Tag: রোহিঙ্গা

  • রাজধানীতে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট তৈরি চক্রের আস্তানায় র‌্যাবের অভিযান

    রাজধানীতে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট তৈরি চক্রের আস্তানায় র‌্যাবের অভিযান

    রাজধানীর বাসাবোতে রোহিঙ্গা নাগরিকদের বাংলাদেশি জন্ম সনদ ও পাসপোর্ট তৈরি করে দেয়ার খবর পেয়ে একটি ট্রাভেল এজেন্সির কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েছে র‌্যাব।

    সোমবার (১১ নভেম্বর) সন্ধ্যা থেকে র‌্যাব-২ এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।

    সেখান থেকে একজনকে আটকের পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ পাসপোর্ট, অর্থ ও অর্থপাচারের কাগজপত্র জব্দ করা হয়েছে।

    র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের সিনিয়র সহকারী পরিচালক এএসপি মিজানুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

    র‌্যাব সূত্র জানায়, আজিজিয়া ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল এজেন্সি নামের ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক আতিকুর রহমানের কাছে থেকে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাংকে ৪ লাখ ২৭ হাজার ডলার, সিঙ্গাপুরের ব্যাংকে ৬০ হাজার ডলার এবং ইসলামী ব্যাংকে ৫০ লাখ টাকার স্থায়ী আমানতের তথ্য পেয়েছে র‌্যাব।

    এছাড়াও অস্ট্রেলিয়ায় একটি বাড়ি এবং একটি ব্যাংকে ৭০ লাখ টাকা রয়েছে বলে র‌্যাবের কাছে স্বীকার করেছেন ট্রাভেল এজেন্সির মালিক আতিকুর রহমান।

  • রোহিঙ্গা শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, এ অঞ্চলে নিরাপত্তার হুমকি : প্রধানমন্ত্রী

    রোহিঙ্গা শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, এ অঞ্চলে নিরাপত্তার হুমকি : প্রধানমন্ত্রী

    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নির্যাতনের শিকার হয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা নাগরিক শুধু বাংলাদেশের নয় এ অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ।

    তিনি বলেন, ‘এ হুমকির গুরুত্ব অনুধাবন করে আমি বিশ্ব সম্প্রদায়কে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাাচ্ছি।’

    আজ সোমবার সকালে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘ঢাকা গ্লোবাল ডায়ালগ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

    বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) ও ভারতের অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন (ওআরএফ) যৌথভাবে এ ডায়ালগের আয়োজন করেছে।

    ‘প্রবৃদ্ধি, উন্নয়ন ও ইন্দো-প্যাসিফিক’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে শুরু হওয়া এ ডায়লগে বিভিন্ন দেশের ১৫০ জনেরও বেশি আলোচক অংশ নিবেন।

    অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং ওআরএফ প্রেসিডেন্ট সমির সরণ। তার আগে বিআইআইএসএস মহাপরিচালক একেএম আব্দুর রহমান স্বাগত বক্তব্য দেন।

  • প্রত্যাবাসনে রোহিঙ্গাদের আগ্রহী করতে হবে : এনটিএফ সভায় সিদ্ধান্ত

    প্রত্যাবাসনে রোহিঙ্গাদের আগ্রহী করতে হবে : এনটিএফ সভায় সিদ্ধান্ত

    রোহিঙ্গা শরনার্থীদের (বলপ্রয়োগে বাস্তচ্যুত মিয়ানমার নাগরিক) মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে আগ্রহী করে তুলতে হবে। এজন্য ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গা শরনার্থীদের মাঝে প্রয়োজনীয় মোটিভেশনাল ওয়ার্ক করতে হবে।

    পাশাপাশি রোহিঙ্গা শরনার্থীদের দ্রুততম সময়ে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক মহলের মাধ্যমে মিয়ানমারের উপর চাপ বৃদ্ধি করতে হবে। বাংলাদেশকে এ বিষয়ে বহুমাত্রিক কুটনৈতিক তৎপরতাও আরো বাড়াতে হবে। রোহিঙ্গা শরনার্থীরা মিয়ানমারে ফিরে যেতে যাতে কেউ প্রতিবন্ধকতা ও উস্কানীমূলক কার্যক্রম নাকরে, সেদিকে কঠোর নজরদারি রাখতে হবে।

    রোহিঙ্গা শরনার্থীদের জন্য গঠিত National Task Force (NTF) এর ২৮ তম সভায় এবিষয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং সেগুলো বাস্তবায়নের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়।

    কক্সবাজার শহরের কলাতলী সমুদ্র পাড়ের সায়মান বীচ রিসোর্টের সম্মেলন কক্ষে বুধবার (৬ নভেম্বর) সকালে এনটিএফ এর প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ শহীদুল হকের সভাপতিত্বে রোহিঙ্গা শরনার্থী বিষয়ক নীতিনির্ধারণী জাতীয় কমিটির এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

    সভায় বলা হয়, ভাসানচর রোহিঙ্গা শরনার্থী স্থানান্তরে সম্পূর্ণ প্রস্তুত। সেখানে লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরনার্থী স্থানান্তরের প্রাথমিক প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। ক্যাম্প গুলোতে জাতিসংঘের সংস্থা গুলো, আইএনজিও এবং এনজিও সমুহের কার্যক্রম আরো নিবিড়ভাবে তদারকি ও তাদের সার্বিক কর্মকান্ড ব্যাপক নজরদারিতে রাখতে হবে। জয়েন্ট রেসপন্স প্লেন (জেআরসি) তে রোহিঙ্গা শরনার্থীদের জন্য মানবিক সাহায্য বরাদ্দের পাশাপাশি প্রশাসনিক ব্যয়াদি, ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে পূণর্বাসন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবেশ ও পরিবর্তিত জলবায়ু বিষয়ে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দের জন্য গুরুত্বারোপ করা হয়। সভায় রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্প গুলোর চারিদিকে আন্তর্জাতিক মানের কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ সহ নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে আরো পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

    এনটিএফ এর এসভায় অন্যান্যের মধ্যে দুর্যোগ ও ত্রান বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব শাহ কামাল, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুন নাহার, এনিজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) কে. এম আবদুস সালাম, আরআরআরসি মোঃ মাহবুব আলম তালুকদার, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন, কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তা উপ সচিব গুলশান আরা, কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মোহাঃ শাজাহান আলি, জাতিসংঘের বাংলাদেশে আবাসিক সমন্বয়কারী মিস. মিয়া সিপ্পো, ইউএনএইচসিআর-এর কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ মি. স্টিভ, আইওএম-এর বাংলাদেশের মিশন প্রধান মি. জিওরজি এবং আইএসসিজি’র প্রধান মিস. নিকোলি, আইএনজিও এবং এনজিও প্রতিনিধি, এনটিএফ এর অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

    এনটিএফ অন্যান্য বৈঠকের তুলনায় বুধবার কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত বৈঠকে রোহিঙ্গা শরনার্থী সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তারা অপেক্ষাকৃত বেশী অংশ নেওয়ায় এ বৈঠকে পর্যাপ্ত সময় নিয়ে প্রত্যেক বিষয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ ও সিদ্ধান্ত হয়।

    ফলে এ বৈঠকটি অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয় বলে বৈঠকে অংশ নেয়া একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন। বৈঠকে এ বিষয়ে সরকারের নেয়া সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নের জন্য সভায় বিভিন্ন নির্দেশনা প্রদান করা হয়।

  • পটিয়ায় ৭ রোহিঙ্গা আটক

    পটিয়ায় ৭ রোহিঙ্গা আটক

    পটিয়া উপজেলার কচুয়াই ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডে অভিযান চালিয়ে সাত রোহিঙ্গা নাগরিককে আটক করেছে পুলিশ। বুধবার ভোর রাতে উপজেলার কচুয়াই গ্রামে অভিযান চালিয়ে এসব রোহিঙ্গাদের আটক করা হয়।

    আটককৃতরা হলেন, মো. ইলিয়াছ (২২), জহির আলম (৩০), মো. রফিক (২৮), আলী হোসেন (২২), মোহাম্মদ রফিক (৩৭), মো. সাকের (২৮) ও সামশুল আলম (৪০)।

    পুলিশ জানায়, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় রোহিঙ্গারা এতদিন বসবাস করলেও সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশের টানা অভিযানে তারা গা-ঢাকা দিয়েছে। তবে কিছু কিছু এলাকায় এখনও রোহিঙ্গারা অবস্তান করছেন। প্রায় দুইশ রোহিঙ্গা পরিবার স্বেচ্ছায় কক্সবাজার ক্যাম্পে ফিরে গেছে।

    পটিয়া থানার ওসি (তদন্ত) জাব্বারুল ইসলাম ২৪ ঘন্টা ডট নিউজকে জানিয়েছেন, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে পটিয়া থানার এসআই মো. জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে একটি টিম কচুয়াই এলাকায় অভিযানে যায়। এসময ওই এলাকার বিভিন্ন বাসায় তল্লাশী চালিয়ে সাত রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়।

    তিনি বলেন, রোহিঙ্গা নাগরিক অবৈধভাবে বসবাস করার অপরাধে বৈদেশিক নাগরিক সম্পর্কিত আইন ১৯৪৬ এর ১৪ ধারায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই অভিযান অব্যাহত রাখবেন বলে তিনি জানান।

  • উখিয়ায় ৮ লাখ পিস ইয়াবাসহ রোহিঙ্গা যুবক আটক

    উখিয়ায় ৮ লাখ পিস ইয়াবাসহ রোহিঙ্গা যুবক আটক

    কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলায় আট লাখ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ জামাল হোসেন (২২) নামে এক রোহিঙ্গা যুবককে আটক করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-১৫)।

    রোববার (২৭ অক্টোবর) রাতে উখিয়ার রয়েল টিউলিপ হোটেলের পশ্চিম পাশে সমুদ্রসৈকত থেকে তাকে আটক করা হয়।

    আটক জামাল হোসেন টেকনাফ উনচিপ্রাং ২২ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ডি-ব্লকের হোছেনের ছেলে।

    র‌্যাব-১৫ সহকারী পরিচালক, মিডিয়া (এএসপি) আবদুল্লাহ মোহাম্মদ শেখ সাদী জানান, মিয়ানমার থেকে ইয়াবার একটি বড় চালান সমুদ্র পাড়ি দিয়ে উখিয়ার ইনানীর পাটুয়ারটেক সমুদ্রসৈকত এলাকা দিয়ে ঢুকবে এমন খবরে অভিযান চালানো হয়। এ সময় ট্রলারে থাকা বস্তাভর্তি আট লাখ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ জামালকে আটক করা হয়।

    তবে র‌্যাবের অভিযান টের পেয়ে ৫-৬ জন পালিয়ে গেছে বলেও জানান তিনি।

  • রোহিঙ্গা শরনার্থীদের দ্বারা বন ও পরিবেশের ক্ষতি ৪২২০ কোটি টাকা

    রোহিঙ্গা শরনার্থীদের দ্বারা বন ও পরিবেশের ক্ষতি ৪২২০ কোটি টাকা

    মায়ানমারের সামরিক বাহিনী দ্বার গণহত্যা থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরনার্থীদের কারণে গত দু’বছরে বন ও পরিবেশের সর্বমোট ক্ষতি হয়েছে ৪ হাজার ২ শ’ ২০ কোটি টাকা । তারমধ্যে ৬ হাজার একর সংরক্ষিত বনভূমি সম্পূর্ণ উজাড় হয়েছে।

    রোহিঙ্গা শরনার্থীরা জ্বালানি হিসাবে ছাই করে ফেলেছে ১ হাজার ৮ হাজার ৩৭ একর সংরক্ষিত বনভূমি। টাকার অংকে যার পরিমাণ ৫ শ’ ৫৫ কোটি টাকা।

    রোহিঙ্গা শরনার্থীদের পদচারণা, রাস্তা নির্মাণে ও অন্যান্যভাবে ধ্বংস করা হয়েছে আরো প্রায় ৫ শ’ বনভূমি। ক্ষতি হয়েছে ১ হাজার ৮ শ’ ২৯ টাকার জীববৈচিত্র্য। ৫ শ’ ৯১ কোটি টাকার মূল্যবান বনজ দ্রব্য। যেসব ক্ষতি সর্বমোট টাকার মূল্যে ২ হাজার ৪ শ’ ২০ কোটি টাকা।

    শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের শহীদ এটিএম জাফর আলম সিএসপি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায় এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।

    চলতি বছরের ৭ অক্টোবর পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বন বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের দিয়ে সরেজমিনে জরীপ ও পরিদর্শন করে এই ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা হয়। জরীপ করে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করে।

    জাতীয় সংসদীয় কমিটির পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও ঢাকা-৯ আসনের সংসদ সদস্য সাবের চৌধুরী’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সভায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন আহমদ এমপি, প্রতিমন্ত্রী হাবিবুন নাহার এমপি, কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সংসদ সদস্য ও একই কমিটির সদস্য আলহাজ্ব জাফর আলম, সদস্য রেজাউল করিম বাবলু এমপি, খোদেজা নাসরিন এমপি, আক্তার হোসেন এমপি একই মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল্লাহ আল মোহসীন চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

    বিশেষ আমন্ত্রণে সভায় উপস্থিত ছিলেন-পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব প্রশাসন (প্রশাসন), পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, প্রধান বন সংরক্ষক, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন, পুলিশ সুপার এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম, বিভাগীয় বন কর্মকর্তাদ্বয় ও কমিটির সচিব ও সরকারের উপসচিব এ.কে.এম.জি কিবরিয়া, সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকড়তাগণ সহ সাচিবিক দায়িত্ব পালনকারীরা।

    স্থায়ী কমিটির এ সভায় মূলত রোহিঙ্গা শরনার্থী আগমনের কারণে কক্সবাজারের বন ও পরিবেশের যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে, স্থানীয় জনগোষ্ঠী যে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, তা আবার কিভাবে পূরণ করা যায়, সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।

    এ পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক সংসদীয় কমিটি গত বৃহস্পতিবার ১৭ অক্টোবর উখিয়ার কুতুপালংয়ে বনের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করেছে।

    এ বিষয়ে কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গাদের বসতি এবং তাদের কারণে বনের যেসব ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তার একটি চিত্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে পাওয়া গেছে, যা পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। সংসদীয় কমিটি গত ১৭ অক্টোবর ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনের ছেয়ে আরো ভয়াবহ চিত্র অবলোকন করে। এ ভয়ানক বিষয়টিকে কমিটি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে স্থায়ী কমিটির সভায় আলোচনা করেছে। কমিটির বৈঠক কক্সবাজারেই করা হবে। এ বৈঠকে বনাঞ্চলে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় কেন্দ্রিক ক্ষয়ক্ষতি ঠেকাতে করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়।

    রোহিঙ্গারা বনভূমিতে বসতি স্থাপন করায় তা যেমন বেদখল হয়ে যাচ্ছে, তেমনি জীবিকার বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বনভূমির গাছই কেটে পাচার করছে তারা। শরণার্থী ক্যাম্প ও বনাঞ্চলে বসবাসকারী রোহিঙ্গারা বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কার্যক্রমের পাশাপাশি বন ও পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করছে। তারা জ্বালানির চাহিদা মেটাতে বনভূমি ধ্বংস করা ছাড়াও পাহাড় কাটা ও মাটি বিক্রি, অবৈধভাবে কাঠ ও বনজদ্রব্য পাচারে যুক্ত হয়েছে। সঠিক নাম-ঠিকানার অভাবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রোহিঙ্গা অপরাধীদের শনাক্ত ও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

    প্রতিবেদনের উল্লেখ করে সভায় বলা হয়, ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারের দক্ষিণ বন বিভাগের ছয় হাজার ১৬৪ একর বনভূমিতে বসতি স্থাপনের ফলে দুই হাজার ২৭ একর সৃজিত (সামাজিক বনায়ন) বন এবং চার হাজার ১৩৬ একর প্রাকৃতিক বন ধ্বংস হয়ে যায়। সৃজিত বনের ক্ষেত্রে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় দুইশ’ কোটি টাকা। প্রাকৃতিক বনের ক্ষতি আড়াইশ’ কোটি টাকারও বেশি। মোট বনজদ্রব্যের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৫০ কোটি টাকা।

    হাতি চলাচলের পথ বন্ধ :
    কমিটির বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বলা হয়, রোহিঙ্গা বসতির কারণে বালুখালী-ঘুমধুম করিডোর দিয়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে হাতি চলাচলের পথ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে পড়েছে। তাই হাতি ও মানুষের মধ্যে সংঘাত বাড়ছে। ইতিমধ্যে হাতির আক্রমণে ১২ রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে। ভবিষ্যতে এই সংঘাত আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

    কক্সবাজার জেলার বনভূমি এশিয়ান হাতির বাসস্থান, বিচরণ ও প্রজনন ক্ষেত্র। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) ২০১৭ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী- এই এলাকায় ৬৩টি এশিয়ান হাতি বাস করে। উখিয়া-টেকনাফ এবং রামু (আংশিক) উপজেলার বনভূমিতে বাস করলেও পানেরছড়া-রাজারকূল এবং বালুখালী-ঘুমধুম করিডোর দিয়ে হাতিগুলো বান্দরবান ও মিয়ানমারে চলাচল করত। রামু ক্যান্টনমেন্ট স্থাপনের ফলে আগেই পানেরছড়া-রাজারকূল করিডোর বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গারা আসায় বাকি সাড়ে চার কিলোমিটার করিডোরও সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে হাতির সঙ্গে মানুষের সংঘর্ষ বাড়ছে। উখিয়া-টেকনাফের বনভূমিতে পরিকল্পনাহীন বসতি এবং জ্বালানি কাঠ সংগ্রহের ফলে হাতির আবাসস্থল ধ্বংস হয়ে গেছে এবং হাতির খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে ভবিষ্যতে মানুষ ও হাতির সংঘর্ষ আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

    ব্যাপক ক্ষতি জীব বৈচিত্র্যের :
    স্থায়ী কমিটির সভায় বলা হয়, রোহিঙ্গা বসতির ফলে জীববৈচিত্র্য ব্যাপকভাবে ধ্বংস হয়, যা নিরূপণে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন। তাছাড়া এই ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ করতে হয় বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে। কক্সবাজারের মহেশখালীতে বাস্তবায়নাধীন সিঙ্গেল পয়েন্ট মোরিং (এসপিএম) প্রকল্পের জন্য প্রস্তাবিত সংরক্ষিত বনভূমিতে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে বিশেষজ্ঞ কমিটি জীববৈচিত্র্যের ক্ষয়ক্ষতির হিসাব-নিকাশ করে। একই জেলায় প্রায় একই ভূ-প্রকৃতির অংশ হওয়ায় এসপিএম প্রকল্পের বিশেষজ্ঞ কমিটির নির্ধারিত ক্ষয়ক্ষতির অনুরূপ হারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মাধ্যমে ধ্বংস হওয়া ছয় হাজার একর রক্ষিত ও সংরক্ষিত বনভূমিতে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় এক হাজার ৪০৯ কোটি টাকা। বনজদ্রব্যের ৪৫০ কোটি ও জীববৈচিত্র্যের এক হাজার ৪০৯ কোটি মিলে মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এক হাজার ৮৬৫ কোটি টাকা। আরও সঠিক হিসাব নির্ধারণে ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয় থেকে ১০ সদস্যবিশিষ্ট বিশেষজ্ঞ কমিটির রূপরেখা প্রণয়ন করা হয়েছে।

    অবকাঠামো নির্মাণ অব্যাহত :
    শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কক্সবাজার দপ্তরের (আরআরআরসি অফিস) ৭ অক্টোবর পর্যন্ত হিসেবে রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা কাজের হালনাগাদ প্রতিবেদনে শুধু বসতির কারণেই ক্ষতি দেখানো হয়েছে সাড়ে ছয় হাজার একর বনের। গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা কার্যক্রম, ভাসানচরে স্থানান্তর এবং ক্যাম্প এলাকার সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির পর্যালোচনা করা হয়।

    এ সময় বলা হয়, রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে আবাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তাই কক্সবাজারে আর কোনো জমি বরাদ্দ দেওয়া যাবে না। কক্সবাজারে বরাদ্দ দেওয়া আট হাজার একর বনভূমির বাইরে রোহিঙ্গাদের আর কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। এসব তত্ত্বাবধান করবেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক।

    তবে বিভিন্ন সংস্থা ক্যাম্প এলাকায় চলাচলের জন্য রাস্তা, ল্যাট্রিন, নলকূপ, গুদামঘর,ওয়্যারহাউস ইত্যাদি তৈরি করছে। বন বিভাগের গেজেটভুক্ত সংরক্ষিত, রক্ষিত বনভূমিতে এসব স্থাপনা তৈরি করা হচ্ছে তাদের সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে। এ পর্যন্ত ৩৪টি ক্যাম্প ও ২৮টি সিআইসি অফিস স্থাপন করা হয়েছে।

    এসব ক্যাম্পে দুই লাখ ১২ হাজার ৬০৭টি ঘর (অস্থায়ী শেল্টার), ৯ হাজার ৪৩৭টি নলকূপ, ৫৮ হাজার ৩০টি ল্যাট্রিন, ১৬ হাজার ৯৫৭টি গোসলখানা, ২০ কিলোমিটার বিদ্যুৎ লাইন, ৩৪ দশমিক ৬০ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক, ত্রাণ সংরক্ষণের জন্য ২০টি অস্থায়ী গুদাম নির্মাণ করা হয়েছে। স্থাপনার পরিমাণ ক্রমাগত বাড়ছে।

    স্থাপনা নির্মাণ করতে গিয়ে ইউএনএইচসিআরসহ বিভিন্ন এনজিও, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, এলজিইডি, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরসহ অন্যান্য সংস্থা ব্যাপক হারে পাহাড় কাটছে। ক্যাম্প এলাকায় বনভূমির পাহাড় কেটে পুলিশ ক্যাম্প এবং বিভিন্ন সংস্থার অফিসের জন্যও অবকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে।

    জ্বালানি সংগ্রহে বন ধ্বংস এক হাজার ৮০০ একর :
    রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন ধরনের ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হলেও রান্নার জন্য কোনো জ্বালানির ব্যবস্থা করা হয়নি। তারা ক্যাম্পের বাইরে এক হাজার ৮৩৭ একর বনভূমিতে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করে গাছ কাটছে। এমনকি গাছের শিকড়ও উপড়ে ফেলছে। জ্বালানি কাঠ সংগ্রহের কারণে বনজদ্রব্য ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৫৫ কোটি টাকা। বিভিন্ন সংস্থা এক লাখ ৭০ হাজার ৪৭৮ পরিবারকে (স্বাগতিক পরিবারসহ) বিকল্প জ্বালানি হিসেবে এলপিজি সরবরাহ করেছে। এর মধ্যে রোহিঙ্গা পরিবার এক লাখ ৬৪ হাজার ৫১৩টি এবং স্থানীয় স্বাগতিক পরিবার পাঁচ হাজার ৯৬৫টি।

    কিছুদিন আগে রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকা পরিদর্শন করে আসা পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন সভায় সংসদীয় কমিটিকে জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কোনো কোনো স্থানে হাতির ছবি টানানো রয়েছে এবং লেখা আছে হাতির চলাচলের পথ। অথচ সেখানে রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি করে থাকতে দেওয়া হয়েছে। তারা সেখানে অবস্থান করছে।

    এ অবস্থায়, ক্রমাগত এ ধ্বংসযজ্ঞ আর চলতে দেওয়া যায়না। আন্তর্জাতিক মহলকে বন, পরিবেশ, জীববৈচিত্র্যের এ ভয়ংকর ক্ষয়ক্ষতির কথা অবহিত করা হবে। এক্ষতি সহসায় পূরণ করা নাগেলেও আন্তজার্তিক মহলকে ক্ষতি পূষিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে জরুরী ভিত্তিতে আহবান জানানো হবে।

    প্রসঙ্গত, একাদশ জাতীয় সংসদের স্থায়ী কমিটির অনুষ্ঠিত এ সভা কক্সবাজারের জন্য প্রথম একটি সভা।

  • টেকনাফে বন্দুকযুদ্ধে রোহিঙ্গাসহ নিহত ২

    টেকনাফে বন্দুকযুদ্ধে রোহিঙ্গাসহ নিহত ২

    টেকনাফে (বিজিবি) সদস্যদের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ দুইজন রোহিঙ্গা ইয়াবা কারবারি নিহত হয়েছে।

    শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) ভোর রাত ৪টার দিকে টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং নাফ নদীর সীমান্তে এ ‘বন্দুকযুদ্ধে’র ঘটনা ঘটে।

    এ সময় কক্সবাজারের উখিয়া কুতুপালং ক্যাম্পের সোলতান আহমদের ছেলে মো: আবুল হাসিম (২৫) ও আবু ছিদ্দিকের ছেলে নুর কামাল (১৯) নিহত হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে বিজিবির সদস্যরা ৫০ হাজার পিস ইয়াবা, একটি দেশীয় তৈরী বন্দুক, দুই রাউন্ড তাজা কার্তুজ ও দুইটি ধারালো কিরিচ উদ্ধার করেছে।

    টেকনাফ ২নং বিজিবি’র অধিনায়ক লে. কর্নেল ফয়সল হাসান খান সত্যতা নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, ‘গোপন সূত্রে টেকনাফের হোয়াইক্যং বিওপির সদস্যরা জানতে পারেন যে মিয়ানমার থেকে একটি ইয়াবার চালান সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করবে।

    এই খবরে দায়িত্বরত বিজিবির সদস্যরা হোয়াইক্যং সীমান্তের নাফ নদীর পারে অবস্থান নেয়। এ সময় একটি কাঠের নৌকা করে কিছু লোক নাফ নদী পার হয়ে এপারের সীমান্তে উঠার চেষ্টা করলে বিজিবির সদস্য তাদের পাচারকারি হিসাবে চ্যালেঞ্জ করে তাদের আটকের চেষ্টা চালায়। এ সময় পাচারকারিরা বিজিবিকে লক্ষ্য করে গুলি করলে বিজিবিও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি করে।

    এক পর্যায়ে পাচারকারিরা নৌকা নিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। এ সময় দুইজন লোককে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখে তাদেরকে উদ্ধার করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষনা করে। মৃতদেহগুলো ময়না তদন্তের জন্য কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে রয়েছে।

    এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট আইনে টেকনাফ থানায় মামলা রুজু করা হয়েছে।

  • রোহিঙ্গা যুবককে জবাই করে হত্যা করল আরেক রোহিঙ্গা

    রোহিঙ্গা যুবককে জবাই করে হত্যা করল আরেক রোহিঙ্গা

    উখিয়া রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পে নৃশংসভাবে এক রোহিঙ্গা যুবক আরেক রোহিঙ্গা যুবককে দিনদুপুরে জবাই করে হত্যা করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে, উখিয়া লম্বাশিয়া পাড়া এ/পূর্ব ক্যাম্পে সোমবার ১৪ অক্টোবর সকাল ১০ টার দিকে। এ তথ্য ২৪ ঘন্টা ডট নিউজকে নিশ্চিত করেছেন উখিয়া থানার ওসি আবুল মনসুর।

    ওসি জানান, নিহত রোহিঙ্গা ব্যক্তির নাম মৌলভী মোহাম্মদ ইউনুছ (২৫), পিতার নাম-মোহাম্মদ আলী। সে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সি ব্লকের বাসিন্দা।

    নিহত রোহিঙ্গা মোহাম্মদ ইউনুসের সাথে রোহিঙ্গা নাজির হোসেনের পুত্র মোহাম্মদ ফয়সালের বোনের কিছুদিন আগে বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু বিভিন্ন সামাজিক কারণে বিয়েটি আর হয়নি।

    নিহত রোহিঙ্গা মোহাম্মদ ইউনুস ঘটনার দিন সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে খুনী রোহিঙ্গা মোহাম্মদ ফয়সালের ক্যাম্পের সামনে দোকানে যায়। একসময় মোহাম্মদ ফয়সাল নিহত মোহাম্মদ ইউনুসকে এখনে কেন এসেছিস বলে ধমক দিলে দু’জনের মধ্যে প্রচন্ড তর্কাতর্কি হয়। একপর্যায়ে রোহিঙ্গা মোহাম্মদ ফয়াসাল মোহাম্মদ ইউনুসকে মাটিতে ফেলে তার হাতে থাকা চুরি দিয়ে নৃশংসভাবে জবাই করে হত্যা করে পালিয়ে যায়।

    উখিয়া থানা পুলিশ হত্যাকান্ডের খবর পেয়ে মোহাম্মদ ইউনুসের জবাই করা লাশ উদ্ধার করে। পরে অভিযান চালিয়ে খুনী ফয়সালকে ঘটনার ২ ঘন্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করে করার কথা ২৪ ঘন্টা ডট নিউজকে জানিয়েছেন উখিয়া থানার ওসি মোহাম্মদ আবুল মনসুর।

    তিনি জানিয়েছেন, নিহত মোহাম্মদ ইউনুসের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।

  • রোহিঙ্গাদের জাতীয় পরিচয়পত্র দিবে মিয়ানমার

    রোহিঙ্গাদের জাতীয় পরিচয়পত্র দিবে মিয়ানমার

    রোহিঙ্গাদের জাতীয় পরিচয়পত্র দিতে স্বীকার হয়েছে মিয়ানমার। তাদের ফরমে ভুল আছে-এটা সংশোধন করবে তারা, সুতরাং এটা একটা বড় অর্জন বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন।

    বুধবার (২ অক্টোবর) বেলা পৌনে ১২টায় রাজধানীর হোটেল লেক ক্যাসেলে বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের (বিইআই) উদ্যোগে ‘সহিংসতা ও উগ্রবাদ প্রতিরোধে যুব সমাজের ভূমিকা : উত্তরবঙ্গ থেকে অভিজ্ঞতা’ শীর্ষক জাতীয় গোলটেবিল বৈঠকের পর গণমাধ্যমকে এ কথা বলেন তিনি।

    পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের সাইড লাইনে বাংলাদেশ, চীন ও মিয়ানমারের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে শক্তিশালী আলোচনা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে যৌথ কমিশন গঠন করা হবে। যাতে তারা তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারে।

  • অবৈধ অনুপ্রবেশকারী ৪৫ রোহিঙ্গা সীতাকুণ্ডে আটক

    অবৈধ অনুপ্রবেশকারী ৪৫ রোহিঙ্গা সীতাকুণ্ডে আটক

    সীতাকুণ্ড উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের কেশবপুর মোল্লার একটি বাড়ি থেকে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশকারী ৪৫ রোহিঙ্গাকে আটক করেছে পুলিশ।

    গোপন সূত্রের খবরে মঙ্গলবার রাত পৌনে ১ টার দিকে বিএম কন্টেইনার ডিপোর উত্তর পাশে কেশবপুর মোল্লাপাড়ায় মোবারক হোসেনের ভাড়া ঘর থেকে পুলিশ তাদের আটক করে।

    আটককৃতরা হলেন,  মো. সাদ্দাম হোসেন (২০), মো. শাহ আলম (১৮), মো. তারেক (১৮),  সাদেক (১৯), আবু সাদেক (১৯), নুরুল হুদা (১৯), মোহামুদুল হাসান (১৫), মো. হারেজ (১৮), হামিদ হোসেন (১২), শামছু আলম (২৫), জানে আলম (২০), মো. শফিক (১৮), একরাম (২৬), মো. শফিক (২৭), শহীদুল আমিন (১৮), আসাদুজ্জামান (১৮), বেলাল (১৮), মো. হাশেস (১৮), ওসমান (১৮), নুরুল ইসলাম (১৮), মো. রফিক (১৯), আজিজুর রহমান (১৮), মো. ইদ্রিছ (১৯), মো. তাহের (১৮), আল কামাল (১৮), ওয়াসেত (১৮), ওসমান (১৮), আলফাজ (১৮), মো. ইদ্রিছ (১৮), ইয়াছিন আরাফাত (১২), মনছুর আলম (১৮), আবুল ফয়েজ (১৮), আইয়ুব (১৮), জোবায়ের (১৮), খোরশেদ আলম (১৮), মো. ইসমাইল (১৮), বশির আহমদ (১৮), মো. হারেজ (১৮), মো. আলম (১৮), হাছেন (১৮), রবিউল ইসলাম (২৫), রহিম উল্লাহ (১৮), মাহবুব আলম (১৮), শাহ আলম (১৯) ও রবিউল আলম (১৪)।

    থানা সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজারের উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে পালিয়ে আসা একদল রোহিঙ্গা সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত কেশবপুর মোল্লাপাড়া এলাকায় অবস্থান নিয়ে স্থানীয় একটি কারখানায় কাজ করছে বলে খবর পায় সীতাকুণ্ড থানা পুলিশ। এ খবরে কেশবপুর মোল্লাপাড়ায় মোবারক হোসেনের ভাড়া ঘর থেকে ৪৫ জনকে আটক করতে সক্ষম হয় সীতাকুণ্ড থানা পুলিশ।

    আটক রোহিঙ্গাদের মধ্যে কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা বিগত কয়েকমাস ধরে একজন দুজন করেই এখানে সমবেত হয়ে স্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠানে মাসিক ৮ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করছেন।

    ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে আটককৃতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি চলছে বলে জানালেন সীতাকুণ্ড থানার ওসি মো. দেলওয়ার হোসেন। আটক ৪৫ জন রোহিঙ্গাকে বিকালে আদালতে প্রেরণ করা হবে বলে জানান ওসি।

    সীতাকুণ্ড থানার ওসি (তদন্ত) শামীম শেখ জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে পালিয়ে আসা এসব রোহিঙ্গা আশ্রয়দাতাদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সীতাকুণ্ডে আর কোথাও রোহিঙ্গারা অবস্থান করছে কিনা তা তদন্ত করে অভিযান অব্যাহত রাখার কথাও বললেন এ পুলিশ কর্মকর্তা।

  • রোহিঙ্গা ইস্যুতে মানবাধিকার পরিষদে ৩৭-২ ভোটে বাংলাদশের জয়

    রোহিঙ্গা ইস্যুতে মানবাধিকার পরিষদে ৩৭-২ ভোটে বাংলাদশের জয়

    মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করার আশ্বাস দিলেও ঠিকই শেষ পর্যন্ত মিয়ানমারের পাশেই দাড়ালো চীন। রোহিঙ্গাসহ মিয়ানমারে সংখ্যালঘুদের ওপর ভয়াবহ নির্যাতন-নিপীড়নের আন্তর্জাতিক তদন্ত ও বিচারের আহ্বানসংবলিত প্রস্তাবকে একপেশে বলে অভিহিত করে এ নিয়ে বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) মানবাধিকার পরিষদে ভোটাভুটির আহ্বান জানিয়েছিল চীন। একই সঙ্গে চীন ও মিয়ানমার সবাইকে প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিল।

    ভোটের শেষে ফলে দেখা গেছে, চীন ও ফিলিপাইন ছাড়া কেউই ওই প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয়নি।

    ভারত, জাপান, নেপাল, কঙ্গো, ক্যামেরুন, অ্যাঙ্গোলা ও ইউক্রেন—এই সাতটি দেশ ‘অ্যাবস্টেইন’ ভোট দিয়ে কারো পক্ষ নেওয়া থেকে বিরত থাকে। প্রস্তাবটি গৃহীত হয়েছে ৩৭-২ ভোটে।

    ► মানবাধিকার পরিষদে বাংলাদেশের উদ্যোগে ইইউ ও ওআইসির যৌথ প্রস্তাব ৩৭-২ ভোটে গৃহীত
    ► রোহিঙ্গা নিপীড়নের বিচার ও রাষ্ট্রহীনতা দূর করতে হবে, মিয়ানমারকে প্রত্যাবাসন চুক্তি বাস্তবায়নের তাগিদ

    ভোটের হিসাবে দেখা যায়, ৪৭ সদস্যের মানবাধিকার পরিষদে গতকাল মিয়ানমার ইস্যুতে ভোট দেয়নি কিউবা। জানা গেছে, কিউবার প্রতিনিধিরা ভোটের সময় অধিবেশন কক্ষে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তাঁরা দৃশ্যত প্রস্তাবটির পক্ষে অবস্থান নিয়ে ভোট দেওয়া থেকেই বিরত থেকেছেন। সাধারণত কিউবা সুনির্দিষ্ট কোনো দেশভিত্তিক প্রস্তাবের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে থাকে।

    ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে নতুন করে রোহিঙ্গা সংকট শুরু হওয়ার পর রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভুটিতে মিয়ানমারের পক্ষে এবারই সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীনের সমান্তরাল নীতিতে চলা রাশিয়া বর্তমানে মানবাধিকার পরিষদের সদস্য নয়। প্রস্তাবসম্পর্কিত দেশ হিসেবে মিয়ানমার মানবাধিকার পরিষদে প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বক্তব্য দিলেও সদস্য না হওয়ায় ভোট দিতে পারেনি।

    বাংলাদেশের উদ্যোগে ‘মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমান ও অন্য সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ বিষয়ে এবারের প্রস্তাবটি এনেছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি)। গৃহীত প্রস্তাবে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর যৌন অপরাধসহ সব ধরনের অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মানবাধিকার লঙ্ঘনসংশ্লিষ্ট সব আন্তর্জাতিক বিধান ও আন্তর্জাতিক বিচারপ্রক্রিয়া তথা জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ফৌজদারি বিচারব্যবস্থার আওতায় আনার জন্য তদন্তপ্রক্রিয়া জোরদার করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রকারান্তরে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার লঙ্ঘনের পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতে (আইসিসি) চলমান প্রক্রিয়ার পাশাপাশি ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসের (আইসিজে) শরণাপন্ন হওয়ার উদ্যোগকে আন্তর্জাতিক পরিসরে উৎসাহিত করা হয়েছে।

    এ ছাড়া মিয়ানমারবিষয়ক ‘নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তথ্যানুসন্ধানী মিশনের’ প্রতিবেদনগুলো জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ এবং সাধারণ পরিষদের মাধ্যমে জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সব অঙ্গ-সংগঠনের বিবেচনার্থে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রস্তাবটিতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চলমান সব প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়ে এরূপ পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এখতিয়ারের কথা পুনর্ব্যক্ত করা হয়।

    জেনেভায় জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মো. শামীম আহসান গতকাল সন্ধ্যায় ভোটের আগে মানবাধিকার পরিষদকে বলেন, মানবতার ডাকে সাড়া দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্মম নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গাদের জন্য সীমান্ত খুলে দিয়েছিলেন। তবে, দুই বছর পেরিয়ে গেলেও মিয়ানমার এখনো উত্তর রাখাইনে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে।

    গৃহীত প্রস্তাবে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পাদিত দ্বিপক্ষীয় চুক্তি অনুযায়ী উত্তর রাখাইন অঞ্চলে সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে পূর্ণ নিরাপত্তা ও সম্মানের সঙ্গে নিজেদের আবাসস্থলে ফিরে যেতে উৎসাহিত করতে মানবাধিকার পরিষদ মিয়ানমারকে আহ্বান জানিয়েছে। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করে প্রস্তাবে রোহিঙ্গারা ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত তাদের গুরুভার বহনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদার হওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়কে আহ্বান জানানো হয়েছে।

    বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি বলেন, অবর্ণনীয় নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর পক্ষে জবাবদিহি ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার পথে এই প্রস্তাব একটি মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হবে।

    ভোটের আগেই মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেন, মিয়ানমার তার অভ্যন্তরীণ বিচারব্যবস্থার মাধ্যমে অপরাধের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে সক্ষম। প্রস্তাবে কেবল একটি সম্প্রদায়ের মনোভাব প্রতিফলিত হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

    চীনা প্রতিনিধিও প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বলেন, গত সপ্তাহে নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও চীনের মধ্যে মন্ত্রিপর্যায়ের বৈঠকসহ সাম্প্রতিক সময়ে যে ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে সেগুলো তুলে ধরতে এই প্রস্তাব ব্যর্থ হয়েছে।

    ফিলিপাইনের প্রতিনিধি প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেওয়ার কথা বলে এই সংকটের মূল কারণগুলো সমাধানের ওপর জোর দেন। জাপানের প্রতিনিধি মিয়ানমারে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানান।

  • রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে জাতিসংঘে ৪ দফা প্রস্তাব দেবেন প্রধানমন্ত্রী

    রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে জাতিসংঘে ৪ দফা প্রস্তাব দেবেন প্রধানমন্ত্রী

    প্রলম্বিত রোহিঙ্গা সমস্যার দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তিনি এই বিষয়ে চলমান জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) অধিবেশনে ৪ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করা হবে।

    ২৭ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে তিনি প্রস্তাবগুলো তুলে ধরবেন বিশ্বনেতাদের সামনে।
    ৪ দফা প্রস্তাব—
    ১. রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবর্তন বিষয়ে মিয়ানমারকে অবশ্যই তাদের রাজনৈতিক ইচ্ছে সুস্পষ্ট করতে হবে। এজন্য রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ কী করছে সেটাও সুস্পষ্টভাবে বলতে হবে।
    ২. বৈষম্যমূলক আইন ও চর্চা পরিত্যাগ করতে হবে এবং রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের উত্তর রাখাইন রাজ্যে ‘যাও এবং দেখ’ এই নীতিতে পরিদর্শনের অনুমতি দিয়ে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই তাদের মধ্যে আস্থা তৈরি করতে হবে।
    ৩. রাখাইন রাজ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বেসামরিক পর্যবেক্ষক মোতায়েন করে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই রোহিঙ্গাসহ সবার নিরাপত্তা ও সুরক্ষার নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে।
    ৪. আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্য নিশ্চিত করতে হবে, রোহিঙ্গা সঙ্কটের মূল কারণ এবং রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত নৃশংসতা দূর করা হয়েছে।

    মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় বিকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সংখ্যালঘু পরিস্থিতি নিয়ে অনুষ্ঠিত উচ্চ পর্যায়ের একটি অনুষ্ঠানে এই ঘোষণা প্রদান করেন। জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন এবং ওআইসি সেক্রেটারিয়েটের উদ্যোগে যৌথভাবে জাতিসংঘ সদর দফতরে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
    জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭২তম অধিবেশনেও রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসরনে ৫ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

    তিনি বলেন, সেই প্রস্তাবে কফি আনান কমিশনের সুপারিশ সমূহের পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন সহ রাখাইন রাজ্যে একটি বেসামরিক নিরাপদ পর্যবেক্ষণ এলাকা প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবও ছিল।

    প্রধানমন্ত্রী পুনর্বক্ত করেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট একটি রাজনৈতিক সমস্যা। এর মূল মিয়ানমারে গভীর প্রথিত। সুতরাং এ সঙ্কটের সমাধান মিয়ানমারের ভেতরেই খুঁজে পেতে হবে।

    মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ড.মাহাথির মোহাম্মদ, ওআইসি মহাসচিব ড. ইউসেফ বিন আহমেদ আল-ওথাইমেন এবং সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. ইব্রাহিম বিন আবদুল আজিজ আল আসাফ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। এ সময় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জার্মানি, বেলজিয়াম, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, সুইডেন, নেদারল্যান্ড, তুরস্ক, সিঙ্গাপুর, কুয়েত, সার্বিয়া, ফিলিপাইন এবং গাম্বিয়ার মন্ত্রী এবং প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানবিক সহায়তা এবং অন্যান্য সহযোগিতা রোহিঙ্গাদের তাৎক্ষণিক প্রয়োজনগুলো সমাধান করে। তবে রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে এর স্থায়ী সমাধান বের করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

    ‘রোহিঙ্গাদের অবশ্যই তাদের মাতৃভূমিতে ফেরত পাঠাতে হবে, যেখানে তারা শতাব্দীর পর শতাব্দী বসবাস করেছিল, ’বলেন তিনি।

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক, রোহিঙ্গা সমস্যার কোনরকম সমাধান ছাড়াই আমরা আরও একটি বছর পার করে দিয়েছি। মিয়ানমারের উত্তর রাখাইন রাজ্যে নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের দুর্দশা নিরবচ্ছিন্নভাবে অব্যাহত রয়েছে।

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী রোহিঙ্গারা নৃশংস অপরাধের শিকার হচ্ছে।

    তিনি বলেন, টেকসই, নিরাপদ এবং স্বেচ্ছা প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করার জন্য রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জবাবদিহির বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু।

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক্ষেত্রে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের চলমান কার্যক্রম অনুসরণ করছে। আমরা বিশ্বাস করি, ওআইসি তার জবাবদিহি সম্পর্কিত অ্যাডহক মন্ত্রিপরিষদ কমিটির মাধ্যমে জবাবদিহি নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা পূরণেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে।

    বাংলাদেশ এ বছরের ৩১ মে (শুক্রবার) মক্কা আল মুকাররমায় অনুষ্ঠিত ১৪তম ওআইসি সম্মেলনের যৌথ ঘোষণার প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যৌথ ঘোষণায় বলা হয়, ‘গাম্বিয়ার নেতৃত্বাধীন অ্যাডহক মন্ত্রিপরিষদ কমিটি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে ওআইসির পক্ষে মামলা করার তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেবে।’
    আমরা বিশ্বাস করি ওআইসির যৌথ ঘোষণা অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণের এটাই সময়, ’বলেন তিনি।

    শেখ হাসিনা বলেন, জোরপূর্বক নির্বাসিত ১১ লাখ মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিককে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। মানবিক দিক বিবেচনা করে আমরা আমাদের সীমান্ত খুলে দিয়েছিলাম, যা ইসলামের নৈতিক শিক্ষা।

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, আশ্রয় গ্রহণকারী রোহিঙ্গাদের মৌলিক প্রয়োজনগুলো মেটাতে এবং তাদের দেশে ফেরত না যাওয়া অবদি সম্ভব সকল ধরনের পদক্ষেপ অব্যাহত রাখবে বাংলাদেশ।

    তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা ৬ হাজার ৮ ’শ একরের বেশি বনভূমিতে আশ্রয় নিয়েছে, যাতে বাস্তুসংস্থান ও পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

    শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আশ্রয়, খাদ্য, স্বাস্থ্য সেবা, পানি, স্যানিটেশনসহ রোহিঙ্গাদের সবধরনের মানবিক সহায়তা দিচ্ছি।
    তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরগুলোর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয় সাধনে বিপুল সংখ্যক বেসরকারি খাতের জনবলকেও সম্পৃক্ত করা হয়েছে।
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, সড়ক-বিদ্যুৎ সরবরাহসহ নতুন ও অতিরিক্ত অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে ২১৯টি মেডিকেল সুবিধা স্থাপন করা রয়েছে। যার মধ্যে ৫০টি সরকারিভাবে পরিচালিত হচ্ছে।
    শেখ হাসিনা বলেন, অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের প্রত্যক্ষ সহায়তার জন্য সরকারের কোষাগার থেকে প্রায় ১২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড় করা হয়েছে।
    তিনি বলেন, অন্যান্য ব্যবস্থার মধ্যে সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এ পর্যন্ত সরকারি তালিকাভুক্ত ৩৯ হাজার ৮৪১ জন রোহিঙ্গা এতিম শিশুর দায়িত্বভার গ্রহণ করেছে। এছাড়া তিনি তার বিশেষ ত্রাণ তহবিল থেকে রোহিঙ্গা ত্রাণ শিবির স্থাপন করা কক্সবাজারের স্থানীয় জনসাধারণের জন্য আড়াই মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ সাহায্য প্রদান করেছেন।

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অধিক ঘনবসতির সমস্যা সমাধান এবং মানবিক সেবার সুবিধার্থে সুরক্ষার সমস্ত বিধান রেখে রোহিঙ্গাদের জন্য আমরা ভাসানচরের উন্নয়ন করেছি।
    তিনি বলেন, মিয়ানমারে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের জন্য ভাসানচরে উন্নত আবাসন এবং জীবিকার সুযোগও থাকবে।

    উচ্চ পর্যায়ের এ বৈঠকে ওআইসির মহাসচিবসহ ইসলামী বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী ও প্রতিনিধিরা অংশ নেন। এর বাইরে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জার্মানি, বেলজিয়াম, সুইডেন, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী ও প্রতিনিধীরাও উপস্থিত ছিলেন বৈঠকে।

    এ সময় অন্যান্যের মধ্যে ন্যাশনাল অ্যাডভাইজারি কাউন্সিল অব নিউরো ডেভেলপমেন্ট ডিজঅর্ডার অ্যান্ড অটিজম অব বাংলাদেশের চেয়ারপারসন সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুল ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।