Tag: রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র

  • পারমাণবিক ক্লাবে বাংলাদেশ

    পারমাণবিক ক্লাবে বাংলাদেশ

    একের পর এক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশ। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হলো রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। স্বাধীনতার পরপরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ কাজ শুরু করতে চেয়েছিলেন। কথা শুরু করেছিলেন ফরাসি ও রাশানদের সঙ্গে। অবশেষে তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে সফল হলো বাংলাদেশ। ইতোমধ্যেই বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রথম ইউনিটের জন্য রাশিয়া থেকে এসেছে ‘ফ্রেশ নিউক্লিয়ার ফুয়েল’ বা ইউরেনিয়াম। আজ আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর অনুষ্ঠান (গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠান) অনুষ্ঠিত হবে। দুপুরে এই অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ঐতিহাসিক এই গ্র্যাজুয়েশনের মধ্য দিয়ে বিশ্বের ৩৩তম ইউরেনিয়াম জ্বালানির যুগে প্রবেশ করবে বাংলাদেশ। আমরা এখন নিউক্লিয়ার ক্লাবের গর্বিত সদস্য।

    ১৯৬২ সালে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার প্রমত্তা পদ্মা নদী তীরবর্তী রূপপুরকে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের স্থান হিসাবে নির্বাচন করা হয়। বুধবার সরেজমিন বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ইউরেনিয়াম হস্তান্তর অনুষ্ঠানকে ঘিরে উৎসবের সাজে সেজেছে ঈশ্বরদীর রূপপুর এলাকা। পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিভিন্ন রঙের পতাকা শোভা পাচ্ছে। গ্রিনসিটি আবাসিকের সামনের প্রাচীরে রঙিন চিত্রকর্ম নজর কাড়ছে সবার। একদিকে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা, অন্যদিকে সাজসাজ রব। সব মিলিয়ে রূপপুর যেন স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে ভিন্ন এক জায়গা। তবে ঐতিহাসিক এই মুহূর্তের সাক্ষী হতে এখানকার মানুষ উন্মুখ হয়ে আছেন বলে জানিয়েছেন।

    ইউরেনিয়াম হস্তান্তর অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে রূপপুরে এসেছে উচ্চপর্যায়ের রুশ প্রতিনিধিদল। প্রকল্প এলাকায় অবস্থান করছেন মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমানসহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের শীর্ষ কর্মকর্তারা। ফলে পুরো প্রকল্প ও গ্রিনসিটি আবাসিক এলাকায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। বুধবার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান কবিতার ভাষায় বলেন, ‘পিতা চেয়েছিল পরমাণু যুগ শুরু হোক রূপপুরে, পিতার চাওয়া হয়েছে পূরণ কন্যার হাত ধরে। রূপপুর আজ রূপ পেয়েছে অর্জন অশেষ; এই না হলে শেখের বেটি শাবাশ, শাবাশ বাংলাদেশ।’

    এ সময় দেশের জিডিপিতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ২ শতাংশ অবদান রাখবে বলে জানান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান। তিনি বলেন, সাধারণত নিউক্লিয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণে ১২ থেকে ১৫ বছর সময় লাগে। সে হিসাবে মাত্র ৭-৮ বছরের মধ্যে নিউক্লিয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণ করা একটা মাইলফলক। এসবই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। ইউরেনিয়াম আসার মধ্য দিয়ে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র পারমাণবিক স্থাপনা হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

    এদিকে গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানের পর আগামী বছরের সেপ্টেম্বরে পরীক্ষামূলকভাবে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক ড. মো. শৌকত আকবর। তিনি বলেন, মাসটিতে পরীক্ষামূলক উৎপাদনে যাবে রূপপুরে নির্মাণাধীন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট। তবে ২০২৫ সালের শুরুতেই বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হবে। আর প্রকল্পটি চালু হলে দেশের জিডিপিতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ২ শতাংশ অবদান রাখবে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পুরোপুরি উৎপাদনে গেলে প্রতিদিন জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। কমবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচও।

    ড. মো. শৌকত আকবর বলেন, আগামী বছরের সেপ্টেম্বরে পরীক্ষামূলক উৎপাদনে যাবে রূপপুরে নির্মাণাধীন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট। তবে ২০২৫ সালের শুরুতেই বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পারমাণবিক জ্বালানি আমদানি এবং সংরক্ষণ করতে সেফটি ও ইন্টারন্যাশনাল অবলিগেশন-সব মানা হয়েছে আমাদের প্রকল্প এলাকায়। ইউরেনিয়াম আনতে গিয়ে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি কমিশন ও রাশিয়ান রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর শর্ত পূরণ করা হয়েছে। রূপপুর পারমাণবিক এলাকা আজ থেকে গ্লোবালি রিকগনিশন পাবে পারমাণবিক স্থাপনা হিসাবে।

    প্রকল্পের গ্রিনসিটি এলাকায় কথা হয় বেশ কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দার সঙ্গে। এ অর্জনে নিজেদের গর্বের অংশীদার মনে করেন তারা। বলেন, এ আমাদের জন্য কী আনন্দ ও গর্বের, তা বলে বোঝাতে পারব না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নানা চ্যালেঞ্জের মুখে প্রকল্পটি বাস্তবে রূপ দেওয়ানোর জন্য তার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা। তারা আরও বলেন, প্রকল্পকে ঘিরে প্রতিদিন হাজার হাজার কোটি টাকার লেনদেন হওয়ায় মানুষের জীবনযাত্রায় ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। বেকার মানুষ কর্মসংস্থান পেয়েছেন। অসচ্ছল পরিবার সচ্ছল হয়েছে। ঈশ্বরদীকে এক টুকরো রাশিয়ার সঙ্গে তুলনা করেছেন তারা।

    এর আগে শুক্রবার রাশিয়া থেকে পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের ‘ফ্রেশ নিউক্লিয়ার ফুয়েল’ বা ইউরেনিয়ামের প্রথম চালান রূপপুর পৌঁছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের কাছে পারমাণবিক জ্বালানির সনদ ও মডেল হস্তান্তর করবেন রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক সংস্থা রোসাটমের মহাপরিচালক আলেস্কি লিখাচেভ। অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত থাকবেন আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি। হস্তান্তর প্রক্রিয়ার যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে কর্তৃপক্ষ। রোসাটমের জ্বালানি প্রস্তুতকারী কোম্পানি টেভেলের একটি প্রতিষ্ঠান নভোসিবিরস্ক কেমিক্যাল কনসেনট্রেটস প্ল্যান্ট (এনসিসিপি) রূপপুরের এই জ্বালানি উৎপাদন করছে।

    বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সচিব মো. আলী হোসেন বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের (আরএনপিপি) ঐতিহাসিক অনুষ্ঠান এবং পারমাণবিক জ্বালানির সনদ ও মডেল হস্তান্তরের সব আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা সফলভাবে কর্মসূচি পালনে প্রস্তুত। অতিথিরা চারটি পয়েন্ট থেকে অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন এবং বক্তৃতা করবেন বলেও জানান তিনি।

    প্রকল্প সূত্র জানায়, প্রকল্পটিতে সাত হাজার পেশাদারসহ ৩০ হাজার দেশি-বিদেশি কর্মী কাজ করছেন। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মাধ্যমে পারমাণবিক ক্লাবে প্রবেশ বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে সক্ষম হবে। কারণ, এটি কার্বন নিঃসরণ হ্রাস লক্ষ্যমাত্রা পূরণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবে। একই সময়ে এটি ফ্ল্যাশের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ কমিয়ে দেবে। প্রকল্পে চার বছর ধরে ইন্সটলার হিসাবে কাজ করছেন স্থানীয় যুবক নাসির উদ্দিন ও আশরাফুল ইসলাম। তারা বলেন, বিশ্বের অন্যতম মেগা প্রকল্প এটি। প্রকল্পের অনেক কাজে আমাদের হাতে ছোঁয়া লেগে আছে। আমাদের দেশে গুরুত্বপূর্ণ একটি সম্পদে আমরা কাজ করতে পেরে খুবই আনন্দিত।

    এদিকে প্রকল্প পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, আরএনপিপি প্রতিদিন ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং কার্বন নিঃসরণ কমানোর বৈশ্বিক উদ্যোগ নিশ্চিত করবে। রাশিয়ান ঠিকাদার হিসাবে রোসাটম, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে। বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিটি ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি ইউনিট নিয়ে গঠিত। মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরমাণু শক্তি কমিশন আরএনপিপি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। রাশিয়ান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অ্যাটমস্টোএক্সপোর্ট প্রকল্পের অধীনে ১২০০ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিট নির্মাণ করছে। পারমাণবিক জ্বালানি রোসাটমের সহযোগী কোম্পানি টিভিইএল ফুয়েল তৈরি করছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের কাছ থেকে পারমাণবিক জ্বালানি ক্রয় করে।

    ওয়ার্ল্ড নিউক্লিয়ার অ্যাসোসিয়েশনের ওয়েবসাইট অনুসারে পরমাণু শক্তি ব্যবহারকারী দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, কানাডা, ইউক্রেন, জার্মানি, জাপান, স্পেন, সুইডেন, বেলজিয়াম, যুক্তরাজ্য, ভারত, চেক প্রজাতন্ত্র, ফিনল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, বুলগেরিয়া, পাকিস্তান, হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়া, ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা, মেক্সিকো, রোমানিয়া, আর্জেন্টিনা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বেলারুশ, স্লোভেনিয়া, নেদারল্যান্ডস, ইরান ও আর্মেনিয়া। এবার যুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশের নামও। একবার পারমাণবিক জ্বালানি পাওয়ার প্ল্যান্টের চুল্লিতে লোড করা হলে এক বছরের জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যেতে পারে। এরপর জ্বালানি চুল্লিতে পুনরায় লোড করতে হবে।

    প্রসঙ্গত, ১৯৬১ সালে রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ১৯৬২-১৯৬৮ সালে রূপপুরকে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের স্থান হিসাবে নির্বাচন করা হয়। একাধিক সমীক্ষার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের যথার্থতা যাচাই করা হয়। পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য ২৬০ একর এবং আবাসিক এলাকার জন্য ৩২ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। ভূমি উন্নয়ন, অফিস, রেস্টহাউজ, বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন এবং কিছু আবাসিক ইউনিটের নির্মাণকাজ আংশিক সম্পন্ন করা হয়। এরপর ১৯৬৯-৭০ সালে ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের এ প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত তৎকালীন পাকিস্তান সরকার বাতিল করে দেয়। দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ফের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নিলেও তা গতি পায় ২০০৮ সালের পর। তখন নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারে আওয়ামী লীগ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করে। ২০০৯ সালে দলটি ক্ষমতায় এলে দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। তিনি প্রকল্পটি বাস্তবায়নে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করেন।

    ২০১৩ সালের অক্টোবরে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয় নিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে প্রকল্পটির নির্মাণকাজ এগিয়ে নেয়। ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর ১ হাজার ৬২ একর জমির ওপর প্রকল্পের কাজ পুরোদমে শুরু হয়। সূত্র আরও জানায়, ২০২১ সালের অক্টোবরে ইউনিটের কাঠামোর

    মধ্যে চুল্লি স্থাপনের মাধ্যমে রূপপুর ইউনিট-১ প্রায় সম্পন্ন হয়। এটি এআইইএ-এর মান অনুযায়ী স্থাপন করা হয়। চুল্লি একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রধান উপাদান। গত বছরের অক্টোবরে দ্বিতীয় ইউনিটের চুল্লি স্থাপন করা হয়।

    জানা যায়, প্রথম ইউনিট (১২০০ মেগাওয়াট) চালু করার জন্য ৭৫ টন ইউরেনিয়াম প্রয়োজন হবে। একবার জ্বালানি দেওয়ার পর ১৮ মাস নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। এরপর এক-তৃতীয়াংশ ইউরেনিয়াম অর্থাৎ ২৫ টন তুলে সেখানে নতুন রড দিতে হবে। এরপর আবার ১৮ মাস চলবে। এভাবে ১৮ মাস পরপর আংশিক জ্বালানি পরিবর্তন করতে হবে। এক কেজি ইউরেনিয়াম প্রায় ১০০ টন কয়লার সমান তাপ উৎপাদনে সক্ষম। আর একই পরিমাণ তাপ তেলে উৎপাদন করতে হলে ৬০ টন ডিজেল প্রয়োজন হবে। যে কারণে এটিকে সহজে পরিবহণযোগ্য বিবেচনা করা হয়। এই জ্বালানি একবার লোড করে নিরবচ্ছিন্নভাবে ১৮ মাস বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। একই পরিমাণ বিদ্যুৎ অন্য জ্বালানিতে পেতে হলে অনবরত সরবরাহ অব্যাহত রাখতে হয়।

    প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা বলছেন, রেডিয়েশন নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই। রেডিয়েশনের মাত্রা মানুষের সহনক্ষমতার মধ্যে থাকবে। ২৩টি রেডিয়েশন স্টেশন চালু হবে, সেখানে রেডিয়েশনের মাত্রা প্রদর্শিত হবে। যে কেউ দেখতে পারবেন। এসব স্টেশন ১৮ কিমি. দূরে পর্যন্ত থাকবে। ১২.৫ কিলোমিটার দূরে মনিটরিংয়ের প্রয়োজন নেই। যেভাবে বসবাস করছে, সেভাবে করতে পারবে।

  • রূপপুরে পৌঁছালো ইউরেনিয়ামের প্রথম চালান

    রূপপুরে পৌঁছালো ইউরেনিয়ামের প্রথম চালান

    পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের ফ্রেশ নিউক্লিয়ার ফুয়েল বা ইউরেনিয়ামের প্রথম চালান রূপপুরে পৌঁছেছে। শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১টা ১৬ মিনিটে ইউরেনিয়ামের গাড়িবহর রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে।

    ঈশ্বরদীর পাকশীর হাইওয়ে থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) বেলাল হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

    রূপপুর প্রকল্পে ইউরেনিয়ামের গাড়িবহর প্রকল্প এলাকায় প্রবেশ করলে বাংলাদেশি ও রাশিয়ান কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং শ্রমিকরা দুদেশের জাতীয় পতাকা ও বেলুন উড়িয়ে স্বাগত জানান।

    জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বিকেলে রাশিয়া থেকে ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে আসে ইউরেনিয়ামের এ চালান। বিশেষ নিরাপত্তাবলয়ে ঢাকা থেকে সড়কপথে এই ইউরেনিয়ামের চালান শুক্রবার ভোরে রূপপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়।

    পাবনার পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সি জানান, পাবনা-ঢাকা রুটে অনেক সময় যানজটের সৃষ্টি হয়। এজন্য যানজট নিয়ন্ত্রণে ও নিরাপত্তার স্বার্থে শুক্রবার ভোর ৭টা থেকে বাস চলাচল বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।

    ৫ অক্টোবর রূপপুর প্রকল্পে জ্বালানি আনুষ্ঠানিকভাবে কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে। জ্বালানি হস্তান্তর অনুষ্ঠান ঘিরে প্রকল্প এলাকায় সাজ সাজ কর্মকাণ্ড চলছে। অনুষ্ঠানকে সফল করতে এরই মধ্যে রাশিয়া থেকে বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি ঈশ্বরদীর রূপপুরে অবস্থান করছেন।

  • রূপপুর বালিশকাণ্ড, গণপূর্তের সাবেক নির্বাহীসহ গ্রেপ্তার ১৩

    রূপপুর বালিশকাণ্ড, গণপূর্তের সাবেক নির্বাহীসহ গ্রেপ্তার ১৩

    পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে বালিশসহ ১৬৯ কোটি টাকার আসবাবপত্র কেনাকাটায় দুর্নীতির ঘটনায় পাবনা গণপূর্ত বিভাগের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুল আলমসহ ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

    আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। দুদকের ঊর্ধ্বতন সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

    এ ঘটনায় দুপুরে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে (ঢাকা-১) চারটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। দুদকের উপ-পরিচালক মো. নাসিরউদ্দিন বাদী হয়ে এ মামলা করেন।

    গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন, পাবনা গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. জাহিদুল কবির, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আহমেদ সাজ্জাদ খান, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. মোস্তফা কামাল, এস্টিমেটর ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী সুমন কুমার নন্দী, সহকারী প্রকৌশলী মো. তারেক, সহকারী প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম, উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. আবু সাঈদ, উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. রওশন আলী, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. তাহাজ্জুদ হোসেন, মজিদ সন্স কন্সট্রাকশন লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী আসিফ হোসেন ও সাজিন কন্সট্রাকশন লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী মো. শাহাদাত হোসেন।

    এর আগে রূপপুর পারমাণবিক বিদ‌্যুৎ প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে পৃথক চারটি মামলা দায়ের করে দুদক। এছাড়া দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ৩৩ কর্মকর্তাকে তলব করা হয়।

  • রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিরাপত্তায় একনেকে ৩,৪৪৯ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন

    রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিরাপত্তায় একনেকে ৩,৪৪৯ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন

    জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ৩ হাজার ৪৪৯.০৫ কোটি টাকার ফিজিক্যাল প্রটেকশন সিস্টেম (পিপিএস) প্রকল্প আজ অনুমোদন করেছে।

    রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠকে এই অনুমোদন দেয়া হয়।

    বৈঠক শেষে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, আজ ৬টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে, এতে অনুমিত মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৪৪৭.৭৬ কোটি টাকা। এরমধ্যে ৪ হাজার ৪৩৯.৮৬ কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে এবং বাকী ৭.৯০ কোটি টাকা সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে সরবরাহ করা হবে। অনুমোদিত ৬টি প্রকল্পের মধ্যে ৫টি নতুন এবং ১ টি সংশোধিত প্রকল্প।

    পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, নিউক্লিয়ার সিকিউরিটি এন্ড ফিজিক্যাল প্রটেকশন সিস্টেম সেল এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, আর্মি হেডকোয়াটারস, জিএস সেকশন (কোঅর্ডিনেশন) ২০২৩ সালের মার্চ মাসের মধ্যে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে।
    এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য নিরাপদ ও সুরক্ষিত পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদনে ধাপে ধাপে সহায়ক পরিবেশ তৈরির জন্য পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

    পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ডিজাইন বেসিস থ্রেট (ডিবিটি) অথবা ডিবিটি’র বাইরে থেকে আসা ঝুঁকি মোকাবেলা করাও এই প্রকল্পের লক্ষ্য।

    পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, রাশিয়ান ফেডারেশনের বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে।

    গত বছরের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ও রাশিয়ান ফেডারেশনের মধ্যে স্বাক্ষরিত প্রটোকলের অধীনে এই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

    পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই গুণগত মান বজায় রেখে দ্রুততার সাথে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট নির্বাহী সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন।

    প্রধানমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে মন্ত্রী বলেন, পাশপাশি প্রধানমন্ত্রী পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস (পিপিআর) এর সংশোধনের পরামর্শ দিয়েছেন, ‘যাতে করে বড় ঠিকাদাররা বারবার সরকারি কাজ না পায়, বরং অন্যান্য ঠিকাদাররাও যাতে কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে বিডিংএ অংশ নিতে পারে এবং সুস্থ প্রতিযোগিতা করতে পারে।’

    প্রধানমন্ত্রী জরুরি প্রয়োজন ছাড়া গ্রামীণ এলাকায় সেতু নির্মাণ না করার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে নির্দেশ দেন। কারণ, এই সেতুগুলো পানি প্রবাহের স্বাভাবিক গতিকে বাধাগ্রস্ত করে।

    প্রধানমন্ত্রীর বরাত দিয়ে মন্ত্রী বলেন, সতর্কতার সাথে নতুন নতুন সড়কগুলো নির্মাণের প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্বারোপ করেন। কারণ, বর্তমান সরকার সকল আন্তঃজেলা সড়ক ও আঞ্চলিক মহাসড়ককে চার-লেনে উন্নীত করতে আগ্রহী।

    অন্যান্য যে প্রকল্পগুলোর অনুমোদন দেয়া হয়েছে সেগুলো হলো-৩৬৬ দশমিক ২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে যশোর (রাজারহাট)-মনিরামপুর-কেশবপুর-চুকনগর আঞ্চলিক মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প, ৭১ দশমিক ৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৯১ দশমিক ৩৪ মিটার মুহুরী সেতু ও ৫০ দশমিক ১২ মিটার ফজিলাঘাট সেতু নির্মাণ প্রকল্প, ৩৬১ দশমিক ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে কক্সবাজারের একতাবাজার থেকে বিএনএস শেখ হাসিনা পর্যন্ত সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প, প্রথম সংশোধিত ৭৯ দশমিক ০১ কোটি টাকা ব্যয়ে আগারগাঁওয়ে পর্যটন ভবন নির্মাণ প্রকল্প এবং ১২০ দশমিক ৮২ কোটি টাকা ব্যয়ে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিলেট জেলার সিলেট সদর ও বিশ্বনাথ উপজেলায় দশগ্রাম, মাহতাবপুর ও রাজাপুর পরগণা বাজার এলাকা সুরমা নদীর উভয় তীরের ভাঙ্গন হতে রক্ষা প্রকল্প।