সুস্থ স্বাভাবিকভাবে সবার মতো বেড়ে উঠছিলো মিথিলা ও মারুফ নামে দুই ভাই-বোন। কিন্তু বয়স তের, ঠিক তখন থেকে তারা আক্রান্ত হয় বিরল এক রোগে। যে রোগ থেকে মুক্তি মেলেনি ১৫ বছরেও।
মা-বাবা বলেছেন অজ্ঞাত রোগ। কেউ বলছে জেনেটিক, আবার কেউ বলছে অবশজনিত রোগ। তবে এ দুই ভাই বোন প্রকৃত পক্ষে কী রোগে আক্রান্ত হয়েছে তা এখনো বলতে পারছে না তাদের পরিবারের সদস্যরা।
সীতাকুণ্ড উপজেলার উত্তর ছলিমপুর গ্রামের মঞ্জুর কাদের সাথে ১৯৮৯ সালে ৮ ফেব্রুয়ারি কর্নেলহাটের বাসিন্দা মুক্তার বেগমের বিয়ে হয়। তাদের রয়েছে দুই মেয়ে, এক ছেলে । ১৯৯০ সালে ২৭ জানুয়ারি প্রথম মেয়ে মিথিলা কাদের ও ১৯৯৩ সালে ৩ মার্চ দ্বিতীয় ছেলে মঞ্জুর কাদেরের জন্ম হয়। জন্মের পর তারা স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠছিলো।
যখন তারা সপ্তম শ্রেণিতে উঠে তখন থেকে এ রোগে আক্রান্ত হয়। তবে তৃতীয় মেয়ে ইসমত আরা ইতি ২১ বছর হলেও সুস্থ আছে। চিকিৎসকরা তাদের বিদেশে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানান তাদের মা মুক্তার বেগম।
তিনি রোগ প্রসঙ্গে ২৪ ঘন্টা ডট নিউজকে বলেন, প্রথমে পা দুইটিতে খিচুনি আসে, এরপর বাম হাত কাঁপতে থাকে তাদের। পরবর্তীতে হাত ও পায়ের আঙ্গুলগুলো বাঁকা হয়ে স্বাভাবিক চলাফেরা ও খাওয়া-দাওয়া করতে পারে না। একাধিক চিকিৎসক চিকিৎসা করলেও দীর্ঘ ১৫বছরেও কোন পরিবর্তন হয়নি। বরং দিনের পর দিন তাদের চলাফেরা ও খাওয়া-দাওয়া সংকুচিত হচ্ছে।
তাদের বাড়িতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িতে যাওয়ার কোন রাস্তা নেই। অন্য একজনের বাড়ির পাশে দিয়ে যেতে হয় তাদের ঘরে। জরাজীর্ণ একটি টিনের ঘরে তাদের বসবাস। ঘরের সামনে হুইল চেয়ারে বসে আছে মিথিলা ও মারুফ। কথা বলতে পারে না। ক্র্যাচ দিয়েও চলাফেরা করা খুবই কষ্টকর।
মা মুক্তার বেগম ২৪ ঘন্টা ডট নিউজকে বলেন, তার স্বামী মঞ্জুর কাদের শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে ব্যবসা করত। এতে লোকসানে পড়লে পরবর্তীতে পোল্ট্রি ফার্মের ব্যবসায় জড়িত হয়। তাদের চিকিৎসায় ব্যবসার পুঁজি চলে যায়। এখন সে চট্টগ্রাম আদালতে আইনজীবীর সহকারি হিসাবে কাজ করছে।
তিনি বলেন, ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার দুই সন্তানকে বিভিন্ন চিকিৎসককে দেখানো হয়েছে। চট্টগ্রামের নার্ভ ও মেরুদন্ড বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. শওকত হোসেনকেও দেখানো হয়েছে। চিকিৎসকরা সঠিক রোগ নির্ণয় করতে পারেননি। তবে তারা বিদেশ নিয়ে উন্নত চিকিৎসা করানোর পরামর্শ দেন।
কিন্তু তাদের এখন সংসার চালাতেই হিমসিম খেতে হচ্ছে। তাদের বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করাতে অনেক টাকার দরকার, যা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাদের মুখে হাসি ফোটাতে এগিয়ে আসার জন্য বিত্তবানদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে অসহায় পিতা মাতা।