চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আলহাজ্ব আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেছেন, বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাস ঢাকা, নারায়নগঞ্জের পর বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় নগরের বিভিন্ন স্পটে ১২টি টেস্টিং বুথ স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছি। তন্মোধ্যে এখন পর্যন্ত ৫টি বুথ স্থাপন কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘করোনার এ সংকটে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ আক্রান্ত ব্যক্তিকে সনাক্ত করা। নানা সীমাবদ্ধতার কারণে নমুনা সংগ্রহ নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে সবখানেই। এ সময় সংকট কাটাতে নমুনা সংগ্রহের উদ্যোগ বাস্তবায়ন করেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন।
আজ কুলগাঁও সিটি কর্পোরেশন কলেজে যে বুথ স্থাপন করেছে, এতে বুথে নমুনা দিতে হলে মোবাইল নম্বর এবং জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে নিয়ে আসতে হবে। বুথে আসার পর আমাদের প্রশিক্ষিত কর্মীরা করোনা আক্রান্ত সন্দেহভাজন ব্যক্তির কাছে কয়েকটি তথ্য জানতে চান। যেমন, তিনি ডায়াবেটিস কিংবা কিডনিজনিত রোগে ভুগছেন কি না। এমন কোনো ব্যক্তির সংস্পর্শে গেছেন কি না, যিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। সব তথ্য ডেটা ফর্মে লিপিবদ্ধ করার পর প্রশিক্ষিত কর্মীরা করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করেন। এখন পর্যন্ত আমাদের বুথে কাজ করা কোনো কর্মী করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হননি।
আজ সকালে নগরীর কুলগাঁও সিটি কর্পোরেশন কলেজে করোনা নমুনা সংগ্রহ বুথ উদ্বোধনকালে মেয়র এসব কথা বলেন।
উদ্বোধনকালে কাউন্সিলর সাহেদ ইকবাল বাবু, মেয়রের একান্ত সচিব মোহাম্মদ আবুল হাশেম, ব্র্যাকের আঞ্চলিক পরিচালক হানিফ উদ্দীন, মহানগর আওয়ামীলীগের সদস্য বেলাল আহমদ, ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি মোহাম্মদ এয়াকুব, কুলগাঁও সিটি কর্পোরেশন কলেজের অধ্যক্ষ আমিনুল হক, স্কুলের প্রধান শিক্ষক এস এম এহসান উদ্দিন,প্রভাষক শহিদুল ইসলাম, মোহাম্মদ সহিদুল আকতার, এস এম মামুনুর রশিদ মামুন, মোহাম্মদ রাশেদ, আবু তাহের, আজগর আলী, আকতার জামাল, জুয়েল রানা উপস্থিত ছিলেন।
মেয়র আরো বলেন, বুথে সেবাদানকারী প্রত্যেক কর্মীকে যথাযথ প্রশিক্ষণ দেওয়ার পর নমুনা সংগ্রহের কাজে পাঠানো হয়েছে। প্রত্যেক কর্মীকে পার্সোনাল প্রটেকশন ইকুইপমেন্ট (পিপিই) সরবরাহ করাসহ সব ধরনের জিনিসপত্র সরবরাহ করে আসছি। সম্পূর্ণ বিনা পয়সায় যেকোনো মানুষ আমাদের বুথে নমুনা দিয়ে করোনা পরীক্ষা করাতে সক্ষম হচ্ছেন।’
বুথের মাধ্যমে নমুনা সংগ্রহ করা হলে স্বাস্থ্যকর্মী সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি থাকে না বলে মন্তব্য করে মেয়র বলেন, ‘বাড়ি বাড়ি গিয়ে যাঁরা নমুনা সংগ্রহ করা হলে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি থাকে, কারণ নাকের ভেতর থেকে সোয়াব সংগ্রহ করতে হলে স্বাস্থ্যকর্মীকে ওই ব্যক্তির খুব কাছাকাছি চলে যেতে হয়। আবার যখন নাকের ভেতর থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়, তখন রোগী অবধারিতভাবে হাঁচি দেন। এতে নমুনা সংগ্রহকারী কিন্তু সব সময় ঝুঁকির মধ্যে থাকেন।’
তিনি নগরবাসীকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে বলেন, বিজ্ঞাণীরা ভ্যাকসিন বা ঔষধ আবিস্কার করবেন, চিকিৎসকরা চিকিৎসা প্রয়োগ করবেন কিন্তু ধৈর্য্যসহকারে সাহসের সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মেনে জীবন যাপন করতে হবে।
লকডাউনের কার্যকারিতার কথা উল্লেখ করে মেয়র বলেন, লকডাউন কার্যকর থাকাকালীন সময়ে ওই এলাকায় কেউ প্রবেশ ও বের হতে পারবে না। সরকারি-বেসরকারি অফিস থাকবে সাধারণ ছুটির আওতায়। খাবার ও ওষুধসহ সবধরণের দোকানপাট বন্ধ থাকবে। চলবে না গণপরিবহন, থাকবে না স্টপেজও। লকডাউন এলাকায় অবস্থানকারী সকল সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারী সাধারণ ছুটির আওতায় থাকবেন। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তারা যাতে কোন ধরণের সমস্যার সম্মুখীন না হন সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, লকডাউন মানে লকডাউন। সবাইকে অবশ্যই ঘরে থাকতে হবে। ইতোমধ্যে আমরা মাইকিং করেছি। প্রতিটি ঘরে ঘরে নির্দেশনা দিয়ে লিফলেট পৌঁছে দিচ্ছি। সবকিছু মনিটরিং করার জন্য কেন্দ্রের ফরম্যাট অনুযায়ী, স্থানীয় কাউন্সিলরকে আহবায়ক করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন প্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা, ই-কমার্স এসোসিয়েশনের প্রতিনিধি, সমাজ কল্যাণ সমিতির প্রতিনিধি, এনজিও প্রতিনিধি ও স্থানীয় মসজিদের ইমাম সদস্য আছেন।
![](https://www.24ghonta.news/wp-content/uploads/2020/06/বৈঠক-1-300x171.jpg)
লকডাউনের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে চসিকের সমন্বয় বৈঠক
মানতে হবে সরকারের স্বাস্থ্যবিধি
চসিকের প্রদর্শিত নিয়ম-কানুন-মেয়র
আজ রাত ১২ টা থেকে লকডাউন কার্যকর হচ্ছে নগরীর ১০নং উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডে। লকডাউনের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আজ দুপুরে চসিক কনফারেন্স হলে এক সমন্বয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এতে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ.জ. ম নাছির উদ্দীন। এসময় প্যানেল মেয়র ও কাউন্সিলর ড.নিছার উদ্দিন আহমদ মঞ্জু, চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা, বাংলাদেশ ইনফেন্ট্রি রেজিমেন্ট সিও লে. কর্ণেল মাহবুব, চট্টগ্রামে দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মোস্তফা খালেদ আহমদ, চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি, সিএমপি’র এসপি মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম, মেয়রের একান্ত সচিব মোহাম্মদ আবুল হাশেম, চসিক প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী, ব্রাকের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক মো. হানিফ উদ্দিন, চসিকের ডা.মোহাম্মদ আলী, প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ রেজাউল করিম, আইটি অফিসার ইকবাল হাসান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ডা. সরোয়ার আলম, সহকারি পরিচালক স্বাস্থ্য কামরুল আজাদ প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে সিদ্ধান্তানুযায়ী লকডাউনকৃত ১০ নং উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডে ২০ টি প্রবেশ পথ রয়েছে। তন্মধ্যে ১৪টি রাস্তা বন্ধ থাকবে এবং প্রয়োজনীয় কাজের জন্য ৬টি রাস্তা খোলা থাকবে। লকডাউনের আওতামুক্ত থাকবে সাগরিকাস্থ বিসিক শিল্প এলাকা। প্রতিদিন রিক্সাভ্যানের মাধ্যমে ন্যায্য বাজার মূল্যে কাঁচা বাজার সরবরাহ করা হবে। ধর্মীয় ইবাদত ঘরে থেকেই আদায় করতে হবে, এলাকাবাসীর সার্বিক সহায়তার জন্য থাকবে সিটি কর্পোরেশনের একাধিক কন্ট্রোলরুম ও এলাকাভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবক টীম।
জরুরী প্রয়োজনে চসিকের কন্ট্রোল রুমের নম্বর সমুহ- ঃ ০৩১-৪৩১৫১৩৬৮, ০৩১-৪৩১৫১৩৬৯, ০৩১-৪৩১৫১৩৭০, ০৩১-৪৩১৫১৩৭১, ০৩১-৪৩১৫১৩৭২, মোবাইল- ০১৮১৯-০৫৬৮৪৪, ০১৮১১-৮৮৭০৮৪-তে যোগাযোগ করা যাবে। চসিকের ব্যবস্থাপনায় কোভিড ও নন- কোভিড রোগীদের চিকিৎসা ও হাসপাতালে প্রেরণের জন্য সার্বক্ষণিক এম্বুলেন্সের ব্যবস্থা থাকবে। লকডাউন এলাকায় অবস্থানকারী সকল সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারী সাধারণ ছুটির আওতায় থাকবে। এসময় মেয়র এলাকাবাসীকে সরকারি স্বাস্থ্যবিধি ও চসিকের প্রদর্শিত নিয়মকানুন মেনে লকডাউন কার্যকর করার জন্য অনুরোধ জানান।
২৪ ঘণ্টা/এম আর