Tag: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি বানিজ্য

  • শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি বানিজ্য ও প্রাতিষ্ঠানিক দূর্নীতি বন্ধ করতে সুজনের আহবান

    শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি বানিজ্য ও প্রাতিষ্ঠানিক দূর্নীতি বন্ধ করতে সুজনের আহবান

    শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি বানিজ্য ও প্রাতিষ্ঠানিক দূর্নীতি বন্ধ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন এর নিকট আহবান জানিয়েছেন জনদুর্ভোগ লাঘবে জনতার ঐক্য চাই শীর্ষক নাগরিক উদ্যোগের প্রধান উপদেষ্টা ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন।

    তিনি আজ বুধবার (১৫ জানুয়ারী) বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি বানিজ্য বন্ধ, রমজান মাসে খাদ্য দ্রব্যে ভেজাল রোধ, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতি রোধে মোবাইল কোর্টের কার্যকারিতা চালু সহ বিভিন্ন বিষয়ে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের সাথে এক মতবিনিময় সভায় উপরোক্ত মত প্রকাশ করেন।

    এ সময় সুজন বলেন শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকারগুলোর মধ্যে অন্যতম। বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাই শিক্ষাকে অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষা ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সংখ্যক বাজেট বরাদ্ধ দিয়েছে। মানসম্পন্ন প্রাথমিক শিক্ষা, শিক্ষকদের দেশি-বিদেশি প্রশিক্ষণ, স্কুল ফিডিং, আইসিটির ব্যবহার বাড়ানো, ডিজিটাল প্রাথমিক শিক্ষা নামে পাইলট প্রকল্প গ্রহণ, শিক্ষকদের বর্ধিত বেতন, বৈশাখী ভাতা প্রদান চালিয়ে যাওয়া, নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, প্রতিটি উপজেলায় একটি টেকনিক্যাল স্কুল স্থাপন ও মাদ্রাসা শিক্ষার যুগপোযোগী করা হয়েছে বাজেটে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এই যে সরকারের এতো রকম উদ্যোগের পরও সরকারী নির্দেশনা অম্যান্য করে বিভিন্ন বেসরকারী স্কুল কলেজে ভর্তি, পুনঃভর্তির নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হচ্ছে। সে সকল প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া বেতন, ফি সহ অন্যান্য আদায়কৃত অর্থ কি খাতে খরচ করা হচ্ছে তার কোন স্বচ্ছতা নাই। বর্তমানে নগরীতে সরকারী স্কুল কলেজের সংকটকে পুঁজি করে এ সকল স্কুল কলেজে মাত্রাতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হয়। অথচ তাদের শিক্ষার মান মোটেও উন্নত নয়। বিভিন্ন উপলক্ষের নামে টাকা নেওয়ার ফলে এসব প্রতিষ্ঠানে টাকার পাহাড় গড়ে উঠেছে। এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত অডিটও করা হয়না। সরকারী ব্যবস্থায় এসব প্রতিষ্ঠানে অডিট এবং নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট দ্বারা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করার জন্য জেলা প্রশাসকের নিকট বিনীত আহবান জানান তিনি।

    তিনি আরো বলেন আসন্ন রমজানকে টার্গেট করে ভেজাল খাদ্য উৎপাদনকারীরা এখন থেকেই ভোজ্যতেল, সেমাই, লাচ্ছা সেমাই, নুডুলস, ঘি সহ প্রয়োজনীয় ভেজাল খাদ্য দ্রব্য উৎপাদন শুরু করে দিয়েছে। রমজানের সময় জেলা প্রশাসনসহ আইন শৃংখলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি থাকে তাই এ সময়টাকে টার্গেট করে তারা তাদের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। আগে বিভিন্ন হাট বাজারে তারা ভেজাল খাদ্য দ্রব্য উৎপাদন করে বিপণন করলেও বর্তমানে সরকারের বিভিন্ন বাহিনীর লোক চক্ষুর অন্তরালে অভিজাত এলাকার বাসা বাড়ি এবং ফ্ল্যাটে তাদের ভেজাল খাদ্য দ্রব্যের উৎপাদন চালিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া দ্রব্যমূল্য সিন্ডিকেটগণও এখন থেকেই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পায়তারাতে লিপ্ত। হঠাৎ করে ভোজ্য তেলের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিভিন্ন জিনিসপত্রের দাম পর্যায়ক্রমে বাড়ানো হচ্ছে। আসন্ন রমজানে জনগন যাতে কোন প্রকার ভোগান্তি কিংবা হয়রানির শিকার না হয় সেজন্য আগামী মার্চ মাসের মধ্যেই রোজাদারদের ব্যবহার্য নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী যেমন চাল, ডাল, ভোজ্য তেল, চিনি, ছোলা, খেজুর, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, আলু, লবন, মরিচ এবং মসলা সহ অন্যান্য সামগ্রীর প্রয়োজনীয় মওজুদ নিশ্চিত করার জন্য জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সরকারের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট বিনীত আহবান জানান।

    যাতে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা কোন অজুহাতেই রমজান মাসে দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে না পারে। এসব পণ্যের নূন্যতম মূল্য নির্ধারণ করে রাখার জন্যও অনুরোধ জানান তিনি।

    আর যৌক্তিক কারণে যদি এসব পণ্যের দামও বৃদ্ধি হয় তাহলে ভর্তুকি কিংবা প্রণোদনা দানের মাধ্যমে এসব পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখার উদাত্ত আহবান জানান সুজন।

    তিনি বলেন নগরীর একেক বাজারে একেক পণ্যের একেক রকম দাম। ফলতঃ প্রতিনিয়তই ভোক্তাগণ প্রতারিত হচ্ছে। রেয়াজউদ্দিন বাজার থেকে কাজির দেউড়ি বাজার হাটা দূরত্ব হলেও প্রতিটি পণ্য দ্বিগুন কিংবা তারও বেশী দামে বিক্রি হচ্ছে। ঠিক তেমনি চৌমুহনী কর্ণফুলী বাজার, চকবাজার, বহদ্দারহাট বাজারসহ অন্যান্য বাজারেও দামের তারতম্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এসব বিষয়েও জেলা প্রশাসকের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

    সুজন পেঁয়াজ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীগণ আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে জেলা প্রশাসককে অবহিত করেন।

    চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন প্রথমেই নাগরিক উদ্যোগের নেতৃবৃন্দকে জনগুরুত্বপূর্ণ কাজে সম্পৃক্ত থাকার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপণ করেন।

    তিনি বলেন, প্রতিটি রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হচ্ছে দেশের সাধারণ জনগন। তাই জনগনের কল্যাণে বর্তমান সরকার সদা সচেষ্ট। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও জনগনের কল্যাণে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডও পরিচালিত হয় জনগনকে কেন্দ্র করে। তাই আমরাও সরকারের একটি অংশ হিসেবে কাজ করছি। তিনি নাগরিক উদ্যোগের উত্থাপিত প্রতিটি পয়েন্টসমূহ গুরুত্বসহকারে শ্রবণ করেন।

    তিনি বলেন, সরকার শিক্ষা খাতকে রাষ্ট্রের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে গণ্য করে শিক্ষা খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে যাচ্ছে। এরপরও বিভিন্ন বেসরকারী স্কুল কলেজ নানা প্রকার অনিয়মের সাথে জড়িত হয়ে পড়ছে। এদের বিরুদ্ধে আমরা সবসময়ই সোচ্চার। যদি কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকার নির্ধারিত ফি’র অতিরিক্ত ফি আদায় করে তাহলে সে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও হুশিয়ারি উচ্চারন করেন তিনি। তিনি দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতির বিষয়ে সরকার অবগত আছেন উল্লেখ করে বলেন এসব সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন। আমরাও আমাদের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটগণকে দিয়ে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। রমজান মাসকে কেন্দ্র করে কোন অসাধু ব্যবসায়ী যাতে কোন ধরনের অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে না পারে সেজন্য এখন থেকেই প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। আমরা নিয়মিত সভার মাধ্যমে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটগণকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করছি। এছাড়া ব্যবসায়ীবৃন্দের সাথেও আমরা আমাদের আলোচনা অব্যাহত রাখবো। তাছাড়া আমরা প্রতিটি বাজারের ব্যবসায়ীদের আহবান জানাবো একেক বাজারে যেনো একেক রকম দাম না হয়। ভোক্তাগণ যাতে প্রতারিত না হয় সেদিকে নজর রাখার জন্য সবাইকে দায়িত্বশীল আচরন করারও আহবান জানান জেলা প্রশাসক।

    তিনি জনগনকে যে কোন প্রকার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সচেতন থাকার আহবান জানিয়ে বলেন জনগন সচেতন থাকলে কোন প্রকার সিন্ডিকেটই জনগনকে জিম্মি করে কোন প্রকার অশুভ কর্মকান্ড করতে পারবে না।

    এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রাজনীতিবিদ হাজী মোঃ ইলিয়াছ, আব্দুর রহমান মিয়া, সাইদুর রহমান, নিজাম উদ্দিন, নাগরিক উদ্যোগের সদস্য সচিব হাজী মোঃ হোসেন, নগর যুবলীগ সদস্য আব্দুল আজিম, শেখ মামুনুর রশীদ, জাহেদ আহমদ চৌধুরী, অধ্যক্ষ কামরুল হোসেন, সোলেমান সুমন, জাহাঙ্গীর আলম, অনির্বাণ দাশ বাবু, নাছির উদ্দিন, সফি আলম বাদশা, হাসান মোঃ মুরাদ, রকিবুল আলম সাজ্জী, উৎপল দত্ত, সালাউদ্দিন জিকু, কামরুল হাসান রানা, আব্দুল মালেক প্রমূখ।