ভারতের উত্তর প্রদেশ ও বিহারে ভারী গত এক সপ্তাহ ধরে চলা ভারী বর্ষণে সৃষ্ট বন্যায় মৃতের সংখ্যা শতক ছাড়িয়েছে। দেশটির উত্তরপ্রদেশ ও বিহারসহ কয়েকটি রাজ্যে এ প্রবল বন্যায় ঘরছাড়া হয়েছে কয়েক হাজার মানুষ। ফলে, বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সেখানকার জনজীবন।
স্থানীয় কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে সোমবার বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিরমুখে পড়েছে উত্তরপ্রদেশ। প্রথম চারদিনেই ৮০ জনের মৃত্যু হয় খবর পাওয়া যায়। পরবর্তী ৩ দিনে আরো ১৩ জনসহ প্রদেশটিতে এখন পর্যন্ত ৯৩ জনের মুত্যুর খবর দিয়েছে সংবাদ সংস্থাটি।
এরপরই রয়েছে বিহার। রাজ্যটিতে ভারী বর্ষণে অসংখ্য ঘরবাড়ি ডুবে গেছে। মারা গেছে অন্তত ৪২ জন। সবমিলে দেশটিতে সৃষ্ট এ বন্যায় ১৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সরকারি হিসেবমতে স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত অন্তত ৯৩ জন বন্যা কবলিত হয়ে মারা গেছেন। অন্যদিকে বিহারে বন্যা সংশ্লিষ্ট কারণে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৯ জনে।
অনেক এলাকা তলিয়ে যাওয়ায় জনজীবন হুমকির মুখে পড়েছে। টানা এ বর্ষণে বেশিরভাগ এলাকায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সড়ক ও রেল যোগাযোগ। সংকট দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের। ব্যহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। অনেকে ঝুঁকি নিয়েই নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন।
রোববার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওগুলোতে দেখা গেছে, হাসপাতালের বিভিন্ন কক্ষে রোগী ও স্বজনরা বেডগুলোতে উঠে বসে আছেন। তার ঠিক নিচেই পানি। দেখে মনে হচ্ছে সেগুলো যেন বিছানা নয়, ভেলা। বাড়িঘর, হাসপাতাল, স্কুলসহ বিভিন্ন স্থাপনা থেকে স্থানীয় লোকজনকে উদ্ধার করতে ৩২টি নৌকা নামিয়েছে উদ্ধারকারী দল।
বন্যার ব্যাপক প্রভাব পড়েছে বিহারের রাজধানী পাটনায়ও। গত তিন দিনের টানা বৃষ্টিতে ভেসে গেছে ঘরবাড়ি ও হাসপাতাল। এতে মঙ্গলবার পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। পাটনা শহরে জাতীয় দুর্যোগ মোকাবেলা বাহিনীর তিনটি দল কাজ করছে। চলমান এ অবস্থা আরো ২৪ ঘণ্টা স্থির থাকবে জানিয়ে দেশটির আবহাওয়া অফিস সতর্কতা জারি করেছে।
বন্যার পানিতে রাজপথ তলিয়ে যাওয়ায় রাস্তায় দেখা দিয়েছে তীব্র যানজট। একই সঙ্গে ভারী বৃষ্টির কারণে রেল যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। গত তিন দিনে পাটনার বেশিরভাগ ট্রেনের সময়সূচি হয় পেছানো হয়েছে, নয় বাতিল করা হয়েছে। হাসপাতালে পানি উঠে যাওয়ার কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়েও ব্যাপক আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ভারী থেকে আরও ভারী’ বৃষ্টিপাতের আশঙ্কায় উত্তর প্রদেশের আবহাওয়া অফিস পাটনা শহরে রেড অ্যালার্ট জারি করেছে।
এদিকে, বন্যার কবল থেকে বাদ যায়নি জন্মু-কাশ্মীর, উত্তরখাণ্ড ও মধ্যপ্রদেশ। গত কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে। উত্তরপ্রদেশে শুক্রবার স্বাভাবিকের থেকে ১৭০০ শতাংশ বেশি রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে। সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাজ্যের পূর্বাঞ্চল।
এদিকে, টানা প্রবল বর্ষণের প্রভাব পড়েছে ভারতের বাজারে। বেড়েছে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম। বন্যায় অনেক পেঁয়াজের খেত নষ্ট হয়ে যাওয়ায়, বন্ধ করা হয়েছে পেঁয়াজ রপ্তানি। বন্যার ব্যাপক ক্ষতি থেকে বাঁচতে খুলে দেয়া হয়েছে ফারাক্কাবাঁধের সকল মুখ। এতে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বাংলাদেশেও।