়ে দেশটির মসনদে বসছেন। রান-অফ নির্বাচনে তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা আনাদোলু।

  • নিজের বিজয়কে গণতন্ত্রের জয় বললেন এরদোয়ান

    নিজের বিজয়কে গণতন্ত্রের জয় বললেন এরদোয়ান

    টানা তৃতীয়বারের মতো তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান। রোববারের (২৮ মে) প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ রান-অফ নির্বাচনে কেমাল কিলিচদারোগলুকে পরাজিত করে আরও পাঁচ বছর তুরস্কের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা নিশ্চিত করেন জনপ্রিয় এই নেতা।

    এদিকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নিজের এই বিজয়কে গণতন্ত্রের জয় হিসেবে অভিহিত করেছেন রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান। সোমবার (২৯ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে তুরস্কের সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড।

    প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সদ্য সমাপ্ত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফলের পর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান তার বিজয়কে গণতন্ত্রের বিজয় হিসেবে অভিহিত করেছেন।

    রাজধানী আঙ্কারায় প্রেসিডেন্ট কমপ্লেক্সের আঙিনায় জড়ো হওয়া কয়েক হাজার সমর্থকের সামনে বক্তৃতা করার সময় প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান ঐক্যের ওপর জোর দিয়ে রোববারের রান অফ ভোটের প্রকৃত বিজয়ী ৮৫ মিলিয়ন তুর্কি নাগরিক এবং তুর্কি গণতন্ত্র বলে ঘোষণা দেন।

    রাজধানী আঙ্কারায় প্রেসিডেন্ট ভবনের সামনে জড়ো হওয়া হাজার হাজার সমর্থকের উদ্দেশে এরদোয়ান বলেন, ‘আমরাই একমাত্র বিজয়ী নই। এই নির্বাচনে তুরস্কের জয় হয়েছে, আমাদের গণতন্ত্র বিজয়ী হয়েছে।’

    মধ্যরাতের এই বিশাল জনসমাবেশে ভাষণ দেওয়ার সময় তিনি আরও বলেন, ‘আজ কেউ হারেনি। তুরস্কের ৮৫ মিলিয়ন নাগরিক জিতেছে। আর এখন আমাদের জাতীয় লক্ষ্য এবং জাতীয় স্বপ্নকে ঘিরে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সময়।’

    এর আগে রোববার সন্ধ্যায় তুরস্কের সুপ্রিম ইলেকশন কাউন্সিলের (ওয়াইএসকে) চেয়ারম্যান প্রেসিডেন্ট পদে এরদোয়ানের পুনর্নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। আঙ্কারায় সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় ওয়াইএসকে প্রধান আহমেত ইয়েনার বলেন, দ্বিতীয় রাউন্ডের ভোটে এরদোয়ান বিরোধী প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কেমাল কিলিচদারোগলুকে হারিয়ে প্রেসিডেন্ট পদে জয়ী হয়েছেন।

    টিআরটি ওয়ার্ল্ড বলছে, এখন পর্যন্ত ৯৯.৪৩ শতাংশ ব্যালট গণনা সম্পন্ন হয়েছে এবং অনানুষ্ঠানিক ফলাফল অনুসারে, তুরস্কের ক্ষমতাসীন এই প্রেসিডেন্ট ৫২.১৬ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। অন্যদিকে প্রতিদ্বন্দ্বী কিলিচদারোগ্লু পেয়েছেন ৪৭.৮৬ শতাংশ ভোট।

    এরদোয়ান বলেন, ‘আমাদের বহুদলীয় রাজনৈতিক ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই নির্বাচনে আমাদের জনগণ ‘সেঞ্চুরি অফ তুর্কিয়ের’ পক্ষে রায় দিয়েছে।’

    এরদোয়ান তার সমর্থকদের বলেন, রোববারের এই নির্বাচনটি আধুনিক যুগে তুরস্কের জন্য ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ’। তিনি বলেন, জনগণের জন্য আমাদের দিনরাত কাজ করতে হবে।

    গত ৬ ফেব্রুয়ারির ভূমিকম্পের ক্ষত নিরাময় এবং ধ্বংস হওয়া শহরগুলোর পুনর্গঠন তার সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হিসেবে অব্যাহত থাকবে বলেও এদিন জানিয়ে দেন এরদোয়ান। তিনি বলেন, তুর্কি জাতির ক্ষমতা ও শক্তি রয়েছে এবং তারা বিশ্বব্যবস্থায় তার যথাযথ স্থান অর্জন করবে।

    উল্লেখ্য, প্রায় ছয় কোটি ভোটারের মধ্যে ৮৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ ভোটার দ্বিতীয় দফায় ভোট দেন। এর আগে প্রথম দফার নির্বাচনে কোনও প্রার্থী শতকরা ৫০ ভাগের বেশি ভোট না পাওয়ায় দ্বিতীয় দফায় গড়ায় দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচন।

    গত ১৪ মে অনুষ্ঠিত প্রথম দফার ভোটে ৪৯ দশমিক পাঁচ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ের কাছাকাছি গিয়েছিলেন এরদোয়ান। এরপরই ছিলেন কিলিচদারোগলু। তার ভোট ছিল ৪৪ দশমিক ৮ শতাংশ।

    তবে রোববারের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার মাধ্যমে গত দুই দশক ধরে তুরস্কের ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা এরদোয়ান প্রেসিডেন্ট হিসেবে আবারও পাঁচ বছরের জন্য দেশটির নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ পেলেন।

  • টানা তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান

    টানা তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান

    গত ২০ বছর ধরে তুরস্ক শাসন করে আসা প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানই পুনরায় নির্বাচিত হয়ে দেশটির মসনদে বসছেন। রোববার অনুষ্ঠিত রান-অফ নির্বাচনে তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছেন বলে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা আনাদোলু জানিয়েছে।

    আনাদোলু বলছে, ৯৭ শতাংশ ব্যালট বাক্স গণনা সম্পন্ন হয়েছে। এই গণনায় প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান ৫২ দশমিক ১ শতাংশ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। আর তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কেমাল কিলিচদারোগলু পেয়েছেন ৪৭ দশমিক ৯ শতাংশ ভোট।

    ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, ৯ বছর প্রেসিডেন্ট আর ১১ বছর প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করা এরদোয়ানের নেতৃত্বে ক্রমাগত কর্তৃত্ববাদী শাসনের পথে হাঁটা তুরস্কে স্মরণকালের ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট চলছে। এরদোয়ানের পেশীবহুল পররাষ্ট্র নীতি আর অপ্রচলিত উপায়ে দেশের অর্থনীতি পরিচালনার ফলে রেকর্ড মূল্যস্ফীতির মুখোমুখি হয়েছে দেশটি।

    এমন পরিস্থিতিতে অনুষ্ঠিত ভোটে এরদোয়ানের জন্য আরও বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছিল তিন মাস আগে দেশটিতে আঘাত হানা স্মরণকালের ভয়াবহ এক ভূমিকম্প। ওই ভূমিকম্পে অর্ধ-লাখের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। ভূমিকম্পের পর উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতায় প্রশাসনের ব্যর্থতা নিয়ে দেশ ও বিদেশি তীব্র সমালোচনার শিকার হতে হয় এরদোয়ান নেতৃত্বাধীন সরকারকে।

    চলমান এই পরিস্থিতির মাঝে গত ১৪ মে অনুষ্ঠিত প্রথম দফার নির্বাচনে এরদোয়ানের সাথে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কেমাল কিলিচদারোগলুর হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়।

    বাংলাদেশ সময় রাত পৌনে ১১টার দিকে তুরস্কের উচ্চ নির্বাচন বোর্ডের প্রধান আহমেদ ইয়ানার এক সম্মেলনে নির্বাচনের ফল প্রকাশ করেন। এ সময় তিনি বলেন, রোববারের ভোটে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কেমাল কিলিচদারোগলুর চেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছেন প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। প্রাথমিকভাবে ৯৭ শতাংশ ব্যালট বাক্সের ভোট গণনায় এরদোয়ান ৫২ দশমিক ১ শতাংশ এবং কিলিচদারোগলু ৪৭ দশমিক ৯ শতাংশ সমর্থন পেয়েছেন।

    এরদোয়ান নেতৃত্বাধীন দেশটির ক্ষমতাসীন একে পার্টির মুখপাত্র ওমের সেলিক বলেছেন, প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান শক্ত সমর্থন ধরে নির্বাচিত হয়েছেন।

    এদিকে, নির্বাচনী ফলে এরদোয়ানের জয় নিশ্চিত হওয়ার সাথে সাথে ক্ষমতাসীন একে পার্টির কর্মী-সমর্থকরা তুরস্কজুড়ে আনন্দ মিছিল শুরু করেছেন। রয়টার্স বলছে, সমর্থকরা তার ইস্তাম্বুলের বাসভবনে জড়ো হয়ে ‘আল্লাহু আকবর’ স্লোগান দিচ্ছেন। ২৮ বছর বয়সী একে পার্টির সমর্থক নিসা নামের এক তরুণী বলেন, আমরা আশা করছি সবকিছু ভালো হবে।

    ইতোমধ্যে অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক, নিরাপত্তা এবং বৈদেশিক নীতিতে ধুঁকতে থাকা সাড়ে ৮ কোটি মানুষের এই দেশটির নির্বাচনে এরদোয়ানের পুনরায় জয় লাভ তার অপরাজেয় ভাবমূর্তিকে আরও দৃঢ় করে তুলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

    • প্রথম দফার ভোটের ফল
    গত ১৪ মে দেশটিতে অনুষ্ঠিত প্রথম দফার নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ৪৯ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। অন্যদিকে, তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কেমাল কিলিচদারোগলু পান ৪৪ দশমিক ৮৮ শতাংশ ভোট।

    আর জাতীয়তাবাদী রাজনীতিক হিসাবে পরিচিত সিনান ওগান পেয়েছিলেন ৫ দশমিক ১৭ শতাংশ ভোট। দ্বিতীয় দফার ভোটের আগে এরদোয়ানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন তিনি।

    তুরস্কের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা আনাদোলু বলছে, প্রথম দফার নির্বাচনে তুরস্কের ৬ কোটি ৪০ লাখ ভোটারের মাঝে ৮৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।

    • রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান
    একে পার্টি নামে পরিচিত তুরস্কের জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলভমেন্ট পার্টি নেতৃত্বাধীন পিপলস অ্যালায়েন্ট জোটের প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। ৬৯ বছর বয়সী এই রাষ্ট্রনেতা তুরস্কের ক্ষমতায় আছেন ২০ বছর ধরে। এর মধ্যে ৯ বছর প্রেসিডেন্ট এবং ১১ বছর প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত তুরস্কের অন্যতম বৃহৎ শহর ইস্তাম্বুলের মেয়র ছিলেন তিনি।

    এবা‌রে তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হ‌য়েছেন এরদোয়ান। ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট আর সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতির মাঝে এবারের এই নির্বাচনর তার জন্য সবচেয়ে চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছিল।

    • কেমাল কিলিচদারোগলু
    দেশটির ছয়দলীয় জোট ন্যাশন অ্যালায়েন্সের হয়ে এরদোয়ানের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ৭৪ বছর বয়সী এই রাজনীতিক। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে নিজের রাজনৈতিক দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টির নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। রাজনীতির মাঠে পা রাখার আগে দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিশেষজ্ঞ ছিলেন তিনি। নব্বইয়ের দশকের বেশিরভাগ সময় দেশটির সামাজিক বীমা ইনস্টিটিউশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। তুরস্কের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দল কুর্দিপন্থি এইচডিপির সমর্থনে ছয়-দলীয় ন্যাশন অ্যালায়েন্সের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন তিনি। তুরস্ককে একটি শক্তিশালী সংসদীয় ব্যবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি‌লেন কেমাল।

     

  • এরদোগান-ট্রাম্প বৈঠক ১৩ নভেম্বর

    এরদোগান-ট্রাম্প বৈঠক ১৩ নভেম্বর

    তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়িপ এরদোগান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাত করার জন্য আগামী সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেন।

    দু’দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে তিনি এ সফরে যাচ্ছেন। বুধবার দেশটির প্রেসিডেন্টের দপ্তর থেকে একথা জানানো হয়।

    তুরস্কের প্রেসিডেন্টের দপ্তর জানায়, এক ফোনালাপে এ দুই নেতা আবারো নিশ্চিত করেন যে তারা আগামী ১৩ নভেম্বর বুধবার ওয়াশিংটনে সাক্ষাত করবেন।

    এরদোগান সিরীয় সংঘাত নিয়ে বিরোধের কারণে তার ওয়াশিংটন সফর বাতিল করার হুমকি দিয়েছিলেন।

    ট্রাম্প টুইটারে দেয়া এক বার্তায় বলেছেন, তিনি এরদোগানকে ‘অত্যন্ত আন্তরিকভাবে আমন্ত্রণ’ জানিয়েছেন এবং তিনি তার সঙ্গে সাক্ষাতের অপেক্ষায় রয়েছেন।

    ট্রাম্প বলেন, ফোনালাপকালে তারা সিরিয়া-তুরস্ক সীমান্ত, সন্ত্রাসবাদ দমন, কুর্দিদের সাথে শত্রুতার অবসান ও অন্যান্য আরো অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন।

    এসময় এরদোগান ইসলামিক স্টেট (আইএস) গ্রুপের সদ্য প্রয়াত নেতা আবু বকর আল-বাগদাদির স্ত্রী’কে আটকের বিষয় নিয়েও আলোচনা করেন।

    ট্রাম্প টুইটারে বলেন, ‘তিনি আমাকে জানিয়েছেন যে তারা আইএসআইএসের অনেক যোদ্ধাকে গ্রেফতার করেছে। এসব যোদ্ধা সংঘাত চলাকালে পালিয়ে গিয়েছিল বলে জানা যায়। এদের মধ্যে সন্ত্রাসী ঘাতক আল-বাগদাদির এক স্ত্রী ও বোন রয়েছে।

    উল্লেখ্য, একেবারে তুরস্ক সীমান্তবর্তী সিরিয়ার উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় ইদলিব প্রদেশে কুর্দি যোদ্ধাদের সহযোগিতায় চালানো মার্কিন বাহিনীর বিশেষ এক অভিযানে এ আইএস নেতা নিহত হন।