Tag: শাড়ি

  • দেশে প্রথমবার কলাগাছের আঁশে তৈরি হলো শাড়ি

    দেশে প্রথমবার কলাগাছের আঁশে তৈরি হলো শাড়ি

    বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজির উদ্যোগ ও অনুপ্রেরণায় দেশে প্রথমবারের মতো তৈরি হলো কলাগাছের সুতা দিয়ে দৃষ্টিনন্দন শাড়ি।

    বান্দরবানের জেলা প্রশাসকের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সিলেটের মৌলভীবাজার থেকে বান্দরবানে ছুটে আসেন প্রশিক্ষক রাধাবতী দেবী।

    তার তত্ত্বাবধানে দীর্ঘ একমাসের প্রচেষ্টায় কলাগাছের সুতা দিয়ে শাড়ি তৈরি হয়েছে। ১৩ হাতের এ শাড়ির নাম রাখা হয়েছে ‘কলাবতী’।

    এ বিষয়ে প্রশিক্ষক রাধাবতী দেবী বলেন, বাংলাদেশে বিভিন্ন সুতা দিয়ে শাড়ি তৈরি হয়। তবে দেশে প্রথমবার কলাগাছের সুতা থেকে একটি শাড়ি তৈরি করলাম।

    বান্দরবানের জেলা প্রশাসকের অনুরোধে ও তার সার্বিক সহযোগিতায় এটা সফল হয়েছে।

    রাধাবতী দেবী আরও বলেন, প্রথম পর্যায়ে একাধারে ১৫ দিন সময়ে এবং এক কেজি কলাগাছের আঁশের সুতা দিয়ে এই আকর্ষণীয় শাড়ি তৈরি হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামীতে আরও কম সময়ে ও কম খরচে আরও মসৃণ ও উন্নতমানের শাড়ি তৈরি করা সম্ভব হবে।

    মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর বান্দরবানের উপ-পরিচালক আতিয়া চৌধুরী বলেন, আমাদের জেলা প্রশাসকের অনুপ্রেরণায় আমরা বান্দরবানবাসী গর্বিত। তার অক্লান্ত পরিশ্রমে আজ কলাগাছের সুতা থেকে শাড়ি হলো। আগামীতে আরও নিত্যনতুন সামগ্রী উৎপাদন হবে। যাতে নারীদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি আরও তরান্বিত হয়।

    বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক ও এই শাড়ি তৈরির সার্বিক সহযোগী সাই সাই উ নিনি বলেন, বান্দরবান জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজির দুরদর্শী চিন্তার ফসল এই কলাগাছের সুতা থেকে তৈরি ১৩ হাত দৃষ্টিনন্দন শাড়ি। এ পরিবেশবান্ধব শাড়ি সবার কাছে দ্রুত সময়ে পৌঁছে যাবে বলে আমরা আশাবাদী।

    জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, নানা প্রতিকুলতার পথ পাড়ি দিয়ে চ্যালেঞ্জ নিয়ে আমরা কলাগাছের সুতা থেকে একটি দৃষ্টিনন্দন শাড়ি তৈরি করতে পেরেছি। এটি দেখতে যেমন সুন্দর ও তেমন আকর্ষণীয়।

    বান্দরবানের নারীরা কলাগাছ থেকে আঁশ তৈরি করে আরও বিভিন্ন ধরনের হস্তশিল্প ও সৌখিন জিনিসপত্র তৈরি করছে বলে তথ্য দেন জেলা প্রশাসক।

    তিনি বলেন, বান্দরবানে নারীদের উন্নয়নের কথা চিন্তা করে বান্দরবান জেলা প্রশাসন একটি পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করে। প্রকল্পের আওতায় এ পর্যন্ত কয়েকটি ধাপে স্থানীয় প্রায় ৪শ নারীদের কয়েক দফায় প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। তাদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি বিভিন্ন হস্তশিল্প তৈরি করে তাদের ভাতা প্রদান করা হয়, যাতে তারা আগ্রহী হয় এবং অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়।

    জেলা প্রশাসক আরও বলেন, এখন লামা, রুমা, আলীকদম ও থানচি উপজেলাতে এই পাইলট প্রকল্পের আওতায় নারীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। বান্দরবানের নারীরা এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বুক ফোল্ডার, টেবিল মেট, পাপোস, শোপিস,কানের দুল,কলম দানিসহ বিভিন্ন পরিবেশবান্ধব হস্তশিল্প তৈরি করছে। এগুলো ভালো দামে বিক্রিও হচ্ছে।

  • মাধুরীর এই শাড়ি কিনতে পকেট খালি হয়ে যাবে!

    মাধুরীর এই শাড়ি কিনতে পকেট খালি হয়ে যাবে!

    চলমান নাচভিত্তিক রিয়েলিটি শো ড্যান্স দিওয়ানের তৃতীয় মৌসুমে বলিউড অভিনেত্রী-নৃত্যশিল্পী মাধুরী দীক্ষিত পোশাকে চমক দেখাচ্ছেন। তাঁর ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেলে ঢুঁ মারলেই কিছুটা আঁচ করতে পারবেন। প্রতিবারই নতুন রূপে আবির্ভূত হচ্ছেন মাধুরী।

    ভারতের বিনোদনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বলিউড বাবলের খবর, সম্প্রতি মাধুরী দীক্ষিত এমন শাড়ি পরেছেন, যা বিয়ে বা আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে পরার মতো। গর্জিয়াস রয়েল ব্লু ফ্লোরাল শাড়ি, রয়েছে হাতে করা এমব্রয়ডারি, ফুলেল ব্লাউজ পরেছেন মাধুরী, যা অনুরাগীদের দৃষ্টি কেড়েছে।

    এ শাড়ি রাহুল মিশ্রের কালেকশন থেকে নেওয়া। সাজ সেরেছেন কানের দুল ও হালকা মেকআপে। এ সাজে দারুণ লাগছে মাধুরীকে।

    সে যা হোক, আপনি কি জানেন এই শাড়ির দাম কত? যে দাম, তা দিয়ে লেটেস্ট আইফোন কেনা যাবে অথবা পুরো পকেটই খালি হয়ে যাবে। হ্যাঁ, শাড়িটির দাম এক লাখ ৭৯ হাজার রুপি, বাংলাদেশের মুদ্রায় যা দুই লাখ টাকার বেশি।

    ড্যান্স দিওয়ানের অন্যতম বিচারক মাধুরী দীক্ষিত। অপর দুজন বিচারক হলেন তুষার কালিয়া ও ধর্মেশ।

    এন-কে

  • জামদানী শাড়ির আদীকথা(৪) দামী জিনিস, টেকে কম/যত্ন নিতে হয় অনেক বেশি,কিন্তু কিভাবে?

    জামদানী শাড়ির আদীকথা(৪) দামী জিনিস, টেকে কম/যত্ন নিতে হয় অনেক বেশি,কিন্তু কিভাবে?

    ২৪ ঘণ্টা সংস্কৃতি। লেখিকা তানজিন তিপিয়া : দামী জিনিসটি টেকে কম ঠিক কিন্তু যত্ন নিতে হবে বহুগুণ আর যত্ন যদি হয় আমার মায়ের মতো তাহলে ১০০ বছরেও কিছুই হবেনা।

    যেমন -১৫দিন পর পর রোঁদে দেবেন। সাথে সাথে ভাজ করা যাবেনা। ভাজের মাঝখানে পত্রিকার পৃষ্ঠা দেবেন। এতে শাড়ির মাঝে ফাঁকা থাকবে।

    ইষ্টিলের আলমারিতে রাখাটাই শ্রেয় তাতে পোকা হতে বাঁচাতে পারবেন। পরার পর সাথে সাথে রাখা যাবে না। ফ্যানের বাতাসে সারারাত ঘাম শুকোতে দিন।

    ২৪ ঘণ্টা ডট নিউজে প্রকাশিত জামদানী শাড়ির আদিকথা নিয়ে ৪ পর্বের ধারাবাহিকের বাকি পর্বগুলো পড়েছেন তো? না পড়লে নিচের লিংকগুলো ক্লিক করে ১ম, ২য় ও তয় খণ্ডের চমকপ্রদ ইতিহাসগুলো জেনে নিন।

    ৫বার পরার পর মাড় ভেঙ্গে পাড় ভারী হয়ে পরে ফলে রেশম নরম হয়ে শাড়ি ফেটে যাবার ঝুঁকি বাড়ে। শাড়ি ন্যাপথোলিন দিয়ে রাখতে হবে।

    একহাতেই পড়ুন। কাঁটা ওয়াশ করাবেন না এতেও রেশম নরম হয়ে ছিঁড়ে যাওয়ার ঝুঁকি অধিকতর। ড্রাই ওয়াশ না করতে দিলেই ভালো কারণ অনেক টানা হেঁচড়া হয়। এতেও সুতো নরম হয়ে ছিঁড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব।

    হাতে বোনা আসল নাকি যন্ত্রে তৈরি নকল? 

    পার্থক্য করা একদম সহজ, শাড়ির পেছনটা উল্টে দেখুন, মোটিফ গুলোর সুতো বদ্ধ থাকে, কাঁটা হয় না। টেনে সুতো বার করা অসম্ভব। আর নকলে কাজের সুতো গুলো কাঁটা থাকে, টেনে বার করা সম্ভব।

    আরো থবর : জামদানী শাড়ির আদীকথা (১) ইতিহাস ও বংশপরম্পরার আভিজাত্যের প্রতীক!

    আরো খবর : জামদানী শাড়ির আদীকথা (২) মোঘল আমলে আবিষ্কৃত এক নিখুঁত হস্তের বিদ্যা

    আরো খবর : জামদানী শাড়ির আদীকথা (৩) জীবনভরই জামদানী পরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

    যাই হোক সকল নারীদের বলছি আমার মতো দেশীয় কাপড় পরিধানে এগিয়ে আসুন। দেশকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরুন। দেখবেন আপনাকেও দেখে অন্য দশজন এগিয়ে আসবেন।

    ২৪ ঘণ্টা/লেখিকা-তানজিন তিপিয়া/ সম্পাদনা-রাজীব প্রিন্স

  • জামদানী শাড়ির আদীকথা (৩) জীবনভরই জামদানী পরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

    জামদানী শাড়ির আদীকথা (৩) জীবনভরই জামদানী পরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

    ২৪ ঘণ্টা সংস্কৃতি। লেখিকা তানজিন তিপিয়া : জামদানী বালা, কানের দুল, গলার হার, আংটি, ব্যাগ, জুতো, পিন, জামদানী ঘাগড়া, লম্বা গোল কামিজ, ছবির ফ্রেম, ছবির অলেখ্য-কূচিকা, জামদানী পর্দা, কুশন, টেবিল ম্যাট সবকটি শাড়ি কেটে বানিয়েছি নিজের হাতেই।

    মনে হয় পৃথিবীতে আমিই প্রথম কেউ যে কি না জামদানী দিয়ে এতো কিছু বানিয়েছে। আমার বান্ধবীরা প্রায় বলেন- তোমার এই হস্ত শিল্পের বুদ্ধিটা কাজে লাগিয়ে বড় কিছু করার ভাবো।

    আরেকজন যিনি হরদম জামদানী পরেন উনার নাম না নিলে তো এই পুরো লেখাটাই বৃথা হয়ে পরবে। সেই নারীটি হলেন আমাদের প্রিয় নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যিনি সারা জীবনভরই জামদানী পরেছেন।

    উনি আজ কোন রঙের জামদানী পরেছেন তা প্রতি রোজ অপেক্ষমান হয়ে দেখা আমার দৈনন্দিন কাজের মধ্যে একটি। উনার এই জামদানী পরা আমায় বাধ্য করে উনাকে ভালবাসতে।

    তিনি জামদানীতে এতোই মগ্ন, যে তিনি বিদেশ সফরে গেলেও বিদেশ হতে আগত অতিথিদের জামদানী উপহার করেন। যাতে দেশের তাঁত শিল্পটি সকলের নজরে আসে। আর উনার এই উদ্দেশ্য সফল প্রায়।

    জামদানী শাড়ির বাকি ইতিহাস পড়তে চোখ রাখুন ২৪ ঘণ্টা ডট নিউজে। ৪ পর্বের আদিকথার চতুর্থ ও শেষ খণ্ডে থাকছে আরো চমকপ্রদ কিছু ইতিহাস।

    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুসরণ করে নারী নেত্রী হতে আরম্ভ করে অভিনেত্রীদের জামদানী পরিধান করতে ইদানিং খুব দেখা যায়। উনার জন্যই জামদানী আজ বিশেষ গুরুত্ব পেয়ে বসেছে। যারা হরদম বিদেশী জামা ছাড়া কিছুগাঁয়ে জড়াতেনইনা তারাও দু’একটি জামদানী আলমারিতে রাখতে ব্যাকুল হয়ে পরেছেন।

    আরো খবর : জামদানী শাড়ির আদীকথা (১) ইতিহাস ও বংশপরম্পরার আভিজাত্যের প্রতীক!

    আরো খবর : জামদানী শাড়ির আদীকথা (২) মোঘল আমলে আবিষ্কৃত এক নিখুঁত হস্তের বিদ্যা

    শুধু তাইই নয় উনাকে দেখে বিদেশী নারীরাও মনস্থির করছেন তার মধ্যে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত মারসিয়া বার্ণিকেট, ভারতের নেত্রী সোনিয়া গান্ধী, এবং নামি তারকারাও জামদানী পরেন বেশ যতনে।

    আমার ইচ্ছেও আছে বেশ কিন্তু সময় যে তেমন হয়ে ওঠে না।তাই তানজিন ওয়ারড্রব নামে একটি অনলাইন পেজ খুলে সেখানে উদ্যোক্তার কাজ মাত্র হাত দিয়েছি। সবার সহযোগিতায় তা এগিয়ে যাবে ইনশাল্লাহ।

    ২৪ ঘণ্টা/লেখিকা-তানজিন তিপিয়া/ সম্পাদনা-রাজীব প্রিন্স

  • জামদানী শাড়ির আদীকথা (২) মোঘল আমলে আবিষ্কৃত এক নিখুঁত হস্তের বিদ্যা

    জামদানী শাড়ির আদীকথা (২) মোঘল আমলে আবিষ্কৃত এক নিখুঁত হস্তের বিদ্যা

    জামদানী শুধু ৬ গজ বস্ত্র নয়, কাপড় আর নকশার অসাধারণ বন্ধন

    ২৪ ঘণ্টা সংস্কৃতি। লেখিকা তানজিন তিপিয়া : জামদানী মূলত ৩ প্রকার- ১ সুতি জামদানী, ২ হাফসিল্ক জামদানী ও ৩ মসলিন জামদানী।

    মুলত এই মসলিন জামদানী হতেই বাকি গুলোর উৎপত্তি মোঘল আমলে মসলিন খাটি সুতি কাপড়ে নকশা করাতেই জামদানী নামকরণ। আবিষ্কৃত হয় এক নিখুঁত হস্তের বিদ্যা।

    বিস্তৃতি কমে যায় ব্রিটিশ আমলে। ব্রিটিশ উপনিবেশবাদের অধীনে, শিল্পজাত উৎপাদিত বস্ত্রের পক্ষে উপপনিবেশিক আমদানি নীতিগুলির কারণে বাঙালী জামদানী ও মসলিন শিল্পগুলো দ্রুত হ্রাস পেয়েছিল।

    ব্রিটিশরা ধীরে ধীরে যন্ত্র নির্ভরশীলতায় এগোতে থাকাটাও, কম সময়ে অনেক উৎপাদন আর হাতের তৈরি এইকাজে খরচ হতো মাসের পর মাস। তাই তাঁতিরা অর্থনৈতিকভাবে বেশ বড় আঘাত পেয়ে জীবিকার দায়ে কাজ ছেড়ে অন্য পন্থায় লিপ্ত হয়ে বাঁচতে শুরু করেলেও বংশ পরম্পরা ধরে রাখতে তাঁতিরা তখনো হাল ছাড়েননি।

    আরো খবর : জামদানী শাড়ির আদীকথা (১) ইতিহাস ও বংশপরম্পরার আভিজাত্যের প্রতীক!

    তাঁদের হাল ধরা সেই সাহসিকতার কারণেই আজো বাংলায় জামদানী শব্দটির অস্তিত্ব বিরাজমান। জামদানী শুধুই ৬ গজ বস্ত্র নয়। কাপড় আর নকশার অসাধারণ বন্ধন যা নিজের মধ্যেই একটি সতন্ত্রতা বহন করে।

    একটি ন্যূনতম কম কাজের জামদানী তৈরিতেও ২ জন কারিগরের লেগে যায় ৩-৭ দিন কাজের ধরণ ভেদে দিন এবং শ্রম বাড়তে থাকে। কোন কোন শাড়ির কাজ সম্পন্ন করতে লাগে ৬ মাস এমনকি ১ বছরও।

    জামদানী শাড়ির বাকি ইতিহাস পড়তে চোখ রাখুন ২৪ ঘণ্টা ডট নিউজে। ৪ পর্বের আদিকথার তৃতীয় খণ্ডে থাকছে আরো চমকপ্রদ কিছু ইতিহাস।

    ইদানিং নকশা নকল করে যন্ত্রে তৈরি শাড়ি বিক্রি হচ্ছে আসল ঢাকাই জামদানী বলে। যা দুঃখজনকভাবেই কড়া সত্য, আমার খেটে খাওয়া তাঁতি ভাই বোনদের উপর বিরাট অন্যায়।

    সাধারণত ৩টি প্রাথমিক নকশায় তৈরি হয় জামদানী। ১ বুটিদার, ২ তেড়ছি, ৩ জাল। তাছাড়া ঝোপা ফুল, মাছি ফোঁড়, এস্কা, জামিতি, চারকোণা, ফুলোয়ার, কলকা পাড়, দুরিয়া, দুবলি জাল, পান্না হাজার, ছিটা তেছড়ি হাঁটু ভাঙ্গা তেছড়ি, জুঁই বুটি, ছিটার জাল, সুঁই জাল, পুঁই লতা, আঙ্গুর লতা এমন হাজারো নকশা যার নামকরণ করে থাকেন তাঁতিরা নিজের মন মতো করে।

    তাই জামদানী এই দেশীয় পোশাক শখ নয় আমার, অভ্যাসকারণ আমার মা, নানী সাহেবা খালা আর মামীদের কাছে এতো শুনেছি, এতোই পরিধান করতে দেখেছি আর যত্ন নিতে শিখেছি যে রক্ত আত্মায় মিশে গেছে এই কাপড়।

    আম্মার ৫টা শাড়ি আছে যেগুলো বেশ পুরোনো। সবচেয়ে পুরোনো শাড়িটির বয়স ৪৩বছর, কালচে নীল শাড়িতে মাছিফোঁড়ের গাড় সোনালী মোটিফের কাজ, যা স্পর্শকরলেই অনুভব করা যায় কতোটা বৃদ্ধ হয়েছে এই শাড়ি আর পুরনো মাড়ের গন্ধ যা বাধ্য করবে চারদশক আগের পরিবেশকে কল্পনা করতে।

    সেই সাথে শুনেছি আমার মায়ের দাদা রেঙ্গুন হতে ফিরে আসার গল্প। জাহাজ থেকে নেমে তিনি প্রথমে শহরের বাজার হতে উনার মা, একমাত্র মেয়ে সুলতান এবং স্ত্রী সাবেরার জন্য জামদানী শাড়ি কিনেই বাড়ির পথে রওনা দিতেন।

    প্রজন্মের পর প্রজন্ম পেরিয়ে যে সৌভাগ্য আমার হয়ে উঠেছে। আমিও দু’হাত মেলে শ্রদ্ধায় গ্রহণ করে অন্তর কোটরে প্রবেশ করিয়ে ফেলেছি। তাই রোজ জামদানী গাঁয়ে দেয়া আমার নিয়ম হওয়াটাই স্বাভাবিক। আমার কাছে যা স্বর্ণের চেয়ো বহুমূল্যবান।

    এতে আছে আমার পূর্বনারীদের দোয়া,বাংলার ঐতিহ্যের প্রমাণ, আমার বাংলার তাঁতি ভাই বোনদের হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম।যতনে রাঙ্গানো সুতো, নিপুণতায় বোনা এক একটি ফুল। আমার বংশের তেজস্বিনী নারীদের গল্প, আমার বংশের আভিজাত্যের প্রতীক। স্বর্ণের চেয়ে মূল্যবান কেনই বা হবে না বলুন?

    ২৪ ঘণ্টা/লেখিকা-তানজিন তিপিয়া/ সম্পাদনা-রাজীব প্রিন্স

  • জামদানী শাড়ির আদীকথা (১)  ইতিহাস ও বংশপরম্পরার আভিজাত্যের প্রতীক!

    জামদানী শাড়ির আদীকথা (১) ইতিহাস ও বংশপরম্পরার আভিজাত্যের প্রতীক!

    ২৪ ঘণ্টা সংস্কৃতি। জী আমি বাংলার, শুধুই যে বাংলার।।

    লেখিকা তানজিন তিপিয়া : জামদানী, আমার পারিবারের আভিজাত্যের প্রতীক, আমাদের দেশীয় গর্বের প্রতীক। অক্লান্ত দীর্ঘ পরিশ্রমের অপর নাম এবং এই বাংলায় জন্মানো এক প্রাচীন নাম জামদানী। ফার্সিশব্দ হতে আগত দু’টো ধ্বনির পরিপাটি মিশ্রণ।

    জাম মানে ফুল আর দানী মানে পাত্র মোট কথা ফুলদানি। আরো এক ভাবে বলা যায়, জাম মানে জামা আর দানী মানে দানা অর্থাৎ বুটিদার জামা।এটি সব সময়ে বাংলারই ছিল সেই ১৪ শতাব্দী থেকেই।

    অনেক বেশি বিস্তার লাভ করে মোঘল সাম্রাজ্যের আমলে।সম্রাট আকবরের (১৫৫৬-১৬০৫) রাজত্বকে জামদানীর স্বর্ণযুগ বলে আখ্যা দিলেও ভুল হবে না, মোঘল শাসনামলে এর ঐতিহাসিক উৎপাদনের কারণে। যা শুধু মাত্র রাজপরিবারের সদস্যরা এবং রাজ্যে অন্তর্গত অভিজাত ব্যক্তিবর্গরাই পরতে পারতেন, কারণ তখন থেকেই সময় সাপেক্ষ হাতের তৈরি এই কাপড়টি বেশ ব্যয় বহুল ছিলো।

    মসলিন, কার্পাস তুলোয় বোনা একটি সুতিকাপড়। এটি ইরাকের মোসুল শহর হতে আগত সেখানেই প্রথম উৎপত্তি। নামেই শহরটির আভাস পাওয়া যায়।সম্রাট জাহাঙ্গীরের আলমে (১৬০৫-১৬২৭) এইবস্ত্রে তৃতীয় সুতোর মাধ্যমে ফুলবোনা আরম্ভ হয়।

    জামদানী শাড়ির বাকি ইতিহাস পড়তে চোখ রাখুন ২৪ ঘণ্টা ডট নিউজে। ৪ পর্বের আদিকথার দ্বিতীয় খণ্ডে থাকছে আরো চমকপ্রদ কিছু ইতিহাস।

    জাহাঙ্গীরকে জামদানী পরতেও দেখা গিয়েছে উনার কোমরে যে কাপড়টি জড়ানো হতো ওটা নানা ফুলে ঘন কাজের জামদানী। এ ব্যাপারে স্কটিশ লেখক “জন ফোর্বস ওয়াটসন “১৮৬৬ সনে উনার বইতে মসলিন কাপড়ে আকর্ষণীয় নকশার কথা, ঢাকার তাঁতবুনন পদ্ধতি ও দামি পণ্য বলে উল্লেখ করেছেন। আর এই কারণেই জামদানীর সাথে“আভিজাত্য” শব্দটি যুক্ত হয়ে রবে আজীবন।

    সাধারণত তুলা এবং সোনার সুতোর মিশ্রণে বোনা হতো তখন। সম্ভবত ২০০০ হাজার বছর আগের পদ্ধতি যা আজো বিদ্যমান। ২০১৩ সালে জামদানী বুননের ঐতিহ্যবাহী শিল্পকে তুলে ধরে বাংলাদেশ ইউনেস্কোর অন্তর্গত “ইনটেনজিবল কালচার হেরিটেজ অফ হিউম্যানিটি” তে নিবন্ধন করে। ২০১৬ সালে, বাংলাদেশ জামদানী শাড়ির জন্য ভৌগলিক নির্দেশক (জিআই) হিসেবে মর্যাদা পায়।

    মসলিনের সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যায় “পেরিপ্লাস অফ দি এরিথ্রেয়ান সি” বইয়ে এবং আরব, চীন এবং ইতালিয়ান ভ্রমণকারী ব্যবসায়ীদের বিবরণে।

    জামদানী হস্তচালিত বোনা কার্পাসতুলা দ্বারা তৈরি, যা ঐতিহাসিকভাবে মসলিন হিসেবে পরিচিত ছিল। জামদানী বুননের ঐতিহ্য বাঙালি বংশভুত। তাঁতের বুননের সর্বাধিক সময় এবং শ্রম-নিবিড় রূপগুলোর মধ্যে একটি এবং এটি মসলিনের অন্যতম সেরা জাত।

    বাংলাদেশী তাঁতের অন্যতম শৈল্পিক বস্ত্র হিসেবে বিবেচিত। ঐতিহ্যগত ভাবে ঢাকার সোনারগাঁও, রূপসী নারায়গঞ্জ সেই মোঘল কাল থেকেই জামদানীর জন্য প্রসিদ্ধ স্থান যা আজো অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখে যেন বলছে- জী আমি বাংলার, শুধুই যে বাংলার।

    মানুষ পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে পান অর্থ, সম্পদ, জায়গা, জমি আর আমি এগুলোর সাথে করেই পেয়েছি জামদানী। নিঃসন্দেহে এটি বংশ পরম্পরায় আমার পারিবারিক বস্ত্র, দৌলত বংশের প্রতীক।

    ২৪ ঘণ্টা/লেখিকা-তানজিন তিপিয়া/ সম্পাদনা-রাজীব প্রিন্স

  • শাড়িতে অপরূপা শরতের নারী

    শাড়িতে অপরূপা শরতের নারী

    বলা হয়ে থাকে, শাড়িতেই অনন্যা বাঙালি নারী। কথাটি নিছক কথার কথা নয়। শাড়িতে বাঙালি নারীর একইসঙ্গে প্রিয়তমা ও মাতৃরূপ যেভাবে ফুটে ‍ওঠে তা আর কোনও পোশাকে খুঁজে পাওয়া যাবে না।

    ষড়ঋতুর এই দেশে প্রকৃতিতে এখন শরতের মায়াবী স্নিগ্ধ ছোঁয়া লেগেছে। শরতের এই সাদা-নীল আকাশের তলে কাশফুলের আলতো উল্লাসের মতো বাঙালি নারীর শাড়ি যখন মৃদ্যু বাতাসে উঠে তখন প্রেমিক হৃদয়ে রোমান্টিকতার ঢেউ জাগে।

    শরতের বহুরূপী আকাশে কখনও রোদ, কখনও বৃষ্টি। স্বচ্ছ নীল আকাশ। খরতাপে শান্তির সুবাতাস বইয়ে দেয় হঠাৎ এক পশলা বৃষ্টি। প্রকৃতির এই বিচিত্র রঙের খেলার সঙ্গে তাল মিলিয়ে জীবন আরও ব্যঞ্জনাময় হয়ে উঠে পোশাকের বৈচিত্র্যে। শরতের শাড়ির সাজ নিয়ে এ প্রতিবেদন।

    এই শরতে সুতি, সিনথেটিক, জর্জেট, চিনন শাড়ি পরতে পারেন। রঙের দিকে তো নজর রাখতেই হবে! গাঢ় নয়, হালকা রং বেছে নেবেন। নীল, সবুজ, ফিরোজা, গোলাপি, অফ হোয়াইট রংগুলোতে আপনি হয়ে উঠবেন আরও আকর্ষণীয়।

    এছাড়াও চাইলে জরিপাড় সমেত ফিকে নীল শাড়ি, ধানি রং, চাঁপাফুল রং, সাদা জমিনে বুটি তোলা জামদানি শাড়ি এবং সঙ্গে ব্লাউজ ম্যাচ করে পরতে পারেন।

    তবে দিনের বেলা গরমে গাঢ় সাজ যেমন মানানসই নয়, তেমনই অন্যদের চোখেও তা দৃষ্টিকটু লাগে। তাই সব মিলিয়ে সাজসজ্জায় স্নিগ্ধভাব থাকা চাই। এজন্য হালকা মেকআপই ভালো। আর সাজের উপকরণের রঙে অবশ্যই উজ্জ্বল রং বেছে নেওয়া উচিত। এ সময় লাল, নীল, বেগুনি, হলুদ, সবুজ রঙে ইচ্ছামতো সেজে উঠতে পারেন।

    শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে চোখের কাজল, শ্যাডো, লিপস্টিক ব্যবহার করুন। কপালে লাল, কালো, কিংবা সবুজ টিপে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগবে। বড়জোর হালকা প্রসাধনী ব্যবহার করতে পারেন। বেছে নিন হালকা গহনা।

    এক্ষেত্রে সোনা, রূপা, মুক্তা, অক্সিডাইজ, মেটাল, কাঁচ, মাটি, পুঁতি, কাঠ কিংবা যে কোনো রকমেরই গহনা হতে পারে। শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে হাতে চুড়ি বা প্লেন বালা, গলায় লকেট, কানে দুটো হালকা দুল পরলে খুব মানানসেই হবে।

    শরতে শাড়ির সাজে চুলের খোঁপাতেও স্টাইল নিয়ে আসতে পারেন। পাশ্চাত্য পোশাকের সঙ্গে খুলে দিন চুলটা। আর দেশীয় পোশাকের সঙ্গে করতে পারেন ইচ্ছামতো খোঁপা বা ঝুঁটি।

    খোঁপায় গোলাপ কিংবা রজনীগন্ধা গুজে নিতে পারেন। কণ্ঠে পরে নিতে পারেন বকুল ফুলের মালিকা।