টানা ছয় মাস মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে হার মানতে হলো রাউজানের স্কুলছাত্রী রুনা আকতারকে।
বুধবার ভোর চারটায় স্বজনদের চোখের জলে ভাসিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন চিকদাইর ইউনিয়নের মাওলানা বদিউর রহমানের বাড়ির দিনমজুর আবদুল মন্নানের মেয়ে রুনা। সে চিকদাইর শাহাদাৎ ফজল উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর মানবিক বিভাগের ছাত্রী।
জানা গেছে, তার সাথে পটিয়া শিকলবাহা জাহাঙ্গীর চেয়ারম্যান বাড়ির কাজী নজরুল ইসলামের ছেলে আরিফুল ইসলাম অভির সাথে প্রেমঘটিত সম্পর্ক ছিল। গত ৩ এপ্রিল এলাকায় একটি ওরসে অভি নামের ছেলেটির সাথে ঘুরতে গিয়ে স্থানীয় কিছু যুবক তাদের গতিবিধি লক্ষ্য করে। এ সময় অভি মেলা থেকে নিজেকে গা ঢাকা দেয়। পরে রুনাকে স্থানীয় জাকের হোসেন মাস্টার ডেকে কথা বলে তার স্বজনদের ফোন করে তাদের হাতে তুলে দেন। পরে মেয়েটি তার পরিবারের সদস্যদের কাছে কিছু ছেলে তাকে উক্ত্যক্ত করার কথা বলেন। বিষয়টা নিয়ে রুনার বাবা মেয়েকে বকাঝকা করেন। রাতে অনেকটা অভিমান করে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্নহত্যার চেস্টা করে সে।
আত্মহতার চেষ্টাকালে ৩ এপ্রিল ঘটনার দিন রুনাকে মুমূর্ষু অবস্থায় তার পরিবারের লোকজন উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে যান। এই ঘটনায় স্থানীয় কিছু যুবককে অভিযুক্ত করে রুনার পিতা আব্দুল মন্নান বাদী হয়ে চট্টগ্রাম আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগে ৯ মে পর্যন্ত ১ মাস ১৩ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর অবস্থার কোনো উন্নতি না হওয়ায় রুনাকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। অনেকটা যমে-মানুষে টানাটানি শেষে স্কুল ছাত্রী রুনা বুধবার সকালে সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। তার মৃত্যুতে শোকে কাতর পরিবারের সদস্যরা।
এদিকে চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে করা মামলাটি আদালত তদন্ত করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)কে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার নিদের্শনা দেন। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রামের সাব ইন্সপেক্টর মো. কামাল আব্বাস মামলাটি তদন্ত করে ২৬ সেপ্টেম্বর আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। তদন্ত প্রতিবেদনে রুনা আকতারকে শ্লীলতাহানির ঘটনায় প্রতিবেশী নুরুল আমিনের ছেলে মঞ্জুর হোসেন (২২), কবির আহম্মদের ছেলে কফিল উদ্দিন(২০) বাশির উদ্দিনের ছেলে হেলাল ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
এই প্রসঙ্গে রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কেপায়েত উল্লাহ বলেন, লাশ ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।