২৪ ঘন্টা ডট নিউজ। লামা প্রতিনিধি : দীর্ঘ অর্ধশত বছরেরও বেশি সময় ধরে অবহেলিত দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে বান্দরবানের লামা উপজেলার ত্রিডেবা পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়।
দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত হলেও বিদ্যালয়টি শুধু পড়ালেখাই নয়, খেলাধূলা, সাংস্কৃতিক, বাহ্যিক জ্ঞানসহ শিক্ষামূলক নানা কর্মকান্ডেও এগিয়ে রয়েছে। তবে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন, বিদ্যুৎ ও পাহাড় ধ্বস ঝুঁকি-এ বিদ্যালয়ের প্রধান সমস্যা। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই চলছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদান।
একটু বড় ধরণের ভূমিকম্প হলেই যে কোনো সময় এ ভবন ধসে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, এমন আশঙ্কা নিয়ে উৎকন্ঠার মধ্যে রয়েছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এছাড়া বিদ্যালযের সীমানা প্রাচীর না থাকায় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই অরক্ষিত এ বিদ্যালয়। দ্রুত নতুন বিদ্যালয়ভবনসহ সীমানা প্রাচীর নির্মাণের জোর দাবী জানান এলাকাবাসী।
জানা যায়, অবহেলিত এলাকায় শিক্ষা বিস্তারের লক্ষে উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি ঘিলাতলী পাড়ায় তৎকালীন জেলা পরিষদ সদস্য ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আমির হোসেন মজুমদারসহ কয়েকজন শিক্ষানুরাগী বিদ্যালয়টি ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন।
বিদ্যালয়ের জন্য ৮০শতক জমি দান করেন স্থানীয় বাসিন্দা মৃত মো. রফিকুল ইসলাম মজুমদার। পরবর্তীতে ১৯৯০ সালে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ৩ শ্রেণী ও এক অফিস কক্ষ বিশিষ্ট পাঁকা একটি পূণ: বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ করে দেয়। গত কয়েক বছর আগ থেকে বিদ্যালয় ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়লে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে উপজেলা শিক্ষা অধিদপ্তর।
বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে দেড় শতাধিক কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থী রয়েছে। বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকসহ তিন জন শিক্ষক কর্মরত আছেন। আশপাশ এলাকায় আর কোন বিদ্যালয় নেই।
সরজমিন বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ভবনের বিভিন্ন স্থানের ছাদ, বিম, পিলার, মেঝে ও দেয়ালে ছোট বড় ফাটল। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা ভয় ও শঙ্কা নিয়ে বসছে শ্রেণিকক্ষে। তবে প্রতি বছর সংস্কার ও রংয়ের কাজ করার কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার বিষয়টি বুঝা দায়। একটু মনোযোগ সহকারে দেখলে ফুটে ওঠবে বিদ্যালয়টি, ‘উপরে ফিটফাট ভিতরে সদর ঘাট’।
এছাড়া সীমানা প্রাচীর না থাকায় অরক্ষিত হয়ে পড়ে আছে বিদ্যালয়টি। ফলে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি গত কয়েক বছর ধরে বিদ্যালয় ভবনের পশ্চিম পাশ থেকে মাটি ধসে ঝিরিতে পড়ছে। এতে দিন দিন আরো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে বিদ্যালয় ভবনটি। পাশ দিয়ে বিদ্যুতের খুঁটি স্থাপিত হলেও বিদ্যালয়ে নেই বিদ্যুৎ সংযোগ। এতে রাতের বেলায় বিদ্যালয় এলাকা ভুঁতুতে পরিবেশে পরিণত হয়।
বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ইয়াসমিন সুলতানা রিয়া ও মো. জামসেদুল ইসলাম ২৪ ঘন্টা ডট নিউজকে জানায়, বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি হলে বিদ্যালয় ছাদ ছুঁয়ে পানি পড়ে। এতে আবার বিদ্যালয়ের মেঝে স্যঁত স্যঁতে হয়ে যায়। উপর থেকে ঝরে পড়ে পলেস্তারা। আবার কখন বিদ্যালয় ভবনটির পাশ থেকে মাটি সরে গিয়ে ভবনটি ধসে পড়ে, সব সময় এ আতংকে থাকি। এ অবস্থা গত চার বছর ধরে দেখে আসছি।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান মংয়ইন খিং মার্মা বলেন, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ কর্তৃক ভবনটি নির্মাণ করা হয়। গত কয়েক বছর ধরে ছাদের বিম ও দেয়ালে ফাটল দেখা দেয়। ক্লাস চলার সময় প্রায়ই ছাদের বিম থেকে খোয়া ঝরে পড়ে। বড় ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটলেও শিক্ষার্থীরা থাকে ভয়ের মধ্যে।
শুষ্ক মৌসুমে কোন মতে শ্রেণী কার্যক্রম চালানো গেলেও বর্ষা মৌসুমে ছাদ ছুঁয়ে পড়ার কারণে মোটেও সম্ভব হয়না। বিদ্যালয় ভবনটি সংস্কার করলেও টেকসই হবে না। তাই ভবনটি সম্পূর্ণ ভেঙ্গে নতুন ভবন নির্মাণ ছাড়া কোন বিকল্প নেই।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যালয় ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার কারণে ছাত্র-ছাত্রীর উপস্থিতি আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে। ভবন ধস আতংকে অনেক অভিভাবকরা তাদের ছেলে মেয়েদেরকে বিদ্যালয়ে আসতে দিচ্ছেনা।
একমত পোষন করে একই কথা জানালেন ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জাকের হোসেন মজুমদারসহ বিদ্যালয়টি পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবদুল খালেক।
অভিভাবক আছিয়া বেগম ও কামাল হোসেন ২৪ ঘন্টা ডট নিউজকে জানান, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ক্লাস করায় ছেলে মেয়েকে নিয়ে ভয়ে থাকি। ভূমিকম্প তো রয়েছেই। একটু বড় ভূমিকম্প হলেই ওই ভবন যে ধসে পড়বে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।’ এ অবস্থায় শিগগিরই কর্তৃপক্ষ যেন একটি নতুন ভবন নির্মাণ করে, সে দাবি জানান এ অভিভাবক।
ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের সত্যতা নিশ্চিত করে লামা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তপন কুমার চৌধুরী ২৪ ঘন্টা ডট নিউজকে বলেন, দেড় বছর আগে ঝুঁকিপূর্ণ ত্রিডেবা পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের তালিকা প্রস্তুত করে শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছিল।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী নাজিম উদ্দিন ২৪ ঘন্টা ডট নিউজকে জানায়, শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে বিদ্যালয়ের তালিকা অনুমোদন করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে না পাঠানোর কারণে ত্রিডেবা পাড়া ও রাজবাড়ী বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ করা যাচ্ছেনা।