বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার এএসএম নাজমুস সাদাতের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে সিএমএম আদালত।
রিমান্ড আবেদনের শুনানিকালে বিচারকের জিজ্ঞাসায় সাদাত জানিয়েছেন, বড় ভাইদের কথায় তিনি আবরার ফাহাদকে রুম থেকে ডেকে নিয়ে আসেন।
বুধবার ঢাকা মহানগর হাকিম মোর্শেদ আল মামুন ভূইয়া সাদাতকে রিমান্ডের আদেশ দেন। তিনি বুয়েটের ম্যাকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর ডিবির লালবাগ জোনাল টিমের পুলিশ ইন্সপেক্টর মো. ওয়াহিদুজ্জামান সাদাতকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন।
রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, এই আসামি মামলার এজাহারনামীয় ১৫ নম্বর আসামি। মামলার তদন্ত, সাক্ষ্য প্রমাণে ও ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনায় তার জড়িত থাকা সম্পর্কে যথেষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। ইতিপূর্বে এ মামলায় আদালতে স্বীকারোক্তিকারীদের মধ্যে কয়েকজন এই আসামি জড়িত মর্মে নাম প্রকাশ করেছেন। তাই মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে অন্যান্য আসামিদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের জন্য তার ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।
রিমান্ড শুনানিকালে রাষ্ট্রপক্ষে পুলিশের জিআরও এসআই মাজহারুল ইসলাম ও সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হেমায়েত উদ্দিন খান হিরণ রিমান্ড আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন।
এরপর আসামি নাজমুস সাদাতের পক্ষে কোনো আইনজীবী না থাবায় বিচারক তাকে জিজ্ঞাসা করেন কিছু বলার আছে কি না? জবাবে তিনি বলেন, আমি বড় ভাইদের কথায় আবরারকে রুম থেকে ডেকে এনে দিই। আমি আবরারকে মারিনি।
এরপর বড়ভাই কারা বিচারকের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, অনিক, সকাল, মুজাহিদ ও রবিন মনির। এরপর বলেন, ওরাই আবারকে মারে। আমি সাড়ে ১২টায় চলে আসি। এরপর কী হয়েছে জানি না।
রিমান্ডে যাওয়া সাদাত বুয়েটের ম্যাকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তিনি জয়পুরহাট সদর থানার কড়ই উত্তর পাড়ার মো. হাফিজুর রহমানের ছেলে। মঙ্গলবার তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মামলাটিতে ছয় জন আসামি হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা হলেন, বুয়েট ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মো. অনিক সরকার, উপ-সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক ইফতি মোশাররেফ সকাল, ক্রীড়া সম্পাদক মো. মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন, মো. মনিরুজ্জামান মনির ও শিক্ষার্থী মো. মুজাহিদুর রহমান।
মামলাটিতে রিমান্ড শেষে কারাগরে রয়েছেন, বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুহতামিম ফুয়াদ, কর্মী মুনতাসির আল জেমি, গ্রন্থ ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক ইসাতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির, আকাশ হোসেন ও মিজানুর রহমান। তারা সবাই ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কৃত।
রিমান্ডে রয়েছেন, বুয়েট ছাত্রলীগের আইন বিষয়ক উপ-সম্পাদক অমিত সাহা, বুয়েটের শিক্ষার্থী শামীম বিল্লাহ, মুয়াজ ওরফে আবু হুরায়রা, সামছুল আরেফিন রাফাত ও হোসেন মোহাম্মাদ তোহা।
একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে গত ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (১৭তম ব্যাচ) ছাত্র আবরার ফাহাদকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
দেশ-বিদেশে তোলপাড় করা এই ঘটনায় আবরারের বাবা বাদী হয়ে চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। এতে আসামি করা হয়েছে ১৯ জনকে। তাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।