২৪ ঘন্টা চট্টগ্রাম ডেস্ক : চট্টগ্রাম নগর জুড়ে আবারো সক্রিয় হয়ে উঠছে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীর। গোয়েন্দা সূত্রে এমন খবরে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নামে পুলিশ।
২২ নভেম্বর শুক্রবার দুপুর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত সিএমপির দক্ষিণ জোন নগরীর আন্দরিকল্লা শাহী জামে মসজিদ, চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা ও বায়েজিদ এলাকায় পৃথক পৃথক অভিযান চালিয়ে পুলিশ শীর্ষস্থানীয় ‘জঙ্গি নেতা’সহ হিযবুত তাহরীরের ১৫ সদস্যকে আটক করতে সক্ষম হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ প্রচারপত্র, নগদ দুই লাখ ৮২ হাজার টাকা, দুটি ল্যাপটপ, ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস, সংগঠনের গঠনতন্ত্র ও ট্রেনিং ম্যানুয়াল উদ্ধারের কথা জানিয়েছে পুলিশ।
শনিবার (২৩ নভেম্বর) সকালে নগরীর দামপাড়া পুলিশ লাইন্সে সংবাদ সম্মেলনে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ) আমেনা বেগম।
তিনি বলেন, তাদের কাছে গোপন তথ্য ছিলো বেশকিছুদিন ধরে নগর জুড়ে ফের সক্রিয় হয়ে উঠছে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীর। বিভিন্ন স্থানে তারা গোপন বৈঠকে মিলিত হচ্ছে। এসব তথ্যের ভিত্তিতে সিএমপির দক্ষিণ জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) শাহ মুহাম্মদ আবদুর রউফের নেতৃত্বে ২২ নভেম্বর শুক্রবার দুপুর থেকেই অভিযান শুরু হয়।
আটক করা হয় নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীরের চট্টগ্রাম মহানগরীর প্রধান (আঞ্চলিক প্রধান) আবুল মোহাম্মাদ এরশাদুল আলমসহ এ সংগঠনের আরো ১৪ সদস্য।
সংবাদ সম্মেলনে আমেনা বেগম বলেন, জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীরের আটক হওয়া সদস্যদের অধিকাংশই বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী। তারা যে পড়াশুনার নাম করে এ সংগঠনে সক্রিয় হচ্ছে এসব তথ্য তাদের পরিবারের কাছে জানা ছিলোনা। তারা প্রতিদিন কোচিং এ যাওয়ার নাম করে বাসা থেকে বের হয়ে নগরীর কোন না কোন এলাকায় জঙ্গি সংগঠনটির গোপন বৈঠকে মিলিত হতেন।
এদিকে হিযবুত তাহরীরের ১৫ সদস্যকে আটকের বিস্তারিত জানিয়েছেন অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া সিএমপির দক্ষিণ জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) শাহ মুহাম্মদ আবদুর রউফ। তিনি বলেন, গোপন সূত্রের খবরে শুক্রবার দুপুরে প্রথম অভিযান পরিচালনা করেন নগরীর আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ এলাকায়। সেখানে লিফলেট ও প্রচারপত্র বিলির সময় ওয়ালিদ ইবনে নাজিম ও মো. ইমতিয়াজ ইসমাইল নামে হিযবুত তাহরীরের ২ জন সক্রিয় কর্মীকে আটক করা হয়।
তাদের জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে তারা চান্দগাঁও এলাকার খদিজা ম্যানশনে একটি গোপন বৈঠকের তথ্য দেন। তথ্যমতে পুলিশ ওই বৈঠকে অভিযান চালিয়ে চট্টগ্রামের ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুল অ্যান্ড কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষক ও নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীরের চট্টগ্রাম মহানগরীর প্রধান (আঞ্চলিক প্রধান) আবুল মোহাম্মাদ এরশাদুল আলম এবং নোভারটিস ফার্মাসিউটিক্যালসের চট্টগ্রামের টেরিটরি ম্যানেজার ও এ সংগঠনের অন্যতম শীর্ষনেতা আবদুল্লাহ আল মাহফুজ (৩০)সহ ১১জনকে আটক করা হয়। আটককৃতদের স্বীকারোক্তিমূলে রাতে নগরীর পাঁচলাইশ থানা এলাকা ও পলিটেকনিক এলাকা থেকে আরো ২জনকে আটক করে পুলিশ।
তিনি জানান, এরশাদুল আলম বাঁশখালী উপজেলার কালিপুর ইউনিয়নের গুনাগরী এলাকার আবুল কাশেমের ছেলে। তিনি বায়েজিদ চক্রেসো কানন আবাসিক এলাকায় বসবাস করার সুবাধে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় প্রচারপত্র ও লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে দলটি সক্রিয় করার চেষ্টা চালিয়ে আসছেন।
এ সংগঠনের আটক অন্য সদস্যরা হলেন, মো. ইমতিয়াজ ইসমাইল (২৫), মো. নাছির উদ্দিন চৌধুরী (২২), মোহাম্মদ নাজমুল হুদা (২৭), মো. লোকমান গনি (২৯), মো. করিম (২৭), আব্দুল্লাহ আল মুনিম (২২), কামরুল হাসান প্রকাশ রানা (২০), মো. আরিফুল ইসলাম (২০), মো. আজিম উদ্দিন (৩১), ফারহান বিন ফরিদ প্রকাশ রাফি (২৩), মো. আজিমুল হুদা (২৪), ওয়ালিদ ইবনে নাজিম (১৫), মো. স¤্রাট (২২)।
এদের প্রত্যেকের বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে যাঁচাই বাঁচাই শেষে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা জানিয়েছেন এডিসি শাহ মুহাম্মদ আবদুর রউফ।