শীঘ্রই দেশে পৌছাবে পেঁয়াজের বড় চালান। থাকবে না আর সংকট। কমবে দাম, খুচড়া মূল্য হবে ক্রেতাদের নাগালে। আর এটি সম্ভব হবে দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্প গ্রুপ এস আলম গ্রুপের কল্যাণে।
সম্প্রতি মিসর থেকে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজের বড় চালান আমদানির ঋণপত্র খুলেছে প্রতিষ্ঠানটি। এর আগেও ২০১৬ সালে পেঁয়াজ আমদানি করে বাজার স্থিতিশীল রাখতে সচেষ্ট ছিল এস আলম গ্রুপ।
এদিকে সরকারের পক্ষ থেকেও গত দেড়মাস ধরে পেঁযাজের বাজার নিয়ে চলমান অস্তিরতার স্থিতিশীল করার ইঙ্গিত দিয়েছেন। মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পেঁয়াজের বড় চালানটি শিগগির পৌঁছাবে বলে জানিয়েছেন।
আজারবাইজানের বাকুতে ন্যাম সম্মেলনে যোগদান শেষে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, পেঁয়াজ নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। এই সমস্যা সাময়িক। আরও পেঁয়াজ আনা হচ্ছে।
জানা যায়, সাধারণ মানুষ যাতে সহনীয় দামে পেঁয়াজ কিনতে পারে সেই জন্য এস আলম শিল্প গ্রুপটি ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে। এছাড়াও কয়েকটি বড় শিল্প গ্রুপ তুরস্ক ও চীন থেকে আড়াই হাজার টন করে পেঁয়াজ আমদানির ঋণপত্র খুলেছে। এসব পেঁয়াজ দেশে এলে দামের ঊর্ধ্বগতি কমে আসবে মনে করছে সাধারণ মানুষ।
এ বিষয়ে এস আলম গ্রুপের বাণিজ্যিক বিভাগের প্রধান মহাব্যবস্থাপক মো. আখতার হাসান বলেন, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণার পর এ পণ্যটির দাম কয়েকগুণ বেড়ে যায়। দেড় মাস ধরে বাজারে অস্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে। পেঁয়াজ সংকটের শুরুতে তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ আমদানির চেষ্টা চালায় এস আলম গ্রুপ। তবে বড় চালান না পেয়ে গ্রুপটি মিসরের দ্বারস্থ হয়।
তিনি বলেন, কয়েক দিন আগে মিশর থেকে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি জন্য ব্যাংকে ঋণপত্র খোলা হয়। ইতিমধ্যে সব কিছু চূড়ান্তও হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে আগামী মাসের (নভেম্বর) প্রথম সপ্তাহের মধ্যে পেঁয়াজের চালানটি নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়বে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত বিশেষায়িত জাহাজগুলো।
ব্যাবসায়িক লাভের উদ্দ্যেশে এসব পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে না জানিয়ে গ্রুপটির বাণিজ্যিক বিভাগের প্রধান মহাব্যবস্থাপক আখতার হাসান বলেন, সাধারণ মানুষ যাতে সহনীয় দামে পেঁয়াজ কিনতে পারে, সে জন্য ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে প্রতিষ্ঠান। প্রয়োজনে আমদানির উপর ভর্তুকি দিয়ে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেই এসব পেয়াঁজ বিক্রি করা হবে।
তিনি আরো বলেন, পেঁয়াজের চালানটি বন্দরে আসার সাথে সাথে চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ দেশের বৃহৎ পাইকারী বাজারগুলোতে দ্রুত পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
সামাজিক দায়বদ্দতা থেকে এমন মহৎ উদ্দ্যেগ নেওয়ার জন্য এস আলম গ্রুপ ছাড়াও দেশের যেকয়টি বড় শিল্প গ্রুপ মিসর,তুরস্ক ও চীন থেকে পেঁয়াজ আমদানির ঋণপত্র খুলেছে সবাইকে স্বাগত জানিয়েছে চট্টগ্রামের বৃহৎ পাইকারী বাজার খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়িরা।
তারা মনে করেন এস আলম গ্রুপ ছাড়াও শিল্প গ্রুপ টি কে গ্রুপপ, পিএইচপি গ্রুপসহ চট্টগ্রামের বড় শিল্প গ্রুপগুলো এ ধরনের উদ্দ্যেগ নিয়ে দেশের পেঁয়াজের বাজার সংকট নিরসনে ভূমিকা রাখতে পারে। সব মিলিয়ে আগামী মাসের মাঝামাঝি পেঁয়াজের দামের ঊর্ধ্বগতি থামবে বলে আশা করেন ব্যবসায়ীরা।
প্রসঙ্গত : চলতি বছরের গত ১৪ সেপ্টেম্বর ভারত সরকার পেঁয়াজের রপ্তানিমূল্য ৮৫০ ডলার বেঁধে দেয়। এরপর থেকে বাজারে অস্থিরতা শুরু হয়। ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্যবিষয়ক দপ্তর গত ২৯ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এরপর একেবারে আকাশচুম্বিতে উঠে পেঁযাজের দর।
একলাফে পাইকারি বাজারে ভারতীয় আমদানি করা পেঁয়াজের দর ৯০-৯৫ টাকায় পৌঁছে। জেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন সংস্থার অভিযান ও নিয়মিত তদারকিতে মাঝে সামান্য দরপতন হলেও ফের লাগামহীন হয়ে পড়েছে পেঁয়াজের বাজার। বর্তমানে পাইকারিতে সেঞ্চুরি পেরিয়ে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১২৫ টাকায়।