বলিউডের তরুণ অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের আত্মহত্যার ঘটনায় ভারতীয় অভিনেতা সালমান খান, একতা কাপুর, পরিচালক সঞ্জয় লীলা ভানসালি, পরিচালক-প্রযোজক কারান জোহারসহ ৮ ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করেছেন এক আইনজীবী।
বুধবার (১৭ জুন) বিহারের একটি আদালতে মামলাটি করেন তিনি।
এক প্রতিবেদনে ভারতীয় গণমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, মামলাটি আমলে নিয়ে আগামী ৩ জুলাই পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন আদালত।
বিহারের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে করা মামলায় অ্যাডভোকেট সুধীর কুমার ওঝা নামে ওই আইনজীবী অভিযোগ করেছেন, অভিযুক্তরা চক্রান্তের মাধ্যমে সুশান্তকে আত্মহত্যায় বাধ্য করেছেন যা হত্যাকাণ্ডের সমতুল্য।
মামলায় অভিযুক্ত বাকিরা হলেন- আদিত্য চোপড়া, সাজিদ নাদিওয়াদওয়ালা, ভূষণ কুমার ও পরিচালক দীনেশ।
অভিযোগকারী আইনজীবীর ভাষ্য, অভিযুক্তরা চক্রান্ত করে সুশান্তের সিনেমা মুক্তি পেতে দেননি। এমনকি তাদের কারণে কোনো ধরনের সিনেমা সংক্রান্ত অনুষ্ঠানেও নিমন্ত্রণ পেতেন না সুশান্ত।
আইনজীবী ওঝা আরও বলেন, সুশান্তের মৃত্যুতে শুধু বিহারই নয় পুরো ভারতের মানুষই কষ্ট পেয়েছেন। ভারতীয় আইনের ৩০৬, ১০৯, ৫০৪ ও ৫০৬ ধারায় করা এই মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে বলিউড অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাউতকে।
প্রসঙ্গত, গত রোববার মুম্বাইয়ের বান্দ্র ফ্ল্যাটে আত্মহত্যা করেন ভারতীয় চলচ্চিত্রের চলতি সময়ের সফল অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুত। ৩৪ বছর বয়সী এই অভিনেতা গত ছয় মাস ধরে মানসিক বিষণ্ণতায় ভুগছিলেন বলে জানা গেছে।
বহুদিন ধরে বন্ধু বান্ধবদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। আচার আচরণও ইন্ট্রোভার্টের মত। ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কখনই মুখ খুলতে চাননি তিনি। তখনই মানসিকভাবে ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েছিলেন সুশান্ত সিং রাজপুত।
সম্ভব ছিল না কারও পক্ষে বোঝা। খুব কম কথার মানুষ ছিল বলেই জানত বন্ধুরা। মানসিক অবসাদ মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। যারা মানসিক অবসাদে ভোগা মানুষদের পাগল বলে দাবি করে, তারা খুনির মতনই সমান দোষী। ছাত্র হিসেবে বিরল, অভিনেতা হিসেবেও তাই, কীভাবে সুশান্ত ঢোলে পড়লেন মানসিক অবসাদের কোলে।
ছাত্র হিসেবে তাঁর তুলনা হয় না। স্কুল-কলেজে শিক্ষক-শিক্ষিকার বড়ই প্রিয় ছিল সে। পাটনার সেন্ট ক্যারেন স্কুল এবং নয়া দিল্লির কুলচি হংসরাজ মডেল স্কুলে পড়াশুনা করেছিলেন তিনি।
কেবল স্কুলজীবনেই নয় কলেজেও তাঁর পড়াশুনা নিয়ে রীতিমত সুনাম ছিল। পাটনা থেকে দিল্লি আসার সময় তাঁর মা প্রয়াত হন। মায়ের চলে যাওয়া ভিতর থেকে শেষ করে দিয়েছিল তাঁকে।
কেবল স্কুলজীবনেই নয় কলেজেও তাঁর পড়াশুনা নিয়ে রীতিমত সুনাম ছিল। পাটনা থেকে দিল্লি আসার সময় তাঁর মা প্রয়াত হন। মায়ের চলে যাওয়া ভিতর থেকে শেষ করে দিয়েছিল তাঁকে।
তবে হাল ছাড়েননি সুশান্ত। মন দিয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যান তিনি। ফিজিক্সে ন্যাশানাল অলিম্পিয়াডের বিজেতা ছিলেন তিনি। তবে মোটা মোটা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বইয়ের মাঝে হাতছানি দিয়েছিল থিয়েটারের স্টেজ।
বইগুলো খোলা রেখেই কখন যে থিয়েটার এবং নাচের জগতে পাড়ি দেন নিজেও বোঝেননি। এদিকে পড়াশুনোয় মারাত্মক ক্ষতি হতে শুরু করল। অবশেষে লেখাপড়াকে একেবারে উপড়ের ট্রাঙ্কে তুলে দিয়ে নতুন পথচলা শুরু।
দিল্লি টেকনলজিকাল বিশ্ববিদ্যালয় থাকাকালীন শামক দাওয়ারের ডান্স ক্লাসে ভর্তি হন। সেখান থেকে ধীরে ধীরে লাইট ক্যামেরা অ্যাকশনের প্রতি আকর্ষণ বাড়তে লাগল তাঁর।
অভিনয়ের প্রতি প্যাশন অনুভব করে তিনি বলেছিলেন, “আমি এই অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে স্বাধীনতা খুঁজে পেয়েছিলাম। দর্শকের সঙ্গে অভিনয়ের মাধ্যমে, নাচের মাধ্যমে কথোপকথনে বুঝলাম এটাই করতে চাই আজীবন।”
আজীবন আর হল কই। কীসের কারণ এত তাড়াতাড়ি হাল ছেড়ে দিলেন সুশান্ত। শেষ ছবি ‘ছিছোড়ে’ আত্মহত্যা, মানসিক অবসাদ নিয়ে গল্প বুনেছিল।
সেই ছবির হিরোরই ঝুলন্ত দেহ এই ভাবে বান্দ্রার বাড়িতে পাওয়া যাবে কেউ ভাবেনি। শামাকের ডান্স ট্রুপে নাচ করার সুযোগ হতেই ৫১ তম ফিল্মফেয়ারে ব্যাকআপ ডান্সার হিসেবে বলিউডের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সঙ্গে পারফর্ম করেন।
অভিষেক কাপুরের কাই পো ছে ফিল্মের হাত ধরে বলিউডে পদার্পণ সুশান্তের। রাজকুমার রাও এবং অমিত সাধের অভিনয়কে ছাপিয়ে গেল সুশান্তের প্রতিভা।
একের পর এক বড়ো ব্যানারের ছবির প্রস্তাব আসতে শুরু করল তাঁর কাছে। সুদ্ধ দেশি রোমান্স, পিকে, ডিটেক্টিভ ব্যোমকেশ বক্সী, এমএস ধোনি, রাবতা।
তবে অধিকাংশ ছবিই বক্স অফিসে তেমন কামাল দেখাতে পারল না। সেই কারণেই কি মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন অভিনেতা। নাকি তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে টানাপোড়েনেই তাঁকে ঠেলে দিল মৃত্যুর দিকে। স্যুইসাইড নোট ছিল না ঘরে। তাই কারণটা বোধহয় রহস্যেই মাঝেই চাপা পড়ে গেল।
তবে অধিকাংশ ছবিই বক্স অফিসে তেমন কামাল দেখাতে পারল না। সেই কারণেই কি মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন অভিনেতা। নাকি তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে টানাপোড়েনেই তাঁকে ঠেলে দিল মৃত্যুর দিকে। স্যুইসাইড নোট ছিল না ঘরে। তাই কারণটা বোধহয় রহস্যেই মাঝেই চাপা পড়ে গেল।
ভারতীয় চলচ্চিত্রের প্রতিভাবান অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুত আত্মহত্যা করেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৩৪ বছর।
সব কিছু শেষ হওয়ার আগেও ১৭ বছর আগে মারা যাওয়া মাকেই আঁকড়ে ধরেছিলেন সুশান্ত সিংহ রাজপুত। নিজের সমস্ত আবেগ উজাড় করে দিয়েছিলেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। রবিবার সকালে তাঁর মৃত্যুর খবর যখন ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র, সেইসময় সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর করা শেষ পোস্টেই চোখ আটকে যাচ্ছে। পড়লে বোঝা যাচ্ছে, মন ভাল ছিল না সুশান্তের।
কৈশোরে মাকে হারিয়েছিলেন সুশান্ত। তারকা হয়ে যাওয়ার পরেও সেই আঘাত কাটিয়ে উঠতে পারেননি তিনি। একাধিক বার সংবাদমাধ্যমে নিজেই সে কথা জানিয়েছেন তিনি। প্রায়শই সোশ্যাল মিডিয়ায় মাকে নিয়ে পোস্টও করতেন তিনি।
গত ৩ জুন ইনস্টাগ্রামে শেষ পোস্টটিও মাকে নিয়েই করেন সুশান্ত। মায়ের সঙ্গে নিজের ছবির কোলাজ পোস্ট করে লেখেন, ‘‘চোখের জলে ঝাপসা হচ্ছে স্মৃতিগুলো /অথচ স্বপ্নের নিরন্তর আনাগোনা স্মিত হাসির মতো ঠোঁটে লেগে থাকে / বহমান জীবন,এই দুইয়ের সঙ্গে বোঝাপড়া…মা।’’
ঠিক কী কারণে সুশান্ত আত্মহত্যা করেছেন, তা এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি। তবে দীর্ঘদিন ধরেই তিনি অবসাদে ভুগছিলেন বলে শোনা যাচ্ছে। এর আগেও মায়ের উদ্দেশে তাঁর করা পোস্টে অবসাদের ছায়া ধরা পড়েছে। ২০১৭-য় টুইটারে মায়ের উদ্দেশে হাতে লেখা একটি চিঠি পোস্ট করেন তিনি। তাতে তিনি লেখেন, ‘‘চিরকাল আমার সঙ্গে থাকবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলে, আমিও কথা দিয়েছিলাম, যাই হোক না কেন মুখে হাসি ধরে রাখব। মনে হচ্ছে আমরা দু’জনেই ভুল ছিলাম মা।’’
মাত্র ৩৪ বছর বয়সে মুম্বাইয়ের বান্দ্রায় নিজের বাড়িতেই আত্মহত্যা করলেন বলিউড অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুত। নিজের ঘরেই গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন এই প্রতিভাবান অভিনেতা।
বাড়িতে থাকা কাগজপত্র থেকে জানা গেছে, বেশ কিছুদিন ধরেই ডিপ্রেশনে ভুগছিলেন তিনি।
এমন অবাক করা মর্মান্তিক ঘটনায় শোকস্তব্ধ বলিউড শ্রদ্ধা জানাতে শুরু করেছে তরুণ অভিনেতাকে।
অক্ষয় কুমার টুইটে লিখেছেন, “সত্যি বলতে এই খবর আমাকে হতবাক ও বাকরুদ্ধ করে দিয়েছে … আমার মনে পড়ছে সুশান্ত সিং রাজপুতের ছিঁছোড়ে দেখেছিলাম এবং আমার বন্ধু তথা ওই সিনেমার প্রযোজক সাজিদকে বলেছিলাম যে আমার সিনেমাটা কতখানি ভালো লেগেছে এবং আমার ইচ্ছা ছিল এই সিনেমার এক অংশ হতে পারতাম যদি! এমন প্রতিভাবান অভিনেতা … ঈশ্বর তাঁর পরিবারকে শক্তি দান করুন,”।
“কী অভাবনীয় ক্ষতি,” টুইট করেছেন অজয় দেবগন। রীতেশ দেশমুখ লিখেছেন “কথার বলতে পারছি না, হতবাক
সুশান্ত টেলিভিশনে কাজের মধ্য দিয়েই নিজের কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। পবিত্র রিশতা সিরিয়াল থেকেই পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন তিনি। কাই পো চে সিনেমা দিয়ে বলিউডে আত্মপ্রকাশ করেন সুশান্ত এবং পরে এমএস ধোনি বায়োপিক এবং কেদারনাথের মতো সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন। তাঁকে শেষ দেখা হয়েছিল ছিঁছোড়ে সিনেমায়।
সুশান্তের প্রাক্তন ম্যানেজার দিশা স্যালিয়ান আত্মহত্যা করার পরই গত সপ্তাহে সুশান্ত একটি ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে লিখেছিলেন, “এ এক ভয়ানক সংবাদ”।